Wood Apple - বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা - Stone Apple. Aegle_marmelos - বেল আমরা সকলেই প্রায় কম বেশি খেতে ভালোবাসি। বেলের পাতা ফুল এবং ফল সবই আমাদের জন্য খুবই উপকারী। গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে বেলের শরবত। এছাড়াও বেল আরও কি কি ভাবে উপকার করে এসব কিছু জেনে নেব আজকের আমাদের এই আর্টিকেলটিতে। এর সঙ্গে আরও জেনে নেব বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু অজানা তথ্য জেনে নেব।
বেল গাছ দেখতে কেমন হয়?
বেল গাছ মাঝারি আকারের বহু বর্ষজীবী কাঁঠাল জাতীয় উদ্ভিদ। বেল গাছ মসৃণ। হালকা ধূসর মাথায় এলোমেলো চারপাশে শাখা প্রশাখা ছড়ানো। বেল গাছের পুরো দেহ তুই কাঁটা। শীতকালে পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তকালে নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। কচি পাতা তামাটে এবং পরিণত অবস্থায় গার্ড সবুজ রঙের দেখতে হয়। পাতা গজানোর পর ফুল ফোটে বেল গাছে। তারপর ফল হয়।
Wood Apple Tree |
Stone Apple Tree |
বেলের মধ্যে কি কি উপাদান আছে?
বেলের উপাদান:
- প্রোটিন
- থায়ামিন
- শর্করা
- ক্যারোটিন
- নিয়াসিন
- ক্যালরি
- খাদ্য আঁশ
- কার্বোহাইড্রেট
- ফ্যাট
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ক্যালসিয়াম
- পটাশিয়াম
- অ্যালকোহল
- তারপিন
- ট্যানিন
- ফাইবার
প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের মধ্যে পুষ্টিগুণ আছে:
- প্রোটিন ১.৮ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৩১.৮ গ্রাম
- ফ্যাট ০.৩ গ্রাম
- ভিটামিন এ ৫৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি ৬০ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৮৫ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৬০০ মিলিগ্রাম
- খাদ্যশক্তি ১৪০ ক্যালোরি
এবার আমরা জেনে নেব বেলের উপকারিতা সম্পর্কে।
বেলের উপকারিতা:
১. ডায়াবেটিস কমাতে বেল সাহায্য করে।
পাকা বেল ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। পাকা বেল এর মধ্যে আছে, মেথানল নামক একটি উপাদান। যা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে।
২. স্কার্ভি কমাতে সাহায্য করে বেল।
স্কার্ভি হলো একটি দাঁতের সমস্যা। যেটা ভিটামিন সি এর অভাবে হয়। বেল এই রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। আর বেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে বেল।
৩. যক্ষ্মা কমাতে সাহায্য করে বেল।
পাকা বেলের মধ্যে আছে আন্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান। যেটা যক্ষা কমাতে সহায়ক।
৪. বেল ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে।
ক্যান্সার থেকে আমরা সবাই দূরে থাকতে চাই। আর বেল এই ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। বেলের মধ্যে আছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ এবং অ্যান্টি মোটাজেন এর নামক দুটি উপাদান। এই দুটি উপাদান টিউমার হতে বাধা দেয়। আর বেলের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সারের কোর্স গঠনে বাঁধা দেয়।
৫. বেল রক্ত শুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরের মধ্যে প্রধান উপাদান রক্ত। আর রক্তের মাধ্যমেই পুষ্টিগুণ পুরো শরীরে প্রবাহিত হয়। তাই রক্ত কে শুদ্ধ থাকা খুবই দরকার। আর বেল রক্ত শুদ্ধ করতে খুব ভাল সাহায্য করে।
৬. বেল এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে।
বেল এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের মধ্যে ১৪০ ক্যালোরি এনার্জি থাকে। বেল মেটাবলিক স্পিড বাড়াতে সাহায্য করে। আর বেলের মধ্যে আছে হাই প্রোটিন যা ফলে পেশি তাড়াতাড়ি সজাগ হয়।
৭. পেপটিক আলসারের ওষুধ বেল।
বেলের সার্সের মধ্যে আছে ফাইবার। যা আলসার উপশমের সহায়ক। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বেলের শরবত খান আলসার কমানোর জন্য।
৮. বেল ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
বেল ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি অনেকদিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছেন তাহলে বেল খান। কাঁচা বেলকে টুকরো টুকরো করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর সেটা গুঁড়ো করে নিন। আর সেই গুড়ো এক চামচ করে নিয়ে ব্রাউন সুগার আর গরম জলে ভালো করে মিশিয়ে নিন তারপর পান করুন। দিনে দুবার পান করতে হবে এই জল।
৯. বেল কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
বেল পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। নিয়মিত প্রতিদিন মাছ যদি আপনি বেলের শরবত খেতে পারেন তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আর থাকবে না।
১০. বেল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
বেল উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। কারণ বেল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বেলের শরবত খেলেই হবে।
১১. বেল চোখের সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে
বেল আমাদের চোখের জন্যও বেশ উপকারী। কারণ বেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ। যা চোখের জন্য বিশেষ উপকারী একটি উপাদান। ভিটামিন এ চোখের পুষ্টি যোগয়া, চোখের দৃষ্টি শক্তি প্রখর করতে সাহায্য করে, এছাড়াও চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন রাতকানা গলুকমা, জেরসিস এইসব সমস্যা হওয়া থেকে বাঁচায় চোখকে।
১২. বেল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
বেল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস অম্বলের মত সমস্যা হয় না। কারণ বেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ, ফাইবার। যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
কাঁচা বেল খাওয়ার উপকারিতা:
১. কাঁচা বেল কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান এর সাহায্য করে।
কাঁচা বেল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। যদি এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় তাহলে কাঁচা বেলকে পুড়িয়ে রস করে খেতে পারি। এইভাবে দুই থেকে তিন মাস একটানা কাঁচা বেল পুড়িয়ে রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান হতে পারে।
২. কাঁচা বেল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কাঁচা বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি প্রলেফেরেটিভ এবং অ্যান্টি মোটাজেন উপাদান। যা ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক।
৩. কাঁচা বেল ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে
কাঁচা বেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। যা আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণে সাহায্য করে।
৪. কাঁচা বেল আমাদের এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কাঁচা বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে মেটাবলিক উপাদান। যা আমাদের শরীরে এনার্জি লেভেলের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৫. কাঁচা বেল অগ্নি উদ্দীপক, কফ এবং বায়ু নাশক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাকা বেলের উপকারিতা:
১. পাকা বেল ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে।
পাকা বেল ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। কারণ পাকা বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে মেনথাল নামক উপাদান। যা ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে।
২. পাকা বেল স্মরণশক্তির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
পাকা বেল শিশুদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. পাকা বেল আলসারের জন্য উপকারী।
পাকা বেল আলসারের জন্য উপকারী। কারণ পাকা বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে শাস এবং ফাইবার। যা আলসারের জন্য বেশ কার্যকারী উপাদান।
৪. এনার্জি লেভেল বাড়াতে পাকা বেল সাহায্য করে।
আমাদের শরীরে এনার্জি লেভেল বাড়াতে পাকা বেল সাহায্য করে।
৫. পাকা বেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পাকা বেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ পাকা বেলের মধ্যে আছে মেন্থল নামক একটি উপাদান। যা রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়ে থাকে।
কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম:
- প্রথমে কাঁচা বেলটাকে চার ভাগ করে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে সুট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর এই সুট গুলো জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সেই জল পান করতে পারলে আমরা অনেক উপকার পাব।
- কাঁচা বেল আগুনের আচে পুড়িয়ে নিতে হবে। তারপর ভেতরে দানাগুলোকে চামচে করে ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর পরিমাণ মতো জল আর চিনি বা আখের গুড় দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ওই মিশ্রণটির হয়ে গেল বেলের শরবত।
পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম:
পাকা বেলকে আমরা দুই ভাবে খেতে পারি।
- প্রথমত, পাকা বেলকে গাছ থেকে পেড়ে এনে সরাসরি ফাটিয়ে খেতে পারি।
- দ্বিতীয়ত, পাকা বেলকে আমরা পুড়িয়ে চিনি বা আখের রস মিশিয়ে খেতে পারি। যারা বেল এভাবে সরাসরি খেতে পারবেন না। তারা এভাবে বেলকে উনুনে মধ্যে পুড়িয়ে তারপর ভেতরে থকথকে দানা গুলো দিয়ে জল এবং চিনি আখের গুড় মিশ্রণ করে খেতে পারেন।
বেলের শরবত তৈরি করার নিয়ম:
প্রথমে একটি বেলকে আমরা ভালোভাবে ফাটিয়ে উন্নয়নের তাপে পুড়িয়ে নেব। তারপর বেলটাকে ভালোভাবে ধুয়ে নেব। তারপর বেলের ভেতরে থাকা দানাগুলো চামচে করে ছাড়িয়ে নেব। এরপর পরিমাণ মতো জল দিয়ে চিনি বা আখের গুড় দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নেব। এভাবেই তৈরি হয় বেলের শরবত।
এবার আমরা জেনে নেব বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।
বেল খাওয়ার অপকারিতা:
- অতিরিক্ত মাত্রায় বেল খেলে আমাদের পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় বেল খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
বেল সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
পাকা বেল খেলে কি উপকার?
যদি নিয়মিত পাকা বেল খাওয়া হয় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে, মুখের ব্রণ দূর হবে এবং ত্বক ভালো থাকবে। কারণ বেলের মধ্যে আছে ল্যাকোটিভ গুণ।
বেল খেলে কি সুগার বাড়ে?
বেল সুগার কমাতে সাহায্য করে। বেলের মধ্যে আছে মেথানল নামক একটি উপাদান যা ব্লাড সুগার কমাতে কাজ করে।
বেলের শরবত কখন খেতে হয়?
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস বেলের শরবত খাওয়ার উচিত। বেলের শরবত শরীরকে চাঙ্গা করতে এবং শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
বেল কি ভিটামিন থাকে?
বেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি পুষ্টিকর উপাদান।
বেলশুট কি?
বেলশুট হলো, কচি বেলকে টুকরো টুকরো করে কেটে তারপর রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় বেলশুট।
বেল পাতার ইংরেজি নাম কি?
বেল পাতার ইংরেজি নাম হল Wood Apple, Stone Apple ।
বেল এর কাজ কি?
রেলের কাজ হল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, আমাশয় উপকার করে। বেল পাতার রস এর সঙ্গে মধুমি মিছে পান করলে চোখের ছানি উপশম হবে।
বেলের বৈজ্ঞানিক নাম কি?
বেলের বৈজ্ঞানিক নাম বা বিজ্ঞানসম্মত নাম হল Aegle Marmelos ।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে জেনে নিলাম বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতার সম্পর্কে বিশেষ তথ্য। Wood Apple - বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা - Stone Apple. এছাড়াও জেনে নিলাম পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম, কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম, পাকা বেল খেলে কি উপকার পাওয়া যায়? কাঁচা বেল খেলেই বা কি উপকার পাওয়া যায়? বেলের শরবত কিভাবে বানানো হয়? ইত্যাদি সব বিষয়ে জেনে নিলাম। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আর যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ, জানাই বন্ধুদের কে যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত করেছেন। সুস্থ থাকুন।