Maida : ময়দা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? ময়দা খাওয়ার অপকারিতা।
ময়দা খাওয়ার অপকারিতা। |
এবার আমরা জেনে নেব কিভাবে ময়দা তৈরি করা হয়।
ময়দা কি থেকে তৈরি হয়(maida kaise banta hai)?
ময়দা বা সাদা ময়দা মিহি আটার গোম থেকে তৈরি। ময়দা তৈরি করতে গমের বাইরের মস্তিষ্ক ও ভিতরের জীবাণু স্তরটি সরানো হয়। যার পরে সাদা রংয়ের স্টার্চটি মাঝখানে থাকে অর্থাৎ এন্ডোস্পার্ম মাটিতে ফেলে ময়দা তৈরি করে। ময়দা বানানোর সময় গমের উপরের অংশ ও ভেতরের জীবাণু অপসারণ ও পরিশোধন প্রক্রিয়ার কারণে এর প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান কমে যায়।
এবার আমরা জেনে নেব ময়দার অপকারিতা সম্পর্কে।
ময়দার অপকারিতা:
১. ময়দা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে:
ময়দার অপকারিতার মধ্যে হচ্ছে ইমিউন সিস্টেম দুর্বলতাও অন্তর্ভুক্ত আছে। সাধারণত ইউনিয়ন সিস্টেমের সমস্ত কোষের ভালো ভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি। কিন্তু ময়দার পরিশোধন প্রক্রিয়ার জন্য ময়দার প্রয়োজনীয় খনিজ, ভিটামিন ও ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস স্কুলে হারিয়ে যায়। এই রকম অবস্থায় মিহি ময়দা থেকে তৈরি খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করার ফলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো প্রভাবিত করতে পারে।
২. ময়দা ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতার কারণ:
পরিশোধিত ময়দা খাওয়ার ফলে স্থূলতা ও ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। ময়দা দিয়ে তৈরি করা ফাস্টফুড পেটের মধ্যে সহজে হজম হয় না। এই কারণে ময়দা পরিপাকতন্ত্রের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এইজন্য ময়দাকে কাউন্টার ডায়েটও বলা হয়ে থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে ময়দা খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে ও স্থূলতা হবে। এছাড়াও উন্নয়নের রোগ আর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. ময়দা অন্ত্রের প্রদাহের কারণ:
অতিরিক্ত মাত্রায় ময়দা খাওয়ার ফলে অন্ত্রের প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। ময়দা অন্ত্রের আটকে থাকতে পারে। তাই ময়দাকে অন্ত্রের আঠা বলা হয়ে থাকে। এই কারণে অন্ত্র সংক্রান্ত নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ময়দার মধ্যে ফাইবার সহ অন্যান্য অনেক পুষ্টির অভাব রয়েছে।
পরিশোধিত ময়দা যুক্ত খাবার ক্রমাগত খাওয়ার ফলে, আমাদের শরীরে ফাইবারের অভাব দেখা দিতে পারে। যার কারণে ছোট অন্ত্রের প্রদাহের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
৪. ময়দা শরীরে পুষ্টির অভাব সৃষ্টি করে:
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজন। তাই সুস্থ রাখা আর বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজন খনিজ ও বিভিন্ন ভিটামিন এর মত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। আর ময়দার মধ্যে এইগুলো কিছুই নাই। তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে ময়দা খাওয়া এড়াইতে হবে।
৫. ময়দা মেটাবলিক সিনড্রোম ও ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে:
মেটাবলিক সিনড্রোম হল অনেক রোগের সংমিশ্রণ। যার মধ্যে রয়েছে স্থূলতা ইনসুলিন প্রতিরোধ ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ ডিসিলিপিডেমিয়া।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে একজন ব্যক্তি টানা এক সপ্তাহ পরিশোধিত ময়দা খাওয়ার ফলে মেটাবলিক সিনড্রোম আক্রান্ত হতে পারেন। এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে এই সমস্যাটি ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টির অভাবের কারণে ঘটে থাকে। মেটাবলিক সিনড্রোম হৃদরোগ স্ট্রোক ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
৬. ময়দা শরীরে ফাইবারের অভাব ঘটায়:
ময়দার মধ্যে ফাইবারের অভাব আছে। ময়দা পরিশোধন করার সময় এতে খুব কম পরিমাণে ফাইবার অবশিষ্ট থাকে। এই জন্য ময়দা স্বাস্থ্যের ওপর ভালো প্রভাব ফেলে না। ময়দাতে আটার তুলনায় ৮০ শতাংশ কম ফাইবার থাকে। আর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সহায়ক ও হজমের জন্য সহায়ক বলে মনে করা হয়।
৭. ময়দা হৃদরোগের কারণ:
ময়দা খাওয়ার অপকারিতার মধ্যে স্থূলতা, ডায়াবেটিসের সাথে সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিও আছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ময়দায় কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। তা মনোস্যাকারাইড ও ডিস্যাকারাইড চিনি থেকে তৈরি হয়। তাই গবেষণা অনুসারে ময়দা হৃদরোগ সহ আরো অনেক রোগের কারণ হতে পারে।
৮. ময়দা খাদ্য আসক্তির কারণ হতে পারে:
ময়দা থেকে নানা রকমের খাবার তৈরি করা হয় দীর্ঘদিন ধরে ময়দাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আসক্তি হতে পারে। আসলে মানুষ অর্থাৎ আমরা ময়দার তৈরি খাবার যেমন পাভ, বার্গার, মোমো, বিস্কুট, পিজা ইত্যাদি খায়। আর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে মনের মধ্যে এই জিনিসগুলির যেকোনো একটি খাওয়ার ইচ্ছা জাগতে শুরু করে, একেই বলা হয় ময়দা যুক্ত খাবারের প্রতি আসক্তি।
৯. ময়দা হাড় দুর্বল করে:
অতিরিক্ত মাত্রায় ময়দা খেলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ময়দাতে হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব আছে, যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। এই রকম অবস্থাতে ময়দা অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে শরীরে এই পুষ্টির পরিমাণ কমে যায়। যার কারণে হাড় ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। তাই ময়দা যুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
১০. পরিশোধিত ময়দা মস্তিষ্কের সমস্যার সৃষ্টি করে:
ময়দা খাওয়ার অপকারিতার মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্ক সংক্রান্ত সমস্যা। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ময়দা যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ময়দা হল একটি ও স্বাস্থ্যকর খাবার। মানুষ ময়দা অস্বাস্থ্যকর খাবার জানে, কিন্তু তাও বুঝতে পারেনা যে এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে মানসিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
১১. ময়দা উচ্চ রক্তচাপের কারণ:
অতিরিক্ত মাত্রায় ময়দা খাওয়া অনেক রোগকে আমন্ত্রণ করতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় ময়দা তৈরি খাবার খাওয়ার ফলে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে ।গবেষণায় দেখা গেছে সাদা ময়দার মধ্যে আছে কার্বোহাইড্রেট আর কার্বোহাইড্রেট উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
১২. ময়দা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে:
ময়দা তৈরি খাবার খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এইজন্য ময়দার তৈরি খাবার সব সময় পুষ্টির জন্য ক্ষতিকারক। আর ময়দার মধ্যে কোন ভিটামিন এবং মিনারেল নেই, যার ফলে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ময়দা থেকে তৈরি খাবার খাওয়া ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ময়দা কম খাওয়ার টিপস
- সবার প্রথমে ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে ও ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে।
- সুজি ও গমের আটা দিয়ে বাড়িতেই তৈরি করুন ফুচকা ও সিঙ্গারা।
- ঘর থেকে বেরিয়ে কিছু খেতে লোভ করলে ফ্রুট সালাদ অথবা জুস পান করতে পারেন।
- ময়দার পরিবর্তে গমের আটা ব্যবহার করতে হবে।
ময়দা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর।
ময়দা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?
শরীরে ময়দা কি?
ময়দা হজম হতে কতক্ষণ লাগে?
ময়দা হজম করতে কী খাওয়া উচিত?
ময়দা কি কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে?
গম বা ময়দা কোনটি ভালো?
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম ময়দা অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোঝার মত হয়েছে। যদি ভালো লাগে আর যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।