খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। খেজুর খাওয়ার নিয়ম। - Benefits and harms of eating Dates. খেজুর ফলটি আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই খেতে খুবই ভালোবাসি। খেজুর গাছ বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। খেজুর তাজাও হতে পারে আবার শুকনো হতে পারে।
এই খেজুরের এরা আছে অসংখ্য উপকারিতা। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
খেজুর গাছের বর্ণনা:
খেজুর গাছ একটি সব পুষ্পক উদ্ভিদ। খেজুর গাছ সাধারণত ৩০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা হয়। একক ভাবে বেড়ে ওঠে বা একটি একক মূল সিস্টেম থাকে একাধিক ডালপালা সহ একটি গুচ্ছ গঠন করে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ ১০০ বছরেরও বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
খেজুর গাছের পাতাগুলি চার থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতাগুলো কাটাযুক্ত এবং প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টি লিফলেট সহ পিনাট।খেজুর গাছ সহজেই বীজ থেকে জন্মায়। তবে চারাগুলো মাত্র পঞ্চাশ শতাংশ স্ত্রী, তাই ফল ধারণ করে।
খেজুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
খেজুরের বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো ফিনিক্স ড্যাক্টিলিফেরা।
খেজুরের ইংরেজি কি?
খেজুরের ইংরেজি হল Date Fruit।
এবার আমরা জেনে নেব খেজুর ফলের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে।
খেজুরের পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ম্যাগানিজ
- প্রোটিন
- ফসফরাস
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন ই
- সোডিয়াম
- জিংক
- জল
- কার্বোহাইড্রেট
- আয়রন
- ফ্যাট।
প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরের মধ্যের পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি - ২৭৭ কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট - ৭৪.৯৭ গ্রাম
- প্রোটিন - ১.৮১ গ্রাম
- মোট চর্বি - ০.১৫ গ্রাম
- ফাইবার - ৬.৭ গ্রাম
- পটাসিয়াম - ৬৯৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম - ০.২৯৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ - ৫৪ মিলিগ্রাম
- আয়রন - ০.৯০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৬ - ০.২৪৯ মিলিগ্রাম
- ফোলেট - ১৯ মাইক্রগ্রাম
- থায়ামিন - ০.০৫২ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন - ৭৫ মাইক্রগ্রাম
- নিয়াসিন - ১.২৭৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি - ০.৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ - ৬ মাইক্রগ্রাম
- ভিটামিন কে - ২.৭ মাইক্রগ্রাম
- ভিটামিন ই - ০.০৫ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ৩৯ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম - ২ মিলিগ্রাম
- জিংক - ০.২৯ মিলিগ্রাম
- জল - ২০.৫ গ্রাম।
এবার আমরা জেনে নেব খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু।
খেজুরের উপকারিতা:
১. খেজুর হজম শক্তি উন্নতি করে:
খেজুর আমাদের শরীরে হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
২. খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে:
খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যেসব ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে, তারা যদি নিয়মিত খেজুর খান পরিমাণ মতো তাহলে কোষ্টকাঠিন্য দূর করার সম্ভব আছে।
৩. খেজুর শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে:
খেজুর শর্করা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। কারণ খেজুরের মধ্যে গ্লাইসেমিক সূচনা খুবই কম থাকে। যার রক্তের মধ্যে শর্করা মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৪. খেজুর হাড় মজবুত করে:
খেজুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। কারণ খেজুরের মধ্যে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা হাড়ের সমস্যা দূর করতে এবং হাড় মজবুত আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
৫. খেজুর মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে:
খেজুর মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে অর্থাৎ মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে খেজুর। খেজুরের মধ্যে আছে ভিটামিন বি এবং কোলাজের যেটা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. খেজুর ত্বকের জন্য উপকারী:
খেজুর ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি। যা ত্বকে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের নরম রাখতে সাহায্য করে।
৭. খেজুর হ্যাংওভার নিরাময় করে:
খেজুর হ্যাংওভার থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। খালি পেটে খেজুর খেতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে সকালে খালি পেটে প্রথমেই খেজুর খেতে হবে তাহলে হ্যাংওভার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
৮. খেজুর পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
খেজুর পুরুষের যৌন ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম মতো সঠিক পরিমাণে খেজুর খাওয়ার ফলে পুরুষের শুক্রাণু গুণমান বৃদ্ধি হবে। খেজুর এস্ট্রাডিওল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড দ্বারা লোড করা হয়, যা শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৯. খেজুর চুলের জন্য খুবই উপকারী:
খেজুর চুলের জন্য খুবই উপকারী। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন চুল মজবুত করতে সাহায্য করে।
১০. রক্তশূন্যতার জন্য উপকারী খেজুর:
রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান হল খেজুর। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। যা শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই যে সব ব্যক্তি রক্তাল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী উপাদান।
১১. হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে খেজুর:
আমাদের শরীরে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে খেজুর। কারণ খেজুর আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য হয়। তাই খেজুর হার্টের জন্য উপকারী উপাদান।
১২. খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
খেজুর আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য কারী উপাদান হিসেবে কার্যকরী।
১৩. খেজুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে:
খেজুর আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
১৪. খেজুর বাতের সমস্যার উপশম করে:
খেজুর বাপের সমস্যাযর উপশম করতে সাহায্য করে। খেজুর খাওয়ার ফলে রাতের ব্যথা দূর হয়ে যায়। খেজুরের তেল ব্যথা স্থানে লাগালে অথবা গরম দুধের সঙ্গে খেতে পারলে আরাম হবে।
১৫. ফোলা কমাতে সাহায্য করে খেজুর:
অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে ফোলা ভাব দেখা দেয়। যার জন্য অনেক রকমের ওষুধ খাওয়া হয় এবং আলাদা আলাদা মেসেজ করা হয়। কিন্তু খেজুরের সাহায্যে ব্যথা এবং ফোলা উভয় থেকেই মুক্তির পাওয়া যেতে পারে।
খেজুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের শরীরে ব্যথা এবং ফোলার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে এটি খাওয়ার আগে ফুলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নিতে হবে।
এবার আমরা খেজুরের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব।
খেজুরের অপকারিতা:
- অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খাওয়ার ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে পটাশিয়াম।
- অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে, পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে।
খেজুর সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
খেজুর কি ত্বকের জন্য ভালো?
খেজুর আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী একটি শুকনো ফল। কারণ খেজুর আমাদের শরীরকে ভিটামিন সরবরাহ করে যা কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে তাই এটি ত্বকের জন্য উপকারী।
খেজুর কি চুল পড়া বন্ধ করতে পারে?
খেজুরের মধ্যে আয়রন আছে। যা মাথার ত্বকে সঠিক রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে। এভাবে চুলের ফলিক গুলি কে শক্তিশালী করে চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং চুলের বৃদ্ধিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে দুই থেকে তিনটি খেজুর খাওয়ার ফলে চুল মজবুত হয়।
দুধের সাথে কি খেজুর খাওয়া উচিত?
হ্যাঁ, দুধের সাথে খেজুর খাওয়া উচিত, যদি আপনার হজমের আগুন সুস্থ থাকে তবে। খেজুর ও দুধের মিশ্রণ শক্তি দেবে এবং শক্তি বৃদ্ধি করবে কারণ উভয়ই বাল্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
খেজুর শরীরের জন্য গরম না ঠান্ডা?
খেজুর শরীরের জন্য গরম। তাই চিকিৎসকরা খেজুর শীতকালে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
কাদের খেজুর খাওয়া উচিত?
যদি কারোর হাড়ের সমস্যা থাকে, তাহলে তাদের খেজুর খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ খেজুরের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলি অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড়ের অবস্থায় চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।
রাতে কি খেজুর খাওয়া যেতে পারে?
শরীরে খাবার হজম করার ক্ষমতার কারণে যখন ইচ্ছা তখনই খেজুর খেতে পারেন।
প্রত্যেকদিন কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত?
প্রত্যেকদিন তিন থেকে চারটি খেজুর খাওয়া উচিত।
খেজুর ফলের উপকারিতা কি?
খেজুর আমাদের হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং হার্ড সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম:
- সকালে খালি পেট হল খেজুর খাওয়ার সঠিক সময়।
- এছাড়াও আপনি যখন ইচ্ছা তখনই খেতে পারেন, কিন্তু সঠিক পরিমাণ মত।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম খেজুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম, খেজুরের ইংরেজি কি, খেজুর গাছ কেমন হয় ইত্যাদি বিভিন্ন রকম সব বিষয়ে জেনে নিলাম।
আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে এবং বোধগম্য হয়েছে। যদি কোন কিছু প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের, ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন।