আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা – Benefits and harms of pineapple

আনারস মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। আনারস খেতে সুস্বাদু, রসালো ও স্বাস্থ্যকর একটি ফল। খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। অনেকের কাছে আনারস খুব প্রিয় একটি ফল, আবার অনেকের কাছেই অপ্রিয় ফল। 

আনারস খেতে খুব সুস্বাদু। পুষ্টিগণের ভরপুর একটি ফল। আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আমরা জেনে নেব ” আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা – Benefits and harms of pineapple

আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা - Benefits and harms of pineapple

আনারসের উৎপত্তিস্থল হলো দক্ষিণ আমেরিকা।

আমরা এবার যেন নেব আনারসের মধ্যে কি কি পুষ্টি আছে?

আনারসের পুষ্টিগুণ:

  1. ক্যালোরি 
  2. ম্যাঙ্গানিজ 
  3. ভিটামিন সি 
  4. ভিটামিন বি ৬ 
  5. ফ্যাট 
  6. প্রোটিন 
  7. ফাইবার 
  8. কার্বোহাইড্রেট 
  9. ম্যাগনেসিয়াম 
  10. পটাশিয়াম 
  11. প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড 
  12. আয়রন 
  13. ভিটামিন এ 
  14. ভিটামিন কে 
  15. ফসফরাস 
  16. ক্যালসিয়াম

এবার আমরা জেনে নেব আনারসের উপকারিতা গুলি কি কি?

 আনারসের উপকারিতা:

 ১.আনারস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

আনারস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। কেননা আনারসের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনাদের শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। আর আমাদের শরীরকে কঠোর পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে আনারসের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

 ২. আনারস সর্দি-কাশির চিকিৎসা করতে সাহায্য করে।

 আপনারা যদি ঠান্ডায় বা সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। তাহলে আনারস খেতে পারেন। কারণ এই আনারসের মধ্যে আছে ব্রোমেলিন। যা একটি এনজাইমার। 

এটা প্রদাহ জনক বৈশিষ্ট্য সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতেও সাহায্য করে। এটি নিয়মিত খেলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

 ৩. আনারস হাড়ের উন্নতিতে সাহায্য করে।

আনারস আমাদের হাড় শক্ত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কেননা আনারসের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম। যা আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।

আনারসের উপকারিতা

 ৪. আনারস ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আনারস ওজন কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা আনারসের রস চর্বি জমার বিরুদ্ধে। এটা ভালো সম্ভাবনা যে কাঁচা আনারসের রস ওজন কমাতে প্রভাব ফেলতে পারে।

 ৫. আনারস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

আনারস খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কেননা, আনারসের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এছাড়াও এমন কিছু যোগ আছে যা অক্সডেটিভ ট্রেস ও প্রদাহ কমায়। 

এরা সবাই ক্যান্সারের সাথে যুক্ত এই যৌগ গুলির মধ্যে একটি এনজাইম ব্রোমেলাইন যা ক্যান্সার কোষে কোষে মৃত্যুকে উদ্ভিদ করতে পারে এবং শ্বেত রক্তকণিকা ফাংশানের সাহায্য করতে পারে

 ৬. আনারস হজম করতে সাহায্য করে।

আনারস হজম করতে সাহায্য করে। কেননা আনারসের মধ্যে আছে ব্রোমেলাইন একদল হজম সহায়ক কারী এনজাইম যা প্রোটিন ভেঙে দেয়। 

আনারস হজম করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের অগ্নাশয়ে অপ্রতুলতা আছে তাদের ক্ষেত্রে আনারস খুবই উপকারী।

 ৭. আনারস চোখের জন্য খুবই উপকারী।

আনারস আমাদের চোখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখতে সাহায্য করে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, আনারস আমাদের ম্যাক্যুলার ডিপ্রেশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। 

এই রোগটি হওয়ার ফলে আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যায়। আনারসে  মধ্যে আছে বিটা ক্যারোটিন।  

প্রতিদিন আনারস খেলে ম্যাকুলার ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০% পর্যন্ত কমে যায়। আনারস খেলে আমাদের চোখ সুস্থ থাকে।

 ৮. ব্রণ ও দাগ কমাতে সাহায্য করে আনারস।

আনারসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা মুখের ডার্ক স্পট এবং ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

 ৯. আনারস আমাদের শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ করে।

আনারস এমন একটি ফল যা পুষ্টিগুনে ভরপুর। আনারসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস আছে। 

এইসব উপাদান আমাদের দেহে পুষ্টিগুণের অভাব পূরণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 ১০. আনারস কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে।

আনারসের রস কৃমি নাশক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে‌। যদি নিয়মিত কয়েকদিন আনারসের রস খাওয়া হয়, তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়ে যাবে। 

কৃমি দূর করতে হলে সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আনারসের রস খাওয়া উচিত

এবার আমরা জেনে নেব আনারসের অপকারিতা গুলি কি কি? 

আনারসের অপকারিতা:

  1. অনেকের আবার আনারসে অ্যালার্জি আছে। যদি অ্যালার্জি থাকে তাহলে চুলকানি ফুসুরি ইত্যাদি দেখা যেতে পারে আপনার ত্বকের উপরে।
  2. আনারসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি বা শর্করা, যা সুগারে রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
  3.  আনারস একটি অ্যাসিডিক ফল। খালি পেটে আনারস খেলে প্রচন্ড পেট ব্যথা হতে পারে।
  4. রক্ত তরল করার জন্য যে ওষুধ বানানো হয়, সে ওষুধে আনারস ব্যবহার করা হয়। তাই দেহের রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাঁধা দিতে পারে আনারস। তাই যাদের আনারস খেলে এরকম সব সমস্যায় ভোগেন তারা অবশ্যই আনারস থেকে দূরে থাকবেন।

আনারস সম্পর্কে অন্যান্য প্রশ্ন

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা?

খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত নয় খেলে। কেননা খালি পেটে আনারস খেলে– পেটের ব্যথা হবে, গ্যাস অম্বল হবে। কারণ আনারস একটি অ্যাসিডিক ফল।

আনারস খেলে কি গ্যাস হয়?

ভর্তি পেটে আনারস খেলে গ্যাস হওয়ার মত সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকা যায়। আপনি যদি খালি পেটে আনারস খেলে গ্যাস হয়।

বেশি আনারস খেলে কি হয়?

আনারসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সুগার আছে। তাই বেশি আনারস খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি হবে। এবং ডাইবেটিস বা সুগার হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে।

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়?

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে ভ্রুনের ক্ষতি হয়। তাই গর্ভাবস্থায় আনারস না খাওয়াই উচিত।

খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়?

খালি পেটে আনারস খেলে পেটে ব্যথা হয়। কেননা আনারস একটি অ্যাসিডিক ফল।

আনারস খেলে কি ওজন কমে?

 আনারসের ওজন বৃদ্ধি পায় না। আনারস খেলে আমাদের ওজন হ্রাস পায়। কেননা কাঁচা আনারসের রস চর্বি জমার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

আনারস খেলে কি এলার্জি হয়?

হ্যাঁ, আনারস খেলে এলার্জি হয়। যাদের আনারস খেলে এলার্জি আছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো। যদি এলার্জি থাকে তার লক্ষণ হবে– চুলকানি, ত্বকের উপর ফুসুরি বের হবে ইত্যাদি।

আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়?

আনারসের সঙ্গে পিরিয়ডের কোন সঙ্গ নেই। এমন কোন কথা নেই যে আনারস খেলে পিরিয়ডের কোন সমস্যা হবে।

আনারস খেলে কি ক্ষতি হয়?

অতিরিক্ত আনারস খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

আনারসে কত ক্যালরি?

আনারসের মধ্যে ক্যালরি আছে ১০০ গ্রাম আনারসের মধ্যে ক্যালোরি আছে ৫০ ক্যালরি ।

আনারসের ইংরেজি নাম কি?

আনারসের ইংরেজি নাম হল Pineapple ।

আনারস শব্দের অর্থ কি?

আনারস শব্দের অর্থ হল, একপ্রকার রসালো ফল।

    উপসংহার:

    এতক্ষণ আমরা জেনে নিলাম আনারস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। সবশেষে বলি, সব কিছু জেনে বুঝে সঠিক পরিমাণে আনারস খান। 

    আশা করি, আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। যদি কোন কিছু প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *