Swamp Weed - কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।
কুলেখাড়া, এই নামটি আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই শুনেছি। এটি হলো একটি ঔষধি গাছ।
এই কুলেখাড়া কে আমাদের গ্রামাঞ্চলে কুলেখাড়া শাক হিসেবে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকমের উপকার করে থাকে।
এছাড়াও এর প্রধান উপকারিতা হলো কুলেখাড়া পাতার রস শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
কুলেখাড়া শাক এর ইংলিশ কি?
কুলেখাড়া in english - Swamp Weed।
কুলেখাড়া শাক এর বিজ্ঞানসম্মত নাম কি ( কুলেখাড়া পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম )?
কুলেখাড়া বৈজ্ঞানিক নাম Hygrophila auriculata।
কুলেখাড়া পাতার বৈশিষ্ট্য:
- কুলেখাড়া মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায় ( কুলেখাড়া শাক কোথায় পাওয়া যায় )।
- আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরি করতে কুলেখাড়ার মূল, ফুল, কান্ড, পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয় ( কুলেখাড়া গাছের ব্যবহৃত অংশ )।
- কুলেখাড়া পাতার রস রক্ত শূন্যতা অর্থাৎ রক্তাল্পতা দূর করতে কাজ করে এটা হচ্ছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
- কুলেখাড়া শাক আমাদের শরীরে নানা রকম ভাবে উপকার করে।
কুলেখাড়া পাতার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে এবার আমরা জেনে নেব।
কুলে খাড়া পাতার পুষ্টি উপাদান:
- খাদ্য শক্তি
- প্রোটিন
- কার্বোহাইড্রেট
- ফাইবার
- ফ্যাট
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- সোডিয়াম
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- রিবোফ্লাভিন
- ফলিক অ্যাসিড
- কপার
- বিটা ক্যারোটিন
প্রতি ১০০ গ্রাম কুলেখাড়া পাতার পুষ্টি উপাদান:
- খাদ্য শক্তি - ৫৮.৮০ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন - ৪.৬৯ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট - ১২.২ গ্রাম
- ফাইবার - ১.৮০ গ্রাম
- ফ্যাট - ০. ১৩ গ্রাম
- পটাশিয়াম - ২৬৬ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম - ২৭.৯৩ মিলিগ্রাম
- আয়রন - ৭.০৩ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম - ৫৬.১ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি - ৫০.০৮ মিলিগ্রাম
কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা:
১. লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করে কুলেখাড়া পাতা:
কুলেখাড়ার পাতার রস আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
২. Kolekhera a perfect medicine of Armenia:
কুলেখাড়া আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। যা অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে কাজ করে। আর এই অ্যানিমিয়া বেশির ভাগ মহিলাদেরই হয়ে থাকে। কুলেখাড়া অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে পারে, কারণ এর মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে আয়রন।
উপায়:
কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার নিয়ম :
কুলেখাড়া পাতাগুলোকে প্রথমে ভালো ভাবে বেছে নিতে হবে।
তারপরে শাক যেমন রান্না করা হয় সেই রকম রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
আবার কুলেখাড়া পাতাগুলোকে সিদ্ধ করে আলু সেদ্ধ সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও আপনি কুলেখাঁড়া পাতা ভালো ভাবে ধুয়ে সরাসরি চিবিয়েও খেতে পারেন।
কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার নিয়ম :
কুলেখাড়ার পাতাগুলোকে প্রথমে ভালো ভাবে বেছে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
তারপর ভালো ভাবে মিক্সিতে অথবা সিলে বেটে নিতে হবে।
তারপরে পাতা থেকে রসগুলির নিংড়ে বের করে নিতে হবে।
সব শেষে কুলেখাড়া পাতার রসটি পান হবে।
৩. হজম শক্তি উন্নত করতে কুলেখাড়া উপকারিতা:
কুলেখাড়া খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। কারণ কুলেখাড়ার মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
৪. কুলেখাড়া পাতার রস হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে:
কুলেখাড়ার পাতার রস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি হয়।
এছাড়াও লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বৃদ্ধি হয়। ফলে রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
৫. কুলে খাড়া শাক হাড় মজবুত করে:
কুলেখাড়া শাক খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে হাড় মজবুত ও শক্তিশালী হয়। কারণ কুলেখাড়া শাক এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
৬. কুলেখাড়া শাক ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময়ে উপকারী:
কুলেখাড়া শাক ডায়রিয়া, আমাশয় কমাতে খুবই উপকারী একটি শাক।
৭. কুলেখাড়া শাক পাকস্থলী ও লিভারের জন্য উপকারী:
কুলেখাড়া শাক বা কুলেখাড়া পাতা পাকস্থলী এবং লিভারের কার্যকরী ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৮. কুলেখাড়া শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
কুলেখাড়া শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৯. কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার ফলে কৃমি দূর হয়:
কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার ফলে কৃমি দূর হয়। কারণ কুলেখাড়া পাতার মধ্যে আছে Antihelminthic বৈশিষ্ট্য আছে।
১০. কুলেখাড়া পাতার রস রক্ত গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে:
কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই যদি কোন ব্যক্তি ডায়াবেটিস সমস্যা থাকে তাহলে তার কুলেখাড়া পাতা খাওয়া খুবই উপকারী হবে।
কুলেখাড়া পাতার ব্যবহার:
- প্রথমে কতগুলো ভুলে খারাপ পারতাম ভালো ভাবে বেছে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- তারপর পাতাগুলো আপনি যদি পারেন তো কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন।
- অথবা কুলেখাড়া শাক ছোট ছোট করে কেটে অল্প সামান্য একটু জল মিশিয়ে মিক্সি মেশিনে পিছে নিতে পারেন।
- তারপর ওই সবুজ রস ছেঁকে নিতে হবে।
- তারপর এক কাপ জলে এক চামচ কুলেখাড়ার রস এবং এক চামচ মধু মেশে প্রত্যেকদিন পান করতে পারেন।
- অথবা শাক হিসেবেও কুলেখাড়া রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
কুলেখাড়া পাতা কিভাবে খেতে হয়:
- কাঁচা কুলেখাড়া পাতা ধুয়ে সরাসরি খাওয়া যেতে পারে।
- আবার কুলেখাড়া পাতার জুস বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
- আবার কুলেখাড়া পাতাগুলির শাক হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে।
কুলেখাড়া খাবার নিয়ম:
কুলেখাড়া পাতার রস যদি প্রতিদিন খাওয়া হয়, তাহলে ১৫ মিলিলিটার অথবা এক টেবিল চামচ করে দিনে দুইবার তিন সপ্তাহ ধরে পান করতে পারেন।
Also Read: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। খেজুর খাওয়ার নিয়ম। - Benefits and harms of eating Dates.
কুলেখাড়ার ব্যবহৃত অংশ:
কুলেখাড়া পুরো অংশটাই ব্যবহার হয় মূল থেকে পাতা পর্যন্ত। যেমন আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করতে কুলেখাড়ার মূল পাতা কান্ড ফুল ফল সবই ব্যবহার করা হয়।
কুলেখাড়া পাতার অপকারিতা:
- অতিরিক্ত মাত্রায় কুলেখাড়া শাক খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে কুলেখাড়া শাক খাওয়ার ফলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় কুলেখাড়া শাক খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় কুলেখাড়া শাক খাওয়ার ফলে গ্যাস-অম্বল হতে পারে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কুলেখাড়া শাক, কুলেখাড়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
এছাড়াও জেনে নিলাম কুলেখাড়ার শাকের বিজ্ঞান সম্মত নাম, ইংরেজি নাম, কুলেখাড়া পাতা, কুলেখাড়া পাতার রস, কুলেখাড়ার অপকারিতা, কুলেখাড়া পাতার রস খেলে কি হয়, কুলেখাড়া পাতা খেলে কি হয়, কুলে খাড়া শাকের উপকারিতা, কুলেখাড়া পাতার গুনাগুন, কুলেখাড়া খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে।
আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন।
Ai sak khala period ar somosha dur hobe ki plz janaben
উত্তরমুছুন