আমের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
আমের বিজ্ঞান সম্মত নাম হল Mangifera Indica।আমের ইংরেজি নাম কি?
আমের ইংরেজি নাম হল Mango।এবার আমরা জেনে নেব আম খাওয়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
আমের পুষ্টিগুন:
- খাদ্যশক্তি
- শরকরা
- ফাইবার
- ফ্যাট
- কার্বোহাইড্রেট
- প্রোটিন
- ভিটামিন এ
- বিটা ক্যারোটিন
- লুটেইন জেক্সানথিন
- থায়ামিন
- নিয়াসিন
- রিবোফ্লাভিন
- ভিটামিন বি ৫
- ভিটামিন বি ৬
- ফোলেট
- কোলিন
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন কে
- আয়রন
- ক্যালসিয়াম
- ফসফরাস
- ম্যাগনেসিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- পটাশিয়াম
- সেলেনিয়াম
- কপার
- জিংক
- সোডিয়াম
- ওমেগা-৩
- ওমেগা-৬
- সম্পৃক্ত
- মনোস্যাচুরেটেড
- পলিআনস্যাচুরেটেড
- জল
প্রতি ১০০ গ্রাম আমের পুষ্টি উপাদান:
- খাদ্যশক্তি - ৬০ কিলো ক্যালরি
- শরকরা - ১৩.৭ গ্রাম
- ফাইবার - ১.৬ গ্রাম
- ফ্যাট - ০.৩৮ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট - ১৫ গ্রাম
- প্রোটিন - ০.৮২ গ্রাম
- ভিটামিন এ - ৫৪ মাইক্রোগ্রাম
- বিটা ক্যারোটিন - ৬৪০ মাইক্রোগ্রাম
- লুটেইন জেক্সানথিন - ২৩ মাইক্রোগ্রাম
- থায়ামিন - ০.০২৮ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন - ০.৬৬৯ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাভিন - ০.৩৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৫ - ০.১৯৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৬ - ০.১১৯ মিলিগ্রাম
- ফোলেট - ৪৩ মাইক্রোগ্রাম
- কোলিন - ৭.৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই - ০.৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি - ৩৬.৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে - ৪.২ মাইক্রগ্রাম
- আয়রন - ০.১৬ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ১১ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস - ১৪ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম - ১০ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ - ০.০৬৩ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম - ১৬৮ মিলিগ্রাম
- সেলেনিয়াম - ০.৬ মাইক্রোগ্রাম
- কপার - ০.১১১ মিলিগ্রাম
- জিংক - ০.০৯ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম - ১ মিলিগ্রাম
- ওমেগা-৩ - ০.০৫১ গ্রাম
- ওমেগা-৬ - ০.০১৯ গ্রাম
- সম্পৃক্ত - ০.০৯২ গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড - ০.১৪ গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড - ০.০৭১ গ্রাম
- জল - ৮৩.৫ গ্রাম
আমের উপকারিতা:
- আম চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। কারণ কাঁচা আমের ভিটামিন এ ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ যেটা চোখের দৃষ্টি বাড়াতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। রাত কানা রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে আর চোখকে ভাল রাখতে কাঁচা আম খান।
- এছাড়া আমে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন শরীরের স্নায়ু গুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়।
- শরীরকে স্বতেজ রাখতে সাহায্য করে আম।
- আম খেলে ঘুম ভালো হয়। যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে তারা রাতে খাওয়ার পরে একটা করে আম খেয়ে দেখতে পারেন ঘুম ভালো হবে।
- আমের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের ভিটামিন সি এর পরিমাণ একটু বেশি। সেই কারণে কাঁচা আমটা যতটা পারবেন বেশি খাবেন পাকা আমের তুলনায়। ভিটামিন সি টা সংগ্রহ করে রাখার জন্য।
- এছাড়াও আমে বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম থাকায় হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে আম। সুতরাং আমের সিজনে যতটা পারবেন আম খান।
- আমের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিজেন। যেটা বিভিন্ন রকম ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যেমন ধরুন ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিউকেমেনিয়া, প্রোস্টেট ক্যান্সার এই ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে আম।
- আম মুখরচোখ খাদ্য তো বটেই। খেতে ভীষণ সুস্বাদু। দুধ দিয়ে আম দিয়ে ভাত দিয়ে মেখে খেতে খুব ভালো লাগে। সেই কারণে যতটা পারবেন আম খান বিভিন্ন রকম করে।
- আমি খনিজ লবণের পরিমাণ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সেই কারণে আপনার দাঁত, নখ, চুল গুলো মজবুত থাকবে একথাও বলা যায়।
- আমের মধ্যে প্রচুর রয়েছে ইনজ্যেন। যেটা শরীরের প্রোটিনের অণুগুলোকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যার জন্য আমাদের হজম শক্তি অনেক অংশে বৃদ্ধি পাবে।
- অনেকেরই ধারণা আছে আম খেলে হজম হয় না পেট খারাপ হয়। এই সমস্যাটা তখনই হবে যখন আপনি অতিরিক্ত আম খাবেন। আপনি যদি কম করে আম খান তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিই হবে।
- প্রতিদিন আম খেলে শরীরের ক্ষয় রোদ হয় এবং স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই জন্য প্রতিদিন একটা করে আম খাওয়া যেতেই পারে।
- এছাড়াও আমে রয়েছে ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড ও টারটারিক অ্যাসিড। যেটা শরীরের খার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- কাঁচা আমের প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। সেই কারণে যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রয়েছে তারা যদি আম খায় তাদের এই সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে।
- আম শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সে কারণে আম আমাদের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। শুধু যে খেতেই সুস্বাদু তা কিন্তু নয়। আম কিন্তু আমাদের শরীরে ভীষণ উপকার করে সেটা কাঁচাই হোক বা পাকায় হোক। অবশ্য যদি আপনি আম অতিরিক্ত পরিমাণে খান তাহলে কোন না কোন ক্ষতি তো নিশ্চয় হতেই পারে।
- পাকা আম খেলে আমাদের স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। পাকা আম খাওয়ার ফলে গ্লোট্রনিক অ্যাসিড আমাদের মস্তিষ্কের কোস গুলোকে উজ্জীবিত করে আমাদের মনোযোগ বাড়িয়ে দেয়। তাই পরীক্ষার সময় আমাদের মস্তিষ্কের চাপ তখন বেশি থাকে তখন আম খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
- হৃদরোগ ও অ্যালজেমা প্রতিরোধ করে পাকা আম। আমি প্রচুর ক্যারোটিন থাকে, যা ভিটামিন এ এর উৎস। তাই পাকা আম হৃদ রোগ ভুলে যাওয়ার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- পাকা আম মিনারেল এর ঘাটতি মেটায়। আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে তাই শারীরিক প্রশিক্ষণের পর শরীরের পটাশিয়াম ঘাটতি কমাতে আম বেশ উপকারী।
- প্রতিদিন দৌড়ঝাপের পর আমাদের শরীরে যে লবণের ঘাটতি ঘটে সেটা পূরণ করে পাকা আম।
- পাকা আম ঠান্ডা বা ফ্লও দূর করতে সাহায্য করে।
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য আম খুব উপকারী। আমি প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড থাকে। যা গর্ভবতীদের জন্য এবং গর্ভে থাকা শিশুর জন্য খুব উপকারী।
আমের অপকারিতা :
- আম অনেকের এলার্জি থাকে।
- বেশি আম খেলে ওজন বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে।
- আমি প্রচুর সুগার থাকে তাই ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য আম ক্ষতিকর।
- কিডনির সমস্যা যাদের আছে তাদের আম খাওয়া উচিত নয়। আম খেলে কিডনির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- যারা অ্যাজমাতে ভুগছেন তারা আম কম খাবেন বা খাবেন না বললেই চলে।
- আমি আরো কিছু উপাদান আছে যেগুলো শরীরের ক্ষতি কর। যেমন ফিটোকেমিক্যাল, কম্পাউন্ড তথা গ্যালিক অ্যাসিড,ম্যাঙ্গফেরিন, কোয়ানেরটিন এবং টেনিন বা কস জাতীয় উপাদান এই উপাদানগুলি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
বিভিন্ন চিকিৎসকজন জানিয়েছেন পাকা আম খাওয়া ভালো, তবে খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। পাকা আমের রয়েছে নানা ভিটামিন। যেমন-- ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিন। আবার রয়েছে উচ্চ মাত্রা চিনি, কার্বোহাইড্রেড ও গ্লাইসেমিক। তাছাড়া পাকা আমের ফিনোলিকস জাতীয় উপাদান থাকার কারণে তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ভালো উৎস।
পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার ফলেই শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চিকিৎসকের কথায়, যাদের সুগার রয়েছে, তারা একেবারেই দূরে থাকুন আমের থেকে। কেননা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে আম ক্ষতি করেতে পারে শরীরের।
চিকিৎসকের কথায় যারা অ্যাজমা তে ভুগছেন তারা প্রয়োজনের কম খান আম। কিডনির সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের পক্ষেও আম খাওয়া উচিত নয়।
পাকা আম অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ। রক্তে সুগারের পরিমাণও বেড়ে যাবে।
আয়ুর্বেদ ও ইউনানী পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকার রূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম এমনকি কাঁচা আম মহা ঔষধ। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারি। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো আমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা যন্ত্রণা উপশম করে। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।
আম গাছের কলম করার পদ্ধতি :
আমরা সবাই জানি কলম পদ্ধতিতে গাছ লাগালে গাছ তাড়াতাড়ি ফল দিতে শুরু করে মানে অল্প দিন প্রতিপালন করার পরই গাছটি থেকে ফল দিতে শুরু হয় তাই এখন আমরা জেনে নেব আম গাছের কলম করার পদ্ধতিতে।
আম গাছের কলম করার জন্য প্রথমে আমাদেরকে একটি আম গাছ নির্বাচন করতে হবে। আমরা প্রথমে আম গাছের বাকলটি সামান্য পরিমাণে একটু ছাড়িয়ে নেব। মনে রাখতে হবে মূল কাণ্ডের যেন কোনরকম ক্ষতি না হয়। এরপর আমরা একটি ভালো জাতের আম গাছের শায়ন সংগ্রহ করে নেব। সংগ্রহ করার পর আমরা এর পাতাগুলো ছেটে নেব। তারপর ওই যে আম গাছের সায়নটি নিলাম ওই সায়নটির একটু বাকল টা তুলে নেব। তারপর নেব একটা এলোভেরার ডাল। এবং এলোভেরা জেল ভালোভাবে ওই গাছের সায়নটির ওপর লাগিয়ে নেব। এইবার আমরা সায়ন্তিকে মূল গাছের সঙ্গে বসিয়ে শক্ত করে কলম বাধা প্লাস্টিক দিয়ে বেঁধে দেব।
তারপর ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে দেখব ডালটি থেকে সুন্দর ভাবে নতুন কচি পাতা বেরিয়েছে। ওই যে প্লাস্টিক টি বেঁধেছিলাম ওইটি কিন্তু রেখে দেবো প্লাস্টিক বাধা অবস্থায় ছয় মাস। তাহলে তখন আর এই কলমটি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
আম গাছ কিভাবে লাগাবো?
আম গাছের কলমটি তৈরি হয়ে গেলে আমরা মাটিটা তৈরি করব। একটি গর্ত করব। তারপর সেই গর্তটি ১৫ থেকে ২০ দিন রোদ খাওয়াতে হবে। গোবর পচা দিতে হবে গর্ত টিতে। এবং ১৫ থেকে ২০ দিন পর ওই কলম করা চারাটি গর্তে পুতে দেব। তারপর হালকা করে জল দেবো। তারপর দেখব গাছটি আস্তে আস্তে লেগে যাবে এবং গাছটি এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করবে। গাছটি গোড়ায় মাঝে মাঝে গোবর পচা খোল পচা এইসব জৈব সার দিতে থাকলে দেখা যাবে গাছটিতে খুব সুন্দর এবং সুস্পষ্ট ফল দিচ্ছে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিয়েছি আম গাছ কেমন করে কলম করতে হয়, আম গাছ কিভাবে লাগানো হয়, আমের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি, আম ইংরেজি কি ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন সমস্যা থাকলে কমেন্টে জানান। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন।