Mustard oil - সরষে তেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা। - সরষে তেল ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে। একসময় সর্ষের তেল ছিল একমাত্র ভোজ্য তেল। সরষে তেলের ঔষধি গুনের জন্য প্রাচীন কাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে সরষে তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে জেনে নেব সরষে তেলের বিশেষ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে এবং অপকারিতা সম্পর্কেও জেনে নেব।
Mustard oil |
সরষে কেমন হয়?
সরষে হলো এক ধরনের উদ্ভিদ, যা ব্রাসিকেসি শ্রেণীর অন্তর্গত। সর্ষে প্রধানত সাদা বা হলুদ এবং বাদামি বা কালো এই দুই ধরনের হয়। সরষে গাছ সাধারণত তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল এবং বীজ থেকে তেল বের করা হয়ে থাকে সর্ষের। মশলা হিসেবেও সর্ষের বীজকে ব্যবহার করে থাকি। কেউ কেউ আবার সর্ষের পাতা কে শাক হিসেবে খেয়ে থাকেন। সর্ষে বাঙালির খাবারে এবং রান্না ঘরের একটি বিশেষ অংশ। সর্ষে স্বাদে যেমন সুস্বাদু সেরকম গুণেও গুণবতী।
সরষে তেল কেমন হয়?
সরষের বীজ থেকে তৈরি হয় সরষে তেল। সরষের তেল দেখতে গাঢ় হলুদ রঙের ও বাদামের মতো সামান্য কঠু স্বাদ এবং শক্তিশালী সুগন্ধ যুক্ত তেল।
এবার আমরা জেনে নেব সর্ষে তেলের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান আছে।
সরষে তেলের পুষ্টি উপাদান:
- ভিটামিন ই
- ফ্যাটি অ্যাসিড
- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
- ক্যালরি
- চর্বি
- প্রোটিন
- কার্বোহাইড্রেট
- ক্যালসিয়াম
- ফাইবার
- আয়রন
- ফসফরাস
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাশিয়াম
- জিংক
- সোডিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন কে
- কপার
- সেলেনিয়াম
- থায়ামিন
- রিবোফ্লাভিন
- নিয়াসিন
- লিপিড
- ফোলেট
এবার আমরা জেনে নেব সর্ষের উপকারিতা সম্পর্কে।
সর্ষের উপকারিতা:
১. বয়সের ছাপ দূর করে
বয়সের ছাপ দূর করতে সরষে সাহায্য করে। কারণ সর্ষের মধ্যে আছে অ্যান্টি এজিং নামক একটি শক্তিশালী উপাদান। এছাড়াও সর্ষের মধ্যে আছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। যা বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বককে তরুণ দেখাতে সাহায্য করে ভিটামিন সি। সর্ষের মধ্যে থাকা ভিটামিন বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
২. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সরষে খুব উপকারী একটি উপাদান। সোর্সের মধ্যে আছে ক্যারোটিন, অ্যান্টিকার্সিনোজেনিক ও ফ্লেভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা শরীরে ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করতে সহায়ক।
৩. বাত দূর করে
সর্ষের তেল রোগ এবং হাড়ের জোড়ায় আক্রান্ত স্থানে মালিশ করলে ব্যথা কমবে এবং আরাম পাওয়া যাবে।
৪. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
সরষে তেল ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা উচ্চ থাকলে ডায়াবেটিস হতে পারে। সর্ষের বিচের মধ্যে আছে হাইপোগ্লাসেমিক ও অ্যান্টিডাইবেটিক বৈশিষ্ট্য যা রক্তে মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৫. হাঁপানি দূর করতে
সরষে হাঁপানি দূর করতে সাহায্য করে। সর্ষের মধ্যে আছে সিনাপাইন নামক একটি যৌগ। যা আমাদের শরীরে পেশীগুলোর গতিশীলতা বাড়াতে এবং ফুসফুসের কার্যকরী ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. ফাইবারে পূর্ণ
সর্ষের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণের ফাইবার। আমাদের শরীরের জন্য ফাইবার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যা কষ্ট কাঠিন্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এসব পুষ্টিগুণ পেতে সরষে খাওয়া খুবই দরকারি।
৭. মাইগ্রেন উপশম এর সাহায্য করে
মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে সোর্সের সাহায্য করে। কারণ সর্ষের বীজের মধ্যে আছে রিবোফ্লাভিন। যা মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সরষে সাহায্য করে। কারণ সরষের মধ্যে আছে আন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টিফাঙ্গাল নামক দুটি উপাদান, যা ক্ষতিকারক সংক্রমনের হাত থেকে পরিপাক তন্ত্রকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। সর্ষের মধ্যে আছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন। যা শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির মান সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৯. হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়
সরষে তেল হৃদ রোগের ঝুঁকে কমাতে সাহায্য করে। পুরো পৃথিবীতে হৃদ রোগ জনিত জটিলতায় বেশিরভাগ মানুষ এখন মারা যাচ্ছে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরষে তেলের মধ্যে আছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। যা শরীরে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তার সাথে সাথে হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
১০. প্রদাহযন্ত্র সমস্যা কমায়
প্রদাহ জনিত সমস্যা কমাতে সরষে তেল সাহায্য করে।
১১. ওজন কমাতে সাহায্য করে
সরষে তেল ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ সরষে তেলের মধ্যে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকার ফলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
১২. হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
সরষে তেল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কারণ সরষে তেলের মধ্যে আছে অ্যান্টিবমাইক্রোবিয়ান নামক একটি উপাদান। যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তার সাথে সাথে দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করবে।
১৩. সর্দি এবং কাশির কমাতে সাহায্য করে
আগেকার দিন থেকেই সরষে তেল কাশি সর্দি এবং অন্যান্য শ্বাস প্রশ্বাস এলার্জি প্রশান্ত করতে ব্যবহার করা হতো। সরষে তেল দিয়ে তাপ নিলে তা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সহায়ক।
১৪. লোহিত রক্তকণিকা শক্তিশালী করে
সর্ষে তেল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং লোহিত রক্তকণিকার ঝিকলি গঠনে সাহায্য করে।
১৫. ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে কাজ করে
সর্ষে তেলের ঝাঁঝালো উপাদান শ্লেষ্মা ও অবরুদ্ধ সাইনাস পরিষ্কার করতে সহায়ক। লবঙ্গ এবং রসুন দিয়ে সরষের তেল গরম করে, বুকে এবং পায়ের তলায় মালিশ করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
সরষে তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন?
সর্ষের তেল দিয়ে বিভিন্ন রকম ভাজা-ভুজি জিনিস খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন। তার থেকে ভালো আস্ত গোটা সর্ষে বেটে বিভিন্ন রকম সবজি রান্না করার সময় ব্যবহার করুন।
মনে রাখবেন, সরষে তেল গরম করে তবেই খাবেন। তেল অপরিশোধিত হলে ব্যবহার করা থেকে এড়িয়ে যাবেন। সরষে তেল শরীরে বিভিন্ন অংশে মালিশ করতে পারেন।
সর্ষের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব।
সর্ষের অপকারিতা:
কোন জিনিসই অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়। ঠিক সেই রকমই অতিরিক্ত মাত্রায় সরষে ব্যবহার করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সরষে তেল ব্যবহার করলে ফুসফুসের ক্যান্সারের হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সরষে তেল ব্যবহার করলে শরীরে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সরষে তেল ব্যবহার করলে লাইপোসিস হতে পারে যা হৃদ রোগের কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সরষে তেল খেলে মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ হতে পারে।
- চোখে জ্বালা হতে পারে
ত্বকে ও চুলের অতিরিক্ত সরষে তেল ব্যবহার করলে চোখে জ্বালা হতে পারে। চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও চোখে চুলকানি হতে পারে।
৬. ত্বকের ছিদ্র জমাট বাঁধতে পারে
সরষে তেল মাথার ত্বকের মধ্যে রেখে দিলে, অন্যান্য তেলের মতোই বন্ধ করে দিতে পারে। তাই সরষে তেল ব্যবহার করার পর মাথার ত্বকে থেকে ধুয়ে ফেলতে হবে ভালো ভাবে।
সরষে তেল সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
সরিষার তেল কি ওজন বাড়ে?
সরষে তেলের মধ্যে আছে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদান। শরীরে ভালো কোলেস্টেরল দিতে সাহায্য করে। তাই সরষে তেল ওজন বৃদ্ধি করে না
সরিষার তেল খেলে কি ক্ষতি হয়?
একটি গবেষণায় দেখা গেছে সরষে তেল এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ ইউরিক এসিড আছে। তার সাথে ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। আর এ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে পক্ষে ক্ষতিকর একটি উপাদান। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে সরষে তেল খেলে শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
সরিষার তেলে কি কোলেস্টেরল আছে?
সরষে তেলের মধ্যে আছে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। যেটা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য দারুন উপকার দেয়। সরষে তেল শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
১ লিটার সরিষার তেলের দাম কত?
বর্তমানে এক লিটার সরষে তেলের দাম খোলা বাজারে ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে।
দৈনিক কত গ্রাম তেল খাওয়া উচিত?
একজন সাধারণ সুস্থ সবল মানুষের প্রতিদিন ২০ থেকে ৩৫ মিলি লিটার তেল খাওয়া উচিত।
তেলের দাম কত ২০২৩?
সর্ষের তেলের দাম এখন ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে ১ কেজি ।
সরিষা কত প্রকার?
সরষে মূলত তিন প্রকার। যথা- মাঘী সরষে, রাই সরষে এবং ধুলি সরষে।
সরিষার মন কত টাকা ২০২৩?
নতুন সদ্য শুকনো সরসের মন ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।
মাঘী সরিষা কি?
মাঘী সরিষা হলো নভেম্বর মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আবাদ করতে হয়, আর ৮০ দিনের মধ্যে যে সর্ষে পেকে যায়।
Also Read:- রইস ব্র্যান অয়েল এর উপকারিতা ও অপকারিতা - Rice Bran oil Advantages and Disadvantages - চাল তুষ তেল
Also Read:- Sunflower oil - সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা।
Also Read:- Mustard oil - সরষে তেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা।
Also Read:- নারকেল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা। Advantages and disadvantages of coconut oil.
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম সর্ষে এবং সরষে তেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ অজানা কিছু তথ্য। Mustard oil - সরষে তেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা। আজ এর সাথে জানলাম সরষে কেমন হয়? সর্ষের তেল কেমন হয়? ইত্যাদি। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে এবং ভালো লেগেছে। আর যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ জানাই সেই সকল বন্ধুদেরকে যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। সুস্থ থাকুন।