Avocado Fruits - অ্যাভোকাডো এর উপকারিতা ও অপকারিতা। Avocado benefits and side effects in Bengali. আমাদের দেশে সুপার ফুডগুলি শহর অঞ্চলের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও সেগুলি গ্রাম অঞ্চলে সহজে পাওয়া যায় না। সেই সুপার ফুটগুলির মধ্যে অন্যতম হলো অ্যাভোকাডো নামক একটি ফল। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।
অ্যাভোকাডো কি?
অ্যাভোকাডোকে বৈজ্ঞানিক নাম হল Persea Americana। প্রায় সাত হাজার বছর আগে দক্ষিণ মেক্সিকো এবং কলম্বিয়াতে এই ফলটির উৎপত্তি হয়েছে। এটি দেখতে বড় বেড়ির মত যার মাঝখানে বড় একটি বীজ থাকে। অ্যাভোকাডো একটি মাংসের ফল। এই ফলটির বিশাল আকারের কারণে একে অ্যালিগেট পিয়ার্স নামেও পরিচিত। পুরো বিশ্বে অ্যাভোকাডো অনেক রকমের হয়। যার মধ্যে হাস অ্যাভোকাডো সবথেকে জনপ্রিয়। অ্যাভোকাডো পুষ্টির দিক থেকে সব থেকে বিশেষ হল হাস অ্যাভোকাডো।
অ্যাভোকাডো এর বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
অ্যাভোকাডো এর বিজ্ঞান সম্মত নাম হল Persea Americana।
অ্যাভোকাডো এর ইংরেজি কি?
অ্যাভোকাডো এর ইংরেজি হল Avocado Fruit।
প্রতি ১০০ গ্রাম অ্যাভোকাডো এর পুষ্টিমান:
- জল - ৭৩.২৩ গ্রাম
- শক্তি - ১৬০ ক্যালোরি
- প্রোটিন - ২ গ্রাম
- মোট লিপিড (চর্বি) - ১৪.৬৬ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট - ৮.৫৩ গ্রাম
- ফাইবার - ৬.৭ গ্রাম
- চিনি - ০.৬৬ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ১২ মিলিগ্রাম
- লোহা - ০.৫৫ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম - ২৯ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস - ৫২ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম - ৪৮৫ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম - ৭ মিলিগ্রাম
- জিংক - ০.৬৪ মিলিগ্রাম
- তামা - ০.১৯ মিলিগ্রাম
- সেলেনিয়াম -০.৪ মাইক্রগ্রাম
- ভিটামিন সি - ১০ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন - ০.০৬৭ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাভিন - ০.১৩ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন - ১.৭৩৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি-৬ - ০.২৫৭ মিলিগ্রাম
- ফোলেট (DFE) - ৮১ মাইক্রগ্রাম
- ভিটামিন এ (RAE) - ৭ মাইক্রগ্রাম
- ভিটামিন ই - ২.০৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে - ২১ মাইক্রগ্রাম
লিপিড
- ফ্যাটি অ্যাসিড (স্যাচুরেটেড) - ২.১২৬ গ্রাম
- ফ্যাটি অ্যাসিড - ৯.৭৯৯ গ্রাম
- ফ্যাটি অ্যাসিড (পলিঅনস্যাচুরেটেড) - ১.৮১৬ গ্রাম
এখন আমরা এবার জেনে নেব অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা সম্পর্কে।
অ্যাভোকাডো এর উপকারিতা:
১. হাটের স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি অ্যাভোকাডো:
অ্যাভোকাডো হার্টের স্বাস্থ্য সঠিক রাখতে সাহায্য করে। হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী উপাদান হলো অ্যাভোকাডো। অ্যাভোকাডো নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। অ্যাভোকাডো কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য সাহায্যকারী। একই সময়ের মধ্যে এতে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের সাথে সাথে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে আছে। ফলে এটি শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২. অ্যাভোকাডো ওজন কমাতে সাহায্য করে:
আমাদের শরীরে বাড়র্তি ওজন কমাতে সাহায্য করে অ্যাভোকাডো। কারণ এর মধ্যে আছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি যা মেদ বা চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
৩. অ্যাভোকাডো হজম শক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে:
অ্যাভোকাডো হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। আমরা জানি ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৪. অ্যাভোকাডো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
অ্যাভোকাডো ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য খেতে পারেন। অ্যাভোকাডো এর মধ্যে অ্যাভোক্যাটিন বি নামক একটি উপাদান পাওয়া যায়। যা ক্যান্সারের সেল গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৫. অ্যাভোকাডো দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে:
অ্যাভোকাডো চোখের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। অ্যাভোকাডো এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড, যেমন লুটেইন ও জেক্সাথিন যা চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন দৃষ্টি শক্তি সংক্রান্ত যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয় সেগুলো কমাতে সাহায্য করে লুটেইন। এর মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন এ যা চোখের স্বাস্থ্য জন্য অপরিহার্য উপাদান। তাই অ্যাভোকাডো চোখের জন্য উপকারী।
৬. অ্যাভোকাডো দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:
অ্যাভোকাডো এর মধ্যে আছে পটাশিয়াম, যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো এর মধ্যে উপস্থিত আছে ম্যাগনেসিয়াম জিনজিভাইটিস ও পিরিয়ডোনটাইটিস(মাড়ির সংক্রমণ) দ্বারা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কারণ অ্যাভোকাডোতে অল্প কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে ওমেগা তিন ফ্যাটি অ্যাসিড
থাকে। এইসব কারণেই বলা যায় অ্যাভোকাডো মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৭. অ্যাভোকাডো হাড়ের জন্য উপকারী:
অ্যাভোকাডো হাড়ের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। কাঁচা অ্যাভোকাডো এর মধ্যে আছে হাড়ের জন্য খুবই উপকারী বোরন নামক একটি খনিজ পদার্থ আছে। যা ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়িয়ে হাড়কে শক্ত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও জয়েন্টে ব্যথা, ফোলা কমাতেও সাহায্য করে।
৮. অ্যাভোকাডো কিডনির জন্য উপকারী:
অ্যাভোকাডো ব্যবহারের ফলে কিডনি সুস্থ এবং নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, ফ্রি র্যাডিক্যালের নামক একটি উপাদান বৃদ্ধি হয়, যার ফলে কিডনির ক্ষতি হয়। এছাড়াও অ্যাভোকাডো বিচের গুঁড়ো কিডনির জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।
৯. অ্যাভোকাডো লিভার স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক:
অ্যাভোকাডো লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নন অ্যালকোহল যুক্ত ফ্যাট লিভারের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই ঝুঁকি কারণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এই ফলটি। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হতে পারে অ্যাভোকাডো। এইসব কারণেই বলা যেতে পারে অ্যাভোগাডো লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
১০. অ্যাভোকাডো আর্থ্রাইটিসে উপশম দেয়:
অ্যাভোকাডো এবং সয়াবিন তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়ার পরে বাতের স্থানে ব্যবহার করলে বাতের সমস্যা প্রদাহ এবং বাত কমাতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো বীজের মধ্যে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে।
১১. অ্যাভোকাডো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে:
অ্যাভোকাডো লিপিড প্রোফাইল উন্নত করতে সাহায্য করে। এর ফলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে।
১২. অ্যাভোকাডো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে:
অ্যাভোকাডো রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে আছে লিপিড প্রোফাইল উন্নত করে রক্তে শর্করা পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
১৩. অ্যাভোকাডো বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে:
অ্যাভোকাডো আমাদের শরীরে বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। কারণ অ্যাভোকাডো এর মধ্যে আছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বকের বার্ধক্য কমাতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো তেল ব্যবহার করার ফলে ত্বকের কোলাজের নামক উপাদান বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও এর তেল বলিরেখার চিকিৎসার পাশাপাশি ক্ষত নিরাময়ের জন্য উপকারী উপাদান।
অ্যাভোকাডো এর ব্যবহার:
- সকালবেলায় জলখাবারের সঙ্গে ব্রেড ওমলেট এর সাথে অ্যাভোকাডো মিশিয়ে খান।
- অ্যাভোকাডোকে ফলের সালাদের সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে।
- আচারযুক্ত অ্যাভোকাডো সালাদ ব্যবহার করতে পারেন।
- সকাল বেলার খাবারে প্যানাককেও অ্যাভোকাডো মিশিয়ে খেতে পারেন।
- অ্যাভোকাডো আইসক্রিমও তৈরি করতে পারেন।
অ্যাভোকাডো কিভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে:
- অ্যাভোকাডো ফ্রিজের মধ্যে রেখে এক সপ্তাহ খাওয়া যেতে পারে।
- ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অ্যাভোকাডো নিরাপদ থাকে। অ্যাভোকাডো মাঝখানে থেকে কেটে লেবুর রস দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
- অ্যাভোকাডো পিউরি এয়ার টাইট পাত্রে বা ব্যাগে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
- অ্যাভোকাডো পিউরি এয়ার টাইট পাত্রে বা ব্যাগের মধ্যে রেখে ফ্রিজে রাখতে পারেন।
অ্যাভোকাডো এর অপকারিতা সম্পর্কে এবার আমরা জেনে নেব।
অ্যাভোকাডো এর অপকারিতা:
- অ্যাভোকাডো এর মধ্যে কম ক্যালরি থাকার কারণে এটি ওজন কমাতে সহায়ক হলেও এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে চর্বি। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় এটি খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে।
- যাদের বাজে সব ব্যক্তির ত্বক খুবই সংবেদনশীল, তারা বা সেই সব ব্যক্তির অ্যাভোকাডো খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি হতে পারে।
অ্যাভোকাডো সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
কাঁচা আভাকাডো খাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, বেশির ভাগ অ্যাভোকাডো ফল কাঁচা খেতেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অ্যাভোকাডো কি খালি পেটে খাওয়া যায়?
খালি পেটে অ্যাভোকাডো ফল খাওয়ার কারণে গ্যাস এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
দিনে কয়টি অ্যাভোকাডো খাওয়া যায়?
প্রতিদিন অর্ধেক অ্যাভোকাডো ফল খাওয়া যেতে পারে।তাতে উপকার পাওয়া যাবে। আরও বিস্তারিত জানার জন্য আপনি একজন ডায়েটিশিয়ানের বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
কিভাবে অ্যাভোকাডো বাদামী হওয়া থেকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে?
অলিভ অয়েলে অ্যাভোকাডো ভিজিয়ে ব্রাউনিং কম করা যেতে পারে, কারণ এটি অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে ধীর গতি করে দিতে পারে।
অ্যাভোকাডো বীজ কি বিষাক্ত?
অ্যাভোকাডো বীজ হল পুষ্টিতে ভরপুর। অ্যাভোকাডো বীজ বিষাক্ত নয়।
অ্যাভোকাডো ফল কত ক্ষণ নিরাপদ হতে পারে?
এটি ঘরের তাপমাত্রায় দু-তিন দিন। এছাড়া ফ্রিজে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম অ্যাভোকাডো ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম অ্যাভোকাডো কি, অ্যাভোকাডো এর বিজ্ঞান সম্মত নাম কি, এর ইংরেজি কি, এর পোস্টে উপাদান ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিলাম। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম হয়েছে। যদি কিছু সমস্যা থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন।