Dragon fruit : ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা? |
Dragon fruit : ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা? ড্রাগন ফলে কি ভিটামিন আছে? ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা জানার আগ্রহ প্রায় সবারই থাকে। ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। এই ফলটি খেতে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্য কারী।
ড্রাগন গাছ দেখতে সুন্দর। তবে কিছু ড্রাগন ফলের অপকারিতা থাকতে পারে। আমরা আজ এই আর্টিকেলে জেনে নেব, ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা। ড্রাগন ফল কি? ড্রাগন ফলের মধ্যে কি কি উপাদান? কি কি পুষ্টিগুণ আছে? এই সব প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নেব।
ALSO READ : Dragon fruit farming: ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি। ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়?
ALSO READ: Fennel seeds benefits : মৌরি উপকারিতা ও অপকারিতা।
ড্রাগন ফল কি?
ড্রাগন একটি গ্রীষ্মকালীন ফল প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান আমাদের ভারতবর্ষের জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খেতে সুস্বাদু ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলটির পিতায়য়া নামেও পরিচিত। এই ফলটি এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় ফল। ড্রাগন ফলের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল Hylicereus Undatus । এই ড্রাগন ফলের ফুল রাত্রে বেলায় ফোটে বিদেশি ফল গুলোর মধ্যে ড্রাগন একটি বিদেশি ফল যা আমাদের দেশে বেশি সম্ভাবনাময় ফল।
ড্রাগন ফল কম ক্যালরিযুক্ত এবং ফাইবার বেশি, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ সরবরাহ করে এই ড্রাগন ফল। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে মূলত লাল, সাদা, গোলাপি এবং হলুদ রঙের ড্রাগন ফল দেখতে পাওয়া যায়। ত্বক উজ্জ্বল, রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা, এছাড়াও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ড্রাগন ফল।
Also read : এটা করলে খারাপ Phone Free তে ঠিক হবে! - Weconnect care review in Bengali.
১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের মধ্যে যে পরিমাণ উপাদান থাকে:
- প্রোটিন --০.১৫-০.৫ গ্রাম
- আয়রন --০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম
- শর্করা --৯-১০ গ্রাম
- ফসফরাস --১৬-৩৫ গ্রাম
- জল --৮০ গ্রাম
- ভিটামিন বি ৩ --০.২-০.৪ মিলিগ্রাম
- খাদ্য শক্তি --৩৫-৫০ কিলোক্যালোরি
- ক্যালসিয়াম --৬-১০ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট -- ০.১০-০.৬ মিলিগ্রাম
- আঁশ --০.৩৩-০.৯০ গ্রাম
- ক্যারোটিন -- অল্প
- ভিটামিন এ -- অল্প
- থায়ামিন -- অল্প
- রিবোফ্লামিন -- অল্প
ড্রাগন ফলের উপকারিতা:
১. ড্রাগন ফল হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফল হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কেননা এই ফলটির মধ্যে রয়েছে আশ্চর্যজনক শক্তি। যা মানুষের রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমাতে। এবং ভালো কলেস্টরলের মাত্রকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হার্টকে ভালো অবস্থায় রাখতে মনোস্যাচুয়েটেড সাহায্য করে। আর মনোস্যাচুয়েটেড এর উপাদান সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এই ড্রাগন ফলের মধ্যে।
২. ড্রাগন ফল ওজন কমাতে আদর্শ খাবার।
ড্রাগন ফল আপনার ওজন কমাতে আদর্শ খাবার। কেননা ড্রাগন ফলের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ নাই বললেই চলে। আর ড্রাগন ফল আপনার শরীরের সঠিক ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. ড্রাগন ফল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফল আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, তার সাথে সাথে পাকস্থলীর প্রক্রিয়া পরিষ্কার করতেও সহায়ক। ড্রাগন ফলের মধ্যে আছে ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়।
৪. ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ড্রাগন ফল আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের মধ্যে আছে ফাইবার। যা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফল রক্তের শর্করার মাত্রা কমা করতে এবং চিনির মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ড্রাগন ফল খান।
৫. ড্রাগন ফল ক্যান্সার প্রতিশোধক হিসেবেও কাজ করে।
ড্রাগন ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কেননা ড্রাগন ফলের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনাকে ক্যান্সার উৎপাদনকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের মধ্যে ৯০% অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে।
৬. ড্রাগন ফল কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
বেগুনি ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। আর পটাশিয়াম কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়। তাই কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে বেগুনি ড্রাগন ফল নিয়মিত খান।
৭. চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নতি করতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল।
আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করতে বেগুনি ড্রাগন ফল চমৎকারভাবে সাহায্য করে। কেননা বেগুনি ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে। একটি গাজরের মধ্যে যে সকল ভিটামিন আছে। তাই একটা বেগুনি ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকে। আর আপনি গাজর খেতে যদি পছন্দ না করেন, তাহলে বেগুনি ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
৮. ড্রাগন ফল হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফল হার শক্ত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কেননা, ড্রাগন ফলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। যাও অন্যান্য কোন ফলের মধ্যে থাকে না। আর ম্যাগনেসিয়াম হারকে মজবুত এবং স্বাস্থ্য করতে সাহায্য করে।
৯. ড্রাগন ফল চুল পরা রোধ করে।
ড্রাগন ফল চুল পড়া রোধ করতে চমৎকার কাজ করে। ড্রাগন ফলের রস মাথায় চুলের গোড়ায় গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে, ৩০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। ফলে এটি আপনার চুল পেকে যাওয়া রোধ করবে, চুল ঝরে পড়া রোধ করবে এবং চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। ড্রাগন ফলের রস চুলের কোষ গুলোকে পুনরাবৃত্তি করতে সাহায্য করে। আপনার চুলগুলি অক্সিজেন পাবে এবং মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
১০. মুখে ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল।
মুখে ব্রনের সমস্যা দূর করতে ড্রাগন ফল কার্যকরী একটি উপাদান। কেননা আর ড্রাগন ফলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তাই এটি টপিকাল মলম হিসেবে কাজ করে।
এই টপিকাল মলমটি তৈরি করতে হলে, প্রথমে ড্রাগন ফলের ছোট ছোট টুকরো নিয়ে ব্যালেন্ডারে পেস্ট তৈরি করুন তারপরে মুখে যে সব জায়গায় ব্রণ আছে সেইসব স্থানে লাগান। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত কি অনুচিত, তা আমরা এখন জেনে নেব।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত কি অনুচিত? এই প্রশ্নটা প্রায় জনই করতে থাকেন। ড্রাগন ফলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যেটা সমস্ত গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপযুক্ত খাবার। তবে ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে, তার খাওয়ার নিয়ম জেনে নিয়ে তারপরে খাবেন।
ড্রাগন ফল এর অপকারিতা:
আমরা এতক্ষণ জেনে নিলাম ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলি কিন্তু ড্রাগন ফুলেরও কিছু অপকারিতা আছে সেগুলি সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকাই ভালো।
- অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রাগন ফল খেলে এলার্জি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রাগন ফল খেলে ডায়রিয়াও হতে পারে।
টবের মধ্যে ড্রাগন ফলে চাষ কিভাবে করব? সেই পদ্ধতি এখন আমরা জেনে নেব।
টবের মধ্যে ড্রাগন ফল চাষ:
ড্রাগন ফল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। যা পৃথিবীর অনেক জায়গায় জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফল প্রায়ই তাজা পাওয়া যায়, বিভিন্ন খাবারেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের চাষ বিভিন্ন উপায়ে করা হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে সাধারণ ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি একটি টপের মধ্যে ড্রাগন ফলের চাষ করা।
বড় টব নিতে হবে। টবের মাটিতে তৈরি হয়ে গেলে ২০ থেকে ২৫ দিন পর ২০ কেজি মতো পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর গর্ত করে ১০ থেকে ১৫ দিন পর চারা রোপন করতে হবে।
ড্রাগন ফল সম্পর্কে অন্যান্য প্রশ্ন:
ড্রাগন ফল কখন পাকে?
ড্রাগন ফল মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। তাই এটি গ্রীষ্মকালেই পাকে। মার্চের শেষে দিকে এপ্রিলের প্রথম দিকে ফলটি পাকে।
ড্রাগন চারা কোথায় পাওয়া যায়?
ড্রাগনের চারা মূলত নার্সারিতেই পাওয়া যাবে।
ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি?
ড্রাগন ফলের দামটা একটু বেশি। এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম কি?
আপেলের মতো করে কেটে চারভাগ করে খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়।
ড্রাগন ফল এর অপকারিতা কি
অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেলে অ্যালার্জি হতে পারে।
ড্রাগন ফল খেলে কি ক্ষতি হয়?
অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেলে এলার্জি হতে পারে। এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে।
ড্রাগন ফল খেলে কি প্রস্রাব লাল হয়?
ড্রাগন ফলের বীজ চিবিয়ে না খেলে কখনো কখনো হজম হয় না। আবার বেশি পরিমাণে ড্রাগন ফল খেলে হজম হয় না। বিশেষ করে লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার পর প্রস্রাবের রং লাল হতে পারে।
ড্রাগন ফলের কি উপকারিতা আছে?
ড্রাগন ফল এর উপকারিতা অনেক বেশি। যেমন ড্রাগন ফল খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ হবে। ড্রাগন ফল হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া ওজন কমাতে সাহায্য করে ইত্যাদি।
ড্রাগন ফল কত দিনে পাকে?
ড্রাগন ফল পাকতে সময় লাগে ফুল আসার পর থেকে দেড় মাস।
ড্রাগন ফল কত প্রকার?
ড্রাগন ফল মূলত তিন প্রকারের হয়। যথা -- সাদা, লাল এবং হলুদ।
ড্রাগন ফল খাওয়ার কি নিয়ম?
ড্রাগন ফল আপেলের মতো কেটে চার ভাগ করে খেতে পারেন। ড্রাগন ফলের যে খোসা বা উপরের চামড়াটি খাবেন না।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম ড্রাগন ফল সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য "Dragon fruit : ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা? ড্রাগন ফলে কি ভিটামিন আছে?" আমরা আজকে জেনে নিলাম ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। তার সঙ্গে জানলাম গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত কি উচিত না। আরো জেনে নিলাম ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম। তাছাড়া ড্রাগন ফলের চাষ কিভাবে করব বাড়িতে টবের মধ্যে ইত্যাদি। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।