পটলের উপকারিতা ও অপকারিতা - পটল সবজির ইংরেজি কি - আমরা অনেক সবজির নাম শুনেছি এবং তার স্বাদও পেয়েছি। সেই সবজিদের মধ্যে একটি সবজি হলো পটল। পটল দেখতে ছোট হলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারিতা। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব পটল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
পটল সবজির ইংরেজি কি ? পটল সবজি in English?পটল সবজি Bangla to English meaning? পটল সবজি meaning in English?
পটল সবজির ইংরেজি হলো Pointed gourd
পটলের উপকারিতা ও অপকারিতা - পটল সবজির ইংরেজি কি |
পটল কি?
পটলের বিজ্ঞান সম্মত নাম হল Trichosanthes dioica Roxb. (Trichosanthes dioica Roxb.)। পটর হল উদ্ভিদের Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্গত। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, পটলের অনেক ঔষধি গুণ আছে। পটলের ঔষধি বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে আছে অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক (রক্তের গ্লুকোজ-হ্রাসকারী বৈশিষ্ট্য), অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক (কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী বৈশিষ্ট্য), অ্যান্টি-টিউমার, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ডায়রিয়াল (ডায়রিয়া-উপশমকারী বৈশিষ্ট্য)। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য গুলি স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপায়ে উপকারী হতে পারে ও অনেক রোগের উপসর্গও কমাতে সাহায্য করে।
এবার আমরা জেনে নেব পটলের উপকারিতা সম্পর্কে।
পটলের উপকারিতা:
১. পটল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়।
ডায়াবেটিস সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য পটল খাওয়া খুবই উপকারী। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, পটলের মধ্যে আছে অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । এছাড়াও NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে পটলের নির্যাস আটাশ দিন একটা ইঁদুরকে খাওয়ানো হয়েছিল। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে। তাই বলা যেতে পারে যে, পটল ব্যবহার ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
২. পাচনতন্ত্রের জন্য পটল একটি উপকারী উপাদান।
ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ এই পটল খাওয়ার ফলে, ক্ষুধা ও হজম প্রক্রিয়ার উন্নতিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পটলের মধ্যে আছে আলসার প্রতিরোধী প্রভাব, যা পাকস্থলীকে আলসার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, চিকিৎসকদের মতে, পটলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, তা ছাড়া পটলের মধ্যে থাকা বীজ খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যে খুব উপকারী হতে পারে। তবে পটলের কোন বৈশিষ্ট্যগুলি পরিপাকতন্ত্র নিরাময়ে উপকারী তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
৩. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে পটল।
কোলেস্টেরলের সমস্যা কিছুটা দূর করতে সাহায্য করে পটল। আমরা উপরে উল্লেখ করেছি, পটলের মধ্যে আছে অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক বৈশিষ্ট্য যা, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। পটলের এই বৈশিষ্ট্যটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে উপকারী একটি উপাদান। এছাড়াও, NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, কোলেস্টেরলের সমস্যা কমাতে পটলের নির্যাস উপকারী। এই নির্যাস মোট কোলেস্টেরল, LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড (রক্তে উপস্থিত চর্বি) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং HDL (ভাল কোলেস্টেরল) মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৪. জন্ডিসের চিকিৎসায় পটলের উপকারিতা।
জন্ডিসের মতো রোগ এড়াতেও পটল সাহায্য করে। বেঙ্গল স্কুল অফ টেকনোলজি (পশ্চিমবঙ্গ) দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, পটলের শিকড়গুলি ঐতিহ্যগত ভাবে ভারতে একটি হাইড্রোগগ ক্যাথার্টিক, টনিক ও ফেব্রিফিউজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আনাসারকা (পুরো শরীরের সাধারণ ফোলা) ও অ্যাসাইটিস (সাধারণভাবে ফোলা) এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, চরক সংহিতা অনুসারে, পটলের পাতা ও ফলের নির্যাস অনেক সমস্যার সাথে জন্ডিস উপশমে সাহায্য করতে পারে।
৫. মদ্যপানের সমস্যা কাটাতে পটল সাহায্য করে।
অ্যালকোহলিজম মানে হলো অ্যালকোহলের আসক্তি। যার কারণে অনেক ধরনের মানসিক বা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। পটল এই ধরনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় চরক সংহিতা থেকে বেশ কিছু তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চরক সংহিতা অনুযায়ী, পটলের পাতা এবং ফল ব্যবহারের ফলে মদ্যপানের সমস্যা কমানো যেতে পারে। এই মুহুর্তে, এই তথ্যটি সত্যটি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রয়োজন।
৬. পটল ওজন কমাতে সাহায্য করে।
স্থূলতা এবং ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে পটল। হাইপারগ্লাইসেমিক ইঁদুরের উপর দুই সপ্তাহের জন্য পরিচালিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, পটলের নির্যাস খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল এবং শরীরের ওজন কম হয়। এই গবেষণা থেকে অনুমান করা হয় যে শরীরের ওজন কমাতে পটল একটি উপকারী উপাদান হতে পারে। তবে ওজন কমাতে পটলের কোন বৈশিষ্ট্যটি উপকারী তা এখনো স্পষ্ট নয়। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের মতে, কম ক্যালরি এবং উচ্চ আঁশের কারণে পটল খাওয়ার জন্য হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়।
৭. পটল একটি রক্ত পরিশোধক হিসাবে কাজ করে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, পটল রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক রোগ নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। এটির রক্ত পরিশোধক বৈশিষ্ট্য আছে, যা রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং অনেক ধরনের গুরুতর রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। শরীরকে অনেক কঠিন রোগ থেকে মুক্ত রাখতে রক্ত পরিশোধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এতক্ষণ আমরা জেনে নিলাম পটলের উপকারিতার সম্পর্কে এর পরে, আমরা এখানে জেনে নেব পটলের ব্যবহার সম্পর্কে।
পটলের ব্যবহার :
পটলকে আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারি। যেমন :
- পটলকে রসালো সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- আলু ও টমেটো দিয়ে তৈরি করা যায় পটলের শুকনো সবজি বানানো যেতে পারে।
- পটলের মিষ্টি অনেক জায়গায় খুব আড়ম্বর সঙ্গে খাওয়া হয়ে থাকে।
- দক্ষিণ ভারতে, পটলকে সাম্বার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
এবার আমরা জেনে নেব পটল কতটা পরিমাণে খাওয়া উচিত?
পটলের পরিমাণ:
পটল কতটা পরিমাণে খাওয়া উচিত সে বিষয়ে কোনও গবেষণা পাওয়া যায় না, তবে এখনও সীমিত পরিমাণে পটল খাওয়াই উচিত। এ ছাড়া এর নিরাপদ পরিমাণ সম্পর্কে একজন খাদ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
উপরে আমরা জেনে নিলাম পটলের ব্যবহার সম্পর্কে। তার পরে এখন জেনে নেব পটলের কী কী ক্ষতি হতে পারে বা পটল খেলে এর অপকারিতা সম্পর্কে।
পটলের অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
পটলের ঔষধিগুণ যেমন উপকারী করে তোলে, ঠিক তেমনি অন্যদিকে তথ্যের অভাবে এটি খেলে ক্ষতিকরও হতে পারে। এখানে আমরা পটলের অপকারিতার কথা বলছি।
- যে সব ব্যক্তিদের কম চিনির সমস্যা আছে তাদের জন্য পটল খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। এর কারণ হলো অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রক্তে উপস্থিত চিনির মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে ।
- অনেক ব্যক্তিদের ত্বক সংবেদনশীল, সেই সব ব্যক্তিদের পটলের অ্যালার্জির প্রবণ হতে পারে।এছাড়াও যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম পটল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য। তাছাড়া ওর জেনে নিলাম পটল কি? পটল কিভাবে ব্যবহার করতে হয়? পটল কতটা পরিমাণে খাওয়া উচিত? ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে জেনে নিলাম। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ জানাই, সেসব বন্ধুদেরকে যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। সুস্থ থাকুন।