শসা একটি ফল। আবার অনেকের শসা কে সবজিও বলে মনে করেন। পূর্বে শসা দক্ষিন এশিয়ার ভিন্ন দেশগুলিতে পাওয়া যেত। পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বে শসা চাষ শুরু হয়। আমরা শসা খেয়ে থাকি নানা ভাবে।
যেমন স্যালাড হিসেবে বা কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকি। এমনকি যেকোনো অনুষ্ঠানে শসা খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। শসা খাওয়ার উপকারিতা। শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা Benefits and harms of eating cucumber in bengali
শসা খুবই সহজলভ্য একটি ফল। শসা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। মূলত গ্রীষ্মকালের ফল শসা। কিন্তু বর্তমান বাজারে এখন সারা বছরই পাওয়া যায়।
এবার জেনে নেব শসার মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে?
৩০০ গ্রাম শসার মধ্যে যে যে পুষ্টিগুণগুলি রয়েছে সেগুলি হল নিম্নলিখিত:
- ম্যাগনেসিয়াম -RDI এর ১০%
- পটাশিয়াম -RDI এর ১৩%
- ভিটামিন সি -RDI এর ১৪%
- কার্বোহাইড্রেট -১১ গ্রাম
- চর্বি -০ গ্রাম
- ফাইবার -২ গ্রাম
- ক্যালোরি -৪৫
- প্রোটিন -২ গ্রাম
- ফসফরাস
- সোডিয়াম
- কপার
- মিনারেল
- আয়রন
- জিংক
- ভিটামিন কে -RDI এর ৬২%
- ম্যাঙ্গানিজ -RDI এর ১২%
- আর শসার মধ্যে জলের পরিমাণ বেশি থাকে, প্রায় -৯৬%
এবার জেনে নাও শসার মধ্যে কি কি উপকারিতা আছে।
শসার উপকারিতা:
১. অনেক পুষ্টিগুণ আছে শসাতে।
শসা তে ক্যালোরি কম থাকে কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেল আছে শসার মধ্যে। শসার মধ্যে জলের পরিমাণও বেশি আছে।
২. শসা হাইড্রেশন প্রচার করে।
শসা আপনার শরীরে ক্রিয়াকলাপের জন্য জলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং বর্জ্য পণ্য ও পুষ্টির পরিবহনের মত প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকে। সঠিক হাইড্রেশন শারীরিক কর্মক্ষমতা থেকে বিপাক পর্যন্ত সবকিছুকে এই প্রভাবিত করতে পারে এই শসা।
আপনি আপনার জলের চাহিদা অধিকাংশই পানীয় বা অন্যান্য তরল পদার্থের মাধ্যমে পূরণ করেন, তখন কিছু মানুষের খাদ্য তাদের মোট জলের ৪০% পর্যন্ত পেতে পারেন শসা থেকে। জলের একটি ভালো উৎস হতে পারে ফল এবং সবজি।
শসাতে প্রায় ৯৬% জল আছে যা হাইড্রেশন বৃদ্ধি করতে পারে এবং আপনার প্রত্যেকদিনের জলের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
৩. শসা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
শসা আমাদের ওজন কমাতে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে। কেননা শসা তে জলের পরিমাণ বেশি থাকে তাই শসা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪. রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে শসা।
কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে শসা রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের মতো কিছু জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
৫. শসা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী।
যেসব মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাদের জন্য শসা খুবই উপকারী। কেননা, শসায় বেশি পরিমাণে জল আছে যা আমাদের মল নরম করতে সাহায্য করে।
শসা খেলে নিয়মিত মলত্যাগ হয়। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এবং শসা আমাদের শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক রাখে। যা মলের পথকে কঠিন করে তুলতে পারেনা।
শসা তো আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং জল যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সাহায্য করে।
৬. শসা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
শসার মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এবং ফাইবার আছে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে শসার রস নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে গেছে।
৭. শসা খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কম হয়।
শসার মধ্য থেকে ফাইবার কলোরেক্টাল ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। তাছাড়াও শসার মধ্যে থাকা শকুরবিটাসিন ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রাখে।
৮. শসা হজমের সহায়ক।
শসা আমাদের হজমের সহায়ক। কেননা, শসা খেলে আমাদের পেটের ঠান্ডা হিসেবে কাজ করে। আর শশায় দ্রবণীয় ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ধীর গতিতে করতে সাহায্য করে।
৯. শসা আমাদের ত্বকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
শসা আমাদের রূপচর্চায় খুব ভালো সাহায্য করে। শসার রস আমাদের ত্বকে লাগালে তা নরম ও উজ্জ্বল হয়। তাছাড়া শসার রস লাগালে আমাদের ত্বকের মধ্যে বলি রেখা এবং সুক্ষ রেখা ও হ্রাস পায়।
শসা তে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল থাকে। যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সিলিকা। এগুলি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শসাকে ভালো করে পেশাই করার পর আমরা আমাদের ত্বকের উপর ব্যবহার করতে পারি। এর ফলে আমাদের ত্বক পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল হবে।
১০. চুল ও নখের জন্য খুব ভালো।
শসার মধ্যে সিলিকা আছে যা চুল এবং নখের জন্য চমৎকার। সিলিকা নখকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং চুলকে ভঙ্গুর হওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।
১১. শসা হাড় মজবুত করে।
আমাদের হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে শসা। কেননা, শসার মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ইত্যাদি আছে। যা হাড়ের পেশিগুলিকে মেরামত করে উন্নত করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও শসাতে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আছে যা আমাদের হাঁটুতে, কোমরে বা হাতে, পায়ে ব্যথাকে কম করতে সাহায্য করে।
১২.শসা দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
হাসো খেলে আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নত হয়। কেননা শসার মধ্যে আছে ভিটামিন এ, যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। রাতকানার মত রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
১৩. শসা আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
শসা আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
শসা ও পুদিনা পাতা ভালো করে পেশাই করে জুস তৈরি করা যেতে পারে এবং সেই জুস আমরা খেলে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ রেচন এর মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়।
শসা খাওয়ার নিয়ম:
- শসা আমরা দুপুরবেলা খাবারের আধঘন্টা আগে বা রাতের খাবারের আধঘন্টা আগে খেতে পারি।
- খালি পেটে শসা খাওয়া উচিত নয়। কারণ হলো খালি পেটে শসা খেলে শসা হজম করা কঠিন হয়ে ওঠে।
- রাতে খাবার খাওয়ার পর শসা খেলে অনিদ্রা জনিত সমস্যা হতে পারে।
শসা খাওয়ার অপকারিতা গুলি জেনে নেব।
শসা খাওয়ার অপকারিতা:
- শসা খেলে অনেক মানুষের মধ্যে ফুসকুড়ি এবং পেট ফেঁপে যাওয়ার মতো হজমের সমস্যা হতে পারে
- যেসব ব্যক্তিদের কিডনির সমস্যা আছে। সেই সব ব্যক্তিদের বেশি শসা খাওয়া উচিত নয়। কারণ, শসা তাদের শরীরে জলের পরিমাণ ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়াতে পারে। যা ওই ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর।
- যেসব ব্যক্তির রক্ত পাতলা সেই ব্যক্তির খুব বেশি শসা খাওয়া উচিত নয়। কারণ শসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। যা রক্তে জমাট বেঁধে যেতে পারে।
- আর যেসব ব্যক্তির শসার এলার্জি আছে। তারাও যেন শসা থেকে দূরে থাকে কেননা তাদের আম্বাত ফোলা এবং শ্বাস নিতে অসুবিধার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
এতক্ষণ আমরা জেনে নিলাম শসা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে আমাদেরএই আর্টিকেলটি।
আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বুঝতে কোন সমস্যা হয়নি বোধ করি। আর যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।