কলা একটি বারো মাসে ফল। কলা পৃথিবীর দশটি দেশে উৎপাদিত হয় এবং এটি পৃথিবীর চতুর্থ অর্থকারী ফসল। অন্যান্য ফলের তুলনায় কলা সবথেকে বেশি খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। Benefits and harms of eating bananas.
কলা কে "Super fruit" বলা হয়।
সকালে ব্রেকফাস্ট এর সঙ্গে অনেকেই কলা খেতে পছন্দ করেন। আর অনেক তাড়াতাড়িও খাওয়া হয় এই ফল। খুব সহজলভ্য এই ফল।পুষ্টিগুণে ভরপুর কলা। একটি মাঝারি মাপের কলা থেকে ১১০ ক্যালরি পাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেট থেকে ৩০ গ্রাম। প্রোটিন থাকে এক গ্রাম তবে কলাতে কোন ফ্যাট থাকে না।
এছাড়াও কলাতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ইত্যাদি খনিজ উপাদানের আধার বলা হয় কলা কে। কলায় আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ যা দৈনিক চাহিদার ১৬% পরিমাণে যোগান দেয় কলা। তাই কলা কে প্রাকৃতিক মাল্টিভিটামিনও বলা হয়।
একটি মাঝারি মাপের কলার মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ আছে জেনে নেব।
- ভিটামিন এ -২৫.০ আই.ইউ
- ভিটামিন বি -৬০.৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি -৯.০ মিলিগ্রাম
- আয়রন -০.৩ মিলিগ্রাম
- রিবোপ্লাভিন -০.১ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ -০.৩ মিলিগ্রাম
- নায়াসিন -০.৮ মিলিগ্রাম
- ফোলেট -২৫.০ মাইক্রগ্রাম
- আঁশ -৩.০ গ্রাম
- পটাশিয়াম -৪৫০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম -৩৪.০ মিলিগ্রাম
- এছাড়াও,মিনারেল
- ফাইবার
- খনিজ পদার্থ
- ক্যালোরি
কলার মধ্যে কি কি উপকারিতা আছে এবার জেনে নেব।
১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
একটি মাঝারি সাইজের কলা থেকে শরীরে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম প্রবেশ করে। যা, আমাদের হৃদ যন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
২. হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
কলার মধ্যে আছে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের শরীরের হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
কলার মধ্যে আছে পেকটির নামক একটি ফাইবার। যা কোষ্ঠকাঠিন্য এর মত সমস্যাকে দূর করে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিনের মত সমস্যা আছে তারা সকালে একটি করে কলা খেতে পারেন।
৪. উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর করে।
কলার মধ্যে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি আছে আর নুনের মাত্রা কম আছে তাই যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা রোজা খেতে পারেন।
৫. হজমে সহায়ক।
একটি মাঝারি সাইজের কলাতে আছে ৩ গ্রাম ফাইবার যা পেট পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি হজম করতেও সাহায্য করে। খুব তাড়াতাড়ি হজম করতে সাহায্য করে কলা।
৬. দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মানুষের শরীরে শক্তি বা এনার্জি বাড়াতে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীর দুর্বল দেখা দিলে কলা খান । আর কলা খেলে শরীরের শক্তি ফিরে আসবে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কেউ কেউ মনে করেন কলা খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল কলা খেলে ওজন বাড়ে না। ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে কলা। কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকা এটি শরীরে নানা উপকার করে।
৮. শরীরের জলের চাহিদা পূরণ করে।
কলা খেলে আমাদের শরীরে জলের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করে কলা।
৯. কলা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে।
কলা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের সাহায্য করে। কারণ কলার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কেউ কমায়। আবার অ্যানিমিয়া ছাড়াতেও সাহায্য করে কলা।
১০. মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধি তে সাহায্য করে।
কলা খেলে মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধি হয়। কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
১১. ত্বকের যত্নে সাহায্য করে কলা।
আমাদেরকে মশা কামড়ালে, ওই মশা কামড়ায় যে জায়গাটায় ওখানটা লাল হয়ে ফুলে ওঠে। তখন আমরা অনেকে কি করি ত্বকের যত্ন নিতে ক্রিম বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করি। তা না করে যদি আমরা আগে কলার খোসা ঘষে দেখুন ফুলে ওঠা ত্বকের অংশটাতে । ফুলে ওঠা কমে যাবে।
১২. আলসারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে কলা।
আলসারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে কলা। কলা নরম মিহি হওয়ায় পেটের সমস্যায় খুব উপকারী খাবার। পেটের রোগে একমাত্র ফল যা নির্বিঘ্নে খাওয়া যেতে পারে তা হলো কলা। সেই সময় কলা খেলে কলা অস্বস্তি কমিয়ে আরামদায়ক অনুভূতি দেয় আমাদেরকে।
১৩. শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়ের সাহায্য করে।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শূন্য থেকে দুই বছরের শিশুকে প্রতিদিন নিয়ম করে যদি একটি করে কলা খাওয়ানো হয়। তাহলে লিউকেমিয়া নামক ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে কলা ।
১৪. কলা খেলে স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমে।
অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে শরীরে পটাশিয়ামের লেভেল কমে গেলে হৃদস্পন্দনের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। যা স্ট্রোকের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। কলার মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম। তাই প্রত্যেকদিন একটি করে কলা খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
কলার অপকারিতা (কলার ক্ষতিকর দিক) :
১. দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করে।
বেশি কলা খাওয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকার জন্য খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়।
২. অ্যালার্জি
কলা খেলে অনেক সময় অনেকের অ্যালার্জির কারণ হয়ে ওঠে। তখন তাদের ওই অ্যালার্জির ফলে ঠোঁট ফুলে যায়, গলা জ্বালা করে।
৩. নার্ভের ক্ষতি হয়।
বেশি কলা খেলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কেননা ভিটামিন বি সিক্স বেসিক খাওয়ার প্রভাবে এই ক্ষতি হয়। আর কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি আছে।
৪. শ্বাস নিতে সমস্যা হয়
যাদের শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা আছে তারা যদি বেশি মাত্রায় কলা খান তাহলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
৫. পেট ব্যথা হয়।
কলাতে বেশি পরিমাণে শরকরা থাকে তাই বেশি কলা খেলে অতিরিক্ত শর্করার কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। তাছাড়া বাজার থেকে কেনা কলা বেশির ভাগই রাসায়নিক সার দিয়ে পাকানো হয়ে থাকে।
৬. ডায়াবেটিসের সমস্যা হতে পারে।
কলাতে বেশি মাত্রায় সুগার থাকার কারণে অতিরিক্ত কলা খেলে ডায়াবেটিস টো হতে পারে।
৭. মাইগ্রেন হতে পারে।
কলাতে টাইরামাইল নামক একটি উপাদান থাকে যেটা মাইগ্রেনের কারণ। তাই যাদের মাইগ্রেনের মতো সমস্যা আছে তারা যতটা সম্ভব কলা এড়িয়ে চলবেন।
৮. এছাড়াও, কিডনিতে যাদের সমস্যা আছে তারা কলা থেকে দূরে থাকবেন।
কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা কি কি সেগুলো আমাদের জানা হয়ে গেল। সবশেষে আরও একবার বলি কলা খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে যতটাই উপকারী, তার থেকে খুব কম সেই অপকারী। তাই যাদের কোন সমস্যা নাই তারা নির্দ্বিধায় প্রত্যেকদিন সকালে একটি করে কলা খান।