Fenugreek: মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা।

Fenugreekমেথির উপকারিতা ও অপকারিতা

Fenugreek:  মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা।
Fenugreek:  মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা।

মেথি সবজি থেকে শুরু করে পরোটা সবকিছুতেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মেথি খেতে খুবই সুস্বাদু হলেও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে এটির অনেক উপকারিতা রয়েছে। মেথির পাতা ও বীজ ভারতে অর্থাৎ আমাদের দেশে বহু শতাব্দি ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথি স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

মেথি কী?

মেথি হল এমন এক রকমের খাদ্য উপাদান, যেটা নানা ভাবে খাদ্য তালিকায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যখন মেথির সবুজ পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও খাবার তৈরি করার সময় মেথির দানা ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মেথির গাছ মাটি থেকে ২৩ ফুট লম্বা এবং মেথির শুটিতে ছোট ছোট হলুদ বাদামি সুগন্ধি দানা থাকে। 

প্রতি ১০০ গ্রাম মেথি বীজের পুষ্টি উপাদান:

নাম, পরিমাণ 

জল, ৮.৮৪ গ্রাম

শক্তি, ৩২৩ গ্রাম

প্রোটিন, ২৩ গ্রাম

মোট লিপিড (চর্বি), ৬.৪১ গ্রাম

কার্বোহাইড্রেট, ৫৮.৩৫ গ্রাম

ফাইবার, ২৪.৬ গ্রাম

ক্যালসিয়াম, ১৭৬ মিলিগ্রাম

আয়রন, ৩৩.৫৩ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম, ১৯১ মিলিগ্রাম

ফসফরাস, ২৯৬ মিলিগ্রাম

পটাসিয়াম, ৭৭০ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম, ৬৭ মিলিগ্রাম

দস্তা ,২.৫ মিলিগ্রাম

ম্যাঙ্গানিজ, ১.২২৮ মিলিগ্রাম

সেলেনিয়াম, ৬.৩ মাইক্রোগ্রাম

ভিটামিন সি, ৩ মি.গ্রা

থায়ামিন, ০.৩২২ মিলিগ্রাম

রিবোফ্লাভিন ,০.৩৬৬ মিলিগ্রাম

নিয়াসিন ,১.৬৪ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি-৬ ,০.৬ মিলিগ্রাম

ফোলেট ,৫৭ মাইক্রোগ্রাম

ভিটামিন এ, ৩ মাইক্রোগ্রাম 

স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ১.৪৬ গ্রাম

এবার আমরা জেনে নেবো মেথি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে।

 মেথি বীজের উপকারিতা:

১. মেথি বীজ কোলেস্টেরলের জন্য উপকারী:

আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণে আনতে মেথি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

কারণ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি বীজের মধ্যে আছে নারিনজেনিক নামক একটি ফ্ল্যাভোনয়েড। যা রক্তে লিপিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেথি বীজের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগীর উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

২. মেথি বীজ হার্টের জন্য উপকারী:

অনেক সময় চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে রাখেন হার্ট সুস্থ রাখার জন্য মেথি ব্যবহার করার। যেসব ব্যক্তিরা নিয়মিত মেথি খান তাদের হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভাবনা অনেকটাই কম হতে পারে। এছাড়াও যদি এটি ঘটে তবে জীবনের ঝুঁকি পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে। নানা রকম গবেষণায় দেখা গেছে যে হার্ট অ্যাটাক এর পিছনে একটি বড় কারণ হৃদপিন্ডের ধমনীতে ব্লকেজ থাকা। তবে মেথি বীজ এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে সক্ষম হতে পারে।

 এমনকি যদি কোন ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে মেথি। আর হার্ট অ্যাটাক এর সময় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মারাত্মক হতে পারে। এছাড়াও মেথি বীজ শরীরে সুষম রক্ত প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে যার কারণে ধমনীতে কোন রকমের বাধা সৃষ্টি হতে পারবে না।

৩. মেথি বীজ ক্যান্সারের জন্য উপকারী:

বর্তমান সময়ে ক্যান্সার হল একটি মারাত্মক রোগ, যার কোন ওষুধ নেই। তাই এই রোগ থেকে দূরে থাকাই ভালো। একটি গবেষণায় দেখা গেছে মেথি বীজের মধ্যে ক্যান্সার বিরোধী প্রভাব আছে, যা ক্যান্সারের সমস্যাকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তাহলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

৪. মেথি বীজ বাতের ব্যথায় উপকারী:

বয়েস বৃদ্ধির সাথে সাথে জয়েন্টে ব্যথা জয়েন্ট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি শুরু হয়। যে ব্যথা অসহনীয় হতে পারে। একে জয়েন্টে ব্যথা বা বাত বলা হয়। বাত মোকাবেলা করার জন্য মেথি একটি প্যানেসিয়া। যেটা বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। 

মেথির মধ্যে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। মেথি বীজের মধ্যে থাকা এই উপাদানগুলি জয়েন্টের ফোলা ভাব কমিয়ে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও মেথি বীজের মধ্যে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাসের মতো প্রচুর উপকারী উপাদান। যেগুলি হাড় মজবুত করতে ও জয়েন্ট গুলোতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।

৫. মেথি বীজ বুকের দুধ বৃদ্ধি করে:

প্রসবের পর নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের দুধ সব থেকে ভালো। এরকম পরিস্থিতিতে একজন স্তন দান করে মহিলা মেথি অথবা মেথি বীজ থেকে তৈরি ভেষজ চা পান করতে পারেন। কারণ একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি মায়ের বুকের দুধের গুণমান ও পরিমান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে এই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।

৬. মেথি বীজ রক্তচাপ উন্নত করে:

উচ্চ রক্তচাপ হার্টের সমস্যাসহ নানা রকমের রোগের কারণ হতে পারে। মেথি বীজের ঔষধি গুণ এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেথি বীজের মধ্যে আছে অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ প্রভাব, যার ফলে রক্তচাপের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৭. মেথিবীজ মাসিকের সময় উপকারী:

মহিলাদেরকে মাসিকের সময় অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মেথি বীজ থেকে তৈরি গুঁড়ো যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। এমনকি মেথি বীজ মাসিক সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। মেথির বীজের মধ্যে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যানালজেসিক, অ্যান্টিস্পাসমোডিক এবং মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য। 

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি বীজের এই উপকারী উপাদানগুলি ঋতুস্রাব বা মাসিক জনিত সমস্ত রকমের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। তবে একটা কথা মনে রাখবেন যে, ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রে, এটি শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।

৮. মেথি বীজ ডায়াবেটিসের উপকারী:

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য মেধাবী খুবই উপকারী। কেননা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি বীজ খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ হয়। এছাড়াও মেথি বেজ টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতেও সাহায্য করতে পারে। কারণ মেথির মধ্যে আছে হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব। এই হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রক্তে শর্করা পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। তাই যেসব ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক আছে তাদের অতিরিক্ত মাত্রায় মেথি খাওয়া এড়াতে হবে।

৯. মেথি বীজ কিডনির জন্য উপকারী:

একটি গবেষণায় দেখা গেছে মেথি কিডনির জন্য খুবই উপকারী। যদি আপনার খাদ্য তালিকায় মেথিবীজ অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে আপনার কিডনি ভালো ভাবে কাজ করতে পারবে। কারণ মেথি বীজের মধ্যে পাওয়া যায় পলিফেনলিক ফ্ল্যাভোনয়েড। যা কিডনি কে ভালো ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিডনির চারপাশে এটি প্রতিরক্ষা মূলক ঢাল তৈরি করে। যার ফলে এর কোষগুলি ধ্বংস থেকে রক্ষা পায়।

১০. মেথি বীজ চুলের জন্য উপকারী:

মেথি বীজ চুলের জন্য খুবই উপকারী। কারণ মেথি বীজ ব্যবহার করার ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়। এছাড়াও চুলকে আরো মজবুত করতে পারে। মেথি বীজের মধ্যে পাওয়া যায় লেসিথিন। যা চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে মজবুত করার পাশাপাশি ময়শ্চেরাইজও করতে পারে, মাথার খুশকি দূর করতে।

১১. মেথি বীজ ত্বকের জন্য উপকারী:

একটি গবেষণায় দেখা গেছে মেথি বীজের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের জন্য উপকারী হতে পারে। এছাড়াও মেথি বীজের মধ্যে আছে ত্বক মশ্চারাইজিং এবং ত্বক মসৃণ করার বৈশিষ্ট্য। তাই মেথি বীজ আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

১২. মেথি বীজ ওজন কমানোর জন্য উপকারী:

মেথি বীজ আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ মেথি বীজ শরীরে চর্বি জমতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। মেথি বীজের মধ্যে ভালো পরিমাণে ফাইবার আছে। যা খাবার হজমের পাশাপাশি ক্ষুধা নিবারণের জন্যও উপকারী। ফলে মেথি বীজ ওজন বাড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে। মেথির মধ্যে আছে নানা রকমের পলিফেনল, ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

এরপর আমরা জেনে নেব মেথি বীজের ব্যবহার।

মেথি বীজের ব্যবহার:

  • ১ চা চামচ মেথির দানা সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ওই জল অথবা এক গ্লাস জলে মিশে পান করতে পারেন।
  • মেথি বীজ হালকা আছে এক দুই মিনিট ভেজে নেওয়ার পর, সবজি অথবা সালাদের ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে এটি লাঞ্চ অথবা ডিনারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • মেথি বীজ সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখার পর, কাপড়ে বেঁধে রাখতে হবে। এই ভাবে দু-তিন দিন রাখার পর মেথি বীজ অঙ্কুরিত হবে, তারপর সকালে খাওয়া যেতে পারে।
  • মেথি বীজের তৈরি ভেষজ চাও পান করা যেতে পারে। মেথি বীজ জলে মিশে সিদ্ধ করতে হবে, তারপর স্বাদের জন্য লেবু ও মধু দিতে হবে। সকাল সন্ধ্যা পান করা যেতেই পারে।
  • মেথি পরোটা অথবা রুটি তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।

এবার আমরা জেনে নিই মেথি বীজ খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।

মেথি বীজের অপকারিতা:

  1. অতিরিক্ত মাত্রায় মেথি বীজ খাওয়ার ফলে পেট ফাটা এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে।
  2. মেথি বীজ হল উষ্ণ প্রকৃতির, তাই গর্ভাবস্থায় যদি অতিরিক্ত মাত্রায় মেথি বীজ খাওয়া হয়, তাহলে অকাল জরায়ু সংকোচন এর মত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই গর্ভাবস্থায় মেথি বীজ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  3. মেথি বিট শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
  4. অনেক ব্যক্তির মেথি বীজে অ্যালার্জিও হতে পারে। অ্যালার্জির ফলে মুখে ফোলা ভাব, শরীরে ফুসকুরি, শ্বাসকষ্ট, কেউ কেউ আবার অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
  5. অনেক সময় মেথি বীজ খাবার ফলে বুকে ব্যথা ও সৃষ্টি হতে পারে।
  6. অতিরিক্ত মাত্রায় মেথি বীজ খাওয়ার ফলে পাইলস, গ্যাস, অ্যাসিডিটিও হতে পারে।

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম মেথি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোঝার মত হয়েছে। যদি ভালো লাগে আর যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *