পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা । পেয়ারার উপকারিতা কি? পেয়ারা খেলে কি ওজন কমে?পেয়ারা হল বহু জন প্রচলিত এবং খুব সহজলভ্য একটি ফল। ভারত বর্ষ এবং বাংলাদেশের খুব বেশিরভাগ বাড়িতেই এই ফলের গাছ দেখা যায়। এই গাছটি এতটাই সহজলভ্য বা বলা ভালো এই ফলটি এতটাই সহজলভ্য যে তার যোগ্য সম্মান টুকু পায় না। বাজারে যে সমস্ত দামি ফল রয়েছে সে সমস্ত ফলের মধ্যে পুষ্টিগুণ বা যে উপকারিতা রয়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি উপকারিতা বা তার থেকে কয়েকগুণ বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে এই পেয়ারার মধ্যে। শুধু এই ফলটির মধ্যে নয় বা পেয়ারার মধ্যে নয় পেয়ারার পাতার মধ্যেও এমন কিছু উপকারিতা রয়েছে যেটি অবাক করার মতো।
আজ আমরা এই পেয়ারা এবং পেয়ারা পাতার মধ্যে বেশ কিছু উপকার মূলক উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করব।
পেয়ারার উপকারিতা কি? পেয়ারা খেলে কি ওজন কমে?
পেয়ারার উপকারিতা কি? পেয়ারা খেলে কি ওজন কমে? বাজারে যে সমস্ত জনপ্রিয় ফলগুলি পাওয়া যায় তার মধ্যে আপেল হলো অন্যতম। আমরা মনে করি আপেল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। আপেল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী এটা সত্যি। কিন্তু একটি আপেলের থেকে একটি পেয়ারা কত গুণ বেশি উপকারী তার পুষ্টিগুণ নিয়ে যদি আমরা আলোচনা করি তখন আমরা বুঝতে পারবো।
একটি আপেলের মধ্যে যত পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায় একটি পেয়ারার মধ্যে তার থেকে দুই গুণ পেয়েছি আয়রন পাওয়া যায়। একটি আপেলের মধ্যে যত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়, একটি পেয়ারার মধ্যে তার থেকে চার গুণ বেশি ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। একটা আপেলের মধ্যে যত পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার রয়েছে, একটি পেয়ারার মধ্যে তার থেকে আড়াইগণ বেশি ডায়াটরি ফাইবার আছে। আপেলের মধ্যে যত পরিমাণ ফসফরাস থাকে, একটি পেয়ারার মধ্যে তার থেকে সাড়ে তিন গুণ বেশি ফসফরাস থাকে।
আবার একটি আপেলের মধ্যে যতটা পরিমাণ প্রোটিন থাকে, একটা পিয়ারার মধ্যে তার থেকেও দশগুণ বেশি প্রোটিন পেতে পারেন। সুগারের দিক থেকে বিচার করে দেখলে একটি আপেলের মধ্যে যা সুগার পাওয়া যায় তার থেকে একটি পেয়ারার মধ্যে ১৫% কম সুগার পাওয়া যায়। সবে মিলেমিশে একটি আপেলের থেকে একটি পেয়ারা নিঃসন্দেহে পুষ্টিকর।
পেয়ারা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে
আপনি যদি প্রত্যেকদিন একটি করে পেয়ারা খেতে পারেন তাহলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আপনি শুনলে হয়তো আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে একটি কমলা লেবুর মধ্যে যতটা পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে সম পরিমাণে একটি পেয়ারার মধ্যে তার থেকে চার গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার কে বৃদ্ধি করে তার সঙ্গে বৃদ্ধি করে শ্বেত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে। আমাদের শরীরে যখন শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি হয় তখন আমাদের শরীর বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাই আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানোর জন্য প্রত্যেকটি অবশ্যই একটি করে পেয়ারা খেতে পারেন।
পেয়ারা খেলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
পেয়ারার মধ্যে ডায়েটারি ফাইবার থাকে। যে ডয়াটারি ফাইবার আমরা সারাদিন এ যে সমস্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খায়। সেই কার্বোহাইড্রেটের abservation শরীরের মধ্যে কমিয়ে দেয়। তার সাথে পেয়ারা হলো লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার । পেয়ারার গ্লাইসোমিক ইনডেক্স মাত্র বারো। আর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ১২ হওয়ার জন্য এবং এর মধ্যে ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকার জন্য পেয়ারা নিঃসন্দেহে ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি ফুড। আপনি যদি পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করে ওই জলটা চায়ের মত খেতে পারেন, তাহলে আপনার শরীরে যদি ইনসুলিন রেজিস্টেস্নের এর মতো সমস্যা রয়েছে সমস্যা কে কম করে এবং আপনার পিপি ব্লাড সুগার অর্থাৎ খাবার খেয়ে যে সুগারের টেস্ট করেন তার মাত্রা ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
Read more: Guava leaf benefits: পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।
পেয়ারা আমাদের হার্টের জন্য বিশেষ উপকারী।
পেয়ারা আমাদের হার্টের জন্য বিশেষ উপকারী। তার কারণ পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে হাই কোয়ালিটির অ্যান্টিঅক্সিডিডেন্ট রয়েছে । যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এগুলি আমাদের হার্টের ব্লাড সার্কুলেশনের জন্য যে সমস্ত আর্টারি বা ব্লাড ভেসেলসগুলি রয়েছে সেগুলিকে অক্সেডেড স্ট্রেসের থেকে দূরে রাখতে পারে। পেয়ারার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যে পটাশিয়াম আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
পেয়ারার মধ্যে রয়েছে দুই ধরনের ফাইবার। Solubel Fiber এবং Insoluble Fibre রয়েছে । এই দুই ধরনের ফাইবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম করতে সাহায্য করে এবং আমাদের রক্তে ভালো কলেস্ট্রলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
পেয়ারা হজম করতে সাহায্য করে।
যদি কারোর হজমের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তিনি পেয়ারা খেতে পারেন কারণ, পেয়ারা হজম করতে সাহায্য করে। আমরা যখন পেয়ারা খায় তার সাথে সাথে যদি পেয়ারা ব্রিজটি চিবিয়ে খেতে পারি তাহলে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে সেই সমস্যা কিন্তু দূর করতে পারে পেয়ারা। আমাদের পেটের মধ্যে একটা লেকসিটিভ করতে পারে যেটা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। একটি মানুষের শরীরে প্রত্যেকদিন যতটা পরিমাণে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন একটা মাঝারি সাইজের পেয়ারার মধ্যে তার ৪০০% পর্যন্ত ভিটামিন সি পাওয়া যেতে পারে। গর্ভবতী মায়ের পক্ষেও পেয়ারা একটি স্বাস্থ্যকর ফল হতে পারেন নিঃসন্দেহে।
পেয়ারা পাতা দাঁতের জন্য ভালো
যে সমস্ত মানুষরা নিয়মিত ভাবে দাঁতের যন্ত্রণা ভোগ করেন সেই সমস্ত মানুষদের পেয়ারা পাতা চিবিয়ে পেয়ারা পাতার রস দাঁতে লাগাতে বলা হয় এবং যথেষ্ট সাফল্য দেখতে পাওয়া যায়। তার কারণ পেয়ারা পাতার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টি যেটা আপনার দাঁতের মধ্যে বা মারির মধ্যে কোন প্রকার ইনফ্লেমেশন থেকে থাকে সেই ইনফর্মেশন কে কম করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াম প্রপার্টি। আপনার দাঁতের মাড়ির মধ্যে বা দাঁতের মধ্যে কোন প্রকার ইনফ্লেকশন থেকে থাকলে ইনফ্লেকশন কে কম সাহায্য করে এবং তার সাথে গাড়া পেয়ারা পাতার মধ্যে রয়েছে পেন রিলিভিয়ান এজেন্ট।
যেটা আপনার দাঁতের ব্যথা বেদনা কেউ কম করতে সাহায্য করে। পরবর্তী ক্ষেত্রে আপনার যদি দাঁতে যন্ত্রণা হয় তাহলে আপনি কচি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে সেই পেয়ারা পাতার রস আপনার দাঁতের মধ্যে লাগিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন। পেয়ারার মধ্যে রয়েছে পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের মাসেল গুলিকে রিলাক্স রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে সাথে আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভেরেট সিস্টেমকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। যখন আমরা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখন এই মার্শাল গুলোকে রিলাক্স করে আমাদের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে পেয়ারা। সারাদিন প্রচুর পরিমাণে মানুষের চাপ এবং শারীরিক চাপের দিয়ে যায় শেখাতেও আমাদের এই মানসিক চাপ শারীরিক চাপ থেকে বাঁচাতে পারে পেয়ারা মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম।
আমরা অনেকেই জানিনা যখন ওই পেয়ারা ছোট অবস্থায় থাকে তখন ওই পেয়ারা কে যদি আমরা জুস করে খাই তো ওই জুস আমাদের সর্দি নিরাময় করতে সাহায্য করে। আর কারণ একটা বড় সাইজের পেয়ারার মধ্যে যতটা ভিটামিন সি থাকে একটা ছোট সাইজের পেয়ারার মধ্যে অনেক বেশি ভিটামিন সি থাকে। আপনার বুকের মধ্যে যদি কফ জমে থাকে ওই কফকেও কম করতে সাহায্য করে পেয়ারা। তাই অবশ্যই সর্দি কাশি নিরাময়ের জন্য অবশ্যই ছোট পেয়ারার জুস বানিয়ে খেতে পারেন।
পেয়ারা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
পেয়ারার মধ্যেপ্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন বি ৩ এবং বি ৬ যেটা ইয়াসিন এবং স্পাইডারক্সিন নামে পরিচিত। যেটি আমাদের ব্রেনের ব্লাড সার্কুলেশন কে ইম্প্রুভ করে কগনেটিউব সেন্সকের স্টিমুলেটিং করে এবং সেন্ট্রাল নার্ভাসের কে রিলাক্স করে রাখতে সাহায্য করে। তার ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়।
উপসংহার:
আপনি যদি প্রত্যেকদিন একটা করে পিয়ারা খেতে পারেন তাহলে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি থেকেও দূরে থাকতে পারেন। কারণ হচ্ছে পিয়াদার মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি ভিটামিন বি ৬ এবং ভিটামিন বি ৩ এবং পলিফেনল এর মত পাওয়ারফুল এন্টি অক্সিডেন্ট। এন্টি অক্সিডেন্ট গুলি আমাদের শরীরের মধ্যে যে সমস্ত ফিরিয়ডিক্যাল কি হয় সেই ফিরিয়ডিক্যাল গুলিকে দেয় তার ফলে আমাদের শরীরের কোনো প্রকারের ক্যান্সার সেল এর উদ্ভব হয় না বা যদি আগে থেকে, থেকে থাকেও তাহলে আর বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে ।
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। পেয়ারার উপকারিতা কি? পেয়ারা খেলে কি ওজন কমে?