Aamla and Aloevera Juice Benefits : অ্যালোভেরা ও আমলকির জুসের উপকারিতা।
অ্যালোভেরা ও আমলকের ঔষধি গুণে ভরপুর এটা আমরা কম বেসি প্রায় সকলেই জানি। এছাড়াও আমলকি এবং অ্যালোভেরার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপকারিতা কম কিছু না কিছু আমরা সকলেই জানি অথবা পড়েছেন বা শুনেছেন।
তবে আপনারা কি জানেন, যে আমলকি ও অ্যালোভেরার জুস এক সাথে প্রয়োগ করে আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য আরো কার্যকর বলে বিবেচিত হয়েছে। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব অ্যালোভেরা ও আমলকির জুসের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকি ও অ্যালোভেরার রসের পুষ্টিগুণ:
প্রতি ১০০ গ্রাম অ্যালোভেরার রসের পুষ্টিগুণ:
জল | ৮০.১ গ্রাম |
খাদ্য শক্তি | ৭৩ কিলোক্যালরি |
প্রোটিন | ০.৬৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ১৮.৭৫ গ্রাম |
ফাইবার | ২.৪ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৬ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.৩৩ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৬ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৭ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৭৭ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২ মি.গ্রা |
জিংক | ০.১১ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.২১৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ০.১৭৭ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ০.৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ১০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ৬ | ০.০১২ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ৩ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৭ মাইক্রোগ্রাম |
স্যাচুরেটেড | ০.০১৩ গ্রাম |
মনোস্যাচুরেটেড | ০.০১৮ গ্রাম |
পলিআনস্যাচুরেটেড | ০.১১ গ্রাম |
প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকির রসের পুষ্টিগুণ:
জল | ৯৬.২৩ গ্রাম |
খাদ্য শক্তি | ১৫ কিলোক্যালরি |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৭৫ গ্রাম |
শর্করা | ৩.৭৫ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.১৫ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৩.৮ মিলিগ্রাম |
অ্যালোভেরা এবং আমলকি জুসের উপকারিতা:
এবার আমরা জেনে নেব আমলকি এবং অ্যালোভেরা জুসের উপকারিতা সম্পর্কে।
১. অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হতে পারে। অ্যালোভেরা এবং আমলকির জুস এই সমস্যা কমাতে খুবই কার্যকর। একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমলকির রসের মধ্যে ইনসুলিনের কার্যকর বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য আছে।
আর আমলকির রসের এই গুণটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। আর অন্যদিকে, অ্যালোভেরার মধ্যে আছে অ্যান্টি-ডাইবেটিক বৈশিষ্ট্য যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই আমলকি ও অ্যালোভেরার মধ্যে পাওয়া এইসব উপাদান গুলি ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
২. অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়ক:
অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমলকির মধ্যে আছে পলিফেনল। আর এই পলিফেনলের উপস্থিতির কারণে আমলকির রস সামগ্রিক লিপিড প্রোফাইল অর্থাৎ ফ্যাট, কোলেস্ট্রল হ্রাস করে হার্টকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। আর অ্যালোভেরার মধ্যে আছে কার্ডিও প্রতি রক্ষা মূলক বৈশিষ্ট্য। যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়।
৩. অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস চুলের শক্তি বৃদ্ধি করে:
অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস চুলের যত্নে উপকারী হতে পারে। সাধারণত অ্যালোভেরা হলো একটি ভেষজ ওষুধ যা চুল পড়ার রোধ করে এবং চুল স্বাস্থ্যকর রাখতে খুবই দরকারি। একই সময়ে আমলকি কে একটি চমৎকার হেয়ার টনিক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এইজন্য চুলের বৃদ্ধির কারণে খাদ্য তালিকায় আমলকির জুস অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কারন আমলকির রসের মধ্যে আছে ভিটামিন সি, যা চুলের বৃদ্ধিকে আরো উৎসাহিত করতে পারে। এর ভিত্তিতে এটি বিশ্বাস করা যেতে পারে যে অ্যালোভেরা ও আমলকির রস চুলের জন্য খুবই উপকারী।
৪. অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস ওজন কমাতে সহায়ক:
অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্যাট বা চর্বি বৃদ্ধি হলে আমাদের শরীরে স্থূলতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেটা আরও অন্যান্য রোগের কারণ হতে পারে। এই রকম পরিস্থিতিতে অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস খাওয়ার ফলে স্থূলতার সমস্যা কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য হতে পারে।
৫. অ্যালোভেরা ও আমলকির রস ত্বকের জন্য উপকারী:
অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস ত্বকের জন্য উপকারী হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালোভেরা ত্বককে হাইড্রেটিং এবং মশ্চারাইজ করতে কার্যকর। তার পাশাপাশি আমলকি ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমলকির মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রভাব, যা ত্বকের রং উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস লিভার সুস্থ রাখতে উপকারী:
অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। অ্যালোভেরার এবং আমলকির মধ্যে আছে হেপাটোপ্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্য।
আর এই বৈশিষ্ট্য লিভারের প্রদাহ এবং অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহলের ব্যবহারের কারণে লিভারের ক্ষতি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস লিভার সম্পর্কিত ঝুঁকি গুলি দূর করে লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৭. অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে:
দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে নানা রকমের সংক্রমণ এবং রোগের ঝুঁকি থাকতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আমলকির মধ্যে আছে ইমিউনোমোডুলেশন বৈশিষ্ট্য। যেটা ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আর অ্যালোভেরার মধ্যে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। জারক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা ও আমলকির জুসের ব্যবহার:
- অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস দিনের যেকোনো সময় সতেজতার জন্য খাওয়া যেতে পারে।
- অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস সকালে জলখাবার সময় খাওয়া যেতে পারে।
- অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস হেয়ার মাস্ক হিসেবেও খুবই উপকারী হতে পারে।
- ফেসপ্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস।
- তরমুজে রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস।
অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস খাওয়ার পরিমাণ:
- ব্যক্তির বয়স এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে অ্যালোভেরা ও আমলকির জুসের পরিমাণ ঠিক হয়। তবে
- অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস নিয়মিত খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অ্যালোভেরা ও আমলকির জুসের অপকারিতা:
- যেসব ব্যক্তিদের অ্যালোভেরা অথবা আমলকী থেকে অ্যালার্জি আছে সেই সব ব্যক্তিদের জন্য এই জুস খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে অ্যালোভেরার ডস খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথার, ডায়রিয়া হতে পারে, এমনকি প্রস্রাবের রং ও পরিবর্তন হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে অ্যালোভেরার রস খাওয়ার ফলে হেপাটাইটিস ও কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
- যেসব ব্যক্তিদের নিম্ন রক্তচাপ আছে সেইসব ব্যক্তিদের এই অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস খাওয়া উচিত নয় কারণ আমলকি রক্তচাপ কমাতে পারে।
- অ্যালোভেরা ও আমলকির মধ্যে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য আছে। তাই যেসব ব্যক্তিরা ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন তাদের খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস গর্ভবতী এবং স্তন দানকারী মহিলাদের খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি গর্ভাবস্থায় জরায়ু সংকোচন এবং স্তনপান করানোর সময় শিশুর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার কারণও হতে পারে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম অ্যালোভেরা ও আমলকির জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন। অ্যালোভেরা ও আমলকির জুস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পরেও, আপনি যদি কোন সমস্যার চিকিৎসার জন্য, এটি খাওয়ার কথা ভাবছেন তাহলে অবশ্যই এর অসুবিধা কথা মাথায় রেখে খাবেন। যদি সমস্যাটি খুবই গুরুতর হয় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।