Honey - মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। প্রাচীন কাল থেকেই মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে শুধু আমাদের দেশে তাই নয় বিদেশেও মধুর ব্যবহার আছে।
মধু খেতে আমরা ভালোবাসি অনেকেই। কেউ মধুকে গরম জলের সঙ্গে, চায়ের সঙ্গে ইত্যাদি নিয়মে খেয়ে থাকে। তো আজকে আমরা এই মধুর উপকারিতা এবং অপকারিতার সম্পর্কে জেনে নেব।
Honey 🍯 |
মধু ইংরেজি কি?
মধু ইংরেজি হল Honey ।
মধু কেমন হয়?
মধু হলো এক ধরনের মিষ্টি খাবার, ঘন এবং তরল পদার্থ। যেটা মৌমাছি এবং অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি করে। মৌমাছিরা মৌচাকে তার সংগ্রহ।
সুন্দরবনের মধু কেমন হয়?
সুন্দরবনের বেশিরভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে তৈরি হয়। সুন্দরবনের মধুর স্বাদ রং হালকা সুগন্ধ এবং ঔষধ এর গুন প্রসিদ্ধ।
মধুর বিশেষ গুণটি কি?
মধুর বিশেষ গুণটি হল কখনই নষ্ট হয় না। খাঁটি মধু বছরের পর বছর থেকে যায় নষ্ট হয় না কখনো নই।
এবার আমরা জেনে নেব মধুর মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ আছে?
মধুর পুষ্টিগুণ:
- ভিটামিন বি ১
- ভিটামিন বি ২
- ভিটামিন বি ৩
- ভিটামিন বি ৫
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ফসফরাস
- সোডিয়াম
- অ্যামিনো অ্যাসিড
- গ্লুকোজ
- ক্যালোরি
- জিংক
- আয়োডিন
- কপার
- অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান
- অ্যান্টি মাইক্রোবায়ন উপাদান
- এনকাইম
- ফ্রুক্টোজ
- সুক্রোজ
- মল্টোজ
- কার্বোহাইড্রেট
- ফ্যাট নেই
- প্রোটিন নেই
এবার আমরা জেনে নেব প্রতি ১০০ গ্রাম মধুর মধ্যে কি কি পুষ্টিমান আছে এবং কতটা পরিমাণে আছে?
প্রতি ১০০ গ্রাম মধুর পুষ্টিমান:
- খাদ্য শক্তি -- ৩০৪ কিলো ক্যালরি
- খাদ্য আঁশ -- ০.২ গ্রাম
- শর্করা -- ৮২.৪ গ্রাম
- চিনি -- ৮২.১২ গ্রাম
- ভিটামিন সি ০.৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ২ -- ০.০৩৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৩ -- ০.১২১ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৫ -- ০.০৬৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৬ -- ০.০২৪ মিলিগ্রাম
- ফোলেট -- ২ মাইক্রগ্রাম
- আয়রন -- ০.৪২ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম -- ৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম -- ২ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম -- ৫২ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস -- ৪ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম -- ৪ মিলিগ্রাম
- জিংক -- ০.২২ মিলিগ্রাম
- জল -- ৭.১০ গ্রাম
এবার আমরা জেনে নেব নিয়মিত মধু খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় ।
মধু খাওয়ার উপকারিতা:
১. মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত প্রতিদিন মধু খাওয়া হলে পাকস্থলীতে বাড়তে গ্লুকোজ তৈরি হয়। এই বাড়তি গ্লুকোজ মস্তিষ্কে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মেদ কমানোর হরমোন মিশ্রণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এবং মেদ কমে যায়।
২. মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মধুর রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধকারী শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যে কোনো রকম সংক্রমনের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
৩. মধু অনিদ্রা জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত রাতে মধু খেলে গভীর ঘুম হয়। ফলে অনিদ্রোজন তো সমস্যা দূর হয়।
৪. হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে মধু।
মধুর মধ্যে যেসব উপাদান আছে, সেসব উপাদানগুলি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে খাবার খাওয়ার পর বদহজং অম্বল বুক জ্বলা গলা জলা ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য মত সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
৫. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে মধু সহায়ক।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেলে, মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য হয়। ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি হয় অর্থাৎ বুদ্ধি বা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য হয়।
৬. মধু ত্বকের জন্য উপকারী।
মধু ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। কারণ মধুর মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বকের রং সুন্দর করতে এবং তারুণ্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৭. মধু রক্তের শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
মধু আমাদের শরীরের রক্তের শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। যেসব ব্যক্তির রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য মধু খুবই উপকারী। কারণ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে মধু।
৮. মধু দাঁত মজবুত করে।
মধু দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও মুখের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রকম ঘায়ের চিকিৎসায় মধু বেশ উপকারী একটি উপাদান।
৯. মধু সর্দি জ্বর উপশমে খুবই উপকারী।
সর্দি-কাশি, জ্বর উপশমের তুলসী পাতার সঙ্গে মধু মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
১০. যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক মধু।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে মধু সাহায্য করে। শারীরিক ও যৌন দুর্বলতা দূর করতে মধু বিশেষভাবে সাহায্য করে।
১১. বাতের ব্যথা দূর করতে মধু সাহায্য করে।
১২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে মধু।
১৩. রাতে কোলেস্টেরলের মাঝে কমাতে সাহায্য করে মধু।
১৪. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে মধু।
১৫. মধু দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
এবার আমরা জেনে নেব মধু খাওয়ার নিয়ম।
মধু খাওয়ার নিয়ম:
মধু খাওয়ার তেমন কোন নিয়ম নেই। তবে অবশ্যই নিয়মিত মধু খাওয়া উচিত। এতে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
- ১. প্রত্যেকদিন সকালে এক টেবিল চামচ মধু সরাসরি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
- ২. ওজন কমানোর জন্য, প্রত্যেকদিন সকালে এক টেবিল চামচ মধু হালকা লেবুর রস, কুসুম কুসুম গরম জলে সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে তারপর খাবেন।
- ৩. রুটির সাথে জেলি এর পরিবর্তে মধু খেতে পারেন।
- ৪. কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে রেখে, তারপর ওই ছোলার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়ে যায়।
মধু খাওয়ার সময়:
দিনের যেকোনো সময়েই মধু খেতে পারেন। দিনের যেকোনো সময় আপনি ক্লান্ত অনুভব করলে তখনই মধু খেতে পারেন তাহলে শরীরে এনার্জি যোগাবে।
তবে মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো খালি পেটে সকালবেলায়। সকালবেলায় খালি পেটে মধু খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে।
এবার আমরা জেনে নেব মধু খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।
মধু খাওয়ার অপকারিতা:
১. মধুর মধ্যে অ্যালার্জি আছে।
যেসব ব্যক্তি অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের মধু থেকে দূরে থাকাই ভালো। কারণ মধুর মধ্যে অ্যালার্জি আছে।
২. মধু খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
যেসব রোগীরা ডায়াবেটিস ভুগছেন তাদের মধু থেকে এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো। কারণ মধুর মধ্যে আছে ফ্রুক্টোজ। যা রক্তে শর্করা মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ডায়াবেটিসের রোগীদের সমস্যা হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত মধু খেলে পেট খারাপ হতে পারে।
অতিরিক্ত মাত্রায় মধু খাওয়ার ফলে পেটে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। যেমন বদহজম, বারবার পায়খানা যাওয়া, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।
এখন আমরা জেনে নেব মধু সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
মধু খাওয়ার পর কি খাওয়া যাবে না?
মধু খাওয়ার পর কখনোই চা দুধ বা জল খাওয়া উচিত নয়।
মধু কত দিন পর্যন্ত ভালো থাকে?
মধু বায়ু শূন্য পাত্রের মধ্যে রাখা হলে কখনোই খারাপ হয় না। ফলে এক বছর ব্যবহার না করা হলেও পরের বছর আপনি ওই মধুটিকে ব্যবহার করতে পারেন।
মধুর উপাদান কি কি?
মধুর মধ্যে আছে গ্লুকোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, খনিজ লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি উপাদান আছে।
সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খেলে কি হয়?
সকালে খালি পেটে মধু কালো জিরে মিশিয়ে খেলে শরীরের জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে দেহকে প্রস্তুত করে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যেকদিন সকালে নিয়মিত ঘুম থেকে উঠে কালোজিরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
এক টেবিল চামচ মধুতে কত ক্যালরি?
এক টেবিল চামচ মধুর মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৬৪ ক্যালরি আছে।
উপসংহার:
আমরা এতক্ষণ জেনে নিলাম মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতার সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য। এছাড়াও জানলাম মধু কখন খেতে হয়? মধু খাওয়ার নিয়ম? মধু কেমন হয়? সুন্দরবনের মধু কেমন হয়?
ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয় জেনে নিলাম। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। আর যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। যদি কোন সমস্যা থাকে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ, সুস্থ থাকুন।
আর্টিকেলটি পড়ে খুবই উপকৃত হলাম।
উত্তরমুছুনThankyou
মুছুন