পেঁয়াজের মধ্যে আছে বেশ কিছু খাদ্য গুণ। পেঁয়াজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি নিত্য সঙ্গী। বা বলা যেতে পারে পেঁয়াজকে আমাদের প্রত্যেক দিনই প্রয়োজন পেঁয়াজ ছাড়া আমাদের এক বেলা চলে না। পেঁয়াজ নিয়ে একটা কথা দারুন প্রযোজ্য আছে - "যত কাঁদবেন, তত হাঁসবেন"। কারণ পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে আমাদের সবাই কেই কাঁদতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে পেঁয়াজের শরীরে উপস্থিতিতে বেশ কিছু উপকারী উপাদান একাধিক রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজ খেলে কি হয়? কাঁচা পেঁয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা। What happens when you eat onions? Benefits and harms of raw onion.
পেঁয়াজের মধ্যে কি কি উপাদান আছে?
- মিনারেল
- ফাইবার
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন বি নাইন ইত্যাদি।
এবার জেনে নেওয়া যাক পেঁয়াজ আমাদের কি কি উপকার করে।
পেঁয়াজের উপকারিতা:
১. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে ।
কাঁচা পেঁয়াজ খেলে আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। কারণ, কাঁচা পেঁয়াজ আমাদের মুখ গহ্বরের উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মারতে শুরু করে। তার সাথে সাথে আমাদের মাড়িতে বিভিন্ন রকম রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
২. শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
কাঁচা পেঁয়াজ খেলে আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাকে বাড়িয়ে একদিকে যেমন শরীরকে চাঙ্গা, রাখে ঠিক তেমনি অন্যদিকে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৩. জ্বরের প্রকোপ কমায়।
কাঁচা পেঁয়াজ আমাদের জ্বরের প্রকোপের হাত থেকে রক্ষা করে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটা পেঁয়াজ কেটে নিন। তার সাথে অল্প একটু আলু এবং দু কোয়া রসুন মিলিয়ে নিয়ে মোজার মধ্যে রেখে সেই মোজাটি পড়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এইভাবে কয়েকদিন করলে দেখবেন আপনি সুস্থ হতে শুরু করেছেন।
৪. ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
ডায়াবেটিস্ট বা ব্লাড সুগারকে দমিয়ে রাখতে পেঁয়াজের কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ পেঁয়াজের মধ্যে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান রক্তের শর্করার মাত্রাকে বাড়তে দেয় না। এই সেই সঙ্গে ইনসুলিন এর ঘাটতি মেটায় কাঁচা পেঁয়াজ। ফলে ডায়াবেটিস্ট বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে।
৫. পুড়ে গেলে পেঁয়াজ ভালো কাজে আসে।
রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। ওই পুড়ে যাওয়া স্থানে পিঁয়াজ কিন্তু দারুন উপকার করে। পুড়ে গেলে সেই ক্ষতস্থানে একটু পেঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বালা ভাব কমে গেছে আর ক্ষত স্থানটিও সেরে গেছে।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
পেঁয়াজ ক্যান্সারের মতো রোগ দিয়েও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ঘাড়ের, কোলোন এবং ব্রেন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। কারণ পেঁয়াজের মধ্যে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরের মধ্যে ক্যান্সার কোষের জন্ম হতে দেয় না।
৭. কাশি কমাতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ আমাদের কাশি কমাতে খুব সাহায্য করে। কিভাবে? একটা পেঁয়াজকে কেটে, তারপর তার রস বের করে নিন। তারপর ওই রসে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। তার পরে ওই মিশ্রণটি দিনে কম করে দুইবার খেলে কাশি কমে যেতে শুরু করবে.
৮. আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে।
আমাদের অনেকেরই শরীরে এখানে ওখানে আঁচিল দেখা যায়। সেটা অনেকেই পছন্দ করেন না। তাই সেই আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে এই পেঁয়াজ। কিভাবে সাহায্য করে? একটি পেঁয়াজকে গোল করে কেটে নিন। তারপরে যেখানে আঁচিল আছে, সেখানে পেঁয়াজটি লাগান এবং পেঁয়াজ টিকে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিন এমন ভাবে যাতে পেঁয়াজটি না পড়ে যায়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এরকম কয়েকদিন করলে দেখবেন আঁচিলটি খসে পড়ে গেছে।
৯. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কাঁচা পেঁয়াজ খেলে স্মৃতিশক্তি ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
১০. হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
কাঁচা পেঁয়াজ খেলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। যাদের বদহজমের মত সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন একটু করে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। কারণ, পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে ফাইবার এবং প্রিবায়োটিক্স হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ খাবার হজমের জন্য বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় এনজাইম বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে পেঁয়াজ খেলে দ্রুত খাবার হজম হয়ে যায়।
১১. চুল পড়া কমে যায়।
পেঁয়াজ আমাদের চুলের পক্ষে খুবই উপকারী। চুল বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী। পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার। যেটা চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। চুল ভেঙ্গে যাওয়ার রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
১২. হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা পেঁয়াজ খেলে আমাদের হাড় শক্ত হয়, কেননা পেঁয়াজের মধ্যে আছে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার যা ইমিউনিটি বাড়ায় এবং হার্ড শক্ত করে। পেঁয়াজের মধ্যে আছে ভিটামিন সি। যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা পেশী গঠনে সাহায্য করে।
পেঁয়াজের মধ্যে আছে ভিটামিন বি, বি নাইন, বি সিক্স মেটাবলিজম বাড়ায়।
১৩.লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১৪. ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজের মধ্যে থাকা উপকরন গুলি আমাদের শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে
১৫. যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কাঁচা পেঁয়াজ বিভিন্নভাবে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিভাবে উপকার করবে তা জেনে নেওয়া যাক। কাঁচা পেঁয়াজের রসের সঙ্গে কালো খোসা বিশিষ্ট বিউলির ডাল গুড়ো করে তারপর সাত দিন পর্যন্ত ভিজিয়ে রেখে তারপর তাকে শুকিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার কাম উত্তেজনা বজায় রাখবে এবং শারীরিক মিলন সুদৃঢ় হবে।
এবার পেয়াজের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করছি।
পেঁয়াজের অপকারিতা:
১. অ্যালার্জির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের পেঁয়াজ থেকে দূরে থাকাই ভালো। অ্যালার্জির একটি অন্যতম উৎস হলো পেঁয়াজ। আর কারো যদি পেঁয়াজের কারণে অ্যালার্জি হয় তাহলে পেঁয়াজ খেলে ত্বকে এবং চোখের লাল ভাব, ত্বকে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট শরীরে জ্বালাতন ইত্যাদি অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
আমরা জেনে নিলাম পেঁয়াজ খেলে কি হয়। তাই যাদের কোন শারীরিক সমস্যা নয় তারা নির্দ্বিধায় কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন।