Acai Berry – আসাই ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।

 Acai Berry – আসাই ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।-Acai বা আসাই এই নামটি আমরা বেশিরভাগ মানুষই শুনিনি। হয় তো বা প্রথম শুনছি। আসলে এটি মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। আসাই হল এক ধরনের গোল বেরি যেটা পাম গাছ থেকে পাওয়া যায়। 

এটির স্বাদে যেমন মিষ্টি তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আসাই ফল ১৯৯০ দশকে থেকে জনপ্রিয় অর্জন করতে শুরু করেছে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব আসাই ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।

আসাই ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।

Acai বা আসাই কি?

আসাই হল একটি পাম গাছ প্রজাতির গাছ। যা একমাত্র আমাজনেই পাওয়া যায়। বোটানিক্যালি একে বলা হয়ে থাকে ইউটারপে ওলএরএসই মার্ট। আসাই বেরি এর অন্যান্য নাম হলো আসাই পাম, বাঁধাকপি পাম, পালমা মানকা। এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ।

 বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আসাই এর মধ্যে আছে উচ্চ পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল, যা আমাদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। এছাড়াও এর মধ্যে আছে ওমেগা ফ্যাট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ইলেক্ট্রোলাইটস এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য।

গাছটি পাতা ও ফল দিয়ে চেনা যায়। আসাই ফল ছোট, গোলাকার এবং গাঢ় বেগুনি রংয়ের হয়। আসাই দেখতে পুরো আঙুরের মতো। আর আঙ্গুরের থেকেও ছোট হয়। এটি স্বাদে চকলেটের মতো মিষ্টি। 

Acai বা আসাই বেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?

Acai বা আসাই বেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম হল ইউটারপে ওলএরএসই মার্ট।

আসাই এর ইংরেজি কি?

আসাই এর ইংরেজি হল Acai Berry Fruit।

এবার আমরা জেনে নেব Acai বা আসাই বেরির পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে।

Acai বা আসাই বেরির পুষ্টি উপাদান:

  • ভিটামিন এ 
  • ভিটামিন সি
  • ভিটামিন ই 
  • আয়রন 
  • জিংক 
  • কপার 
  • পটাশিয়াম 
  • ফাইবার
  • ম্যাগনেশিয়াম 
  • ম্যাঙ্গানিজ 
  • সোডিয়াম
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট 
  • ওমেগা ফ্যাট 
  • অ্যামিনো অ্যাসিড 
  • আন্টি ইনফ্লেমেটরি
  • ইলেক্ট্রোলাইটস

প্রতি ১০০ গ্রামে Acai বা আসাই বেরির পুষ্টি উপাদান:

Sl.no Nutition Per100g
1. খাদ্য শক্তি ৫৩৪ ক্যালোরি
2. প্রোটিন ৭ গ্রাম
3. কার্বোহাইড্রেট ৫২ গ্রাম
4. ফ্যাট  ৩৩ গ্রাম
5. শর্করা  কম 
6. শর্করা+ফাইবার ৪৪ গ্রাম
7. অলিক অ্যাসিড ৫৬%
8. পলিমিটিক অ্যাসিড ২৪%
9. লেনোলিগ অ্যাসিড ১৩%
10. ক্যালসিয়াম ২৬০ মিলিগ্রাম
11. আয়রন ৪ মিলিগ্রাম 

এবার আমরা জেনে নেব Acai বা আসাই বেরির উপকারিতা সম্পর্কে।

Acai বা আসাই বেরির উপকারিতা:

১. Acai বা আসাই বেরি ওজন কমাতে সহায়ক:

কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে Acai বা আসাই বেরি খাওয়ার ফলে দ্রুত ওজন কমে যায়। কারণ Acai বা আসাই বেরির মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার, যা খিদের পরিমাণ কম করে। এটি শরীরে ফ্যাট কমাতে সহায়ক। Acai বা আসাই বেরির সাথে চর্বি যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

২. Acai বা আসাই বেরি হৃদ রোগ প্রতিরোধক:

Acai বা আসাই বেরির মধ্যে আছে এক প্রকার অ্যান্থো-সায়ানিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরে কোষের ক্ষতিকর উপাদানগুলিকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। রক্তের মধ্যে উপস্থিত ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল দূর করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৩. Acai বা আসাই বেরি ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়ক:

Acai বা আসাই বেরির মধ্যে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি। এর মধ্যে আয়রন, জিংক, কপার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মতো উচ্চ মাত্রায় খনিজ পদার্থ আছে। Acai বা আসাই বেরি আমাদের শরীরের ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সহায়ক। এছাড়াও এর মধ্যে আছে পলিফেনল, যা ক্যান্সার কোষকে বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে।

৪. Acai বা আসাই বেরি শক্তি বৃদ্ধি করে:

Acai বা আসাই বেরি সেবন করার ফলে অলসতা এবং ক্লান্তি দূর হয়। এর সাথে সাথে শরীরকে সতেজ করতে সহায়ক। Acai বা আসাই বেরি শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।

৫. Acai বা আসাই বেরি হজম শক্তি উন্নত করে:

Acai বা আসাই বেরির মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার আমাদের শরীরে হজম শক্তি উন্নতি করতে সাহায্য করে। এই কারণে Acai বা আসাই বেরি আমাদের শরীরে টক্সিন নামক একটি উপাদান জমতে বাধা দেয় এবং পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

৬. Acai বা আসাই বেরি কোলেস্ট্রেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক:

Acai বা আসাই বেরি আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

Acai বা আসাই বেরির সঠিক পরিমাণ:

ডাক্তার যে পরিমাণ মতো বলবে সেই পরিমাণ মতোই খাওয়া উচিত Acai বা আসাই বেরি। এটি একটি ভেষজ গাছের মতো যার শিকড় ক্কাথ তৈরি করতে পান করা হয়ে থাকে। 

Acai বা আসাই বেরির ব্যবহার:

Acai বা আসাই বেরির পাউডার, ট্যাবলেট, ঔষধি জুস ইত্যাদি তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। Acai বা আসাই বেরি ক্যান্সারের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কারণ এর মধ্যে আছে অ্যান্টি-কার্সেনোজেনিক বৈশিষ্ট্য। যাক অ্যানসার কষ্টে ধ্বংস করতে সহায়ক। Acai বা আসাই বেরির হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে ব্যবহার করা হয়। Acai বা আসাই বেরির মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চাপ কমাতে সাহায্য করে।

Acai বা আসাই বেরির ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ?

  1. কোন ব্যক্তির যদি কোন ভেষজ থেকে অ্যালার্জি থাকে তাহলে Acai বা আসাই বেরির সেবন না করাই উচিত।
  2. যদি কোন ব্যক্তি কোন ওষুধ গ্রহণ করেন তাহলে Acai বা আসাই বেরির ব্যবহার না করাই উচিত।
  3. যদি কোন ব্যক্তি কোন রোগে বা অন্য কিছুর জন্য চিকিৎসাধীন থাকে তাহলে Acai বা আসাই বেরির ব্যবহার না করাই উচিত।

Acai বা আসাই খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এবার জেনে নেব।

Acai বা আসাই খাওয়ার অপকারিতা:

  • প্রক্রিয়াজাত Acai বা আসাই বেরি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার ফলে শরীরে প্লাক এবং টক্সিন জমা হতে পারে। এর ফলে অলসতা, ব্রণ এবং ক্যান্ডিডা মতো বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • জিঙ্কো, রসুন এবং ফিভারফিউ এর মত ভেষজ উপাদান, যা রক্তকে পাতলা করতে পারে এবং গুরুতর রক্তপাত ঘটাতে পারে। Acai বা আসাই বেরি পরিপূরক গুলির মধ্যে পাওয়া যায়। আসলে এই উপাদানগুলির মধ্যে আছে এমন কোনও খাদ্য তালিকা কত সম্পূরক থেকে দূরে থাকাই ভালো।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় Acai বা আসাই বেরি খাওয়ার ফলে প্রাকৃতিক ভাসোডিলেটরকে শক্তিশালী করে, যা রক্ত চাপকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমাতে সাহায্য করে, মাঝে মাঝে এটি মারাত্মক হতে পারে বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য।
  • ভেষোজ ইচিনেসিয়া, যেটা Acai বা আসাই সম্পূরক তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা লিভারের ক্ষতি করতে পারে ও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • যেসব ব্যক্তিদের ওজন কম সেসব ব্যক্তিদের Acai বা আসাই বেরি খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ Acai বা আসাই ক্ষুধা দমন করে ও ওজন কমাতে পারে।
  • Acai বা আসাই বেরি খাওয়ার পরে মুখ, ঠোঁট, জিভ এবং গলা ফুলে যেতে পারে। আবার এর ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • মাথাব্যথা, ইনসুলিনের মাত্রা হ্রাস পাওয়া, তাড়াতাড়ি ওজন কমে যাওয়া এবং স্ট্রোক হল Acai বা আসাই বেরির কিছু নেতিবাচক প্রভাব।
  • Acai বা আসাই বেরির কোলন ও পাচনতন্ত্রকে জ্বালাতন করার ক্ষমতার কারণে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
  • Acai বা আসাই বেরি ফল বারবার খাওয়ার ফলে জন্ডিস হতে পারে। 
  • Acai বা আসাই বেরি এমআরআই স্ক্যান এর ফলাফল কে প্রভাবিত করতে পারে।
  • Acai বা আসাই বেরি চাগাস রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে ট্রায়াটোমাইনের অবশিষ্ট অংশ আছে। এটি একটি দক্ষিণ আমেরিকান স্থানীয় রক্তচোষাকারী পরজীবী বহন করে। এই পরজীবীতেই হল চাগাস রোগের কারণ।
  • Acai বা আসাই বেরি যেসব ব্যক্তিদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এই সমস্যা গুলি এড়িয়ে চলতে Acai বা আসাই বেরি না খাওয়াই ভালো।
  • যেসব ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ আছে সেসব ব্যক্তিদের Acai বা আসাই বেরির না খাওয়াই ভালো। খেলে ক্ষতি হতে পারে।
  • Acai বা আসাই বেরির অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে লিভারে ক্ষতি হতে পারে।
  • Acai বা আসাই বেরি ডায়াবেটিস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের না খাওয়াই উচিত। কারণ Acai বা আসাই বেরির মধ্যে সরকার আর পরিমাণ বেশি আছে।
  • ক্যাফেইন যুক্ত জিনিসের সমস্যা থাকলে Acai বা আসাই বেরি খাওয়া উচিত নয়।

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম Acai বা আসাই বেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 

এছাড়াও জেনে নিলাম Acai বা আসাই বেরি কি, Acai বা আসাই বেরি বিজ্ঞান সম্মত নাম কি, Acai বা আসাই বেরি ইংরেজি নাম কি, Acai বা আসাই বেরি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে বোধগম্য হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। 

কমেন্টে জানান কেমন লাগলো। যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের, ধন্যবাদ জানাই। সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *