Soybean Oil - সয়াবিন তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা। Soybean Oil benefits and side effects.সয়াবিন তেল এখন প্রায় আমাদের সকলেরই রান্না ঘরে কমবেশি দেখা যায়। যদিও সয়াবিন তেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। তবে এখন সয়াবিন তেল পূর্ব এসিআই ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়াও আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গায় ব্যবহার হয়। সয়াবিন তেলের বেশ কিছু উপকারিতা আছে। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব সয়াবিন তেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।
সয়াবিন তেলের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
সয়াবিন তেলের বিজ্ঞান সম্মত নাম হলো Glycine max।
সয়াবিন তেলের আদি কোথায়?
সয়াবিন তেলের আদি নিবাস হলো পূর্ব এশিয়া।
সয়াবিন তেলের ইংরেজি নাম কি?
সয়াবিন তেলের ইংরেজি নাম হল Soyabin Oil।
সয়াবিন তেল কি?
সয়াবিন তেল হল এক ধরনের লেগুস, যা একটি শুঁটিতে জন্মায়। সয়াবিন গুলিকে ভালো ভাবে বেছে বেছে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তার থেকে তেল বের করা হয়। সয়াবিন তেলের মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট পরিমাণ বেশি থাকে সয়াবিন তেলের মধ্যে।
বেশির ভাগ সয়াবিন তেল পরিশোধিত এবং মিশ্রিত ও মধ্যে মধ্যে হাইড্রোজেনেটেড থাকে। সয়াবিন তেল অনেকটাই মার্জারিন ও শর্টেনিংয় পাওয়া যায়। সয়াবিন তেল অনেকটাই উদ্ভিজ্জ তেলের সাধারণ উপাদান এবং বিভিন্ন ধরনের মধ্যে পাওয়া যায়। যেমন :
- মেয়োনিজ
- হিমায়িত খাদ্য
- সালাদ ড্রেসিং
- মাংস পণ্য
- অনুকরন দুধ
সয়াবিন তেলের মধ্যে কোন রকম অপ্রতিরোধ্য গন্ধ নাই। তাই এটি খাবারের প্রাকৃতিক স্বাদকে পরিপূরক ও উন্নত করতে সাহায্য করে। সয়াবিন তেলের উচ্চ মিশ্রণ ক্ষমতা এটিকে খাদ্য ব্যবসায় একটি খুবই জনপ্রিয় পছন্দ করে তোলতে সহায়ক।
এবার আমরা জেনে নেব সয়াবিন তেলের পুষ্টি গুন সম্পর্কে।
সয়াবিন তেলের পুষ্টিগুণ:
- আয়রন
- জিংক
- ক্যালরি
- লিপিড
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- ফ্যাটি অ্যাসিড
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট
প্রতি এক টেবিল চামচ সয়াবিন তেলের পুষ্টিগুণ:
Sl.no | পুষ্টিগুণ |
Per13g |
---|---|---|
1. | আয়রন | ০.০০৭ মিলিগ্রাম |
2. | জিংক | ০.০০১ মিলিগ্রাম |
3. | খাদ্য শক্তি | ১২০ ক্যালরি |
4. | লিপিড | ১৩.৬ গ্রাম |
5. | ভিটামিন ই | ১.১১ মিলিগ্রাম |
6. | ভিটামিন কে | ২৫ মাইক্রগ্রাম |
7. | ফ্যাটি অ্যাসিড | ২.১২ গ্রাম |
8. | পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৭.৮৫ গ্রাম |
9. | মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৩.১ গ্রাম |
10. | পটাশিয়াম | ০.০ গ্রাম |
এবার আমরা জেনে নেব সয়াবিন তেলের উপকারিতা সম্পর্কে।
সয়াবিন তেলের উপকারিতা:
১. সয়াবিন তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ক্রিয়া বৃদ্ধি করে:
সয়াবিন তেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্যগুলি ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আর এই ফ্রি র্যাডিকেলগুলো ত্বকের রোগের কারণ হতে পারে।
২. সয়াবিন তেল হাড় সুস্থ রাখে:
সয়াবিন তেলের মধ্যে আছে ভিটামিন কে। যা হাড়ের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রোটিন সংশ্লেষিত করার জন্য অত্যাবশক, যথা- অস্টিওকালসিন। যেটা হাড়ের ভর রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৩. সয়াবিন তেল ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে:
ইমিউনিটি সিস্টেম আমাদের শরীরকে অসুস্থতা হওয়ার থেকে রক্ষা করে। সয়াবিন তেলের মধ্যে আছি ইমিউনিটি সিস্টেম। এছাড়াও সয়াবিন তেলের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৪. সয়াবিন তেল কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে:
সয়াবিন তেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এর ভারসাম্য কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সয়াবিন তেলের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৫. সয়াবিন তেল হার্টের জন্য উপকারী:
সয়াবিন তেল হার্টের জন্য উপকারী কারণ এটি আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
৬. সয়াবিন তেল ত্বকের জন্য উপকারী:
সয়াবিন তেলের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ভিটামিন ই। যা আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত কাজ করে। ত্বকে ব্রনের দাগ, রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে সয়াবিন তেল। ত্বকের ক্ষতি নিরাময় করে এবং ত্বকের নতুন কোষ উদযাপিত করতে সাহায্য করে সয়াবিন তেল।
৭. সয়াবিন তেল চুলের জন্য উপকারী:
চুল পড়ার সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে সয়াবিন তেল। কারণ সয়াবিন তেলের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৮. সয়াবিন তেল অকাল বার্ধক্য এর লক্ষণ কমায়:
সয়াবিন তেল অকাল বার্ধক্য লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। কারণ সয়াবিন তেলের মধ্যে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের শরীরে কোলাজেন পুনঃনির্মাণ করতে সাহায্য করে, ত্বকের নমনীয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক, ত্বকের বলি রেখা দূর করতে সহায়ক।
এবার আমরা জেনে নেব সয়াবিন তেলের অপকারিতা সম্পর্কে।
সয়াবিন তেলের অপকারিতা:
- অতিরিক্ত মাত্রায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করার ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি হতে পারে। কারণ সয়াবিন তেলের মধ্যে ইনসুলিন প্রতিরোধের উৎপাদন হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করার ফলে যকৃতে বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সয়াবিন তেল খাওয়ার ফলে বদহজম, গ্যাস, অম্বল ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- বেশি মাত্রায় সয়াবিন তেল হওয়ার ফলে পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, বমি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করার ফলে হৃদরোগের সমস্যা বাড়তে পারে। কারণ শরীরের খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত মাত্রায় সয়াবিন তেল খাওয়ার ফলে ইমিউন সিস্টেম বিষাক্ত হতে পারে। কারণ, অতিরিক্ত মাত্রায় এটি ব্যবহার করার ফলে ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলি ক্ষতি গ্রস্ত হয়।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম সয়াবিন তেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও সয়াবিন তেলের বিজ্ঞান সম্মত নাম, সয়াবিন তেলের ইংরেজি নাম, সয়াবিন তেল কি ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয় জেনে নিলাম। আশা করি এটি আপনাদের বোঝার মত ভাষায় লেখা হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো কমেন্ট করুন, শেয়ার করুন বন্ধুদের সঙ্গে। ধন্যবাদ।সুস্থ থাকুন।