লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা। লাল শাকের পুষ্টি উপাদান।

 লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা। লাল শাকের পুষ্টি উপাদান। লাল শাক সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই একটু জানি। মূলত লাল শাক শীতকালে হয়। শীতকালীন সবজি হলেও এখন প্রায় সারা বছরে পাওয়া যায় লাল শাক। সহজলভ্য এবং দামে সস্তা। 

লাল শাক কে আমরা বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে পছন্দ করি। যেমন চিংড়ি মাছ দিয়ে লাল শাকের ঝোল, লাল শাককে সর্ষে দিয়ে সরষে শাক, ছ্যাঁচড়া। এছাড়াও বিভিন্ন পদ রান্না করতে আমরা লাল শাককে ব্যবহার করে থাকি। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে জেনে নেব লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।

লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা। লাল শাকের পুষ্টি উপাদান।

লাল শাক কি কি ভাবে রান্না করে খাওয়া হয়?

লাল শাককে বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়া হয়। যেমন — লাল শাকের ডাটা চচ্চড়ি, সরষে লাল শাক, পোস্ত দিয়ে লাল শাক, লাল শাকের ছ্যাঁচড়া, কুচো চিংড়ি দিয়ে লাল শাকের ঝোল ইত্যাদি।

লাল শাক কত রকমের হয়?

লাল শাক বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন — আলতা পেটি, রক্ত লাল, বারিলাল শাক, ললিতা, রক্তরাঙা, পিংকি কুইন, রক্ত জবা ইত্যাদি।

লাল শাকের ইংরেজি নাম কি?

লাল শাকের ইংরেজি নাম হল Red Amaranth ।

এবার আমরা জেনে নেব লাল শাকের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান আছে?

লাল শাকের পুষ্টি উপাদান:

  • ভিটামিন এ 
  • ভিটামিন বি ২ 
  • ভিটামিন বি ১
  • ভিটামিন সি 
  • ভিটামিন ই 
  • ক্যারোটিন 
  • আয়রন 
  • প্রোটিন 
  • ক্যালসিয়াম 
  • ফ্যাট 
  • শর্করা 
  • অ্যামাইনো অ্যাসিড 
  • ম্যাগনেসিয়াম 
  • পটাশিয়াম 
  • ফসফরাস 
  • আঁশ 
এবার জেনে নেব ১০০ গ্রাম লাল শাক এর মধ্যে কি কি পুষ্টি গুণ রয়েছে?

 ১০০ গ্রাম লাল শাকের পুষ্টিগুণ:

  1. ক্যালসিয়াম — ৩৭৪ মিলিগ্রাম 
  2. প্রোটিন — ৫.৩৪ মিলিগ্রাম 
  3. ফ্যাট — ০.১৪ মিলিগ্রাম 
  4. শর্করা — ৪৯৬ মিলিগ্রাম
  5. জলীয় অংশ — ৮৮ গ্রাম
  6. খনিজ পদার্থ — ১.৬ গ্রাম
  7. খাদ্য শক্তি — ৪৩ কিলো ক্যালরি
  8. ক্যারোটিন — ১১৯৪০ মাইক্রগ্রাম 
  9. ভিটামিন বি ১ — ০.১০ মিলিগ্রাম
  10. ভিটামিন বি ২ — ০.১৩ মিলিগ্রাম
  11. ভিটামিন সি — ৪৩ মিলিগ্রাম

এবার আমরা জেনে নেবো লাল শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।

 লাল শাকের উপকারিতা:

১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে লাল শাক।

লাল শাক হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কারণ লাল শাক রক্তের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এর সাথে সাথে রুটিন হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়। হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে লাল শাক।

২. লাল শাক রক্তের শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

লাল শাক আমাদের শরীরের রক্তের শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা অথবা রক্তশূন্যতায় ভোগেন। তার কারণ হলো তাদের শরীরের মধ্যে আয়রনের ঘাটতি। এরকম সমস্যার আছে যাদের তারা লাল শাক খেতে পারেন‌ কারণ লাল শাক খেলে শরীরের রক্ত তৈরি হয়। ফলে লাল শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যা শরীরের লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

৩. চুলের জন্য উপকারী লাল শাক।

চুল পড়া সমস্যা প্রায় আমাদের সকলেরই আছে। লাল শাক আমাদের চুল পড়ার সমস্যা কম করতে সাহায্য করে। তার সাথে সাথে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। চুলের বৃদ্ধিও হয় তাড়াতাড়ি। এর পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত করতে এবং চুলের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান এবং পুষ্টি যোগাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে লাল শাক।

৪. লাল শাক ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী।

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য লাল শাক খুবই উপকারী। কারণ লাল শাক রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৫. গর্ভবতী মায়েদের জন্য লাল শাক উপকারী।

গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের জন্য লাল শাক খুবই উপকারী। কারণ লাল শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান। যা মায়ের শরীর সুস্থ রাখতে এবং গর্ভজাত ও সদ্যজাত শিশুর দৈনন্দিন পুষ্টি, ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে। তাদের শরীরের গঠন সঠিক করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে লাল শাক।

৬. লাল শাক দাঁত ও হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।

অন্যান্য সকের তুলনায় লাল শাকের মধ্যে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি আছে। শরীরের যেমন দাঁত ও হাড় গঠনে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়ামের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। তাই তো হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী এবং বৃদ্ধি, সুস্থতা সবকিছুতেই সাহায্য করে লাল শাক।

৭. লাল শাক কিডনির জন্য উপকারী।

লাল সব কিডনির জন্য উপকারী। কিডনির কাজকর্ম ভালো রাখতে লাল শাক উপকারী। কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে লাল শাক খুব ভালো কাজ করে। রক্তের মধ্যে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান গুলিকে শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে লাল শাক।

৮. দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে লাল শাক সাহায্য করে।

লাল শাক দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কেননা লাল শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং ভিটামিন সি। যা চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করতে এবং চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। লাল শাকের মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন এ রেটিনার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগ দূর করতেও সাহায্য করে। তাই লাল শাক চোখের জন্য খুবই উপকারী।

৯. লাল শাক ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

লাল শাক ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ লাল শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে। এছাড়াও লাল শাকের মধ্যে উপস্থিত আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই। এই উপাদান গুলোর শরীরের মধ্যে একাধিক টক্সিক উপাদান দূর করতে সাহায্য করে। এতে ক্যান্সারের কোষ জন্মানোর আশঙ্কা খুবই কম থাকে।

১০. লাল শাক ওজন কমাতে সাহায্য করে।

লাল শাক ওজন কমাতে সাহায্য করে। যদি প্রতিদিন নিয়মিত লাল শাক খাওয়া হয়, তাহলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি হওয়া রোধ করা যেতে পারে। কারণ এতে আছে কম পরিমাণে ক্যালোরি। তাই ওজন বাড়তে দেয় না।

১১. লাল শাক হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

লাল শাক আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ লাল শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়।

১২. লাল শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

প্রতিদিন নিয়মিত লাল শাক খাওয়া শুরু করলে, শরীরের মধ্যে আন্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এর ঘাটতি দূর হবে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

১৩. ঠান্ডা জ্বরে চিকিৎসায় লাল শাক খুবই উপকারী।

যারা দীর্ঘদিন ধরে ঠান্ডা জ্বরে ভুগছেন তারা এই ঘরোয়া উপায়টি ব্যবহার করলে উপকার পেতে পারেন। ঘরোয়া উপায়টি হলো, একটি প্যানে জল ভর্তি করে নেবেন। তারপরও তে কয়েকটি লাল শাকের পাতা দিয়ে দেবেন। তারপর জলটি ফোটাতে লাগবেন। যখন ফুটতে ফুটতে দেখবেন জলটা অর্ধেক হয়ে গেছে, তখন বন্ধ করে দেবেন ফোটানো। এবং জলটা ঠান্ডা করে ছেঁকে খেয়ে নেবেন। এইভাবে কয়েকদিন করলে দেখবেন জ্বর ঠান্ডা কমে গেছে।

এবার আমরা জেনে নেব লাল শাকের অপকারিতা সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য?

 লালশাকের অপকারিতা:

  • ১. লাল শাকের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে আয়রন ফলে অতিরিক্ত আয়রন খেলে রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
  • ২. লাল শাকের মধ্যে বিপুল পরিমাণে ফাইবার আছে। ফাইবার শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয়, কিন্তু অতিরিক্ত ফাইবার খাবার হজমকারি নালি বিশিষ্ট অঙ্গ বেশি রাতে কাজ করে না। তাই অতিরিক্ত লাল শাক খাওয়া উচিত নয়।
  • ৩. যাদের হার্টে বা লিভারের সমস্যা আছে, তাদের রাতের বেলায় আয়রনযুক্ত খাবার না খাওয়াই উচিত। তাই তাদের রাতের দিকে লাল শাক না খাওয়াই ভালো।
  • ৪. গর্ভাবস্থায় লাল শাক উপকারী। কিন্তু তা যদি হজম করতে না পারে তাহলে অ্যাসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লাল শাক না খাওয়াই উচিত।

লাল শাক সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:

লাল শাক কি?

লাল শাক হল একপ্রকার শাক বা পাতা জাতীয় সবজি যার পাতাকে সবজি হিসেবে আমরা খেতে পারি।

লাল শাক প্রতি শতকের ফলন কত?

লাল শাক প্রতি শতকে ফলন হল ৪৮ থেকে ৫৫ কেজি পর্যন্ত। আজ হেক্টর প্রতিফলন হবে ১২ থেকে ১৪ টন।

লাল শাক এর জীবনকাল কতদিন?

লাল শাকের গড় জীবনকাল হলো প্রায় ৪০ দিন।

লাল শাক কোন জাতীয় মাটিতে ভালো হয়?

লাল শাক দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ, এঁটেল-দোআঁশ মাটিতে বেশি ভালো চাষ হয়।

লাল শাক তোলার সময় কত দিনের মধ্যে?

লাল শাক তোলার সময় হল, বীজ বোনার ঠিক ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে।

লাল শাক চাষ করার উপযুক্ত সময় কখন?

লাল শাক মূলত শীতকালীন শাক। কিন্তু এখন প্রায় সারা বছরেরই লাল শাক চাষ করা হয়। তাই লাল শাক চাষ করার উপযুক্ত সময় সারা বছর, বিশেষত শীতকাল।

প্রতি শতকে বীজ তলার বীজের পরিমাণ কত হবে?

প্রতি শতকের বীজ তলার বীজের পরিমাণ হবে প্রায় ৮ থেকে ১০ গ্রাম।

লাল শাকের গাছ কত লম্বা হয়?

লাল শাকের গাছ ছয় থেকে বারো ইঞ্চি লম্বা হয়।

লাল শাকের ইংরেজি কি?

লাল শাকের ইংরেজি নাম হল Red Amaranth ।

লাল শাক কি ওজন বৃদ্ধি করে?

না, লাল শাক ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে না।

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু অজানা তথ্য।  লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা। লাল শাকের পুষ্টি উপাদান। আমরা জেনে নিলাম লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। সব জিনিসেরই যেমন উপকারিতা আছে ঠিক সেরকম অপকারিতাও আছে। ঠিক সেই মতো লাল শাকের উপকারিতা ও যেমন আছে লাল শাকের অপকারিতা ও সেই রকমই আছে। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। যদি কোন সমস্যা থাকে কমেন্টে জানান আর যদি ভালো লেগে থাকে বন্ধুদেরকে শেয়ার করুন। আর একটি কথা, আমাদের এই আর্টিকেলটিকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য বন্ধুরা আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *