জাম ফলের বিভিন্ন রকম নাম:
জাম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন--জামভুল, জাম্বু, জামুন, জাভা প্লাম, কালোজাম, কালো প্লাম, পর্তুগিজ প্লাম, জাম্বুলা, জাম্বুল, জাম্বুলা ইত্যাদি।
জামের বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?
জামের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল " Syzygium Cumini "।
জামের English নাম কি?
জামের English নাম হল "Java Plum"
জামের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা :
- ক্যালসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- সুগার
- ক্যারোটিন
- চর্বি
- খাদ্যশক্তি
- আঁশ
- আমিষ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি
- মিনারেল
জামের পুষ্টি উপাদান:
- আমিষ আছে -- ৯.১%
- স্নেহ আছে -- ৪.৩%
- আঁশ আছে -- ১৭.০%
- ছাই আছে -- ৭%
- ক্যালসিয়াম আছে -- ১.৩%
- ফসফরাস আছে -- ০.১৯%
জাম থেকে কি কি জিনিস তৈরি হয়?
জান থেকে কবিরাজি ঔষধ তৈরি হয় ।এছাড়াও আয়ুর্বেদী ঔষধ তৈরি হয়। মদ এবং সিরকা তৈরি হয়।
জামের উপকারিতা:
১. জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ জামের মধ্যে গ্লাইসেমিক আছে খুবই কম। যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। জাম খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের দুর্বলতা, ঘন ঘন জল পিপাসা লাগা, এছাড়াও বার বার প্রস্রাব যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ গুলো নিরাময় করতে সাহায্য করে।
২. হৃদ যন্ত্র সুরক্ষা করতে সাহায্য করে জাম।
জাম খেলে আমাদের হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। কেননা জামের মধ্যে আছে পটাশিয়াম এবং ফসফরাস জাতীয় প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। যা আমাদের হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। হৃদরোগ উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে জাম। জামের মধ্যে আছে যেসব উপাদান সমূহ যা ধমনী গুলোকে সুস্থ রাখে এবং শক্ত হতে দেয় না।
৩. আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে জাম।
জাম খেলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা জামের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার। যেটা আমাদের লিভার কে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে জাম।
৪. জাম ব্রণ দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
জামের মধ্যে বিশেষ কিছু উপাদান আছে। যা পিম্পলস, ব্রণ সহ ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে পারে। জাম খেলে রক্ত পরিশোধিত হয় তাই ত্বক পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
৫. জাম ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
জাম ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কারণ জামের মধ্যে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সারের মতো মরণ রোগ সারাতে সাহায্য করে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে জামের মধ্যে আছে পলিফেনল, সেই কারণে অ্যান্টি কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্য যুক্ত। নিয়মিত জাম খেলে তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়।
৬. জাম সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
জামের মধ্যে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফেকটিভ, অ্যান্টি ম্যালেরিয়া বৈশিষ্ট্য। জামের মধ্যে আছে ম্যালিক অ্যাসিড, ট্যানিনস, গ্যালিক অ্যাসিড, অক্সলিক অ্যাসিড এবং বটুলিক অ্যাসিড। জাম আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রকম সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
৭. জাম রক্ত শোধন করতে সাহায্য করে।
জামের মধ্যে আছে আয়রন ও ভিটামিন সি। যা রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে। এবং রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৮. হাড় কে শক্ত করতে সাহায্য করে জাম।
জামের মধ্যে আছে আয়রন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম এর মত প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। যা হাড় এবং আমাদের দাঁতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
৯. জান আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
জাম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কেননা জামের মধ্যে আছে ভিটামিন বি ১ ভিটামিন বি ২ ভিটামিন বি ৩ ভিটামিন বি ৬ । এছাড়াও আছে ভিটামিন সি যা, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও জামের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য, শরীরের ভেতর এবং বাইরের সংক্রমণকেও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
১০. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে জাম।
জাম আমাদের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কেননা, জামের মধ্যে আছে ফসফরাস এবং পটাশিয়াম জাতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান। যা আমাদের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
১১. চোখের জন্যে জাম বিশেষ উপকারী।
জামের মধ্যে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি আর মিনারেল। যা আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী।
১২. শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে জাম।
জাম আমাদের শরীরে পাওয়ার কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কেননা জামের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তাই হাই লেভেল এবং সাধারণ সিজনাল সমস্যাগুলো সঙ্গে যুদ্ধ করে শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
জামের অপকারিতা:
- ১. আধ পাকা বা ডাঁসা জাম খাওয়া উচিত নয়। কেননা আমাদের শরীরে ক্ষতি হতে পারে।
- ২. খালি পেটে জাম খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে।
- ৩. জাম খাওয়ার আগে বা পরে যদি দুধ খাওয়া হয়। তাহলে গ্যাস অম্বলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ৪. জাম অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত জাম খেলে বদহজম হতে পারে।
- ৫. জামে আবার কারো কারও অ্যালার্জি থাকে তারা জাম থেকে এড়িয়ে চলবেন।
জাম খাওয়ার আগে সর্তকতা:
- ১. প্রতিদিন ১০০ গ্রামের বেশি জাম খাওয়া যাবে না।
- ২. খালি পেটে কখনোই জাম খাওয়া যাবে না।
- ৩. জাম খাওয়ার আগে লবণ জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে জামগুলোকে।
- ৪. জাম খাওয়ার আগে বা পরে এক থেকে দুই ঘন্টা দুধ খাওয়া যাবে না।
- ৫. ডায়াবেটিস বা সুগারের রোগীরা, জাম অল্প পরিমানে খাবেন।
- ৬. গর্ভবতী মায়েদের জন্য জাম না খাওয়াই ভালো।
- ৭. স্তন দানকারী মায়েদের জন্য জাম না খাওয়াই ভালো।
জাম সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
১.জামের বৈজ্ঞানিক নাম কি?
জামের বৈজ্ঞানিক নাম হল Syzygium Cumini ।
২.জাম খেলে কি কি উপকার হয়?
জাম খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ইমিউনিটি পাওয়ার বৃদ্ধি হয়, ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য হয়, জন্ডিস এবং অ্যানিমিয়া নিরাময়ে সাহায্য হয়, রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে ইত্যাদি উপকার পাওয়া যায়।
৩.কালো জাম খেলে কি হয়?
কালো জামের মধ্যে চাইরন ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ভিটামিন সি যেটা রক্তের শূন্যতা এবং হাড় ক্ষয় দূর করতে সাহায্য করে। শরীরকে নিরোগ করতে সাহায্য করে।
৪.কালোজাম এ কি ভিটামিন আছে?
হ্যাঁ, কালোজামের মধ্যে ভিটামিন এ আছে ।
৫.কালোজাম কে ইংরেজিতে কী বলে?
কালোজাম কে ইংরেজিতে বলে Black Jam fruit।
৬.জাম কোন সময় হয়?
জাম গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। এটি পাকে জুন জুলাই মাসে।
৭. গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া কি উচিত?
না, গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া উচিত নয়।
৮. জাম কি আমাদের শরীরের রক্ত শোধন করতে সাহায্য করে?
হ্যাঁ জান আমাদের শরীরের রক্ত শোধন করতে সাহায্য করে। কেননা জামের মধ্যে আছে আয়রন এবং ভিটামিন সি। যা রক্ত শোধনের সাহায্য করে।
৯. জামের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান আছে?
জামের মধ্যে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন সি ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান আছে।
উপসংহার:
আজকে আমরা এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম জাম ফল সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য কালো জামের উপকারিতা। জামের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
আজকে আমরা জেনে নিলাম জাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জানলাম জাম খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে এবং ভালো লেগেছে। যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।