Thankuni leaves : থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।
Thankuni leaves: থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।
আমাদের পরিবেশে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা রকম ভেষজ উদ্ভিদ। যারা অতি অবহেলায় বেড়ে উঠছে। এই এদেরই মধ্যে একটি ভেষজ উদ্ভিদ হল থানকুনি। এই থানকুনি পাতা রয়েছে অসংখ্য গুনাগুন যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে নানা ভাবে সাহায্য করে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
থানকুনি পাতার বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
থানকুনি পাতার বিজ্ঞান সম্মত নাম হল Centella Asiatica।
থানকুনি পাতা সম্পর্কে
থানকুনি গাছ হল একটি খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। থানকুনি পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে পেটের সমস্যার জন্য খুবই ভালো একটি ভেষজ উপাদান।
এবার আমরা জেনে নেব থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
১. ক্ষত নিরাময়ের সহায়ক থানকুনি পাতা:
আমাদের অনেক সময় খেলতে গিয়ে কোন না কোন ভাবে চোট লেগে যায় অথবা যদি হাত কেটে যায় তাড়াতাড়ি রক্তপাত বন্ধ করতে হলে থানকুনি পাতা কোন জুড়ি নেই। থানকুনি পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা কম হয় আর রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও, ক্ষত থেকে সংক্রমনের কোন আশঙ্কাও থাকে না।
২. থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে যায় না:
থানকুনি পাতার মধ্যে আছে বিভিন্ন রকমের খনিজ উপাদান। যেগুলো তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধে সাহায্য করে। তাই অনেক জটিল রোগ থেকে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে দেওয়া একদম উচিত নয় কারণ শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার ফলে হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। এছাড়াও অন্য অঙ্গগুলিও কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে তাই এই বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।
৩. থানকুনি পাতা শরীরে রক্ত সরবরাহ সঠিক রাখে:
অনেক ব্যক্তি থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে। তাছাড়াও অনেকের শরীরে শারীরিক সমস্যার কারণে রক্ত প্রবাহের সমস্যা হয়ে থাকে। থানকুনি পাতার রস খাওয়ার ফলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। আর এই রক্ত শুদ্ধ থাকার ফলে, শরীরে প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে অনেক রকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন হাত ফুলে যাওয়া, পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪. থানকুনি পাতা আলসার নিরাময় সহায়ক:
পেটের যেকোনো রোগের জন্য থানকুনি পাতা খুবই ভালো ঔষধ। আমাশয় থেকে আলসার সেরে যায় থানকুনি পাতার গুণেই।
৫. থানকুনি পাতা হজমের সমস্যা সহায়ক:
অনেক ব্যক্তির বদহজম, গ্যাস, অম্বল ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন। থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে হজম শক্তি উন্নত হয়।
৬. থানকুনি পাতা মানসিক চাপ কম করে:
অনেক ব্যক্তি আছেন যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য খুব ভালো ওষুধ হলো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি ট্রেস হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা দুই কমে যায়।
৭. শরীরের ভিতরে জ্বালাপোড়া কমায় থানকুনি পাতা:
কোন না কোনভাবে শরীরে ভিতরে কোন ক্ষত হলে নানা রকম সমস্যা হয়, যেমন জ্বর, ক্লান্ত ইত্যাদি। এছাড়াও খিদে কমে যাওয়া, পেশী ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। থানকুনি পাতার মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। তাই খুব তাড়াতাড়ি শরীরের ভিতরে জ্বালা যন্ত্রণা কমে যায়। তাছাড়াও শরীরের ক্লান্ত ভাব ও দূর হয়ে যায়।
৮. থানকুনি পাতা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক:
নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামক এই দুটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি হতে শুরু করে। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের সেল গুলি ভালোভাবে কাজ করে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই তার সাথে সাথে বুদ্ধির ধারও বৃদ্ধি হতে থাকে। এই সমস্ত কারণের জন্যই চিকিৎসকরা বাচ্চাদের থানকুনি পাতার রস খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৯. থানকুনি পাতার অনিদ্রা সমস্যা দূর করে:
অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের ঘুমের সমস্যা। তাদের জন্য থানকুনি পাতা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হবে। তাহলে রাতে ঘুম আসবেই। কারণ থানকুনি পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আন্টি ইনফ্লামেন্টারি উপাদান যা মানসিক চাপ কমায় ও স্নায়ুতন্ত্র কে শান্ত করে।
১০. থানকুনি পাতা ত্বক ভালো রাখে:
শীত পড়লেই আমাদের বেশিরভাগ জনেরই ত্বকে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। থানকুনি পাতার রস ত্বকের জটিল রোগ সারাতে সাহায্য করে। এর সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে, ত্বকের সজীবতা বজায় রাখে।
১১. থানকুনি পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
থানকুনি পাতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১২. থানকুনি পাতা ব্রণ দূর করতে সহায়ক:
থানকুনি পাতার রস খাওয়ার ফলে আমাদের মুখের ব্রণ দূর হয়ে যায়। এছাড়াও মুখে ঘা ও অন্যান্য ক্ষত নিরাময়েও খুবই উপকারী একটি ভেষজ উপাদান।
১৩. থানকুনি পাতা চুল পড়া রোধ করে:
থানকুনি পাতা রস চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। কারণ থানকুনি পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি ইনফ্লোমেটরি উপাদান। যা মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১৪. থানকুনি পাতা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক:
আজকালকার দিনে মোটা হওয়া বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া খুবই সাধারণ একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সমস্যা থেকে বেশির ভাগ জনই মুক্তি পেতে চান। তাই বেশি মাত্রায় ক্যালোরি রয়েছে এরকম খাবার এড়িয়ে চলার সাথে সাথে হাঁটাহাঁটি করলে ও থানকুনি পাতা খেলে ওজন কমবে। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে শরীরে ইতি উতি মেধ জমার আশঙ্কাও কমে যায়।
১৫. থানকুনি পাতার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়ক:
যেসব ব্যক্তিদের রক্তচাপের অর্থাৎ ব্লাড প্রেসারের সমস্যা আছে সেসব ব্যক্তিদের জন্য থানকুনি পাতা উপকারী হতে পারে। কেননা, থানকুনি পাতার মধ্যে উপস্থিত উপাদানগুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
১৬. থানকুনি পাতা হার্ট সুস্থ রাখে:
থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে। কারণ থানকুনি পাতার মধ্যে উপস্থিত উপাদান গুলি আমাদের শরীরে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্টোক এরকম সমস্যাগুলি দূরে থাকে।
থানকুনি পাতা খাওয়ার মাপ:
- একজন সাধারণ সুস্থ সবল ব্যক্তির জন্য এক থেকে দুই চামচ থানকুনি পাতার রস খাওয়া উচিত।
- আর যদি সরাসরি কাঁচা থানকুনি পাতা খাই তাহলে ৬ থেকে ৭ টার বেশি খাওয়া উচিত নয়।
এবার আমরা জেনে নেব থানকুনি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে।
থানকুনি পাতার অপকারিতা:
- থানকুনি পাতা যেমন পেটের ব্যথা কমায়, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত মাত্রায় থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত।
- যেসব ব্যক্তিদের লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য থানকুনি পাতা কোনভাবেই খাওয়া যাবে না।
- থানকুনি পাতা প্রয়জনে বেশি খেলে মাথা ঘোরা সহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- থানকুনি পাতা থেকে অনেকের আবার অ্যালার্জি ও হতে পারে।
- যেসব ব্যক্তিরা অপারেশন করেছেন তাদের জন্য থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো।
- অতিরিক্ত মাত্রায় থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে হঠাৎ করে রক্তঝাপ কমে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোঝার মত হয়েছে। যদি ভালো লাগে আর যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।