কাঁঠালের উপকারিতা কি কি? কাঁঠালে কত ক্যালরি থাকে? কাঁঠাল এমন একটি জিনিস যা কাঁচা অবস্থায় সবজি এবং পাকা অবস্থায় ফল। অনেকেই কাঁঠাল খুব পছন্দ। করেন আবার অনেকে কাঁঠাল অপছন্দ করেন।
কিন্তু যারা অপছন্দ করেন তারা কি জানেন, কাঁঠাল একটি উপকারী ফল। তবে কাঁঠাল খাওয়ার আগে একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে কাঁঠাল খাওয়ার পর কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদেরকে এড়িয়ে যেতে হবে।
কাঁঠাল খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। অনেক রোগকে আমাদের থেকে দূরে রাখে। অনেক সময় এমনও হয় যে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার তাগিদে আমরা এমন কিছু খাবারের কম্বিনেশন করে ফেলি যা স্বাস্থ্যের উপকার না করে বরং বেশি করে ক্ষতি করে শুরু করে।
কাঁঠাল খেতে যেমন সুস্বাদু, ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কাঁঠাল একদিকে যেমন সবজি অন্যদিকে তেমন ফল দুই ভাবেই খাওয়া যায়, কাঁচা অবস্থায় সবজি এবং পাকা অবস্থায় ফল। কাঁঠাল পাওয়া যায় বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে। বসন্তকালে কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং গ্রীষ্মকালে পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে।
কাঁঠাল খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কাঁঠাল এমন একটি ফল যা ভিটামিনে ভরপুর।
কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম কি?
কাঁঠালের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল "Artocarpus heterophyllous" ।
কাঁঠালের মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ আছে? কাঁঠাল কি কি ভিটামিন আছে? :
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি ৬
- থায়ামিন
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ফলিক এসিড
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফাইবার বা আঁশ
- রিবোফ্লাভিন
- শর্করা
এবার জেনে নেব কাঁঠালের উপকারিতা কি কি?
কাঁঠালের উপকারিতা কি কি?
১. কাঁঠালের মধ্যে ফ্যাট কম থাকে।
কাঁঠালের মধ্যে ক্ষতিকর ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম থাকে। তাই কাঁঠাল খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা খুব একটা থাকে না।
২. অ্যাজমা দূর করতে কাঁঠালের শেকর সহায়ক।
যাদের হাঁপানির মত সমস্যা আছে তাদের জন্য কাঁঠালের শেখর খুবই উপকারী। কাঁঠালের শেখর এজমা বা হাঁপানি নিরাময় করতে সহায়ক।
কাঁঠালের শেখর সিদ্ধ করে তারপর তার পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করলে তাদের হাঁপানি হাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
৩. কাঁঠালের শেকর ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
যারা দীর্ঘদিন ধরে চর্মরোগে ভুগছেন তাদের জন্য কাঁঠালের শেকর খুবই উপকারী।
৪. কাঁঠাল ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
যাদের ব্লাড সুগার আছে তারা যদি প্রতিদিন কাঁঠাল খান তাহলে তাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই সাহায্য করে।
৫. হার্টের পক্ষে উপকারী কাঁঠাল।
নিয়মিত কাঁঠাল খেলে হার্ট অ্যাটাকের মত রোগকে এড়ানো যেতে পারে। কাঁঠালের থাকা পটাশিয়াম হার্টের পেশিকে শক্তিশালী ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কাঁঠালের থাকা ভিটামিন বি ৬ হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়।
৬. কাঁঠাল খেলে আমাদের দেহের হাড় শক্ত হয়।
কাঁঠাল আমাদের দেহের হাড় কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে। কাঁঠালের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম এর মত উপাদান যা হাড় গঠনে এবং শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
৭. কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
কাঁঠাল আমাদের শরীরের রক্তের উচ্চচাপ কমাতে সাহায্য করে। কাঁঠালে পটাশিয়ামের উৎস ১০০ গ্রাম কাঁঠালে মধ্যে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। আর পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই কাঁঠাল খেলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
৮. কাঁঠাল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
কাঁঠাল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কেননা, কাঁঠালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৯. কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করে কাঁঠাল।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা আছে তারা কাঁঠাল খেতে পারেন। কেননা, কাঁঠালের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাকে দূর করতে সক্ষম।
১০. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কাঁঠাল সাহায্য করে।
কাঁঠাল আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কেননা, কাঁঠালের মধ্যে পাওয়া যায় ভিটামিন সি। যা, আমাদের শরীরে কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে।
এই কোলাজেন আমাদের ত্বকেও উজ্জ্বল রাখতে প্রয়োজনীয়। এছাড়াও ভিটামিন এ আমাদের চোখের ধমনী কে সংকুচিত হতে দেয় না। ফলে বয়স কালেও. দৃষ্টি শক্তি সঠিক থাকে। আপনিও যদি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধকালে সঠিক রাখতে চান তাহলে কাঁঠাল খাওয়া শুরু করুন।
১১. রক্তাল্পতার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় কাঁঠাল।
কাঁঠাল খেলে, রক্ত অল্পতার মত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা, কাঁঠালের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা, রক্তাল্পতা হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
১২. কাঁঠালের মধ্যে আছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস-- যা আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার এবং বার্ধক্য জনিত সমস্যার থেকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
কাঁঠাল খেয়ে কি খেতে নেই?
আপনারা অনেকেই কাঁঠাল খেয়ে এমন ভুল করে থাকেন, যে কারণে তাদের প্রচুর খেসারত দিতে হয়। কাঁঠাল খেয়ে তার পরে দুধ মধুর মত জিনিস কখনোই ভুল করেও খাবেন না।
কাঁঠাল অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে কাঁঠাল খাওয়ার পর বেশ কয়েকটি খাবার আপনাকে খেলে চলবে না। কাঁঠাল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। অনেক সময় আমরা এমন হয় যে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার তাগিদে এমন কিছু খাবার কম্বিনেশন করে খেয়ে ফেলি যা স্বাস্থ্যের উপকার নয়। বরঞ্চ অপকার করে অনেক বেশি। এবার জেনে নেওয়া যাক কাঁঠালের সঙ্গে কোন খাবার গুলো কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
১. কাঁঠাল খেয়ে দুধ খেলে কি হয়?
২. পেঁপে খাবেন না কাঁঠাল খাওয়ার পরে।
কাঁঠাল সবজি অবস্থায় বা পাকা অবস্থায় খাওয়ার পরে পেঁপে খাওয়া চলবে না। সেই সময় যদি পেঁপে খাওয়া হয় শরীরের প্রদাহ সৃষ্টি হবে।
৩. কাঁঠাল খাওয়ার পরে মধু খাবেন না।
এরকম অনেকেই আছেন যারা কাঁঠাল খাওয়ার পর মধু খেতে থাকেন যা স্বাস্থ্যের পক্ষে একদমই ভালো নয়। কাঁঠাল খাওয়ার পর মধু খেলে খুবই ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। কেননা কাঁঠাল খাওয়ার পর মধু খেলে শরীরের সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই কাঁঠাল খাওয়ার পরে কখনোই মধু খাওয়া উচিত নয়।
৪. কাঁঠাল খাওয়ার পর কখনোই পান খাবেন না।
কাঁঠাল খাওয়ার পর পান খাওয়া একদমই উচিত নয়। তাই যাদের পান খাওয়ার অভ্যাস আছে, তারা কাঁঠাল খাওয়ার পর কখনোই পান খাবেন না। এতে সেই ব্যক্তির মৃত্যুও পর্যন্ত হতে পারে।
৫. কাঁঠাল খাওয়ার পর ভেন্ডি খাওয়া উচিত নয়।
কাঁঠাল খাওয়ার পর কখনোই ভেন্ডিবার ঢেঁড়স খাবেন না। কাঁঠাল খাওয়ার পর ভেন্ডি খেলে আপনার পায়ে ব্যথা ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হতে পারে।
এবার জেনে নেব কাঁঠালের অপকারিতা।
কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয়? কাঁঠালের অপকারিতা:
কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম:
- কাঁঠাল কাঁচা হোক বা পাকা, কাঁঠাল কাটার সময় হাতে ভালো করে তেল লাগিয়ে নেবেন। কেননা কাঁঠালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঠা থাকে।
- সব ফলেরই জুস খাওয়া যায়। তাই আপনি চাইলে কাঁঠালের জুস খেতে পারেন।
- যাদের বদহজমের সমস্যা আছে তারা কাঁঠাল এড়িয়ে চলবেন।
- অতিরিক্ত কাঁঠাল খাবেন না অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে বদহজম হতে পারে।
সবশেষে কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা, কাঁঠালের উপকারিতা কি কি? কাঁঠালে কত ক্যালরি থাকে? নিশ্চয়ই আপনারা বুঝে গেছেন। কাঁঠাল খাওয়ার পরে কি খাওয়া উচিত না। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে এবং আপনাদের বোধগম্য হয়েছে। আর যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।