Cow’s Milk Benefits and Side Effects: গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা।

Cow’s Milk Benefits and Side Effects: গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা।

আমরা প্রত্যেক দিন নিয়মিত দুধ পান করে থাকি। যার ফলে শরীরে পুষ্টি, শক্তি এবং স্বাস্থ্যকর শরীর পেতে পারি। বিশেষ করে গরুর দুধ শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ গরুর দুধ শিশুদের মস্তিষ্ক এবং হাড়ের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য।

এবার আমরা জেনে নেব প্রতি 100 গ্রাম গরুর দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর দুধের পুষ্টিগুণ:

  • প্রোটিন – ৩.৩৩ গ্রাম
  • খাদ্যশক্তি – ৬২ কিলোক্যালরি
  • মোট চর্বি – ৩.৩৩ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট – ৫.৪২ গ্রাম
  • চিনি – ৫.০০ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ১২৫ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম – ৫২ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাটি অ্যাসিড – ২.০৮০ গ্রাম
  • কোলেস্টেরল – ১৫ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি – ০.৫ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ – ১২৫ মাইক্রগ্রাম
  • ভিটামিন ডি – ৪২ মাইক্রগ্রাম 

এবার আমরা জেনে নেব গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

গরুর দুধের উপকারিতা

১. গরুর দুধ হাড় মজবুত করে:

হাড় সুস্থ রাখতে গরুর দুধ সাহায্য করে। আসলে দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্য ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাই গরুর দুধ পান করার ফলে হাড়ের বিকাশ এবং হাড় মজবুত হয় বলে মনে করা হয়। গরুর দুধ শিশু, যুবক থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবার হাড়ের জন্যই উপকারী বলে মনে করা হয়।

২. গরুর দুধ হজম শক্তি উন্নতি করে:

গরুর দুধ বদহজম হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। আসলে গরুর দুধের মধ্যে পাওয়া যায় ভিটামিন বি ১২। যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। সাধারণত, প্রতি এক কাপ দুধে ১.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ১২ থাকে। শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর চাহিদা অর্ধেক পূরণ করতে সাহায্য করে গরুর দুধ। তাই গরুর দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে খাবার ভালো ভাবে হজম হয়ে যায়।

৩. গরুর দুধ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক:

বর্তমানে গোটা বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ মানুষেরই একটা বড় সমস্যা হল অতিরিক্ত ওজন, যা স্থূলতার কারণে। তবে গরুর দুধ পান করার ফলে যৌবনের ক্রমবর্ধমান ওজোন রো দ সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৮ শতাংশ শিশু যারা দুগ্ধজাত খাবার খায় তাদের ওজন কম দুধ খাওয়া শিশুদের তুলনায় ভারসাম্যপূর্ণ ছিল।

 গরুর দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য প্রোটিনের একটি খুব ভালো উৎস। আর প্রোটিন ওজোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। দুধ খাবারের পর খাবারের আকাঙ্ক্ষা কমাতে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত শক্তি খরচে রোধ করে থাকে যার ফলে আমাদের শরীরে ফ্যাট হ্রাস পায়।

৪. গরুর দুধ চোখের জন্য উপকারী:

গরুর দুধ পান করার ফলে দৃষ্টি শক্তি উন্নত হয়। কারণ গরুর দুধের মধ্যে আছে ভিটামিন এ। যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও ভিটামিন এ এর অভাবের কারণে অনেকের চোখে সমস্যা যেমন রাতকানা, চোখের সাদা অংশের দাগ ইত্যাদি হতে পারে। 

৫. গরুর দুধ মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য উপকারী:

আমাদের মস্তিষ্কে বিকাশের জন্য গরুর দুধ খেয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কারণ গরুর দুধের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে থাকে।

 আর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের মস্তিষ্ককে ভালো ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে থাকে। শিশুদের মস্তিষ্কের সমস্যায় যেমন – পড়া, বানান এবং অন্যান্য আচরণ ঠিক রাখতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করা উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। খুব সম্ভবত, এই সব কারণের জন্যই শিশুদের গরুর দুধ পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

৬. গরুর দুধ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক:

গরুর দুধ পান করা ক্যান্সারের চিকিৎসায়ও উপকারী বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধারণত ফরটিফাইড গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। তাই বলা হয়ে থাকে গরুর দুধ ক্যান্সারে ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

একটি গবেষণায় দেখা গেছে দুধ এবং দুধ দোজাহত দ্রব্য ব্যবহারে সম্ভবত কোলোরেক্টাল ক্যান্সার, মূত্রাশয় ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়াও বেশ কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে দুধ খাওয়া এবং ক্যান্সারের মধ্যে কোন ধরনের সম্পর্ক সম্পর্কে এখনো কোন স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

৭. গরুর দুধ মেজাজ উন্নত করে:

আমরা আগে ওপরে বলেছি গরুর দুধ আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক বলে প্রমাণিত হতে পারে। এই রকম পরিস্থিতিতে গরুর দুধ পান করলে মানসিক রোগও সেরে যায় বলে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে। কারণ গরুর দুধের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।

 আর শরীরে এর ঘাটতি থাকলে মানসিক ব্যাধি যেমন – বিষণ্নতা, একাগ্রতার অভাব, বাইপোলার ডিসঅর্ডার অর্থাৎ মেজাজ এর পরিবর্তন, ডিসক্সিয়া অর্থাৎ পড়তে অসুবিধা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস হওয়া, সিজোফ্রেনিয়া অর্থাৎ চিন্তা ও বোঝার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এমন অসুখ ঘটতে পারে।

৮. গরুর দুধ হার্ট সুস্থ রাখে:

গরুর দুধ পান করার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। গরুর দুধ পান করার ফলে ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকে কমতে পারে।

৯. গরুর দুধ অ্যালোপেসিয়া অর্থাৎ চুল পড়ার সমস্যার রোধ করে:

অ্যালোপেসিয়া হলো এক রকমের চুল পড়ার সমস্যা। অ্যালোপেসিয়া হলে চুল প্যাচ দিয়ে ঝরতে শুরু করে। এক থেকে চার সেন্টিমিটার পর্যন্ত একটি জায়গা থেকে চুল পড়ে যায় ও সেই জায়গাটি খালি আর চর্বিযুক্ত হয়ে যায়। অ্যালোপেসিয়া অটোইমিউন এর দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

 এইরকম পরিস্থিতিতে জিংক এবং ভিটামিন ডি যুক্ত পুষ্টি উপাদান খাওয়ার ফলে, এই সমস্যা কিছুটা কমানো যেতে। আর এইসব পুষ্টি দুধের মধ্যে পাওয়া যায়। আর যেসব ব্যক্তিরা অ্যালোপেসিয়ায় ভুগছেন তাদের গরুর দুধ খাওয়া উপকারী বলে মনে করা হয়।

১০. গরুর দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

গরু দুধ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কারণ কাঁচা গরুর দুধের মধ্যে প্রবায়োটিক অর্থাৎ জীবন্ত অণুজীব থাকে, যেটা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁচা দুধ খাওয়ার ফলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় এবং শিশুদের শরীর বিভিন্ন রকমের সংক্রমণের মুখোমুখি হয়ে শরীরে বিকাশে সাহায্য করে। 

তাছাড়াও সিদ্ধ দুধ পান করলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী হয়ে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে একটা কথা বলা যেতে পারে যে দুধ আপনাকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। কারণ যখন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তখন আপনার শরীরের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাও বাড়বে।

১১. গরুর দুধ ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

গরুর দুধের মধ্যে আছে ভিটামিন এ আর প্রোটিন, যা আমাদের মুখের জন্য আশীর্বাদের থেকে কম নয়। কারণ ভিটামিন এ এবং প্রোটিন এই দুটি আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

 এছাড়াও গরুর দুধের মধ্যে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি যা ত্বকের বাধ্ধক্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রত্যেকদিন নিয়মিত গরুর দুধ পান করতে পারেন। এছাড়াও আপনার ফেসপ্যাক এ গরুর দুধ মিশিয়ে ও মুখে লাগাতে পারেন।

গরুর দুধের ব্যবহার:

  • গরুর দুধ সিদ্ধ করে সরাসরি পান করা যায়।
  • মিষ্টি তৈরি করে দুধ দিয়ে খাওয়া যায়।
  • দুধ দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা যায়।
  • দই বানাতেও দুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • কাঁচা গরুর দুধ মুখে লাগানো হয়, এতে মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
  • গরুর দুধ দিয়েও স্মুদি বানানো যেতে পারে।

কতটা গরুর দুধ পান করা যেতে পারে:

শিশুদের পান করার জন্য গরুর দুধে পরিমাণ –

 এক বছরের শিশু হলে তাকে গরুর দুধ খাওয়াতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞরা ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে প্রত্যেকদিন নিয়মিত ২ থেকে ৩ কাপ গরুর দুধ পান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

প্রাপ্তবয়স্কদের পান করার জন্য গরুর দুধের পরিমাণ – 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি গরুর দুধ পান করা উচিত প্রত্যেক দিন নিয়মিত ২০০ মিলি অর্থাৎ এক গ্লাস।

গরুর দুধ খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে এবার আমরা জেনে নেব। 

গরুর দুধ পান করার অপকারিতা:

  1. এক বছরের কম বয়সী শিশুদের গরুর দুধ খাওয়ালে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি বৃদ্ধি হতে পারে।
  2. গরুর দুধের মধ্যে উপস্থিত প্রোটিন টাইপ 1 ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সাথে যুক্ত।
  3. গরুর দুধ অতিরিক্ত পান করলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকতে পারে।
  4. বেশ কিছু ব্যক্তিদের দুধে অ্যালার্জি আছে, এই ধরনের ব্যক্তিদের দুধ খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও যেসব ব্যক্তিদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু তাদেরও গরুর দুধ পান করা উচিত নয়।

 যদি কোনো ব্যক্তির গরুর দুধে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তা পান করার পর যেসব লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে, সেগুলো হলো –

  • চামড়ায় লাল লাল ফুসকুড়ি
  • বমি
  • মলের মধ্যে রক্ত
  • গ্যাস
  • অম্বল
  • ডায়রিয়া
  • পেট ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • পেটে ফাঁপা 

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোঝার মত হয়েছে। যদি ভালো লাগে আর যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *