Cherry Fruit Benefits in Bengali Language. চেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার।-চেরি ফল হল এমন একটি ফল যা স্বাদে যেমন সুস্বাদু উপকারেও তেমনি ভরপুর। চেরি ফল খেতে মিষ্টি। এটি খেতে আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই ভালোবাসি। তাই আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু অজানা তথ্য।
চেরি ফল কি?
চেরি ফলকে একটি বিশেষ ফল বলে গণ্য করা হয়। চেরি ফল হল আকারে ছোট এবং গোলাকার। অনেক রকমের চেরি ফল আছে। সবদিকে বিচার বিবেচনা করে চেরি ফল দুই ভাগে বিভক্ত হয়। একটি হল মিষ্টি চেরি এবং আরেকটি হল টার্ট চেরি। আমাদের দেশে সাধারণত মিষ্টি চেরি ব্যবহার করা হয়। এই চেরি ফলটি আবার সুইট চেয়ারি নামেও পরিচিত। অন্যদিকে আবার ওই টার্ট হল চেরি স্বাদে টক। মিষ্টি চেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম হল প্রুনাস এভিয়াম। আর টার্ট চেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম হল প্রুনাস সেরাসাস।
চেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
- মিষ্টি চেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম হল প্রুনাস এভিয়াম।
- আর টার্ট চেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম হল প্রুনাস সেরাসাস।
চেরির পুষ্টি উপাদান:
- ফাইবার
- পলিফেনাল
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- ক্যারোটিনয়েড
- পটাশিয়াম
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
- অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি
- প্রোটিন
- ক্যালরি
- ফ্যাট
- শর্করা
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- জিংক
- ম্যাঙ্গানিজ
- ফ্যাটি অ্যাসিড
- নিয়াসেন
- থায়ামিন
- ফোলেট
প্রতি ১০০ গ্রাম চেরির পুষ্টি উপাদান:
- খাদ্য শক্তি - ৬৩ কিলোক্যালোরি
- জল - ৮২.২ গ্রাম
- প্রোটিন - ১.০৬ গ্রাম
- ফ্যাট - ০.২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট - ১৬ গ্রাম
- শর্করা - ১২.৮ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ১৩ মিলিগ্রাম
- আয়রন - ০.৩৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম - ১১ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস - ২১ মিলিগ্রাম
- জিংক - ০.০৭ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম - ২২২ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ - ০.০৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি - ৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৬ - ০.০৪৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ - ৩ মাইক্রগ্রাম
- ভিটামিন ই - ০.০৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে - ২.১ মাইক্রগ্রাম
- বিটা ক্যারোটিন - ৩৮ মাইক্রগ্রাম
- নিয়াসিন - ০.১৫৪ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন - ০.০২৭ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাবিন - ০.৩৩ মিলিগ্রাম
- ফোলেট - ৪ মাইক্রগ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট - ০.০৩৮ গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট - ০.০৪৭ গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট - ০.০৫২ গ্রাম
এবার আমরা জেনে নেব চেরি ফলের উপকারিতা সম্পর্কে।
চেরির উপকারিতা:
১. চেরি ত্বকের জন্য উপকারী:
চেরি ত্বকের সমস্যা সমাধানেও খুবই উপকারী উপাদান। চেরির মধ্যে আছে পলিফেনল। চেরির মধ্যে থাকা পলিফেনল ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের হাইড্রেটড, নরম এবং কোমল রাখতে সাহায্য করে। চেরি খাওয়ার ফলে ত্বকের জ্বালা এবং লাল ভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে আমাদের ত্বকের রক্ষা করতেও সাহায্য করে চেরি।
২. চেরি চুলের বৃদ্ধির জন্য উপকারী:
চুল পড়া, চুলের বৃদ্ধি উভয় সমস্যার সমাধানে চেরি খুবই উপকারী উপাদান। বন্য চেরির ছালের মধ্যে এমন কিছু ঔষধি গুন আছে যা চুলকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে, এর সাথে সাথে চুলকে মসৃণ এবং সিল্কি করতেও সাহায্য করে।
৩. মস্তিষ্কের ব্যধিতে উপকারী চেরি:
সৃতিশক্তির রাজ চিন্তাভাবনা ইত্যাদি বিভিন্ন রকম সমস্যা কমাতে সাহায্য করে চেরি। চেরি মস্তিষ্কের যেকোনো রকম সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।
৪. চেরির হার্ট সুস্থ রাখে:
চেরি হার্টের সমস্যার সমাধানে উপকারিতা আছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রদাহের কারণে অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি হৃদ রোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি হয়। আর চেরির মধ্যে প্রদাহ বিরহী প্রভাব আছে। যেটা কিছু পরিমাণে প্রদাহের কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও চেরির মধ্যে পাওয়া পলিফেনল হৃদ রোগের জন্য খুবই উপকারী।
৫. চেরি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে:
কোষ্ঠকাঠিন্য হলো এক ধরনের পাচনতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত জটিলতা। যেখানে মল পাস করার সময় বেশ অসুবিধা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধানে চেরির উপকারিতা আছে। কারণ চেরির মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা গ্রহণের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধানে উপকারী হতে পারে।
৬. চেরি ওজন কমাতে সহায়ক:
শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় চর্বি জমে স্থূলতা হতে পারে। আর এই সমস্যায় চেরি ব্যবহার করার ফলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে চেরি স্থূলতা হ্রাস প্রভাব ফেলে।
৭. চেরি চোখের জন্য উপকারী:
চেরি চোখের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের রোগ গুলিও বৃদ্ধি পায়। গলুকোমা হলো একটি চোখের রোগ। এটির হল এমন একটি রোগ যা চোখের অপটিক নার্ভগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি হয়। এই রকম অবস্থাতেই সাধারণত ঘটে যখন চোখের ভিতর তরল চাপ আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায় যা অপটিক স্নায়ু ক্ষতির কারণ হতে পারে। চেরির মধ্যে আছে লগনিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড চোখের ভিতরে তরল চাপ কমাতে সাহায্য করে। গলুকোমা চিকিৎসায় লগনিক অ্যাসিড খুবই উপকারী উপাদান। তাই চেরি চোখের জন্য উপকারী।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধ সাহায্য করে:
চেরি ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে। চেরির মধ্যে আছে পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার প্রচুর গুণাবলীর সাথে সাথে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্যও আছে। চেরির নির্যাসের মধ্যে পাওয়া অ্যান্থোসায়ানিন নামক একটি ফ্ল্যাভোনয়েডের আন্টি কার্সিনোজেনিক প্রভাব আছে। যা কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং লিভার ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে চেরি কোনভাবেই ক্যান্সারের চিকিৎসা নয়।
৯. চেরি মাথা ব্যথায় উপকারী:
চেরি খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের মাথা ব্যথায় উপকারী হয়। চেরি খাওয়ার ফলে মাথা ব্যথা উপশম ঘটে।
১০. চেরি অনিদ্রায় উপকারী:
অনিদ্রা জনিত সমস্যায় চেরির উপকারিতা আছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে চেরি জুস খাওয়ার ফলে ঘুমের সময় এবং গুণমান বাড়াতে সাহায্য করে। চেরি রসের মধ্যে আছে মেলাটোনিন নামক একটি উপাদান যা ঘুমের উন্নতি করতে সাহায্য করে। মেলাটোনিন হলো এক ধরনের হরমোন যা ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
চেরির ব্যবহার:
- চেরি কেকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চেরিকে ভালো ভাবে ধুয়ে সরাসরি খাওয়া যেতে পারে।
- চকলেট ও বাদামের কুকির মতো বেড কুকিতেও চেরি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- আবার অনেক মকটেলেও চেরি ব্যবহার করা হয়।
- চেরির জুস বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
চেরি খাওয়ার পরিমাণ:
প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টি চেরি অন্যান্য ফলে সাথে খাওয়া যেতে পারে। তবে বাচ্চাদের কতটা পরিমাণে ছেরি খাওয়াবেন এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দীর্ঘ সময়ের জন্য চেরি সংরক্ষণ:
- সামান্য শক্ত ও চকচকে পৃষ্ঠ আছে এইরকম চেরি কিনুন। তারপর চেরিগুলো ভালো করে বেছে নেবেন।
- গার্ডো লাল রংয়ের চেরি বেছে নিতে হবে। কারণ গার্ড লাল রঙের চেরিগুলো পাকা হয়।
চেরি সংরক্ষণ:
- ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলে এগুলি দুই দিনের মধ্যে খাওয়া উচিত।
- চেরিগুলিকে প্রায় এক সপ্তাহের জন্য ফ্রিজে প্লাস্টিকের মধ্যে ভরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
- সব সময়ই না ধোয়া জেরি ফ্রিজের মধ্যে রাখুন। তবে মনে রাখতে হবে চেরি খাওয়ার আগে অবশ্যই ধুয়ে খাবেন।
চেরির অপকারিতা সম্পর্কে এবার আমরা জেনে নেব।
চেরির অপকারিতা:
- অতিরিক্ত মাত্রায় চেরি খাওয়ার ফলে বদহজম, পেটব্যথা, ফোলা ভাব, ডায়রিয়া হতে পারে।
- চেরির মধ্যে ফরুক্টোজ আছে। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় চেরি খাওয়ার ফলে রক্তচাপ এর সমস্যা হতে পারে।
- ফরুক্টোজের কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় চেরি খাওয়ার ফলে মেটাবলিক সিনড্রোমের সাথে সাথে স্থূলতার সমস্যা হতে পারে। মেটাবলিক সিনড্রোমের বলতে সেই ঝুঁকির কারনেগুলিকে বোঝায় হৃদ রোগ, ডায়াবেটিসের এর সাথে সাথে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণ হয়।
- চেরি খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের সমস্যা হতে পারে।
চেরি ফল সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
চেরি প্রভাব কি?
চেরি প্রভাব হল শীতল।
চেরি খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি?
অতিরিক্ত মাত্রায় চেরি ফল খাওয়ার ফলে গ্যাস, অম্বল, বদহজম, এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে।
চেরিতে কি ভিটামিন সি বেশি থাকে?
১০০ গ্রাম চেরিতে ভিটামিন সি আছে ৭ মিলিগ্রাম।
আমি এক দিনে কত চেরি খেতে পারি?
একদিনে কম করে ৪ থেকে ৫ টি চেরি খাওয়া যেতে পারে।
চেরি খেলে কি লাভ?
চেরি খাওয়ার ফলে রাতে ঘুম ভালো হয়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে ইত্যাদি লাভ হয়।
ঘুমানোর আগে চেরি খাওয়া কি ভালো?
ঘুমানোর আগে চেরি ফল খাওয়ার ফলে ঘুমাতে সাহায্য হয়।
চেরি এর অন্য নাম কি?
চেরি এর অন্য নাম হল বরই, গ্লাস চেরি।
চেরি কোথায় বিখ্যাত?
কাশ্মীর, উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশে ইত্যাদি জায়গায় বিখ্যাত।
চেরিতে কোন ভিটামিন পাওয়া যায়?
ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই,ভিটামিন কে ইত্যাদি ভিটামিন আছে চেরির মধ্যে।
কেন ভারতে চেরি দামি?
চেরিগুলো জটিল ক্রমবর্ধমান চক্র, তাদের উচ্চ কৃষি খরচ, ফলনকে প্রভাবিত করে এমন আবহাওয়া সমস্যা ও কয়েকটি জাত কারিগর হওয়ার কারণে ভারতে চেরি দামি।
অনেক চেরি খাওয়া কি খারাপ?
অনেক চেরি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদ নয়।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম, চেরি ফলের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি, চেরি ফল কি ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে। যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। সুস্থ থাকুন।