Body Weekness: দুর্বলতার কারণ, লক্ষণ ও তার চিকিৎসা

দুর্বলতার কারণ, লক্ষণ ও তার চিকিৎসা

অনেক সময় এরকম হয় যে একজন মানুষ হাঁটতে হাঁটতে খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে অথবা তার মাথা ঘোরা শুরু হয়। এরকম অবস্থায় অনেকেই দুর্বলতাকে স্বাভাবিক ভেবে উপেক্ষা করেন। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে এটি আবার কোন কোন রোগের লক্ষণও হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে সময় মত এটির দিকে মন দেওয়া এবং দুর্বলতার কারণ, লক্ষণগুলি খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব দুর্বলতার কারণ, লক্ষণ এবং দুর্বলতার চিকিৎসা সম্পর্কে।

দুর্বলতা কি?

সাধারণত শরীরের ক্লান্তিকে দুর্বলতা বলে। এই সব ক্ষেত্রে, এক বা একাধিক পেশিতে শক্তির অভাবের অনুভূতি হয়ে থাকে। গোটা শরীরে অথবা শরীরের কোন একটি অংশ দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। এমতো অবস্থায় ব্যক্তি ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করে থাকে।

দুর্বলতার কারণ:

সঠিক ভাবে দুর্বলতার কারণ গুলো জানা গেলেই দুর্বলতার ঠিক চিকিৎসা করা যায়। যেমন, প্রথমে আমরা বলেছি দুর্বলতা পুরো শরীরে অথবা শরীরে কোন একটি অঙ্গে হতে পারে। এমত অবস্থায় শরীরের কোন একটি অংশ অথবা অঙ্গে দুর্বলতা দেখা দিলে সেদিকে নজর দেওয়া খুব বেশি দরকার। 

  • স্ট্রোক পরে
  • স্নায়ুতে আঘাত
  • একাধিক সে্ক্লরোসিসের পরে (যাতে মেরুদন্ড ও মস্তিষ্ক প্রভাবিত হয়)।
  • বিপাক সংক্রান্ত সমস্যার কারণে দুর্বলতা:
  • কম সোডিয়াম বা পটাশিয়াম 
  • অত্যাধিক সক্রিয় থাইরয়েড
  • অ্যাডিসন রোগ
  • হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজাম

পেশী রোগের কারণে দুর্বলতা:

  1. পেশী রোগ যার মধ্যে রয়েছে ত্বকে ফুসকুড়ি সৃষ্টি ত্বক ফোলা
  2. বংশগত রোগের গ্রুপ যেটা পেশীর টিস্যু ক্ষয় এবং পেশী দুর্বলতা সৃষ্টি করে
  3. বংশগত রোগ যেখানে আস্তে আস্তে পা ও পেলভিসের পেশীগুলো দুর্বলতা বৃদ্ধি হতে থাকে।
  4. মস্তিষ্ক অথবা স্নায়ু সমস্যার কারণে দুর্বলতা:
  5. মুখের পেশিগুলো দূর্বলতা
  6. মেরুদন্ড ও মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ সম্পর্কিত রোগ
  7. একাধিক সে্ক্লরোসিস/ স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা
  8. নানা রকমের ব্যাধি যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র কে প্রভাবিত করে থাকে
  9. স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি
  10. Pinched স্নায়ু

কিছু বিষাক্ত জিনিসের কারণেই দুর্বলতা:

  1. বিষক্রিয়া (কীটনাশক দ্বারা সৃষ্ট)
  2. শেলফিশ খাওয়ার জন্য বিষক্রিয়া
  3. বোটুলিজম ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ
  4. অন্যান্য কারণ:
  5. শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার অভাব অথবা অ্যানিমিয়া
  6. পোলিও 
  7. ক্যান্সার
  8. পেশী এবং স্নায়ুর ব্যাধি
  9. ডায়াবেটিসের জন্য
  10. পুষ্টির অভাবের জন্য
  11. ঠিকমত খাবার না খাওয়ার জন্য
  12. দৌড়ানো অথবা অনেকটা পথ হাটা তার জন্য।

দুর্বলতার লক্ষণ:

  • শরীরে ব্যথা 
  • মাথা ঘোরা 
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া 
  • অতিরিক্ত ঘুম 
  • উঠতে, বসতে, হাঁটতে অসুবিধা হয়
  • চোখে দেখতে সমস্যা হচ্ছে
  • অঙ্গ সরাতে অসুবিধা হচ্ছে
  • শরীরে কাঁপুনি
  • সিঁড়ি দিয়ে ওঠা অথবা কথা বলা অথবা মাথার চুল আঁচড়াতে এরকম স্বাভাবিক কাজে অসুবিধা

দুর্বলতার ঝুঁকির কারণ:

  1. মানসিক চাপ 
  2. কম জল পান করা 
  3. ভালো ঘুম হচ্ছে না 
  4. অতিরিক্ত ব্যায়াম করা 
  5. কোন গুরুতর অসুস্থতা 
  6. ভাইরাল বা ফ্লু জ্বর 
  7. ঠিকমতো না খাওয়া 
  8. দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ক্ষুধার্ত থাকা 
  9. মানুষের সমস্যা বা প্যানিক
  10. ডায়েটিং এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

দুর্বলতার চিকিৎসা:

যদি আমরা এখন দুর্বলতার চিকিৎসার কথা বলি, তাহলে এটা পুরোটাই নির্ভর করে দুর্বলতা হওয়ার পেছনের কারণ এর ওপর। 

১. দুর্বলতার সাধারণ কারণ:

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে অতিরিক্ত ব্যায়াম করা অথবা সঠিক ঘুম না হওয়া দুর্বলতার একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসক কিছু ওষুধ দিতে পারেন, পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়াম করার পরামর্শ দিতে পারেন।

২. জলের অভাবে দুর্বলতা:

অনেক সময় জলের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসক বেশি পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

৩. মানসিক সমস্যার কারণে দুর্বলতা:

অতিরিক্ত প্যানিক অ্যাটাকও দুর্বলতার কারণ হতে পারে। এইরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসক রোগীর মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং নিতে পারেন।

৪. গুরুতর অসুস্থতার কারণে দুর্বলতা:

উচ্চ রক্তচাপ অথবা ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর অসুস্থতার জন্য দুর্বলতা দেখা দিতে পারে এই রকম অবস্থায় ডাক্তার অথবা চিকিৎসক সমস্যাটির চিকিৎসার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

৫. অজানা কারণে দুর্বলতা:

উপরে বলা হয়েছে দুর্বলতার চিকিৎসা একটি অনুমান হিসেবে দেওয়া হয়েছে এর চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জন্য দয়া করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

দুর্বলতা প্রতিরোধ অথবা এড়ানোর উপায়:

  1. কাজু, বাদাম, কিসমিস, খেজুর এরকম শুকনো ফল নিয়মিত খেতে পারেন।
  2. যতটা সম্ভব জল খান বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময়।
  3. দুধ খাবেন।
  4.  ফলের রস খাবেন।
  5.  নিয়মিত রুটিনে চেকআপ করাবেন।
  6. খাবারের যত্ন নেবেন অর্থাৎ সবুজ শাকসবজি ফলমূল এরকম পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
  7. জলের অভাবের সময় দুর্বলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে নুন চিনির শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।

উপসংহার:

দুর্বলতার কারণ এড়িয়ে না গিয়ে সময় মতো তার গুরুত্ব দিন‌। আমরা আশা করি যে আপনি দুর্বলতার কারণ ও তার চিকিৎসা, প্রতিরোধ বুঝতে পেরেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে কখনোই দুর্বলতা অনুভব করলে তখনই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। বিশেষ করে যেসব ব্যক্তিরা অনেকদিন ধরে দুর্বলতার সম্মুখীন তাদের চিকিৎসা কে অবহেলা না করা উচিত।

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম দুর্বলতার কারণ, লক্ষণ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *