Arum Leaves: কচু শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা

কচু শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেনিন অবশ্যইকচু আমাদের সবারই খুব পরিচিত একটি সবজি। কচুর পাতাকে আমরা শাক হিসেবে খেয়ে থাকি। কচুর শাক গ্রামের আনাচে-কানাচে পাওয়া যায়। তবে বেশ কিছু কচু আছে যেগুলোকে যত্ন করে চাষ করতে হয়। এই ধরনের চাষ করা কচু আমরা নানা ধরনের রান্নার পদ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। বিভিন্ন রকমের কচু পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু কচুই আমাদের খাওয়ার উপযোগী।

image of Arum Leaves কচু শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা

Kochur  in english – “Arum vegetable”

কচু শাকের ইংরেজি নামটি হল  Arum Vegetable

Kochu vegetable in Hindi – Kochu

কচু কে হিন্দিতে কচু বলে।

বিভিন্ন ধরনের কচুর।

  • যেমন– মান কচু
  • দুধ কচু
  • মুখী কচু 
  • জল কচু 
  • ওর কচু
  • পঞ্চমুখী কচু 
  • ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য এবং খাওয়ার উপযোগী।

কচুর কোন কোন অংশ খাওয়া যায়?

প্রচুর কোন অংশ ফেলা যায় না। আগাগোড়া সবকিছুই খাওয়া যায় কচুর। কচুর মূল থেকে শুরু করে কাণ্ড, পাতা, ফুল সবকিছুই খাওয়া যায়। কচুর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

এতক্ষণ আমরা জেনে নিলাম প্রচুর কোন কোন অংশ খাওয়া যায়? এবার জেনে নেব কচু শাকের কোন কোন অংশে কি কি উপকারিতা আছে?

কচুর শাক:

কচুর শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। আর ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া চোখ সম্পর্কিত জটিলতা কমাতে সাহায্য করে কচু শাক। কচুর শকের মধ্যে আছে স্যাপোনিনস, টেনিনস, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্লাবনয়েড যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কচুর ডাটার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। 

এই গরমের সময় প্রচুর ডাটা রান্না করে খেলে শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ হবে। নিয়মিত কচু শাক খেলে হৃদ রোগের ঝুঁকি কমতে সাহায্য করে। কচু শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তাই এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে কচু শাক খেলে সুগারের ঝুঁকি কমে। আর কচু শাক হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কচুর মূল:

কচুর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা রক্তের শূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। যাদের রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তারা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পেতে পারেন। কচু খেলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ওলকচুর রস বিশেষ করে উপকারী।

নিয়মিত কচু খাওয়ার ফলে কোলন ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। জ্বরের সময় রোগীকে দুধ কচু রান্না করে খাওয়ালে জ্বর তাড়াতাড়ি সেড়ে যায়। কচুর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার, থায়ামিন, ফোলেট। এই উপাদান গুলো খুবই উপকারী উপাদান আমাদের শরীরের জন্য।

এবার আমরা জেনে নেব কচু শাকের মধ্যে কি কি উপাদান আছে কত পরিমাণে আছে

প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকের মধ্যে থাকে ( কচু শাকের পুষ্টি উপাদান ) :

  • খাদ্যশক্তি — ৫৬ কিলো ক্যালরি 
  • ক্যালসিয়াম — ২২৭ মিলিগ্রাম 
  • ফ্যাট –১.৫ গ্রাম
  • ভিটামিন সি — ১২ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি ১ — ০.২২ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি ২ — ০.২৬ মিলিগ্রাম
  • প্রোটিন — ৩.৯ গ্রাম 
  • শর্করা — ৬.৮ গ্রাম
  • ফাইবার — ৫.১ গ্রাম
  • ফ্যাট –০.১১ গ্রাম
  • আয়রন — ১০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ —
  • ভিটামিন ই — ২.৯৩ গ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়াম –৩০ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাঙ্গানিজ –০.৪৪৯ মিলিগ্রাম 
  • ফসফরাস‌ –৭৬ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম –৪৮৪ মিলিগ্রাম
  • জিংক –০.২৭ মিলিগ্রাম

এবার আমরা জেনে নেব কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে।

 কচু শাকের উপকারিতা:

১. কচু শাক দাঁত ও হাড় গঠনের সাহায্য করে।

কচুর শাক দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। কেননা, কচু শাকের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস। যা আমাদের দাঁত এবং হাড় গঠনে বিশেষ উপকারী। এছাড়াও ক্ষয় প্রতিরোধ করতে কচুর শাক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কচু শাক খেলে দাঁত এবং হাড় ভালো থাকে।

২. প্রচুর শাক রক্তের শূন্যতাবার রক্ত দূর করতে সাহায্য করে।

কচু শাক রক্তাল্পতার রোদ করতে সাহায্য করে। কারণ কচু শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। আর এই আয়রন আমাদেরই রক্তাল্পতা রোগে ভোগা থেকে রক্ষা করে। তাই যেসব রোগীরা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তারা অবশ্যই নিয়ম কচু শাক খান। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৩. কচু শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

কচুর সব কোষ্ঠকাঠিন্য মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে‌ কেননা কচু শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা খাবারকে খুব সহজেই হজম করতে সহায়ক। যেসব রোগীরা কোষ্ঠকাঠিন্য ভুগছেন তারা নিয়মিত কচু শাক খেতে পারেন। তার ফলে আপনাদের সমস্যা সমাধান হতে পারে।

৪. কচুর শাক রাত কানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

কি কচু শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ। আর ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা, চোখে ছানি পড়া ছাড়া অন্যান্য চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগ সারাতে কচু শাকের জুড়ি মেলা ভার।

৫. কচু শাক শরীরে ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।

কচু শাকের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এর ফলে লৌহ উপাদান আমাদের দেহে আত্তীকরণ হয়ে যায়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে ক্ষত সারাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই ছোট শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো প্রত্যেকের উচিত।

৬. কচু শাক রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে।

আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। এই কচু শাকের মধ্যে আছে আয়রন এবং ফোলেট। যা রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর ফলে অক্সিজেন সরবরাহ সঠিক থাকে। এতে উপস্থিতি ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৭. গর্ভবতী মায়েদের জন্য কচুর শাক খুবই উপকারী।

কচু শাকের মধ্যে আছে ভিটামিন ও বিভিন্ন রকম খনিজ উপাদান। যা শিশুদের ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী। কচু শাক সহজলভ্য। সে জন্য দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুর শাক খেতে পারেন।

৮. কচুর শাক উচ্চ রক্তচাপ এর রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

কচু শাক খেলে রক্তের মধ্যে খারাপ কোলেস্টরে মাত্রা কমে যায়। তাই উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচু শাক খুব উপকারী। আর নিয়মিত কচু শাক খেলে কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে।

৯. কচু শাক হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

কচু শাক হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কেননা কচু শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

এবার আমরা জেনে নেব কচু শাক খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।

কচু শাকের অপকারিতা:

  • ১.কচু শাক খেলে কারও কারও গলা চুলকানি লাগে। কারণ কচু শাকের মধ্যে আছে অক্সলেট নামক একটি উপাদান। এজন্য কচু শাক বা কচুর রান্না করার সময় লেবুর রস দেওয়া উচিত।
  • ২. যাদের শরীরে এলার্জির মতো সমস্যা আছে তাদের কচু বা কচুর শাক না খাওয়াই ভালো।
  • ৩. অতিরিক্ত কচু শাক খেলে গ্যাস, কম্বলের মতো সমস্যা হতে পারে।

কচু শাক সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:

কচুর মুখি খেলে কি হয়?

এক কাপ কচি মুখী খেলে আমাদের দৈনিক চাহিদা ভিটামিন সি এর ১১% পূরণ করতে সাহায্য করে। শরীরের মধ্যে থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এই কচু মুখী সবজিটি। এছাড়া আমি ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

কচু শাকে কি কি ভিটামিন আছে?

কচু শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ আছে।

কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়?

হ্যাঁ, কচু শাক খেলে এলার্জি। হয় কচু শাক খেলে অনেক সময় এলার্জি মতো সমস্যা হয়, বদহজমের মতো সমস্যা হয় যাদের। এরকম সমস্যা আছে তারা কচু শাক খাবেন না।

কচু কত প্রকার ও কি কি?

কচুবে বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন — মুখি কচু, পানি কচু, দুধ কচু, মান কচু, শোলা কচু,  ওল কচু, পঞ্চমুখী কচু ইত্যাদি।

কচু শাক কি থাকে?

কচু শাকের মধ্যে থাকে শর্করা, প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, খাদ্য শক্তি ইত্যাদি।

কচুর লতি কত ক্যালরি?

প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকের মধ্যে থাকে ৭৭ কিলো ক্যালরি।

কচু শাক এর ইংরেজি নাম কি?

কচু শাকের ইংরেজি নামটি হল  Arum Leaves। 

বেশি কচু শাক খেলে কি হয় ?

অতিরিক্ত কচুর শাক খেলে গ্যাস, অম্বল হয়।

উপসংহার:

আমরা আজকে এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কচুর শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতার সম্পর্কে বিশেষ অজানা কিছু তথ্য। কচু শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা। এতক্ষণ আমরা জেনে নিলাম কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে যেমন ভালো দিক আছে ঠিক তেমনি খারাপ দিকও আছে। তাই কচু শাকের ও উপকারিতা যেমন জেনেছে ঠিক সেই রকমই কচু শাকের অপকারিতাও জেনে নিয়েছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে বোধগম্য হয়েছে। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানান পারলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *