Sugarcane benefits: আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা। |
Sugarcane benefits: আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা। আখের রস এটি আমাদের কম বেশি প্রায় সকলেরই প্রিয়। গ্রীষ্মকালে আখের রস শুধু মাত্র তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে না এর বিশেষ কিছু ঔষধি গুন আছে যা আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে।
আপনারা জেনে অবাক হয়ে যাবেন যে আখের রসের গুনাবলী আপনাকে শুধু দাঁতের সমস্যার থেকে নয় এমনকি ক্যান্সারের মতো মারন রোগ থেকেও রক্ষা করতে পারে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য আখের রস কেন ভালো?
আখের রস থেকে শুধু চিনি ও গুড় তৈরি করা হয়। এছাড়াও আখের রসকে গ্রীষ্মকালে সব থেকে বিশেষ একটি পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আখের রস আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আখের রস খাওয়ার ফলে জন্ডিস, বদহজম, প্রস্রাবের রোগের চিকিৎসায় ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আখ ইংরেজি কি?আজ ইংরেজি হল Sugar-cane।
প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসের পুষ্টিগুন:
খাদ্য শক্তি | ৫৪ কিলো ক্যালরি |
কার্বোহাইড্রেট | ১৩.১১ গ্রাম |
শর্করা | ১২.৮৫ গ্রাম |
ফাইবার | ০.৫৬ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৪০ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.১৬ গ্রাম |
ভিটামিন বি ৬ | ০.৪০ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ৪৪.৫৩ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৬.৭৪ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৮ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১.১২ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৩.০৩ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ২২.০৮ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১৫০ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ১.১৬ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.১৪ মিলিগ্রাম |
আখের রসের উপকারিতা:
১. আখের রস যকৃতের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী (জন্ডিস):
আখের রস জন্ডিসের জন্য খুবই উপকারী। জন্ডিস হল একটি লিভারের সমস্যা। যা খুবই ক্ষতিকারক। কিন্তু আখের রস খাওয়ার ফলে জন্ডিস থেকে তাৎক্ষণিক উপশম পেতে সাহায্য করে। জন্ডিস হয় রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ায় কারণে। বিলিরুবিন হলো একটি হলুদ রঙ্গক যেটা লিভারের লাল রক্ত কষে ভাঙ্গনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে থাকে। জন্ডিসের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রত্যেকদিন এক গ্লাস করে তাজা আখের রস পান করার ফলে জন্ডিস থেকে উপশম হতে সাহায্য হবে।
২. আখের রস হল শক্তির একটি উৎস:
দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরের শক্তি বজায় রাখতে কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজন হয়। একইভাবে আখের রসকে শক্তির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারণ আখের রসের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। এর কারণে আখের রস খাওয়া ফলে আমাদের শরীরে দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তি বজায় থাকে।
৩. আখের রস ক্ষত নিরাময়ে উপকারী:
আখের রস খাওয়ার ফলে নানা ধরনের ক্ষত সারতে দেখা গেছে। আখের রস থেকে তৈরি চিনিও ক্ষত নিরাময় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ চিনির মধ্যে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়ান বৈশিষ্ট্য যা ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে।
৪. আখের রস ক্যান্সার প্রতিরোধক:
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও আখের রস খাওয়ার উপকারিতাও দেখা গেছে। কারণ আখের রসের মধ্যে আছে ট্রিসিন নামক একটি ফ্লেভোন যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের সমৃদ্ধ। এছাড়াও আখের রসের মধ্যে আছে আন্টি-প্রলিফারেটিভ কার্যকলাপের কারণে আখের রস নানা ধরনের ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। একটি কথা জানিয়ে রাখি ক্যান্সার হল এমন একটি রোগ যা সময়মতো চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়াও শুধু আখের রস খেলে এই রোগ সারানো যায় না।
৫. আখের রস গলার সমস্যা সমাধান করে:
যদি কোন ব্যক্তির গলা ব্যাথা হয়, তাহলে তার জন্যও আখের রস খেলে উপকার মিলবে। যখন কোন ব্যক্তির টনসিলের মতো গলার সমস্যায় ভুগছেন, তখন আখের রস খেলে উপকার পেতে। টনসিল যখন ফুলে যায় তখন তার গলা ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। এই সময় আখের রস গলা ব্যথা সর্দির মতো সমস্যা নিরাময় করতে সাহায্য করে।
৬. আখের রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
আখের রস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। ইমিউন সিস্টেম আমাদের শরীরকে নানা রকমের সংক্রমণ এবং রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কারণ আখের রসের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৭. আখের রস প্রস্রাবের সমস্যায় উপকারী:
আপনি কোন কোন সময় প্রস্রাব করার সময় জ্বালা ব্যথা বা অসস্তি অনুভব করতে পারেন। এই রকম সমস্যাটিকে বলা হয় ডিসুরিয়া। এই ডিসুরিয়া সমস্যাটি মূত্রনালীর কিছু সংক্রমনের কারণেও হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আখের রস খেতে পারেন। আখের রস খাওয়ার ফলে ডিসুরিয়া, অ্যানুরিয়া এবং প্রস্রাব সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন।
৮. আখের রস নখের জন্য উপকারী:
সুন্দর এবং সুস্থ নখ আমরা সকলেই চাই। আর নখ সুস্থ রাখতে হলে ক্যালসিয়ামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এইরকম পরিস্থিতিতে নখ সুস্থ ও মজবুত রাখতে হলে আখের রস খাওয়া দরকার। কারণ আখের রসের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ক্যালসিয়াম যার মুখ মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে।
৯. আখের রস ত্বকের বাধ্যক্য প্রতিরোধ করে:
আমাদের ত্বকে অতিবেগুনি রশ্মি এবং ফ্রি র্যাডিকেলের কারণে অকাল বাধ্যক্য দেখা দিতে পারে। বাধ্যকের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে বলিরেখা, পিগমেন্টশন ইত্যাদি। সাধারণত এইগুলো থেকে মুক্তি পেতে কার্য কর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। আর আখের রসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি র্যাডিকেলের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে থাকে।
আখের রস ত্বকে ব্যবহার:
- উপাদান:
- আখের রস দুই থেকে তিন চামচ।
- এক চিমটি হলুদ।
- পদ্ধতি:
- আখের রসের হলুদ মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর এটি পুরো মুখে লাগাতে হবে।
- তারপর ১০ থেকে ১২ মিনিট রেখে দিতে হবে।
- তারপর কুসুম কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এইভাবে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে হবে।
১০. ব্রণ জন্য উপকারী আখের রস:
আখের রস হল আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের একটি খুব ভালো উৎস। যেটা ত্বকের জন্য একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের মধ্যে আছে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা কসমেটিক পণ্যগুলিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর এই সব অ্যাসিডগুলি ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- উপাদান:
- প্রয়োজন মতো আখের রস।
- প্রয়োজন মতো মুলতানি মাটি।
- পদ্ধতি:
- মুলতানি মাটিতে আখের রস দিয়ে ভালো করে পেস্ট তৈরি করতে হবে।
- এই পেষ্টটা মুখে ও ঘাড়ে ভালো করে লাগাতে হবে।
- তারপর এই পেষ্টটি মুখের প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট রেখে দিতে হবে।
- তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখটা ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করলে উপকার মিলবে।
১১. আখের রস হজম শক্তি উন্নত করে:
আখের রস খাওয়ার ফলে আমাদের হজম শক্তি উন্নত হয়। কারণ আখের রসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
আখের রস খাওয়ার নিয়ম:
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ প্রত্যেকদিন নিয়মিত এক কাপ আখের রস খেতে পারেন।
আখের রসের ব্যবহার:
- আখের রসকে ঠান্ডা অথবা ঘরের সাধারণ তাপমাত্রার মতো ঠান্ডা করে খেতে পারেন।
- আখের রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি অথবা বেসন মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করা যেতে পারে।
- আখের রসকে আরও সুস্বাদু বানানোর জন্য আখের রস তৈরি করার সময় পুদিনা পাতা, লেবু ও আদা রোগ করতে পারেন।
- আখের ছাল ছাড়াতে হবে, তারপর আখটা চিবিয়ে রসটা খেয়ে ছিবড়া টা ফেলে দিতে হবে।
আখের রস বানানোর পদ্ধতি:
এখন থেকে বাড়িতেই আখের রস তৈরি করুন নিচে দেওয়া পদ্ধতির মাধ্যমে।
উপাদান:
- একটি ভালো আখ
- লেবুর রস স্বাদ মতো
- এক টেবিল চামচ কাটা আদা
- স্বাদ মতো বিট নুন
পদ্ধতি:
- প্রথমে আখের খোসা ছাড়িয়ে তারপর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে।
- তারপর মিক্সিতে সব উপকরণগুলো দিয়ে ভালো ভাবে কিছুক্ষন ঘুরিয়ে নিতে হবে।
- তারপর হাতের সাহায্যে থেকে উপকরণগুলি বের করে নেওয়ার পর ভালোভাবে রসটা গ্লাসে ছেঁকে নিতে হবে।
- তারপর কিছুক্ষণ ঠান্ডা করে স্বাদ মতো বিট নুন ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে।
আখ সংগ্রহ:
ভালো আখের রস খাওয়ার জন্য সবসময় একটা ভালো বেছে নেওয়াটা খুবই দরকার। সব সময় সেই আখ বেছে নেবেন যে আখের গা হলুদ হয়ে গেছে। যার পাতা শুকিয়ে গেছে। অর্থাৎ আটটি যেন খুব ভালো ভাবে পাকা হয়।
আখ স্টোর:
যখনই আঁখ কিনবেন তখনই আঁকগুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নেবেন। তাহলে আপনি সহজেই ফ্রিজের রাখতে পারবেন। ফ্রিজে রাখার আগে অবশ্যই আখের খোসা ছাড়িয়ে নেবেন। আখের টুকরো গুলোকে বাইরের আদ্রতা থেকে রক্ষা করার জন্য প্লাস্টিক দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখতে পারেন। এই ভাবে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজে আখ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
আখের রস খাওয়ার অপকারিতা:
- অনেক দিন সংরক্ষণ করা আখের রসের মধ্যে ইস্ট ব্যাকটেরিয়া ছত্রাকের মতো জীবাণু জন্মাতে পারে। এর ফলে আখের রস ক্ষতিকারক হতে পারে।
- আখের রসের মধ্যে শীতল প্রভাব আছে। ফলে আখের রস শীতকালে খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন। যদি শীতকালে আখের রস খাওয়া হয় তাহলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিসের রোগীদের অতিরিক্ত মাত্রায় আখের রস খাওয়া উচিত নয়।
- অতিরিক্ত মাত্রায় আখের রস খাওয়ার ফলে পেটে অম্বল হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় আখের রস খাওয়ার ফলে বারবার পায়খানা, পাতলা পায়খানা সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় আখের রস খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা। সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন।