বাঙালির খাবার ও আবার আলু ছাড়া ভাবাই যায় না। সেটা মাছের ঝোল হোক কিংবা সবজি রান্না আলু তো চাইই চাই। প্রায় সব রকম তরকারিতেই অল্প করে আলু দিলেই যেন তরকারির স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আলু খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। Benefits and harms of eating potatoes
আলু সহজলভ্য সস্তা পুষ্টিগুণে ভরপুর। আলু প্রায় গোটা বিশ্বই পাওয়া যায় সারা বছরই পাওয়া যায়।এবার আলু সম্পর্কে কিছু জেনে নেব।
আলুর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেব।
১০০ গ্রাম আলুর পুষ্টিগুণ:
- ক্যালরি :৯০
- ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- পটাশিয়াম: ১৭%
- ম্যাঙ্গানিজ: ১০%
- ম্যাগনেসিয়াম :৮%
- প্রোটিন: ২.৫ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ২৮.৬ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৮ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ১৮%
- ভিটামিন বি ৬: ১৮%
- নিয়াসিন:৮%
- ফসফরাস: ৮%
- শর্করা :১৯ গ্রাম
- ভিটামিন এ : ৪০ ইউনিট
- আয়রন : ০.৭মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম : ০.১১ মিলিগ্রাম
আলুর উপকারিতা:
১. আলুর রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আলুর মধ্যে আছে প্রতিরোধ স্টার্চ যা তন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টির উৎস। স্টার্চ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ উন্নত করে ও স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে যুক্ত থাকে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির স্টার্চ যুক্ত খাবার খাওয়া আর রক্তের শর্করা কে নিয়ন্ত্রণ করে।
২. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে আলু।
আলু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আলুর মধ্যে ক্যারোটিনয়ের, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক অ্যাসিড ফ্রি যাডিক্যাল ক্ষতিকর অনুগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যখন শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল জমা হয় তখন ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বেগুনি আলুতে সাদা আলুর চেয়ে তিনগুণ বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। আলু ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩. আলু হজমে সাহায্য করে।
আলু হজমের সাহায্য করে। আলুর মধ্যে আছে ফাইবার। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৪.আলু ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
আলু ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে। আলুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি। যেটা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কোলাজেন হল ত্বকের সাপোর্ট সিস্টেম। ভিটামিন সি ত্বকের ক্ষতি রোধ করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি কোলাজেন বলিরেখা ও ত্বকের গঠন উন্নত করতে সহায়ক।
৫. আলু উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
আলু উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যেসব ব্যক্তি ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য আলু খুবই উপকারী। কেননা, আলুর মধ্যে আছে পটাশিয়াম হাইপারটেনশন থেকে দূরে রাখে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা ও কমিয়ে দেয়।
৬. আলু ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
আলু আমাদের শরীরে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। যে সব ব্যক্তিরা ওজন কম সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য আলু খুবই উপকারী কেননা আলুর মধ্যে আছে কার্বোহাইড্রেট যা ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৭. আলু পেটে জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি দেয়।
আলু আমাদের পেটে জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি দেয়। কেননা আলুর মধ্যে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি। যা আমাদের পাচনতন্ত্রের প্রদাহ থেকে সৃষ্টি করে পেটে জ্বালা পোড়ার অনুভূতি থেকে মুক্তি দিতে পারে। ঘাটের ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসেও রোগীরা আলুর পুষ্টিগুণ থেকে উপকার পেয়ে থাকেন।
৮. আলু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আলু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে? মধুর সঙ্গে আলুর পেষ্ট ভালো করে মিশিন নেওয়ার পর নিয়মিত মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। আলুর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ফসফরাস ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য খুব ভালো উপকার দেয়।
৯. আলু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
আলু কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করতে খুবই উপকারী। কেননা আলুর মধ্যে আছে ফাইবার। যা এই সমস্যাকে দূর করতে দারুন ভাবে কাজ করে।
১০. আলু পাথর হওয়া বন্ধ করে।
অনেক সময় বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সে কারণ হাই-প্রোটিন যুক্ত খাবার শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আলুর মতো মূল জাতীয় সবজি যা পাথর জমতে বাঁধা দেয়। ক্যালসিয়াম জমে পাথর হওয়া থেকে আটকাতে আলুর মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম দারুন ভালো কাজ করে।
আলুর অপকারিতা:
- আলুর মধ্যে আছে হাই গ্লাসেমিক। যা রক্তের শর্করার মাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখায়। প্রতিদিন বেশি পরিমাণে আলু শরীরের রক্তের শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের আলু খাওয়া কমিয়ে দেওয়া উচিত।
- আলু কুচকে গেলে বা সবুজ থাকলে, অঙ্কুরিত বা সবুজ বিবর্ণ আলুর মধ্যে আছে সোলানিন নামক একটি বিষাক্ত যৌগ। যা রক্তের সঞ্চালনে এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা, মাথাব্যথা, এমনকি ডায়রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে।
- প্রত্যেকদিন আলু খেলে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য আলু এড়িয়ে চলায় ভালো। সব খাবারের মতো আলুও পরিমাণ মতো খাওয়াই উচিত।
সাধারণ প্রশ্ন:
মিষ্টি আলু খেলে কি ওজন কমে?
আলুতে কি ফ্যাট আছে?
আলু সেদ্ধ করতে কত সময় লাগে?
আলুতে কি পরিমান প্রোটিন থাকে?
আলু খেলে কি ক্ষতি হয়?
আলু বীজ শোধন করতে কি ব্যবহার করা হয়?
আলু কি সবজি?
আলুর গুরুত্ব কি?
আমরা জেনে নিলাম আলুর উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলি। সবশেষে বলা যায়, আলুর ভালো দিক খারাপ দিক বিচার করে পরিমাণ মতো খাবেন। আশা করি, আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে এবং ভালো লেগেছে। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।
Related Topics :
- সিদ্ধ আলু খাওয়ার উপকারিতা
- আলু খাওয়ার অপকারিতা
- আলু খেলে কি মোটা হয়
- আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- রূপচর্চায় আলুর উপকারিতা
- সিদ্ধ আলু খাওয়ার অপকারিতা
- মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা
- আলু খাওয়ার নিয়ম