ফুসকুড়ি দূর করার উপায়, হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও তার ঘরোয়া প্রতিকার। |
ফুসকুড়ি দূর করার উপায়, হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও তার ঘরোয়া প্রতিকার। বর্তমান সময়ে ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা খুবই সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। আর ত্বকের সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি। এইরকমই ত্বক সংক্রান্ত একটি সমস্যা হলো ফুসুরি বা ফুসকুড়ি বা ফুটকুনি। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব ত্বকের ফুসকুড়ি হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও তার ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে।
ত্বকের ফুসকুড়ি কি?
যখন কোন ব্যক্তির ত্বকে ফুসুরি দেখা দেয় তখন সেই স্থানে চুলকানি, লাল দাগ, জ্বালাপোড়া, ব্যথা অথবা ফোলা ভাব থাকে। আবার কিছু ফুসুরি আছে যারা ত্বকে ফোসকা তৈরি করতে পারে। কখনো কখনো অন্য কোন ধরনের সমস্যার কারণে ও তোকে ফুসুরি সমস্যা হতে পারে। আবার কোন পরিস্থিতিতে এটি অ্যালার্জির কারণও হতে পারে। আবার কোনো ব্যক্তির জিনগত কারণে এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
ত্বকের ফুসকুড়ির ধরন:
- ত্বকে প্রধানত ফুসকুড়ি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা অসংক্রমণ এবং সংক্রমণ।
- অসংক্রমণ - অসংক্রমণ ফুসুরির মধ্যে একজিমা, সোরিয়াসিস, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, রোসেসিয়া এবং অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস।
- সংক্রমণ - সংক্রমণ ফুসকুড়ি মধ্যে চুলকানি, দাদ, চিকেন পক্সের মত সমস্যা আছে।
ত্বকে ফুসুরি হওয়ার কারণ:
- রাসায়নিক (PPD) ধারণকারী পণ্য (ইলাস্টিক, রাবার) সাবান এবং ডিটারজেন্ট হতে পারে
- কাপড়ে রাসায়নিক বা রঞ্জক পদার্থ থাকে হতে পারে
- কিছু বিষাক্ত গাছের সংস্পর্শে এলে (পার্থেনিয়াম) হতে পারে
- ফুসুরি অন্যান্য সাধারণ কারণ এছাড়াও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে:
- একজিমার কারণে হতে পারে
- সোরিয়াসিসের কারণে হতে পারে
- শৈশব রোগ যেমন চিকেনপক্স এবং হাত-পা-মুখের রোগ এর কারণ হতে পারে
- মশা, ব্লিস্টার বিটল এবং বেড বাগের মতো কোন পোকামাকড়ের ওষুধ বা কামড়ের কারণে হতে পারে ফুসুরি
অনেক রকম চিকিৎসা অবস্থার কারণেও ফুসকুড়ি হতে পারে, যেমন:
- লুপাস এরিথেমাটোসাস (ইমিউন সিস্টেমের রোগ) কারণে হতে পারে
- আর্থ্রাইটিস এর কারণে হতে পারে
- রক্তনালীগুলির প্রদাহের সমস্যার কারণে হতে পারে
- ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জনিত সংক্রমণের সমস্যার কারণে হতে পারে ফুসুরি
ত্বকে ফুসকুড়ি লক্ষণ:
- ত্বকে চুলকানির সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে লাল ভাব দেখা দেবে।
- চকচকে ত্বকের পাশাপাশি ত্বকে পুঁচ ভরা ফোসকা থাকতে পারে।
- ত্বকের ফোসকা চেহারা।
- ত্বকে আদ্রতার অভাব অর্থাৎ শুষ্ক ত্বক।
ত্বকের ফুসুরির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার:
ত্বকে যে কোনো রকমের সমস্যা দেখা দিলে আমরা সাধারণত প্রথমে ঘরোয়া প্রতিকার করে থাকি, আর এটা করাই উচিত। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সাধারণ সমস্যাগুলিতে কার্যকর হতে পারে, তবে যদি ত্বকের গুরুতর সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
১. ফুসুরির জন্য অপরিহার্য তেল:
উপাদান:
- চা গাছের তেল
- নারকেল অথবা জোজোবার তেল
- তুলো
ব্যবহার:
- চা গাছের তেল দশ থেকে বার ফোঁটা।
- নারকেল অথবা জোজোবা তেল ৩০ মিলি।
- তারপর তেল দুটিকে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর ওই তেলের মিশ্রণটি তুলোর সাহায্যে আক্রান্ত ত্বকে লাগাতে হবে।
- প্রতিদিন একবার করে ব্যবহার করতে হবে।
২. ফুসকুড়ির জন্য আপেল সিডার ভিনেগার:
উপাদান:
- এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনিগার
- জল
- তুলো
ব্যবহার:
- এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে আধা কাপ জল ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর ওই মিশ্রণটি তুলোর সাহায্যে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
- এই পদ্ধতিটি দিনে দুইবার ব্যবহার করতে হবে।
৩. ফুসকুড়ির জন্য অ্যালোভেরা:
- অ্যালোভেরার জেল
ব্যবহার:
- প্রয়োজন মত সতেজ তাজা এলোভেরার জেল ত্বকে লাগাতে হবে।
- তারপর আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে।
- তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই পদ্ধতিটি দিনে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
৪. ফুসকুড়ির জন্য নারকেল তেল:
উপাদান:
- প্রয়োজন মতো নারকেল তেল
ব্যবহার:
- হাতের তালুতে প্রয়োজন মতো নারকেল তেল নিতে হবে।
- তারপর ধীরে ধীরে ফুসরির মাধ্যমে আক্রান্ত ত্বকে লাগাতে হবে।
- লাগিয়ে এক ঘন্টা রাখতে হবে।
- তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই ভাবে প্রতিদিন একবার করে ব্যবহার করতে পারেন।
৫. ফুসকুড়ির জন্য ক্যাস্টর অয়েল:
উপাদান:
- দু চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল
ব্যবহার:
- হাতে তালুতে ক্যাস্টর অয়েল নিতে হবে।
- তারপর আক্রান্ত স্থানে আলতো ভাবে লাগাতে হবে।
- ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিতে হবে।
- তারপর জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই পদ্ধতিটি দিনে একবার করা যেতে পারে।
৬. ফুসকুড়ির জন্য জোজোবা তেল:
উপাদান:
- এক চা চামচ জোজোবা তেল।
ব্যবহার:
- ত্বকে যে স্থানটা শুশুড়ি দ্বারা আক্রান্ত সেই স্থানে জোজোবা তেল লাগাতে হবে।
- তারপর সারা রাত রেখে দিতে হবে।
- পরের দিন সকালবেলা পরিষ্কার জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এইভাবে প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতে পারেন।
৭. ফুসকুড়ির জন্য গাজরের রস:
উপাদান:
- এক গ্লাস গাজরের রস
ব্যবহার:
- এক গ্লাস তাজা গাজরের রস পান করতে হবে।
- প্রত্যেকদিন এক গ্লাস পান করা যেতে পারে।
৮. ফুসকুড়ির জন্য আদা:
উপাদান:
- এক ইঞ্চি বা দুই ইঞ্চি আদা
- এক কাপ জল
- তুলো
ব্যবহার:
- ছোট ছোট টুকরো করে আদাটা কেটে নিতে হবে।
- তারপর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- তারপর ওই এক কাপ জলে দিতে হবে আদার টুকরো গুলোকে।
- এরপর হালকা গরম জল করতে হবে।
- তারপর তুলোর সাহায্যে ফুসুরিতে লাগাতে হবে।
- তারপর ৩০ মিনিটের জন্য ছেড়ে দিতে হবে।
- এই পদ্ধতিটি দিনে দুইবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯. ফুসুরির জন্য মধু:
উপাদান:
- মধু এক চামচ
- অলিভ অয়েল দু চামচ
ব্যবহার:
- মধু এবং অলিভ অয়েল দুটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর ওই মিশ্রণটি ত্বকের আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
- মিশ্রণটি লাগানোর পর এক ঘন্টা রেখে দিতে হবে।
- তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই পদ্ধতিটি দিনে একবার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
১০. ফুসকুড়ির জন্য নিম তেল:
উপাদান:
- এক চা চামচ নিম তেল
ব্যবহার:
- হাতের তালুতে নিম তেল নিতে হবে।
- তারপর ত্বকের আক্রান্ত স্থানে সরাসরি সরাসরি নিন তেল লাগাতে হবে।
- তেলটি লাগানোর পর আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে।
- তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এইভাবে প্রতিদিন একবার প্রয়োগ করা যেতে পারে এই পদ্ধতিটি।
১১. ফুসুরির জন্য সবুজ চা:
উপাদান:
- সবুজ চা এক চামচ
- জল এক কাপ
- তুলো
ব্যবহার:
- সবুজ চা অথবা গ্রিনটি টি এক কাপ জলে যোগ করুন এবং দশ মিনিটের জন্য গরম করতে হবে।
- তারপর একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে।
- তারপর চায়ে তুলো ডুবিয়ে ডুবিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
- তারপর আধা ঘন্টার জন্য ছেড়ে দিতে হবে।
- আধা ঘন্টা পর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই পদ্ধতিটি দিনে একবার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ত্বকের ফুসকুড়ির চিকিৎসা:
ময়েশ্চারাইজার:
ত্বকের শুষ্কতা কমানোর জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ত্বককে সুস্থ রাখা যায়। শুধু মনে রাখবেন শুধুমাত্র প্যারাবেন (এক ধরনের রাসায়নিক) ফ্রি ময়েশ্চারাইজার বেছে নেবেন সব সময়।
লোশন:
কোনো ব্যক্তির যখন ফুসুরির সমস্যা হয়, তখন চিকিৎসক সেই ব্যক্তিকে লোশন লাগানোর পরামর্শ দিতে পারেন। র্যাশের সমস্যাও এর দ্বারা কমানো যেতে পারে।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ক্রিম:
ফুসুরি ত্বকে ফোলা ভাব সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ক্রিম ব্যবহার করে ফুসুরি উপসর্গ কমানো যেতেও পারে।
অ্যান্টিহিস্টামিন:
অ্যান্টিহিস্টামিন হল এক ধরনের ওষুধ, যেটা অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
ইচিং রিলিফ ক্রিম:
অনেক সময় চুলকানির কারণে ত্বকে ফুসুরি হতে পারে। অতএব, চুলকানি রিলিফ ক্রিম ব্যবহার করে ফুসুরির উপশম করা যেতে পারে। যদি আমরা ক্রিম সম্পর্কে কথা বলি তাহলে যা চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়, ক্যালামাইন লোশনও উপকারী হতে পারে। এটি বিশেষত ক্ষত ও ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তি দিতে ব্যবহার করা হয়।
ত্বকের ফুসুরি প্রতিরোধের জন্য টিপস:
ফুসুরি এড়িয়ে যাওয়া সহজ। এ জন্য কিছু বিষয় মনে রাখা খুবই জরুরি, যেগুলো এরকম হতে পারে:
- অ্যান্টি-বায়োটিক সাবান ব্যবহার করে এরকমের সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয়।
- যেসব ব্যক্তি সংক্রমণে ভুগছে তাদের থেকে দূরে থাকা দরকার।
- নিয়মিত জল পান করে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।
- একই পোশাক বেশি ক্ষণ পরা যাবে না।
- সুতির জামা কাপড় পড়তে হবে।
- খুব টাইট পোশাক পরবেন না তবে ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিতে হবে।
- চারপাশে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
উপসংহার:
ফুসুরি একটি গুরুতর সমস্যা নয়। তবে ফুসুরি উপেক্ষা করা হলে অবশ্যই একটি গুরুতর রূপ নিতে পারে। তাই কারও ত্বকে হালকা ফুসুরি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করা উচিত। এছাড়াও ত্বককে সব সময় পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজড রাখতে হবে।
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম ত্বকের মধ্যে ফুসকুড়ি দূর করার উপায়, হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও তার ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের কাছে
আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন।