![]() |
Coffee Benefits and Side Effects |
Coffee Benefits and Side Effects : কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।কফি হল আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। যা সুগন্ধ এবং স্বাদের জন্য খুবই পরিচিত। সাধারণত লোকেরা শক্তি এবং অ্যানার্জি পেতে এটি গ্রহণ করে থাকে। তাই আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
কফির বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
কফির বিজ্ঞান সম্মত নাম হল Coffea ( Genus )।
কফি কি?
কফি হল একটি অ্যারবিকা নামক গাছের ফল থেকে কফি তৈরি হয়। কফির জনপ্রিয়তা অনুমান করা হয় যে বর্তমান যুগে এর উৎপাদনের থেকে চাহিদা অনেক বেশি।
কফি গাছের বর্ণনা:
কফি গাছ হল একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। যা দশ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কফি গাছকে সাধারণত ছোট করে কাটা হয়ে থাকে। কফি গাছ মূলত ইথিওপিয়াতে জন্মেছিল এবং এখন বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যম আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও কফি চাষ বৃদ্ধি হয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কফির পুষ্টিগুণ:
নাম | পরিমাণ |
---|---|
জল | ৯৯.৩৯ গ্রাম |
খাদ্য শক্তি | ১ ক্যালোরি |
প্রোটিন | ০.১২ গ্রাম |
লিপিড (চর্বি) | ০.০২ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২ গ্রাম |
আয়রন | ০.০১ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩ মি.গ্রা |
ফসফরাস | ৩ মি.গ্রা |
পটাসিয়াম | ৪৯ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২ মি.গ্রা |
জিংক | ০.০২ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০১৪ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.০৭৬ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.১৯১ মিগ্রা |
ফোলেট | ২ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.০১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৬ | ০.০০১ মিগ্রা |
ভিটামিন কে | ০.১ মাইক্রোগ্রাম |
ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.০০২ গ্রাম |
মনোস্যাচুরেটেড | ০.০১৫ গ্রাম |
পলিআনস্যাচুরেটেড | ০.০০১ গ্রাম |
ক্যাফিন | ৪০ মিলিগ্রাম |
![]() |
কফি খাওয়ার উপকারিতা |
কফি খাওয়ার উপকারিতা:
১. কফি ওজন কমাতে সহায়ক:
ওজন কমানো ঘরোয়া প্রতিকারের মধ্যে রয়েছে কফি। কফির মধ্যে আছে ক্যাফেইন, মেটাবলিজম অর্থাৎ খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনে প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও এর থেকে উৎপন্ন তাপ স্থূলতা অর্থাৎ ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হতে পারে।
২. কফি খাওয়ার ফলে শক্তি এবং তৎপরতা বৃদ্ধি পায়:
কফি খাওয়ার ফলে শক্তি এবং তৎপরতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে কফির মধ্যে আছে ক্যাফেইন, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ বৃদ্ধি করতে পরিচিত। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কফি শরীরের শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. কফি পারকিনসন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে:
কফি খাওয়ার ফলে পারকিনসন রোগ প্রতিরোধ হয়। এটি হলো একটি মস্তিষ্কের ব্যাধি যা স্নায়ুতন্ত্র ব্যক্তির হাটার ক্ষমতা এবং ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে থাকে। কফির মধ্যে আছে ক্যাফেইন যা নিউরোস্টিমুল্যান্ট ও নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব প্রদর্শন করে থাকে, যেটা স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে। এটা পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪. কফি বিষন্নতা প্রতিরোধ করতে সহায়ক:
কফি স্ট্রেস কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। কারণ কফির মধ্যে ব্যবহার করা হয় আলফা অ্যামাইলেজ নামক একটি এনজাইম বাড়িয়ে তুলতে পারে। ক্যাফাইন হল হতাশা চাপ উদ্যোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব ব্যক্তিরা নিয়মিত কফি পান করেন সেই সব ব্যক্তিদের বিষণ্ণতার ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে।
৫. কফি ত্বকের জন্য উপকারী:
কফি ত্বকের জন্য উপকারী। কারণ কফির মধ্যে আছে ক্যাফাইন যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এইসব কারণেই কফি অনেক প্রসাধনী পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্যাফাইন ত্বকের মধ্যে খুব ভালোভাবেই প্রবেশ করতে পারে এবং সেলুলার স্তরে কাজ করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও কফির মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকলাপ। এছাড়াও ক্যাফাইন তোকে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে যা ত্বকে বয়স্ক দেখানোর একটি বড় কারণ। এছাড়াও কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন ত্বকের কোষে চর্বি জমা প্রতিরোধ করতে সহায়ক।
৬. কফি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রত্যেকদিন নিয়মিত দুই কাপ কফি পান করলে যকৃত, প্রোস্টেট ও এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে।
৭. কফি যকৃতের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে:
কফি খাওয়ার ফলে লিভার অনেক রকমের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রত্যেকদিন নিয়মিত যেসব ব্যক্তি চার কাপ কফি খান সেই সব ব্যক্তিদের Aspartate Aminotransferase এবং Alanine Aminotransferase নামক এনজাইমের মাত্রা কম পাওয়া গেছে। এই এনজাইম গুলির বর্ধিত পরিমাণ লিভারের ক্ষতি নির্দেশ করে। এই কারণে বলা হয় কফির গুনাগুন লিভার কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৮. আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়া থেকে সুরক্ষা করে কফি:
আলঝেইমার হল খুবই সাধারণ একটি মানসিক রোগ। এই রোগ হওয়ার ফলে মনে রাখা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা ক্রমশ ধীর হয়ে যায়। এর কারণে ডিমেনশিয়া নামক একটি মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। ক্যাফাইনের উপকারিতা এখানে আছে। ক্যাফাইন স্নায়ুতন্ত্র কে উদ্দীপিত করতে পারে ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এই কারণেই ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার থেকে রক্ষা করতে কার্যকর হতে পারে।
৯. কফি স্ট্রোক প্রতিরোধ করে:
কফি পান করার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কম হয়। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কফি নিয়মিত খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি ডায়াবেটিস কিছুটা হলেও কমতে সহায়ক। এইসব স্বাস্থ্য সমস্যা গুলি স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১০. ডায়াবেটিসে কফির উপকারিতা:
কফি খাওয়ার ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রত্যেকদিন নিয়মিত চার কাপ কফি খাওয়ার ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ হ্রাস হয়। এছাড়াও আরো কয়েকটি গবেষণা তে দেখা গেছে যে কফি খাওয়ার ফলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত হয় যেটা টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
১১. কফি হৃদরোগে উপকারী:
কফি খাওয়ার ফলে হীত রোগের ঝুঁকি কমে।
১২. কফি চুলের জন্য উপকারী:
কফির উপকারিতা চুলেও দেখা যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কফির মধ্যে থাকা কেফাইল রক্তের মাইক্রোসার্কুলেশন বৃদ্ধি করতে কাজ করে। এছাড়াও চুলের উত্থাপিত কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে।
১৩. কফির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
কফির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। কারণ কফির মধ্যে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ক্যাফাইন যা রক্তে উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
কফির ব্যবহার:
ব্যক্তির পছন্দ এবং অপছন্দের উপর নির্ভর করে কফি খাওয়ার অনেক উপায় আছে তবে কফি খাওয়ার আগে অবশ্যই মনে রাখা দরকার কফির অসুবিধা। এখন আমরা জেনে নেব কখন ও কি পরিমানে কফি খাওয়া উচিত?
কখন এবং কি পরিমাণে কফি খাওয়া উচিত?
শক্তির দিক থেকেও সতেজ ও তার দিক থেকে সকালবেলা কফি খাওয়াই ভালো হতে পারে। তবে কফি দিনের যেকোনো সময় ভারসাম্যপূর্ণ ভাবে খাওয়া যেতেই পারে। তবে ঘুমানোর আগে কফি খাওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে এখনো সন্দেহ আছে।
এখন আমরা জেনে নিব কতটা পরিমাণে কফি খাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রত্যেকদিন প্রায় দুই থেকে তিন কাপ কফি খেতে পারেন। অতিরিক্ত পরিমাণে কফি খাওয়া ক্ষতিকারক বলে প্রমাণিত।
এখন আমরা জেনে নিব কিভাবে কফি খাওয়া উচিত।
কিভাবে কফি খাওয়া উচিত?
- কফিকে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন,
- কফিতে দুধ, কোকো পাউডার, ক্রিম, চিনি দিয়ে সাদা কফি তৈরি করা যেতে পারে।
- গরম জলে কফি পাউডার মিশিয়ে ব্ল্যাক কফি তৈরি করা যেতে পারে।
- ফিল্টার কফিও খাওয়া যেতে পারে।
- জলে চিনি কফি এবং বরফের টুকরো যোগ করে একটি মিক্সারে ঘুড়িয়ে নিয়ে কোল্ড কফি তৈরি করা যেতে পারে।
কফি পানের অপকারিতা:
অতিরিক্তমাত্রায় কফি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতি হতে পারে।
- ওজন কমা
- ধরফর
- অনিদ্রার
- পেট খারাপ
- নার্ভাসনেস
- বমি বমি ভাব
- মাথা ঘোরা
- ডিসফোরিয়া
- অস্থিরতা
- বমি
- হৃৎপিণ্ড এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি
- কানে ব্যথা
- অতিরিক্ত মাত্রায় কফি পান করলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হবে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন।
কফি সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
কফি খাওয়ার উপকারিতা কি?
কফি খাওয়ার ফলে শরীরে এনার্জি ঝোঁকায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
কফি পান করা কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক?
কফির মধ্যে আছে ক্যাফাইন যা শরীরে বেশিরভাগ গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে সাহায্য করে।
কখন কফি খাওয়া উচিত?
সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটের মধ্যে।
প্রত্যেকদিন কফি খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?
প্রত্যেকদিন পরিমিত কফি খাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
কফি কি পুরুষদের জন্য ভালো?
যেসব পুরুষরা কফি পান করেন তারা যারা কফি পান করেন না তাদের তুলনায় কম ইরেক্টাইল ডিসফাংশন অনুভব করে থাকেন।
কফির অসুবিধা গুলো কি কি?
বমি, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, কানে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ,অস্থিরতা, অনিদ্রা ইত্যাদি।
কফি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কেন?
কারণ কফির মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য সক্রিয় উপাদান যা অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমাতে সহায়ক এবং লোকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।
দিনে কতবার কফি পান করা উচিত?
প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ কাপ কফি পান করা উচিত।
খালি পেটে কফি পান করলে কি হবে?
খালি পেটে কফি খাওয়ার ফলে গ্যাস, অম্বল হতে পারে।
দুধের সাথে কফি পানের উপকারিতা কি?
দুধের সাথে কফি পান করার ফলে শরীরের অ্যাসিডিটিক পিএইচ এর লেভেলের ভারসাম্য বজায় থাকে।
কফির প্রকৃতি কি?
কপি একটি উষ্ণ প্রকৃতির।
কোন কফি স্বাস্থ্যকর?
ব্ল্যাক কফি স্বাস্থ্যকর।
কত গ্রাম কফি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম কফি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
চা না কফি কোনটি বেশি ক্ষতিকারক?
চা বা কফি এগুলির কোনটি বিশেষ ভাবে ক্ষতিকারক নয়।
কফি কত প্রকার?
কফি সাধারণত চার ধরনের কফি বিন আছে।
কোলেস্টেরল কমাতে কোন কফি ভালো?
কোলেস্টেরল কমাতে ফিল্টার করা কফি ভালো।
কফি কবে আবিষ্কৃত হয়?
১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কফি আবিষ্কৃত হয়।