মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। Disadvantages Of Chicken In Bengali - আমাদের সমাজের মধ্যে আমিষ এবং নিরামিষ উভয় খাবার খেতে ভালোবাসেন এরকম মানুষ অনেক আছে। বেশ কিছু লোক ডায়েট এর জন্য কেবল শাক, সবজি, ফল ইত্যাদি খান। আবার বেশ কিছু লোক শাক-সবজির সাথে মাংসও খেতে পছন্দ করেন। মুরগির মাংস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো একটি ডায়েট হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কারণ মুরগির মাংসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান। যেটা আমাদের স্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধানের করতে সাহায্য করে। তো আজকে আমরা জেনে নেব মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সর্ম্পকে।
মুরগি |
মুরগির মাংস দিয়ে কি কি খাবার বানানো হয়?
মুরগির মাংস দিয়ে বিরিয়ানি, কাবাব, কাসেরোল, চিকেন কারি, ললিপপস ইত্যাদির বিভিন্ন রকমের খাবার বানানো হয়ে থাকে।
এবার আমরা জেনে নেব মুরগির মাংসর মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ আছে?
চিকেনের পুষ্টি:
- প্রোটিন
- খাদ্যশক্তি
- শর্করা
- আয়রন
- ফ্যাটি অ্যাসিড
- সোডিয়াম
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন এ
- কার্বোহাইড্রেট
এখন আমরা জেনে নেব চিকেন বা মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতা:
মুরগির মাংস খেতে আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই ভালোবাসি। মুরগির মাংস যেমন দামে সস্তা তেমন খেতেও সুস্বাদু। মুরগির মাংস আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম উপকার করে। যেমন- মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ইত্যাদি।
১. মুরগির মাংস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চিকেন আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করার সাথে সাথে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বেশ কিছু বিজ্ঞানী বলেছেন যে কিছু প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া মুরগির মধ্যে উপস্থিত থাকে, যা দেহের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে। তাই যেসব ব্যক্তিদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আছে বা দুর্বল আছে, সেই সব ব্যক্তিরা তাদের খাদ্য তালিকায় সপ্তাহে একদিন মুরগির মাংস রাখা উচিত।
২. মুরগির মাংস ত্বকের জন্য উপকারী।
মুরগির মাংসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, খাদ্য শক্তি, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী উপাদান। এছাড়াও এটি চুলকানি, ত্বকে লাল ভাবের মত ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সানবার্ন এবং অ্যাংলিং হওয়া প্রতিরোধ করতে মুরগির মাংস সাহায্য করে। তাই মুরগির মাংস আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী একটি উপাদান।
৩. মুরগির মাংস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, মুরগির মাংসের গসিপাল নামক একটি উপাদান আছে। মুরগির মাংস স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৪. মুরগির মাংস হার্টকে সুস্থ রাখে।
মুরগির মাংস হোমোকিস্টাইনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং হার্টের বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওভাস্কুলার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। হোমোকিস্টাইনের হল একপ্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড উচ্চমাত্রায় এটি হাটের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৫. মুরগির মাংস বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করে।
মুরগির মাংসের মধ্যে আছে উচ্চ মাত্রায় ট্রাইফটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। এর ফলে এক বাটি চিকেন স্যুপ স্বস্তি এনে দিতে পারে আপনাকে। আপনার যদি বিষণ্নবোধ হল তাহলে কয়েকটি চিকেন উইংস খাওয়া যেতে পারে। যা মস্তিষ্কে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়াবে এবং চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
৬. মুরগির মাংস ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
প্রায়শই লোকেরা শীতকালে মুরগির স্যুপ পান করে থাকেন। মুরগি মাংসর স্যুপ পান করার ফলে শরীরে উষ্ণতা তৈরি হয় এবং যা আমাদের শরীর থেকে ঠান্ডা হ্রাস করতে সাহায্য করে। যদি কোন ব্যক্তি সর্দির সমস্যায় পড়ে থাকে তবে সে মুরগির স্যুপ খেতে পারে।
৭. মুরগির মাংস হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
বয়স্ক ব্যক্তিদের আর্থ্রাইটিট এবং হাড় সংক্রান্ত অন্য যেকোনো রোগের আশঙ্কা বেশি থেকে থাকে। কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নেই। তারা যদি তাদের খাদ্য তালিকায় মুরগির মাংস রাখে তাহলে তাদের শরীরে মুরগির মাংসের মধ্যে থাকা প্রোটিন হাড় ক্ষয় রোধ করবে।
৮. মুরগির মাংস হার্টের জন্য উপকারী।
হার্ট হল আমাদের শরীরের প্রধান অঙ্গ যা আমাদের পুরো শরীরে রক্ত প্রবাহ তৈরি করতে সাহায্য করে। হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। মুরগির মাংসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন সি। যেটা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অল্প তেলে মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়ায় কোন ক্ষতি করে না। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্যাট এবং তেল যুক্ত মুরগি স্বাস্থ্য এবং হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
৯. মুরগির মাংস রক্তাল্পতাই উপকারী।
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা একটি আয়রন ঘাটতি জনিত সমস্যা। যা একটি মারাত্মক রোগে পরিণত হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে মুরগির মাংসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। তাই রক্তাল্পতায় ভোগা রোগীদের জন্য মুরগির মাংস খাওয়া উপকারী।
১০. মুরগির মাংস হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মুরগির মাংসের মধ্যে আছে ভিটামিন বি ৬ যা আমাদের শরীরে বিপাকের মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে। যা আমাদের শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে দেয় না এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে। রক্তনালী সঠিক রাখতেও সাহায্য করে এটি।
১১. মুরগির মাংস চোখ ভালো রাখে।
অন্যান্য খাবার গুলোর মতোই মুরগির মাংস চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। মুরগির মাংসের মধ্যে আছে আলফা, রেটিনল, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন এগুলো সবই ভিটামিন এ এর মধ্যে পাওয়া যায়। যা চোখ খেয়ে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এবার আমরা জেনে নেব মুরগির মাংস খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।
মুরগির মাংসের অপকারিতা:
- মুরগিকে অনেক সময় বেশি তাড়াতাড়ি বড় করার জন্য হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। মুরগির মাংসের মধ্যে থাকা এসব হরমোন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- মুরগির মাংসের মধ্যে বিষাক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। যা আমাদের মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। হরমোন এবং অন্যান্য বিভিন্ন রকম ওষুধ ব্যবহার করার ফলে মুরগির মাংসের আর্সেনিক পাওয়া যায়।
- অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত বিধি পাওয়ার জন্য সাধারণ মানব শরীরে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় সেই সব অ্যান্টিবায়োটিক মুরগির শরীরেও দেওয়া হয়। এই সব মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই মুরগির মাংস কেনার আগে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করে তারপরে মুরগির মাংস কিনবেন।
- অতিরিক্ত মাত্রায় তেল এবং ফ্যাট যুক্ত মুরগি খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
- ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় মুরগির মাংস খাওয়া উচিত নয়।
- বেশি তাপে মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়ার ফলে ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
অনেক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে পোল্টি মুরগি আমাদের শরীরে পক্ষে একেবারেই ভালো নয়। যেভাবে পোল্টি মুরগিগুলিকে বড় করা হয়ে থাকে তা একেবারেই সঠিক পদ্ধতি নয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি না করেই তাদেরকে বিল্ড করানো হয় যার সরাসরি প্রভাব আমাদের শরীরের উপর পড়ে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম মুরগির মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। আর মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে যদি কেউ অসুস্থ হন তো সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সুস্থ থাকুন।