KIWI - কিউই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা। কিউই এই নামটা হয়ত কেউ শুনে থাকবেন। এটি একটি ফলের নাম। এটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। বেশ কয়েক দশক আগে এই ফলটি আমাদের দেশে সেভাবে দেখা যায়নি। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে এখন বেশ কিছু জায়গায় এই ফলটি পাওয়া যায়। আজকে আমরা কিউই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব।
কিউই ফলের জনপ্রিয়তা:
এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় কিউই ফলের জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশে বহু জায়গাতে এখনো দেখা যায় না কিউই ফল। তবে জিটিএ সুত্রের খবর দার্জিলিং, সিকিম সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কিউই ফলের চাষের পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে।
কিউই ফলের উৎপত্তি ও প্রচলন:
কিউই সাধারণত চীন দেশের ফল। এটি দেখতে অনেকটা লেবুর মতো। ফলের বাইরের রং হলো গোল্ডেন ব্রাউনড এবং ভেতরটা সবুজ রঙের হয়। চীনে এই ফলটি গুজবেরি এবং ইয়াং টাও নামে পরিচিত। তবে বর্তমান যুগে কিউই হিসেবেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। কিউই স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বেরি। যেটা চীন থেকে নিউজিল্যান্ডে বিশ শতকের গোড়ায় আনা হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে কিউই নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত। ইউরোপ, আমেরিকা, গ্রিস, ক্যালিফোর্নিয়া প্রভৃতি দেশের জনপ্রিয় ফল কিউই। বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু কিছু জায়গায় মাঝে মধ্যেই এই ফলের প্রচলন দেখা যায়।
আমরা এবার জেনে নেব কিউই ফলের পুষ্টিমান সম্পর্কে।
কিউই ফলের পুষ্টিমান:
- ক্যালোরি
- ফাইবার
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- আয়রন
- প্রোটিন
- ফ্যাট
- শর্করা।
প্রতি ১০০ গ্রাম কিউই ফলের পুষ্টিমান:
- খাদ্যশক্তি - ৬১ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন - ১.৩৫ গ্রাম
- ফ্যাট - ০.৬৮ গ্রাম
- ফাইবার - ২.৭ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট - ১৪.৮৬ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ৪১ মিলিগ্রাম
- চিনি - ৮.৭৮ গ্রাম
- আয়রন - ০.২৪ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম - ৩১১ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি - ৯৩.২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ - ৬৮ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন কে - ৩৭.৮ মাইক্রোগ্রাম
এবার আমরা জেনে নেবো কিউই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে।
কিউই ফলের উপকারিতা:
১. কিউই ফল হার্টকে সুস্থ রাখে:
কিউই ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম। যা কার্ডিওভাসকুলার এর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রত্যেকদিন এক থেকে দুটি করে কেউই ফল খাওয়ার ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়। যা হৃদরোগ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যের সমস্যাকে দূর করতে সহায়ক। এটি খাওয়ার ফলে রক্তের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ কমানো হয়। ফলে ব্লকেজ এজ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। এছাড়াও কিউই ফলের মধ্যে আছে ম্যাগনেসিয়াম যা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২. কিউই হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে:
কেউই ফলের মধ্যে আছে অ্যান্টিনির নামক এক প্রকার এনজাইম। যেটা প্রোটিন দ্রবীভূত বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। কিউইর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কিউই দ্বিগুণ পরিমাণে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং হজমের সমস্যা গুলিকেও সাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৩. কিউই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে:
কিউই ফলের মধ্যে আছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিউই ফল খাওয়ার ফলে ঠান্ডা বা ফ্লু এরকম অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম হয়।
৪. কিউই চোখ ভালো রাখে:
কিউই ফল ফাইটোকেমিক্যালের একটি খুব ভালো উৎস। যা ম্যাকুইলার অবক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিউই ফলের মধ্যে আছে ভিটামিন এ এবং ফাইটোকেমিক্যাল, যা চোখের ছানি এবং বয়স জনিত সমস্যার কারণে চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৫. কিউই উচ্চ রক্তচাপ কমায়:
কিউই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ২০১৪ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রত্যেকদিন তিনটি কিউই ফল খাওয়ার ফলে এর মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ পদার্থ গুলির রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিম্ন রক্তচাপ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৬. কিউই দাঁত ও হাড় ভালো রাখে:
কিউই ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি ১২, পটাশিয়াম আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এর মত ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। যা আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর সাথে হাড় ও দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৭. কিউই হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কিউই ফল খাওয়া উচিত। কারন কিউই ফল ফুসফুসের কার্যকারী ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কেউ এর মধ্যে আছে ভিটামিন সি, যা হাঁপানি রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৮. কিউই ডায়রিয়া রোধ করে:
কেউই ডায়রিয়ার রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এর কারণ হলো এটি লো গ্লাইসেমিক হওয়ার কারণে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। কিউই ফলের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার। যা আমাদের শরীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৯. কিউই ত্বকের সুরক্ষা করে:
কেউ এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের রোদ, দূষণ এবং ধোঁয়ার দ্বারা সৃষ্ট রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিউই ফল ত্বকের বার্ধক্য জনিত সমস্যাও রোধ করতে সাহায্য করে।
১০. অনিদ্রা দূর করতে কিউই সাহায্য করে:
কেউই অনিদ্রা জনিত সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। কারণ কেউ এর মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অনিদ্রা জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
১১. কিউই কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে:
কিউই কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিউই এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম। যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এবার আমরা জেনে নেব কিউই ফলের অপকারিতা সম্পর্কে।
কিউই এর অপকারিতা:
- কিউই উপকারী ফল হলেও বেশ কিছু ব্যক্তির জন্য অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এর লক্ষণ হল - চুলকানি, মুখ, ঠোঁট, জিভ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
- অতিরিক্ত মাত্রায় কিউই ফল খাওয়ার পরে পেট খারাপ হতে পারে।
এবার আমরা জেনে নেব কিউই ফল কিভাবে খাওয়া হয়:
- কিউই ফলের সঙ্গে আম, আনারস এবং স্ট্রবেরি মিশিয়ে ককটেল তৈরি করে খেতে পারেন।
- কিউই ফলে সালাদ তৈরি করে খেতে পারেন। আবার মিষ্টি স্বাদের খেতে চাইলে পরিমাণ মতো মধুর মিশিয়ে নিতে পারেন।
- আবার কিউই ফল এমনি সাধারণভাবে কেটেও খেতে পারেন।
- তরমুজ এবং কিউই ফলের রস খেতে পারেন।
- তাজা কিউই ফল এবং ভ্যানিলা আইসক্রিমের সঙ্গে গ্রিলড কিউবি খেতে পারেন।
কিউই ফল সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
কিউই কি ভারতীয় ফল?
কিউই ফলের আদি উৎস স্থল হল মধ্য এবং পূর্ব চীন।
কিউই ফলে ভারতে দাম কত?
আমাদের দেশে ফলের দাম হল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কিলো।
ভারতে কিউই ফল কোন ঋতুতে হয়?
ভারতে কিউই ফল অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে পাকে।
কিউই ফল কে খেতে পারে না?
যে ব্যক্তির অ্যালার্জি আছে সেই ব্যক্তি কিউই ফল খেতে পারেন না।
কিউই ফলের জন্য বিখ্যাত কোন স্থান?
কিউই ফলের জন্য বিখ্যাত হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, মেঘালয়, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, কেরল ইত্যাদি পাহাড়ি অঞ্চলের জন্মায়।
কিউই ফল কোন দেশে সব থেকে সস্তা?
কিউই ফল জার্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসির দোকানে সব থেকে কম দাম।
এক কেজিতে কয়টি কিউই ফল ধরে?
এক কেজিতে প্রায় আট থেকে দশ টি কিউই ফল ধরে।
ভারত কি কিউই ফল আমদানি করে?
ভারত ইরান, নিউজিল্যান্ড এবং চিলি থেকে বেশিরভাগ কিউই ফল আমদানি করে থাকে।
প্রতিদিন কি কিউই ফল খাওয়া উচিত?
প্রত্যেকদিন নিয়মিত অন্তত একটি কিউই ফল খাওয়া উচিত।
দুধের সাথে কি কিউই ফল খাওয়া উচিত?
দুধের সাথে কখনোই কিউই ফল খাওয়া উচিত নয়।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কিউই ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা। এছাড়াও জেনে নিলাম কিউই ফলের উৎপত্তি, জনপ্রিয়তা এবং এর পুষ্টিমান সম্পর্কে জেনে নিলাম। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে। ধন্যবাদ, জানাই যারা আমাদের এই আর্টিকেলটিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। সুস্থ থাকুন।