![]() |
খুশকি দূর করার উপায় |
খুশকি দূর করার উপায়। মাথার চুল আমাদের সকলেরই প্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলেই চুলের যত্ন করি। কিন্তু চুলের একটি বড় শত্রু হলো খুশকি। আর খুশকির সমস্যায় আমরা সকলেই ভুগি। শীতকালে তো অনেক বেশি পরিমাণে খুশকি হয়। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব খুশকি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়। আর খুশকি তাড়ানোর জন্য সবথেকে ভালো শ্যাম্পু কোনগুলি।
এখন আমরা জেনে নেব, খুশকি কি?
খুশকি হল একটি মাথার ত্বকের সমস্যা যাতে সাদা সাদা মৃত কোষ পড়ে যায়। খুশকি যখন মাথার ত্বকে হয় তখন মাথায় চুলকানি এবং অস্বস্তি বোধ হয়। খুশকি অনেক কারণে হতে পারে যেমন সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, ছত্রাক সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি।
খুশকির প্রকার ভেদ:
সাধারণত খুশকি চার প্রকারের হয়। শুষ্ক ত্বকের খুশকি,সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, ছত্রাকের খুশকি, ব্যাকটেরিয়াল খুশকি।
শুষ্ক ত্বকের খুশকি:
যেসব ব্যক্তিদের মাথার ত্বক শুষ্ক, সেসব ব্যক্তির খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাথার ত্বক শুষ্ক আর্দ্রতার অভাবে অথবা আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
সেবোরিক ডার্মাটাইটিস:
সেবোরিক ডার্মাটাইটিস হলো একটি গুরুতর রকমের খুশকি। এর ফলে মাথায় চুলকানি হয়, মাথার ত্বক লাল এবং আঁশ যুক্ত হয়ে যায়।
ছত্রাকের খুশকি:
যেকোনো রকমের ছত্রাক সংক্রমণের কারণে যে খুশকি হয় সেই সব খুশকি কে ছত্রাকের খুশকি বলা হয়। ম্যালাসেজিয়া ছত্রাক এর অন্যতম কারণ হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াল খুশকি:
মাথার ত্বকের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার কারণে খুশকির সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের খুশকি কে বলে ব্যাকটেরিয়াজনিত খুশকি অথবা ব্যাকটেরিয়া খুশকি।
খুশকির কারণ:
- মাথার ত্বকের মধ্যে পাওয়া যায় প্রধান দুটি ব্যাকটেরিয়া হলো Propionibacterium Acnes ও S. এপিডার্মিস। এই দুটি ব্যাকটেরিয়া অনুপাতে ভারসাম্যহীনতার কারণে খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ম্যালাসেজিয়া, এটি হলো এক ধরনের ছত্রাক। যেটা সাধারণত প্রাণী ও মানুষের ত্বকে পাওয়া যায়। এই ছত্রাকটি ত্বকের এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে, যা খুশকি পরিনত হতে পারে।
- তৈলাক্ত ত্বক।
- শুষ্ক ত্বক খুশকির একটি প্রধান এবং সাধারণ কারণ।
- প্রসাধনের জন্য মাথায় ত্বকে সংবেদনশীলতা।
- দূষণের কারণে মাথার ত্বকে ধুলো, ময়লা জমে ও কম শ্যাম্পু করা হয়।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় ( খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় ):
১. খুশকি দূর করার জন্য মেথি পাতা:
উপাদান –
- দুই থেকে তিন চামচ শুকনো মেথি পাতা।
- দুই থেকে তিন চামচ মেথি বীজ।
- আর্ধেক কাপ নারকেল তেল।
- প্রথমে মেথি বীজ গুলি ৩০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। অথবা আপনি যদি চান তাহলে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
- তারপর মেথি দানা গুলি ছেঁকে নিতে হবে।
- এবার এর মধ্যে শুকনো মেথি পাতা এবং নারকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।
- তারপর এই পেজটি ভেজা চুলে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. খুশকি দূর করার জন্য নিম তেল:
- প্রয়োজন মতন নিম পাতা।
- পরিষ্কার এক কাপ জল।
- প্রথমে ২০ থেকে ২২ টি নিম পাতা এক কাপ জলে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- তারপর ওই পাতাগুলি দিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করতে হবে।
- এরপর পেজটি ঠান্ডা হয়ে গেলে মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। আধা ঘন্টা পর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে চুলগুলো ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- স্নান করার আগে পেস্টটি চুলে লাগাতে হবে।
৩. খুশকি দূর করার জন্য দই:
- এক থেকে দেড় কাপ টক দই।
- প্রথমে মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- তারপর মাথার ত্বকে টক দই লাগিয়ে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট রেখে দিতে হবে।
- তারপর আবার শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪. খুশকি দূর করার জন্য অ্যালোভেরা:
উপাদান –
- প্রয়োজন মত অ্যালোভেরার জেল।
ব্যবহার –
- স্নান করার আগে মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো ভাবে অ্যালোভেরা জেল লাগাতে হবে।
- তারপর পনেরো মিনিট থেকে কুড়ি মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
৫. খুশকি দূর করার জন্য লেবু:
উপাদান –
- দু চা চামচ লেবুর রস।
- ৫ থেকে ৬ চা চামচ নারকেল তেল।
ব্যবহার –
- প্রথমে নারকেল তেলের সাথে লেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর স্নান করার আগে ওই মিশ্রণটির মাথার ত্বকে ভালো ভাবে লাগাতে হবে।
- তারপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ভেজার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
৬. খুশকি দূর করার জন্য নারকেল তেল:
উপাদান –
- অল্প নারকেল তেল।
ব্যবহার –
- মাথায় শ্যাম্পু করে ভালোভাবে চুল শুকিয়ে নিতে হবে।
- তারপর চুলে এবং মাথার ত্বকে নারকেল তেল দিয়ে কিছুক্ষণ আলতোভাবে মাসাজ করতে হবে।
- তারপর চুলে তেলটা একদিনের জন্য রেখে দিন।
৭. খুশকি দূর করার জন্য রসুন:
উপাদান –
- দুই থেকে তিন কোয়া রসুন।
- অর্ধেক কাপ জলপাই তেল।
ব্যবহার –
- প্রথমে রসুনের কোয়া ছাড়িয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
- তারপর একটি সসপ্যানে অলিভ অয়েল তেল দিয়ে কচু রসুন দিতে হবে এবং হালকা গরম হওয়া পর্যন্ত গরম করতে হবে।
- তারপর এই মিশ্রণটি দুই থেকে তিন মিনিট গরম করে নিতে হবে।
- তারপর এই মিশ্রণটি ছেকে নিয়ে ঠান্ডা হতে দিতে হবে।
- এই মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর মাথার ত্বকে লাগাতে হবে।
- ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই মিশ্রণটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮. খুশকি দূর করার জন্য চা গাছের তেল:
উপাদান –
- তিন থেকে চার ফোঁটা চা গাছের তেল।
- দুই থেকে তিন ফোঁটা বাদাম তেল।
- তুলো।
ব্যবহার –
- প্রথমে চা গাছের তেল এর সাথে বাদাম তেল ভালো ভাবে মেশাতে হবে।
- তারপর ওই তেলের মিশ্রণটি তুলে দিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে হবে।
- রাতের বেলায় মাথায় লাগাতে হবে এবং পরের দিন সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৯. খুশকি দূর করার জন্য আমলকি:
উপাদান –
- দুই চা চামচ আমলকির গুঁড়ো।
- দুই চা চামচ নারকেল তেল।
ব্যবহার –
- প্রথমে আমলকির গুঁড়ো ও নারকেল তেল ভালো ভাবে মিশিয়ে গরম করতে হবে।
- তেলের রং যতক্ষণ না বাদামি হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত গরম করতে হবে।
- তেল বাদামি হয়ে গেলে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
- তারপর মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো ভাবে লাগাতে হবে।
- মাথায় পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে।
- ম্যাসাজ করার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো ভাবে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
১০. খুশকি দূর করার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার:
- তিন থেকে চার চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার।
- তিন থেকে চার চামচ জল।
ব্যবহার –
- একটি বাটিতে আপেল সিডার ভিনেগার এবং জল ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ার পর চুলে এবং মাথার ত্বকে ভালো ভাবে ভিনেগারের জল লাগাতে হবে।
- প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর পরিষ্কার জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
- স্নান করার আগে এই পদ্ধতিটি করতে হবে।
খুশকির জন্য চিকিৎসা:
- আন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু (খুশকি দূর করার শ্যাম্পু) – চিকিৎসক খুশকির জন্য আন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পুরং পরামর্শ দিতে পারেন।
- খুশকির কারণ এর ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা – আমরা বলেছি খুশকির কারণ গুলো, যেমন – শুষ্ক ত্বক, ছত্রাক ইত্যাদি। এইরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসক খুশকির কারণ খুঁজে বের করবেন এবং চিকিৎসার সাথে এগিয়ে যাবেন।
খুশকি থেকে বাঁচার উপায়:
- আমরা উপরে বলেছি যে দূষণ বা ধুলো খুশকির কারণ হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন শ্যাম্পু করতে হবে। যাতে মাথার ত্বকের উপর যেন ময়লা না জমে ও খুশকি প্রতিরোধ হবে।
- হারবাল অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু বেছে নিতে হবে।
- সঠিক আন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু বেছে নিতে হবে। ঘনঘন শ্যাম্পু পাল্টানো উচিত নয়, এতে চুলের ওপর প্রভাব পড়ে।
- শুষ্ক মাথার ত্বক খুশকির কারণ হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। যদি প্রত্যেকদিন শ্যাম্পু করেন তাহলে শ্যামপুর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
- চুলের জন্য স্প্রে, জেল অথবা কেমিক্যাল যুক্ত শ্যাম্পুর মতো চুলে প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন কারণ এগুলো ব্যবহার করার ফলে মাথায় খুশকির সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় ( খুশকি দূর করার উপায় ):
- পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে।
- চিরুনি পরিষ্কার রাখুন। চিরুনি কারোর সাথে ব্যবহার করবেন না।
- যে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছবেন সেটা যেন পরিষ্কার থাকে।
- মাথার ত্বকে ঘাম হলে বারবার চুলকাবে না।
- চিরুনি খুব জোর করে ব্যবহার করবেন না। এতে মাথার ত্বকে আঘাত পাবে এবং সংক্রমণ হতে পারে।
খুশকির অপকারিতা:
- খুশকির কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- খুশকির সমস্যা আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
- খুশকির জন্য ঘন ঘন মাথায় চুলকানির সমস্যা।
- খুশকি যদি ছত্রাকের কারণে হয় তাহলে মাথার ত্বকে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে।
- নখ দিয়ে মাথা চুলকালে মাথার ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম কি কি কারণে খুশকি হয়, খুশকি কত রকমের হয়, খুশকি থেকে বাঁচার উপায়, খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়, খুশকি অপকারিতা ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন।