কলমি শাক মোটামুটি আমাদের ছোট বড় সবার পছন্দের একটি খাবার। সাধারণত এটি মাটিতে অথবা জলে জন্মাতে দেখা যায়। মিষ্টি মাটিতে কলমি শাক জন্মায়। কলমি শাক আঁশ জাতীয় খাবার।
পুষ্টিগুনে ভরপুর কলমি শাক এবং এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান। সহজলভ্য এবং দামে সস্তা হল কলমি শাক। আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কলমি শাক সম্পর্কে বিশেষ কিছু অজানা তথ্য নিয়ে।
কলমি শাক কেমন হয়?
কলমি শাকের ডাটা গুলো দুই থেকে তিন মিটার লম্বা হয়। প্রত্যেকটা ডাটার গিটে থেকে শিখর বের হয়। কলমি শাকের ডাটার ভিতর ফাঁপা হয় এবং জলে ভেসে থাকে।
কলমি শাকের পাতার লম্বা এবং ত্রিকোনাকৃতি হয়ে থাকে। কলমি শাকের ফুল সাধারণত বেগুনি এবং সাদা হয়। কলমি শাকের ফুল দেখতে অনেকটা ট্রাম্পেট আকৃতির মত।
কলমি শাকের ফুললে বীজ হয় এবং সেই বীজ থেকে আবার নতুন চারা জন্ম নেয়। তাছাড়াও কলমি শাকের ডাটা থেকেও নতুন গাছ তৈরি হয়।
কলমি শাকে ইংরেজিতে কী বলে?
কলমি শাকের ইংরেজি হল River Spinach, Water Morning Glory, Water Spinach, Water Convolovulus, Swamp Cabbage, Kangkong, Chinese Spinach ইত্যাদি।
কলমি শাকের বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?
কলমি শাকের বিজ্ঞানসম্মত বা বৈজ্ঞানিক নাম হল Ipomoea Aquatica ।
কলমি শাক এর পুষ্টিগুণ:
- কলমি শাকের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন
- খাদ্য শক্তি
- সোডিয়াম
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি ১
- ফসফরাস
- শ্বেত সার
READ MORE : Arum Leaves: কচু শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা
এবার আমরা জেনে নেব ১০০ গ্রাম কলমি শাক এর মধ্যে কতটা পরিমাণে কি পুষ্টিগুণ আছে?
১০০ গ্রাম কলমি শাকের মধ্যে পুষ্টি গুণের পরিমাণ:
- খাদ্য শক্তি ২৯ কিলো ক্যালরি
- সোডিয়াম ১১৩ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম
- খাদ্য আঁশ ২.১ গ্রাম
- প্রোটিন ৩ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৪৯ মিলিগ্রাম
- আমিষ ৩.৯ গ্রাম
- খাইয়ামিন ০.৯ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৫.৪ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ২.৫ মিলিগ্রাম
- জলীয় অংশ ৮৯.৭ গ্রাম
- শ্বেত সার ৪.৪ গ্রাম
- নায়াসিন ১.৩ মিলিগ্রাম
কলমি শাকের উপকারিতা:
১. কলমি শাক চোখের জন্য উপকারী।
কলমি শাক চোখের জন্য খুবই উপকারী। এই শাক খেলে দৃষ্টিশক্তি প্রখর হবে। তাছাড়া আর রাতকানা রোগ হওয়া থেকে কলমি শাক রক্ষা করে।
আবার রাতকানা রোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, কলমি শাক যদি চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়া হয়, তাহলে রাতকানা রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে।
কারণ কলমি শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন। আর এই কেরোটিন আমাদের শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ তৈরি করতে সাহায্য করে।
২. কলমি শাক বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
জন্মের পর শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খেতে বলা হয়। তাই অনেক সময় মায়ের বুকে দুধ না পেলে মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ানো হয়।
ফলে শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাবে। বাচ্চারা যদি মায়ের দুধ কম পায় তাহলে কলমি শাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেলে, মায়ের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
৩. কলমি শাক জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা করলে কলমি শাকের রস দুই থেকে তিন চামচ করে তিন সপ্তাহ খেলে ওই রকম জ্বালা - যন্ত্রণা কমে যাবে।
আর যদি হাত পা বা শরীরে অন্য কোন অংশে জ্বালা করে, তাহলে কলমি শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৪. মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে কলমি শাক।
যাদের মাঝে মাঝে অকারণে মাথা ব্যথা করে। তারা যদি কলমি শাক খান তাহলে উপকার পেতে পারেন। অনিদ্রা দূর করতে কলমি শাক খেতে পারেন।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে কলমি শাক।
কলমি শাক আঁশ জাতীয় খাবার। তাই খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে কলমি শাক। নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যেতে পারে।
৬. ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে কলমি শাক।
কলমি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। ফলে কলমি শাক খেলে আমাদের হাড় মজবুত হয়। তাই ছোটবেলা থেকে এই শিশুদের কলমি শাক খাওয়ানোর অভ্যাস করা দরকার।
৭. কলমি শাক শরীরে দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে।
কলমি শাক আমাদের শরীরে দূর্বলতা কমাতে বিশেষ উপকারি। কেননা কলমি শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য শক্তি।
পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য শক্তির থাকার ফলে, আমাদের শরীরে দুর্বলতাকে সারিয়ে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। রোগীদেরকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে কলমি শাক খাওয়ানো উচিত।
৮. কলমি শাক গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী।
কলমি শাক গর্ভবতী মায়েদের মায়েদের জন্য বিশেষ উপকারী। কারণ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের হাতে পায়ে জল আসে।
সেই সময় কলমি শাক একটু বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে দুই থেকে তিন সপ্তাহ খেলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
৯. কলমি শাক রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
কলমি শাক আমাদের শরীরের রক্ত শূন্যতা দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কারণ কলমি শাক এর মধ্যে আছে সঠিক পরিমাণে আয়রন।
যা রক্ত শূন্যতা ভোগা রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। সারা শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ সঠিক রাতে কলমি শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১০. কলমি শাক হজম করতে সাহায্য করে।
কলমি শাকের পাতা এবং কান্ডের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। যা আমাদের শরীরে খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও পরিপাক এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে কলমি শাক।
১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কলমি শাক।
কলমি শাক আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ কলমি শাকের মধ্যে আছে ভিটামিন সি এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
১২. ফোড়া ভালো করতে সাহায্য করে কলমি শাক।
কারো যদি কোন জায়গায় ফোড়া হয়, তাহলে কলমি শাকের পাতার সঙ্গে একটু আদা বেটে, ফোড়ার চারপাশে ভালো করে লাগিয়ে দিতে হবে রাখতে হবে। তিন চারদিন এইভাবে লাগালে ফোড়া পেকে যাবে এবং পুঁজ হয়ে ফেটে শুকিয়ে যাবে।
১৩. মাথার খুশকি দূর করতে কলমি শাক খুব উপকারী।
১৪. অনিদ্রা জনিত সমস্যা দূর করতে কলমি শাক সাহায্য করে।
১৫. পিঁপড়ে, মৌমাছি বা অন্য কোন পোকা কামড়ালে কলমি শাকের পাতার রস লাগালে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
কলমি শাকের অপকারিতা:
- অতিরিক্ত কলমি শাক খেলে বদহজম হতে পারে।
- অতিরিক্ত কলমি শাক খেলে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
কলমি শাক সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
কলমি শাকে কি কি উপাদান আছে?
১০০ গ্রাম কর্মীসকের মধ্যে ভিটামিন সি আছে ৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালরি আছে ২৯ কিলো ক্যালরি, আয়রন আছে ২.৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম আছে ৩১২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে ৭৩ মিলিগ্রাম ইত্যাদি।
কলমি শাক কি?
কলমি শাক হলো আঁশ জাতীয় একটি সবজি।
কলমি শাক কি মাথা ব্যথা দূর করে?
হ্যাঁ, কলমি শাক মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
কলমি শাক চুলের জন্য কি ভালো?
হ্যাঁ, কলমি শাক চুলের জন্য খুবই উপকারী। কারণ মাথার খুশকি দূর করার জন্য কলমি শাক বিশেষ উপকারী।
শিশুদের জন্য কি কলমি শাক ভালো?
হ্যাঁ, শিশুদের জন্য কলমি শাক খুবই উপকারী। কারণ কলমি শাক এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য কলমি সাক্ষাও কি উচিত?
হ্যাঁ, গর্ভবতী মায়েদের জন্য কলমি শাক উপকারী।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতার সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য। কলমি শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা।
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। সব জিনিসেরই যেমন ভালো দিক থাকে ঠিক সেই রকমই খারাপ দিক থাকে।
তাই কলমি শাকেরও যেমন উপকারিতা আছে ঠিক তেমনি অপকারিতা আছে। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে।
এবং ভালো লেগেছে। আর যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। আর ধন্যবাদ জানাই আপনাদেরকে বন্ধুরা কষ্ট করে আমাদের এই আর্টিকেলটিকে পড়ার জন্য। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।
আমাদের মতো দারিদ্রদির্ণ দেশে কলমি আদর্শ খাদ্য।
উত্তরমুছুনকলমি শাক দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। ঘুম না আসার সমস্যা কমাতেও কলমি শাক খেতে পারেন।
মুছুন