Water Chestnut Fruit -পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা -পানিফল হল একটি ত্রিভুজ আকৃতির ফল। এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আছে। পানি ফল আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখে। কারণ এটি একটি শীতল ফল। পানি ফল সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে পাওয়া যায়। এটি একটি জলজ উদ্ভিদের ফল। নদী বা পুকুরে চাষ করা হয় পানি ফল। পানিফল সাধারণত কালো এবং সবুজ রঙের হয়ে থাকে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত রকম তথ্য জেনে নেব আমাদের এই আর্টিকেলে।
পানি ফল ইংরেজি কি?
পানি ফল ইংরেজি হল Water Chestnut Fruit।
পানি ফলের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
পানি ফলের বিজ্ঞান সম্মত নাম হল (Water chestnut/Scientific name) - Eleocharis dulcis
পানি ফল কি?
পানি ফল একটি জলজ উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। পানি ফল জলে চাষ করা হয়। পানি ফলের গাছটি জলের লতার মত ছড়িয়ে পড়ে। পানি ফল দুটি কাঁটা বিশিষ্ট এবং শক্ত খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। এই শক্ত খোসার ভিতরে আছে সাদা রঙের শুষ্ক এবং হালকা মিষ্টি একটি ফল। পানিফল বেশিরভাগ এশিয়া এবং ইউরোপে চাষ করা হয়। এটি ফলের পাশা পাশি ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
পানি ফল কত প্রকার?
পানিফল সাধারণত দুই প্রকার।
- Eleocharis Dulcis: এটি একটি শক্ত কাণ্ড বিশিষ্ট উদ্ভিদ। এটি চীন দেশের পুকুরে ব্যাপক ভাবে চাষ করা হয়।
- ট্রাপা নাটানস: ট্রাপা নাটানস হল এক প্রকারের ফল। যার বড়ো বড়ো পাতা আছে এবং জলের ওপরে ভেসে থাকে। এটিও মূলত চিনের খাবার। এটি এশিয়া এবং দক্ষিণ ইউরোপের ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে।
এবার আমরা পানি ফলের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান আছে জেনে নেব।
পানি ফলের পুষ্টি উপাদান:
- খাদ্যশক্তি
- প্রোটিন
- ফাইবার
- কার্বোহাইড্রেট
- সোডিয়াম
- শর্করা
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- আয়রন
- ম্যাঙ্গানিজ
- জিংক
- থায়ামিন
- নিয়াসিন
- ফোলেট
- রিবোফ্লাভিন
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন বি ৫
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন ই
প্রতি ১০০ গ্রাম পানি ফলের মধ্যে পুষ্টিগুণ:
Sl.no | Nutition | Per100g |
---|---|---|
1. | প্রোটিন | ১.৪৩ গ্রাম |
2. | খাদ্যশক্তি | ৬৪ কিলো ক্যালরি |
3. | কার্বোহাইড্রেট | ১৭.৭১ গ্রামT |
4. | শর্করা | ২.৮৬ গ্রাম |
5. | ফাইবার | ৫.৭ গ্রাম |
6. | সোডিয়াম | ১৪ মিলিগ্রাম |
7. | পটাশিয়াম | T৫৮৪ মিলিগ্রাম |
8. | ক্যালসিয়াম | ১১ মিলিগ্রাম |
9. | ম্যাগনেসিয়াম | ২২ মিলিগ্রাম |
10. | ফসফরাস | ৬৩ মিলিগ্রাম |
11. | আয়রন | ০.০৬ মিলিগ্রাম |
12. | ম্যাঙ্গানিজ | ০.৩৩১ মিলিগ্রাম |
13. | জিংক | ০.৫ মিলিগ্রাম |
14. | থায়ামিন | ০.১৪ মিলিগ্রাম |
15. | নিয়াসিন | ১ মিলিগ্রাম |
16. | ফোলেট | ১৬ মাইক্রোগ্রাম |
17. | রিবোফ্লাভিন | ০.২ মিলিগ্রাম |
18. | ভিটামিন বি ৬ | ০.৩২৮ মিলিগ্রাম |
19. | ভিটামিন বি ৫ | T০.৪৭৯ মিলিগ্রাম |
20. | ভিটামিন সি | ৪ মিলিগ্রাম |
21. | ভিটামিন ই | ০.৫ মিলিগ্রাম |
এবার আমরা জেনে নেব পানি ফলের উপকারিতা সম্পর্কে।
পানি ফলের উপকারিতা:
১. পানি ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক:
পানিফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক কারণ পানি ফলের মধ্যে আছে পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও স্ট্রোকের মত হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ গুলি কমাতেও সাহায্য করে।
২. পানি ফল হার্ট সুস্থ রাখে:
পানিফল আমাদের হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ পানি ফলের মধ্যে আছে পটাশিয়াম যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম আছে বলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে পানি ফল ফলে হৃদ রোগের ঝুঁকি কমে।
৩. পানি ফল প্রদাহ কমায়:
পানি ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার মধ্যে আছে ফিসেটিন, ডায়োসমেটিন, লুটিওলিন এবং টেকটোরিজিন। যা অমৃত কোষগুলিকে সারাতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৪. পানি ফল টিউমার বৃদ্ধি কমায়:
পানি ফলের মধ্যে আছে ফেরুলিক নামক একটি অ্যাসিড। যা একরকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই ফেদুলিক অ্যাসিড ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমাতে এবং টিউমার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।
৫. পানি ফল ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী:
রক্তের মধ্যে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস হতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে এবং রক্তের মধ্যে চিনি বা সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পানি ফলের উপকারিতা পাওয়া যায়। পানি ফলের মধ্যে পলিফেনল নামক একটি উপাদান আছে, যার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৬. পানি ফল ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
ওজন বেশি হওয়ার ফলে অনেক সময় অনেক ব্যক্তিকে অনেক রোগের সম্মুখীন হতে হয়। এরকম সমস্যা এড়াতে পানি ফল খেলে উপকার মিলবে। কারণ পানি ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন উপাদান। প্রোটিন এবং ফাইবার হজম হতে সময় লাগে। তাই পেট ভরা থাকে অনেক সময় এবং খিদে লাগে না।
৭. পানি ফলে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য:
ব্যাকটেরিয়ার মত অণুজীব আমাদের শরীরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেক রকমের সংক্রমণ এবং রোগের কারণ হতে পারে। এই বিভিন্ন রকম সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে পানি ফল। পানি ফলের মধ্যে আছে আন্টি মাইক্রোনিয়াল বৈশিষ্ট্য। যা সংক্রমনের কারণে ব্যাকটেরিয়া গুলি বৃদ্ধি হওয়ার থেকে রোধ করতে সাহায্য করে।
৮. পানি ফল হজম শক্তি উন্নত করে:
পানিফল আমাদের শরীরে হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ পানি ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। পানি ফল খাওয়ার ফলে বদহজম, গ্যাস, অম্বল ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
৯. পানি ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক:
পানি ফল কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। কারণ পানি ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং মল নরম করতে সাহায্য করে।
১০. পানি ফল দাঁতের জন্য উপকারী:
পানি ফল দাঁত মজবুত করতে সহায়ক। কারণ পানি ফলের মধ্যে যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস যা দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। এর সাথে সাথে হাড়ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
১১. পানি ফল ত্বক জন্য উপকারী:
পানি ফল আমাদের ত্বক জন্য খুবই উপকারী উপাদান। আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে রক্তকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে পানি ফল। এছাড়াও পানি ফল ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
১২. পানি ফল চুলের জন্য উপকারী:
পানি ফল আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। কারণ পানি ফলের মধ্যে আছে পটাশিয়াম, জিংক, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ই। যা চুলকে মুজবুত করতে সাহায্য করে এর সাথে সাথে চুল চকচকে, লম্বা এবং ঘন হয়।
পানি ফল খাওয়ার উপায়:
- পানি ফল সিদ্ধ করে এর খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- পানি ফল পাকা সব থেকে সুস্বাদু এবং বেশি মিষ্টি। তাই যদি মিষ্টি পানি ফল খেতে চান, তাহলে পাকা পানি ফল খান।
- পানি ফলের জুস বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
- পানি ফল শুকানোর পর পাউডার বানিয়ে ময়দা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পানি ফলের ময়দা সকালের জল খাবার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
পানি ফলে সঠিক পরিমাণ:
পানি ফলে সুবিধা জন্য এটি অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনো যার ভিত্তিতে বলা যায় যে প্রত্যেকদিন কতটা পানি ফল খাওয়া যেতে পারে।
পানি ফল খাওয়ার সঠিক সময়:
পানি ফল খাওয়া নির্দিষ্ট কোন সঠিক সময় নেই। তবে সকালে এবং রাত্রে বেলায় এটি না খাওয়াই উচিত।
এবার আমরা জেনে নেব পানি ফলের অপকারিতা সম্পর্কে।
পানি ফলের অপকারিতা:
- যেসব ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন সেসব ব্যক্তিদের পানি ফল খাওয়া উচিত নয় তাদের এড়িয়ে চলাই ভালো পানি ফল থেকে।
- পানিফল খাওয়ার পরে জল খাওয়া উচিত নয়। কারণ পানি ফল শীতল। তাই যদি পানি ফল খাওয়ার পর জল খাওয়া হয় তাহলে সর্দি কাশি হতে পারে।
- পানিফল অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা এবং পেটে ফোলা ভাব হতে পারে।
- পানিফল খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই পানিফল থেকে যদি গন্ধ ওঠে, তাহলে এটি না খাওয়াই উচিত খেলে ক্ষতি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় পানি ফল খাওয়ার ফলে গ্যাস, অম্বল, বদহজম ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
- পানি ফলে অনেক ব্যক্তির অ্যালার্জি ও হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণ হবে - চুলকানির, গায়ে ফুসুরি বের হবে, ফোলা ভাব সৃষ্টি হতে পারে।
পানি ফল সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
পানি ফল কিডনির জন্য ভালো?
হ্যাঁ, পানি ফল কিডনির জন্য খুবই ভালো। কারণ হলো পানি ফলের মধ্যে প্রোটিন এবং পটাশিয়াম কম থাকে।
পানি ফল গরম না ঠান্ডা?
পানি ফল শীতল। তবে প্রকৃতিতে অত্যন্ত রেচক পানি ফল। এর মধ্যে আছে মাঝারি পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এক দিনে পানি ফল কতটা খাওয়া উচিত?
এক দিনে পানি ফল ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাওয়া উচিত।
কখন পানি ফল খাওয়া উচিত নয়?
পানি ফল সকাল বেলায় এবং রাতের বেলায় খাওয়া উচিত নয় কারণ এতে শীতল হওয়ার কারণে সর্দি লাগতে পারে।
পানি ফল কোন রোগে উপকারী?
পানিফল উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যায় খুবই উপকারী একটি ফল।
পানি ফল কত প্রকারের?
পানিফল সাধারণত তিন ধরনের হয়। যেমন - ভারতীয় পানি ফল, চীনা পানি ফল এবং ইউরোপীয় পানি ফল।
পানি ফল খাওয়ার পর কি খাওয়া উচিত নয়?
পানি ফল খাওয়ার পর জল খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি প্রভাব শীতল হওয়ার, তাই এটি খাওয়ার পর জল খেলে সর্দি কাশি হতে পারে।
পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা কি?
পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা হলো হার্টের জন্য উপকারী, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ওজন কমাতে উপকারিতা ইত্যাদি।
পানি ফল কি গ্যাস সৃষ্টি করে?
অতিরিক্ত মাত্রায় পানি ফল খাওয়ার ফলে ডায়াটারি ফাইবার বেড়ে যাবে এবং অনেক ব্যক্তির পেট ব্যথা, পেটে গ্যাস, অম্বল হতে পারে।
পানি ফল কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
পানি ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
পানি ফল কি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো?
পানি ফলের মধ্যে আছে ফাইবার। যা আমাদের রক্তের শর্করা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কতক্ষণ পানি ফল খাওয়া যায়?
পানিফল শুকনো জায়গায় থাকলে প্রায় চার পাঁচ দিন পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে।
এক দিনে কতগুলো পানি ফল খাওয়া যেতে পারে?
এক দিনে ৫ থেকে ৮ টি পানি ফল খাওয়া যেতে পারে।
খালি পেটে পানি ফল খেলে কি হয়?
খালি পেটে পানি ফল খেলে ওজন কমতে সাহায্য করে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম পানি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম পানি ফল কি, পানি ফল এর ইংরেজি নাম কি, পানি ফলের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি, এর প্রজাতি কত রকমের হয় ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। কমেন্টে জানান কেমন লাগলো। যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। সুস্থ থাকুন।