লবঙ্গ খেলে এর কি উপকার আছে কিংবা এটা খেলে কি হয়? এসব না জেনে আমরা এটাকে শুধুমাত্র খাবারের স্বাদের জন্যই ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি যদি লবঙ্গের আসল উপকারের কথা জানেন তাহলে আপনি লবঙ্গকে শুধু মসলা হিসেবে নয়! বরং এটিকে শরীরের রোগ দূর করার জন্য ঔষধ হিসেবে খাবেন। এই সামান্য মসলা আপনার জন্য অনেক সুফল বয়ে আনতে পারে। আপনার শরীরে কোন রোগ হবে না যদি আপনি প্রতিদিন সঠিকভাবে লবঙ্গ খেতে পারেন। যদি আপনি লবঙ্গ খেয়ে রোগ দূর করতে চান; তাহলে লবঙ্গ একটি বিশেষ নিয়মে আপনাকে খেতে হবে। সেই বিশেষ নিয়মটি এখন আমরা জেনে নেব। প্রতিদিন লবঙ্গ খেলে কি হয়? What happens when you eat cloves everyday ?
তাহলে চলুন জেনে নিই লবঙ্গ আপনি কেন খাবেন? কিভাবে খাবেন?
লবঙ্গের ছোট আকৃতির সাথে এর পুষ্টিগুণ বোঝা যায় না। কারণ লবঙ্গ তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- প্রোটিন
- জিংক
- ক্যালোরি
- খাদ্য আঁশ
- কার্বোহাইড্রেট
- এছাড়াও ভিটামিন বি সিক্স
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন ডি
যেহেতু এত লম্বা একটা তালিকা রয়েছে এর খাদ্য গুনে; তাহলে বুঝতেই পারছেন। ছোট এই মসলাটির আপনি যদি সঠিকভাবে খান; তাহলে আপনার শরীরে কি কি উপকার হবে?
লবঙ্গের উপকারিতা:
১. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
লবঙ্গের উপকারিতার মধ্যে প্রথম কথা বলব, এটি হজম ক্ষমতাকে অনেক বাড়িয়ে তোলে। হজম ক্ষমতা এতটাই বাড়ায় যে, গ্যাস অ্যাসিডিটি বদহজম এর জন্য প্রায় সই ওষুধ খাচ্ছেন; এই ধরনের রোগে যারা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন; তাদের এই সমস্যা একদম ভালো হয়ে যাবে।
লবঙ্গ এনজাইম নিঃসরণ এর মাধ্যমে আমাদের হজম ক্ষমতা অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়।
২. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন লবঙ্গ খেলে তারা এই সমস্যাটিকে দূর করতে পারবেন।
৩. ডায়াবেটিস এর সমস্যা দূর করতে পারে।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আসলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সেই ব্যক্তির দেহের প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হয় না।
কিন্তু লবঙ্গের রস শরীরের ভেতরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এইজন্যই বলছি যারা ডায়াবেটিসটা আক্রান্ত হয়েছেন বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে তারা অবশ্যই প্রত্যেকদিন লবঙ্গ খাবেন।
৪. শরীরের জ্বালাপোড়া কমায়।
যাদের শরীর জ্বালাপোড়া করা বা হাত-পায়ের তালু জ্বালাপোড়া সমস্যা আছে, তারাও প্রতিদিন লবঙ্গ খাবেন।
নানা কারণে অনেক সময় আমাদের শরীরের প্রদাহ এতটাই বেড়ে যায় যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ওপরেও খারাপ প্রভাব পড়ে যায়। এর ফলে কিন্তু অনেক রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে আপনি অবশ্যই লবঙ্গ খাবেন। এতে রয়েছে Anti-inflammatory উপাদান। এই জন্যই শরীরের ভেতরের প্রদাহের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর ফলে কোন রোগ আপনার শরীরে থাকতে পারে না।
৫. ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগ ও দূরে থাকবে এই লবঙ্গ খেলে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার প্রেস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম লবঙ্গ।
এই লবঙ্গের মধ্যে আছে প্রচুর মাত্রায় Anti-cancer এজেন্ট। যদি প্রতিদিন সঠিকভাবে লবঙ্গ খান; তাহলে শরীরের ভেতরে ক্যান্সার নিরোধকের উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ক্যানসার সেল জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে তাদের ধ্বংস করে ফেলবে।
৬. যারা মানসিক অবসাদ বা খুব দুশ্চিন্তা হওয়া; এছাড়াও ঘুম না হওয়া। এইসব সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা অবশ্যই লবঙ্গ খেতে ভুলবেন না।
৭. জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।
যারা জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন তারাও লবঙ্গ খাবেন।
৮. দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
যারা দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন তারাও লবঙ্গ খেতে পারেন।
বারবার লবঙ্গ খাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কারণ লবঙ্গ তে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান।
এই এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আপনার হাড়ের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এবং আপনার হাড়ের ব্যথাও একদম দূর করে দিতে পারে ।
মাংসপেশির ব্যথা থেকে শুরু করে বেশি টান লাগা অর্থাৎ যেকোনো ব্যথা দূর করতে পারে এই লবঙ্গ।
লবঙ্গ খাওয়ার পাশাপাশি শরীরের ব্যথা বাড়লে আরেকটি প্রক্রিয়া আছে। যে প্রক্রিয়ায় আপনার ব্যথা দ্রুত কমে যাবে।
চার পাঁচটা লবঙ্গ খেয়ে খুব ভালো করে বেটে নিন এবং তারপর এক থেকে দুই চামচ জলে লবঙ্গ বাঁটাটি ভালো করে গুলে নিন। তারপর ওইটিকে ফ্রিজে ভরে দিন। ঠান্ডা হলে ব্যথার জায়গায় তা মলমের মতো ব্যবহার করে দেখুন। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবেন ব্যথা একবারই কমে গেছে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।
৯. সাইনাসের সমস্যা দূর করতে পারে।
যারা সাইনাসের সমস্যায় ভুগছেন নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। তারাও কিন্তু লবঙ্গ খাবেন।
লবঙ্গ খুব দ্রুত এই সমস্যা দূর করতে পারে। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির মধ্যে রয়েছে "ইগুইনাল" নামক একটি বিশেষ উপাদান। যেটি শাইনাসের কষ্ট কমাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. শরীরের ভিতরে জীবাণুকে মেরে ফেলে।
লবঙ্গের আরেকটি বিশেষ গুণ হলো শরীরের ভিতর থাকা জীবানু গুলোকে মেরে ফেলতে পারে।
লবঙ্গে আরো থাকে "ভোলাটাইল" অয়েল। যা দেহে উপস্থিতি টক্রিক উপাদানকে বের করার পাশাপাশি শরীরে জীবাণু কেউ মেরে ফেলে ।
এইটার ফলে সংক্রমণ জনিত কষ্ট গুলো কমতে থাকে। ভাইরাস জনিত যেকোনো সমস্যায় নিরাময় হয় লবঙ্গ খেলে।
আগেও বলেছি লবঙ্গে রয়েছে ভিটামিন কেএবং ভিটামিন ই। যে ভিটামিন গুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ভাইরাস গুলো মরে যায়।
১১. শরীরের রক্তকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
লবঙ্গ শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর উপাদানকে সরিয়ে রক্তকে শুদ্ধ করে। রক্ত পরিষ্কার করতে লবঙ্গ খুব দ্রুত কাজ করে।
১২. পিপাসা রোগ দূর করে লবঙ্গ।
অনেকেই বলে থাকেন যে তাদের পিপাসা রোগ রয়েছে অর্থাৎ তাদের ঘন ঘন জল তেষ্টা পাই।
যদি এরকম সমস্যা হয় তাহলে লবঙ্গ খেতে হবে লবঙ্গ খেলে এরকম সমস্যা দূর হয়ে যায়।
১৩. খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
লবঙ্গ খাবারের রুচি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মানে যারা ধরুন রোগা বা তাদের খাবারে অরুচি। তাদের শরীরের জোর আনতে এবং খুব দ্রুত খাবারের রুচি আনতে লবঙ্গ সাহায্য করে। লবঙ্গ খেলে খিদে বৃদ্ধি পায়।
১৩. টেষ্টোটরন হরমোন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
লবঙ্গ সহবাস হরমোন অর্থাৎ টেস্টোটরন হরমোন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
লবঙ্গের সুবাস যেমন দ্রুত অবসাদ দূর করে শরীরে মনের ক্লান্তিকে সরিয়ে দিতে পারে। ঠিক তেমনি দ্রুত আপনার সহবাস শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
মানুষের মনে যখন অবসাদ বা ক্লান্তি দূর হয়ে যায় তখন মানুষের যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। তাই যারা বিবাহিত নারী পুরুষ আছেন তারা লবঙ্গ খেতে পারেন ।
১৪. চুল পড়া বন্ধ করে লবঙ্গ এবং চুল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
চুল ঝরে পড়া বন্ধ করে লবঙ্গ। আবার চুল বৃদ্ধিতেও খুব সাহায্য করে লবঙ্গ। মাথার ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে লবঙ্গ।
১৫. ত্বকের পক্ষে ভালো।
ত্বকের পক্ষে লবঙ্গ খুব উপকারী। ব্রণের দাগ দূর করতে খুব ভালো কাজে দেয় লবঙ্গ। কারণ লবঙ্গের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।
১৬. ওজন কমাতে লবঙ্গ সাহায্য করে।
ওজন কমাতে লবঙ্গ খুব ভালো কাজ করে। দ্রুত ওজন কমাতে লবঙ্গ সাহায্য করে।
এছাড়াও লবঙ্গ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের রাখতে সাহায্য করে। হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। লবঙ্গ সক্রিয় যৌগ ঘুমাতে সাহায্য করে।
লবঙ্গ খাওয়ার অপকারিতা:
লবঙ্গ তেল খিচুনি, লিভারের ক্ষতি এবং ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করতে পারে। যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতি হতে পারে।
লবঙ্গ খাওয়ার পদ্ধতি:
প্রথমে ২-৩ টা লবঙ্গ নেবেন তারপর এক চা চামচ মধু ও এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম দুধ নেবেন। মধু ও দুধ একসাথে মিশিয়ে নেবেন। তারপর সাতটা লবঙ্গ চিবিয়ে খেয়ে নেবে এবং ওই দুধ মিশ্রিত মধু খেয়ে নেবেন। সকালে খালি পেটে রাতে খাবার খেতে লবঙ্গ খেয়ে দেখুন।
এছাড়াও আপনি সকালে এবং রাতে খাবার পরে ২ টি লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে পারেন। তারপরে এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম জল বা কুসুম কুসুম গরম দুধ খেতে পারেন।
তবে লক্ষ্য রাখবেন লবঙ্গের ফুলটি শুদ্ধ খাবেন যদি লবঙ্গের ওই ফুলটি না খান তাহলে লবঙ্গের ৯৯ ভাগ গুণ আপনি ফেলে দেবেন।