Fig Fruit Benefits in Bengali Language. ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।

Fig Fruit Benefits in Bengali Language. ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।-ডুমুর আমাদের প্রায় সকলেরই পরিচিত একটি সবজি বা ফল বলা যেতে পারে। ডুমুরকে আমরা সাধারণত সবজি হিসেবেই খেয়ে থাকি। আবার অনেকে এটি ফল হিসেবেও খেয়ে থাকেন।আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।

ডুমুর কি?

ডুমুর হলো এক প্রকারের নরম এবং মিষ্টি জাতীয় ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা ও অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ আছে। ডুমুর ফল শুকনো এবং পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এই প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মায়।

ডুমুরের প্রজাতি:

ডুমুর বিভিন্ন প্রজাতির হয়। যেমন কাক ডুমুর, আঞ্জির ডুমুর, জগডুমুর এবং অশ্বথ ডুমুর।

আমাদের দেশে সাধারণত কাক ডুমুরি দেখা যায়। এই গাছগুলি অযত্নে বেড়ে ওঠে।

ডুমুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?

ডুমুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম হল – 

  • কাক ডুমুর Ficus Hispida
  • আঞ্জির ডুমুর Ficus Carica
  • জগডুমুর Ficus Racemosa
  • অশ্বথ ডুমুর Ficus Religiosa।

প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরের পুষ্টি উপাদান:

  • প্রোটিন – ৪.৬৭%
  • ফ্যাট – ০.৫৬%
  • ফাইবার – ৩.৬৮%
  • খাদ্যশক্তি – ৩১৭.৭৮ কিলো ক্যালরি
  • কার্বোহাইড্রেট – ৭৩.৫০%
  • পটাশিয়াম – ৪%
  • রিবোফ্লাভিন – ৪%
  •  ম্যাগনেসিয়াম – ৫%
  •  ভিটামিন বি ৬ – ৬%
  • ভিটামিন কে – ৪%
  • থায়ামিন – ৪%
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • জিংক 
  • ম্যাঙ্গানিজ 
  • আর্সেনিক 

এবার আমরা জেনে নেব ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।

 ডুমুরের উপকারিতা:

 ১. ডুমুর হজম শক্তি উন্নতিতে সাহায্য করে:

 ডুমুর হজম শক্তি উন্নতিতে সাহায্য করে। কারণ ডুমুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

 ২. ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে:

 ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কারণ তোমরা মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যার ফলে হজম ঠিকঠাক হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস পায়।

 ৩. ডুমুর হার্ট সুস্থ রাখে:

 ডুমুর হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ রক্তচাপ এবং রক্তের চর্বির মাত্রা উন্নত সাহায্য করতে পারে ডুমুর। যা আমাদের শরীরের রক্তনালী স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এবং হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়।

 ৪. ডুমুর কোলেস্ট্রলে মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:

 ডুমুর কোলেস্ট্রলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কারণ আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে ডুমুর। যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

 ৫. ডুমুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:

 ডুমুর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ডুমুর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের রক্তরে চাপ ও উচ্চ তারা ডুমুর খেতে পারেন।

 ৬. ডুমুর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:

 ডুমুর রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। শুকনো ডুমুর এর মধ্যে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে তাই অল্প সময়ের মধ্যে এই রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যদি কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তারা ডুমুর কম খাবেন।

 ৭. ডুমুর ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:

 ডুমুর আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারন ডুমুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। ভাজা খাবার থেকে দূরে থাকার একটি ভালো উপায় হল ডুমুর। হালকা খাবারের জন্য ডুমুরকে বেছে নিতে পারেন। ডুমুর আপনার পেট ভরাবে এবং আপনার শরীরে পুষ্টিগুনও প্রদান করতে সাহায্য করবে।

 ৮. ডুমুর ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে:

 ডুমুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ ডুমুরের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রেডিক্যাল এবং ক্রনিক প্রধান নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রেডিক্যাল ক্যান্সার হৃদ রোগ এবং ডায়াবেটি সমেত দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য দায়ী। ডুমুরকে এই দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য অবস্থায় একটি প্রতিরোধক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

 ৯. ডুমুর হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে:

 ডুমুর হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। কারণ ডুমুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যাহার শক্ত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

 ১০. ডুমুর পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক:

 ডুমুর পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্যকারী একটি উপাদান। শুকনো ডুমুর দুই থেকে তিনটি দুধে ভিজিয়ে রাখার চার ঘন্টা পর শুধুমাত্র ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ সমেত ওই ডুমুর খেতে হবে। তাহলে পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি হতে পারে।

১১. ডুমুর অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে:

ডুমুর অনিদ্রা জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে একটি উপাদান।

এবার আমরা জেনে নেব ডুমুর খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।

ডুমুরের অপকারিতা:

  •  ডুমুরের মধ্যে পাওয়া যায় প্রাকৃতিক রাসায়নিক সংমিশ্রণ কনজএক্টইভআইটইস,রাইনাইটিস ও অ্যানাফিল্যাকটিক শক হতে পারে। হাঁপানি আক্রান্ত ব্যক্তিদের এটি না খাওয়াই উচিত। ডুমুর খাওয়ার ফলে অ্যালার্জিও হতে পারে।
  •  অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে।
  •  অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর খাওয়ার ফলে পেট খারাপ, বদহজম, বারবার পায়খানা যাওয়া, এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে।
  •  অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর খেলে পেট ব্যাথা হতে পারে। ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় হল ঠান্ডা জল পান করা এবং এর উষ্ণ প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে।

কাদের ডুমুর খাওয়া উচিত নয়:

যাদের কিডনিতে পাথর আছে:

যাদের কীর্তিতে পাথরের সমস্যা আছে তারা ডুমুর থেকে এড়িয়ে চলবেন। কারণ ডুমুরের মধ্যে আছে অক্সালেট নামক একটি উপাদান যা পাথরের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। ডুমুর অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে। পাথরের সমস্যা থাকলে ডুমুর থেকে এড়িয়ে চলুন।

মাইগ্রেন:

ডুমুর খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। ডুমুরের মধ্যে পাওয়া সালফেট উপাদান মাইগ্রেন ব্যথা বাড়াতে পারে।

পেট ব্যথা:

যাদের পেটে ব্যথার সমস্যা আছে তারা ডুমুর খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন। পেট ব্যথা সমস্যার সঙ্গে যাদের লুজ মোশন ও বদ হজমের সমস্যা আছে তারাও ডুমুর খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ডুমুর খাওয়ার ফলে পেট ভারী হওয়ার সমস্যা হতে পারে।

লিভার সমস্যা:

ডুমুর খাওয়ার ফলে লিভারের সমস্যা বাড়তে পারে। ডুমুরের বীজ ভারী হয়। তাই লিভার সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে ডুমুর না খাওয়াই উচিত।

রক্তপাতের সমস্যা:

ডুমুর খেলে অনেক সময় রক্তপাতের সমস্যা হতে পারে।  ডুমুর খাবার ফলে মহিলাদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। ডুমুর নিয়মিত খাওয়ার ফলে রেটিনাল রক্তপাতের সমস্যা হতে পারে এবং সময়ের আগেও পিরিয়ড হতে পারে।

ডুমুর সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:

ডুমুর খেলে কোন রোগ নিরাময় হয়?

ডুমুর খাওয়ার ফলে ওজন কমে, হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ইত্যাদি উপকার পাওয়া যায়।

একদিনে কয়টি ডুমুর খেতে হবে?

একদিনে দুই থেকে তিনটি ডুমুর খেতে হবে।

প্রতিদিন সকালে ডুমুর খেলে কি হয়?

প্রতিদিন সকালে ডুমুর খাওয়ার ফলে হজম ভালো হয় বা হজম শক্তি উন্নত হয়। হৃদ যন্ত্র সুস্থ থাকে। ডুমুরের মধ্যে ক্যালসিয়াম আছে, যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।

ডুমুর কখন খাওয়া উচিত নয়?

যদি কোন ব্যক্তির কিডনিতে পাথর হয় তাহলে তার ডুমুর খাওয়া উচিত নয়। ডুমুর খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়তে পারে। যাদের পেটের সমস্যা আছে তাদের ডুমুর খাওয়া উচিত নয়।

ডুমুর কি তাপ সৃষ্টি করে?

শুকনোর ডুমুরের প্রভাব হলো গরম। আর গ্রীষ্মকালে ডুমুর না খাওয়াই উচিত।

ডুমুর কি বিষাক্ত?

ডুমুর মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু ডুমুর এবং ডুমুর গাছের ফল পাতা ডুমুরের রস ইত্যাদি বিড়ালের জন্য বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর।

আমরা কি রাতে শুকনো ডুমুর খেতে পারি?

ডুমুর অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে ডুমুর খাওয়া যেতে পারে।

পুরুষালি শক্তির জন্য ডুমুর কিভাবে খাবেন?

পুরুষ আলীর শক্তি বা যৌন শক্তি বাড়াতে দুই থেকে তিনটি ডুমুর দুধের মধ্যে চার ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর রাতে ঘুমানোর সময় ওই দুধ ডুমুর সমেত খেতে হবে।

ডুমুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?

ডুমুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম হলো ফিকাস রেসমোসা।

ডুমুর ইংরেজি কি?

ডুমুর ইংরেজি হল Fig।

ডুমুর খেলে মহিলাদের কি উপকার হয়?

ডুমুর মহিলাদের জন্য আশীর্বাদ বলা যেতে পারে। কারণ ওজন কমাতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হার্টের জন্য উপকারী।

ডুমুর দুধের সিদ্ধ করে পান করলে কি হয়?

দুধ এবং ডুমুর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। কারণ ডুমুরের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন।

ডুমুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?

ডুমুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা। তবে খালি পেটে ডুমুর খাওয়ার ফলে ওজন কমে এবং হৃদ রোগের উপকারী হয়।

প্রতি কেজি ডুমুর পাওয়া যায় কত টাকায়?

ভালো ডুমুরের দাম হল ৮০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা কেজি। এর থেকে কম দামে ও ডুমুর পাওয়া যায়।

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য। এছাড়াও জেনে নিলাম ডুমুর কি, ডুমুরের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি, ডুমুর কত রকমের হয়, কাদের ডুমুর খাওয়া উচিত নয় ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে জেনে নিলাম। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে এবং ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ, জানাই বন্ধুদের কে যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *