Goat milk near me – Goat milk Price, Benefits and Side Effects: ছাগলের দুধ কি আমাদের পান করা উচিত? ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা।

Goat’s Milk Benefits and Side Effects: ছাগলের দুধ কি আমাদের পান করা উচিত? ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা।

ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা যেমন সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য গরুর দুধ পান করে থাকি। ঠিক একই ভাবে ছাগলের দুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। ছাগলের দুধ আমাদের শরীরে পুষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব ছাগলের দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের দুধের পুষ্টিগুণ:

  • জল – ৮৭.০০%
  • প্রোটিন – ৩.৫২%
  • ফ্যাট – ৪.২৫%
  • আয়রন – ০.০৭ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ১৩৪ মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম – ১৮১ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম – ৪১ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম – ১৬ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস – ১২১ মিলিগ্রাম
  • জিংক – ০.৫৬ মিলিগ্রাম
  • থায়ামিন – ০.০৬৮ মিলিগ্রাম
  • নিয়াসিন – ০.২৭ মিলিগ্রাম
  • রিবোফ্লাভিন – ০.২১ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি-১২ – ০.০৬৫ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি-৬ – ০.০৪৬ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি – ১.২৯ মিলিগ্রাম
  • ফলিক অ্যাসিড – ১.০ মাইক্রগ্রাম 
  • ভিটামিন এ – ১৮৫ আইইউ
  • ভিটামিন ডি – ২.৩ আইইউ

এবার আমরা জেনে নেব ছাগলের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে।

 ছাগলে দুধের উপকারিতা

১. ছাগলে দুধ হার্টের জন্য উপকারী:

আমাদের শরীরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে একটি হল হার্ট। আর হার্টকে সুস্থ রাখলে আমরা বড় রকমের ঝুঁকির হাত থেকে এড়াতে পারি। একটি গবেষণা দেখা গেছে, ছাগলের দুধের মধ্যে আছে ভালো পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, যা হার্টের জন্য বিশেষ উপকারী বলে মনে করা হয়ে থাকে। ম্যাগনেসিয়াম হার্টের জন্য খুব ভালো।

 হৃদস্পন্দন বজায় রাখতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম। তাছাড়া চিকিৎসকদের মতে, ছাগলে দুধে কোলেস্টেরলের পরিমাণও কম থাকে, যার কারণে ছাগলে দুধ হার্ট ও ধমনীর জন্য উপকারী হতে পারে। তাই, এটা বলা যেতে পারে যে ছাগলের দুধ হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

২. ছাগলে দুধ রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে:

আমাদের শরীরে আয়রনের অভাবের কারণে রক্তশূন্যতার ঝুঁকি বৃদ্ধি হয়। রক্তশূন্যতার কারণে, রক্ত পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না। আর ছাগলের দুধের মধ্যে বেশ কিছুটা পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায়। 

তাই বলা যেতে পারে যে ছাগলের দুধ রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। যাইহোক, এই বিষয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন আছে। এই রকম অবস্থায় রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রে শুধু ছাগলের দুধের ওপর নির্ভর করে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৩. ছাগলে দুধ সহজে হজম হয়:

আমাদের কাছে ছাগলের দুধ আর ছাগলে দুধ থেকে তৈরি খাবার হজম করা সহজ হতে পারে। ছাগলের দুধের মধ্যে পাওয়া প্রোটিন গরুর দুধের মধ্যে পাওয়া প্রোটিনের চেয়ে তাড়াতাড়ি হজম হয়। 

এছাড়াও ছাগলে দুধের মধ্যে গরুর দুধের তুলনায় কম ল্যাকটোজ থাকে। এই রকমের পরিস্থিতিতে, ছাগলে দুধ হজম করা সহজ আর পেট সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।

৪. ছাগলের দুধ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে:

ছাগলের দুধ শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে বলে প্রমাণিত হতে পারে। কারণ, ছাগলের দুধের মধ্যে পাওয়া যায় লিনোলিক অ্যাসিড।

 আর লিনোলিক অ্যাসিড মস্তিষ্কের উন্নয়নে কাজ করে থাকে। এটি ছাড়াও, এটি উদ্বেগ উপশম করতেও সহায়তা করে।

৫. ছাগলে দুধ ফোলা কমাতে সহায়ক:

আপনারা হয় তো এটা বিশ্বাস করবেন না, তবে এটা সম্পূর্ণ সত্য যে ছাগলের দুধ ব্যবহার করার ফলে শরীরের ফোলা ভাব কমানো যায়। আসলে, ছাগলের দুধের মধ্যে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। যেটা আমাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে।

৬. ছাগলের দুধ বিপাক জন্য উপকারী:

ছাগলের দুধের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে উন্নত বিপাক। একটি সমীক্ষাতে দেখা গেছে, ছাগলের দুধ সেইসব ব্যক্তিদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয় যাদের শরীর পুষ্টি শোষণ করতে অক্ষম। তাই ছাগলের দুধ পান করা অন্যান্য দুধের থেকে ভালো হতে পারে।

৭. গর্ভাবস্থায় উপকারী ছাগলের দুধ:

গর্ভাবস্থায় বেশির ভাগ মহিলাই কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যাতে ভুগতে শুরু করতে পারেন। আগে বলেছি, ছাগলের দুধ সহজে হজম করা যায়। একই সঙ্গে ছাগলের দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক অলিগোস্যাকারাইড থাকে, তাই ছাগলের দুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় উপকারী হতে পারে। তাই ছাগলের দুধ পান করা বিশ্বাস করা যেতে পারে।

 ছাগলের দুধ গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে। বর্তমানে এই বিষয়ের উপর কোনো সঠিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এইরকম পরিস্থিতিতে গর্ভাবস্থায় ছাগলের দুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মনে করি।

৮. ছাগলের দুধ ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:

ছাগলের দুধ ত্বকের জন্য খুব উপকারী। ছাগলের দুধের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য, যা ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়ক হতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলো দূর করতে সাহায্য করে থাকে। একই সময়ে, ছাগলের দুধের মধ্যে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই বলা যায়, ছাগলের দুধ ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে থাকে।

৯. ছাগলের দুধ শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:

ছাগলের দুধে শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ ছাগলে দুধের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, এছাড়াও নানা রকমের ভিটামিন, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন।

১০. ছাগলের দুধ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে:

ছাগলের দুধ পান করার ফলে হাড়ের উপকার করা যায়। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ছাগলের দুধ পান করার ফলে হাড় মজবুত হয়। কারণ, ছাগলের দুধকে ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এছাড়াও, ছাগলের দুধের মধ্যে বেশ কিছু পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম আর ফসফরাসও আছে। ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম এক সঙ্গে হাড়কে সুস্থ রাখতে কাজ করে থাকে।

১১. গরুর দুধের চেয়ে ভালো ছাগলের দুধ:

ছাগলের দুধ গরুর দুধের থেকে ভালো হতে পারে। কারণ ছাগলের দুধের মধ্যে আলফা-S1-কেসিনের মাত্রা কম থাকে। যা ভালো সহ্য করতে পারে। এ ছাড়াও ছাগলের দুধের মধ্যে ছোট আকারের ফ্যাট গ্লাবিউল থাকে, যেটা শরীর সহজেই সহ্য করতে পারে।

১২. ছাগলের দুধ চুলের জন্য উপকারী:

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সময় দেখা যায় পুষ্টির অভাবের কারণে চুল পড়া শুরু হতে পারে। ভিটামিনের মধ্যে আছে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-বি। আর ছাগলের দুধের মধ্যে ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি পাওয়া যায়, যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। 

এবার আমরা জেনে নেব ছাগলের দুধের ব্যবহার সম্পর্কে।

ছাগলের দুধের ব্যবহার 

ছাগলের দুধ কীভাবে পান করবেন:

  • ছাগলের দুধ ফুটিয়ে সরাসরি পান করা যায়।
  • ছাগলের দুধ থেকে চা তৈরি করা হয়। 
  • আইসক্রিম তৈরি করতে ছাগলের দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ছাগলের দুধ থেকে পনির এবং দই তৈরি করা হয় যা, খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ছাগলের দুধ মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

 ছাগলের দুধ কখন পান করতে হবে:

  • ছাগলের দুধ অথবা তা থেকে তৈরি চা সকাল – সন্ধ্যায় যে কোনো সময় পান করা যেতে পারে।
  • ছাগলের দুধ থেকে তৈরি করা দইও যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে।
  •  দিনের যে কোন সময় ছাগলের দুধ থেকে তৈরি মিষ্টি খেতে পারেন।
  • ছাগলের দুধ থেকে তৈরি পনির তরকারি যে কোনো সময় খাওয়া যেতে পারে।

ছাগলের দুধ কতটা খাবেন:

  • প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ অথবা এক কাপ চা পান করা যেতে পারে। এর পরিমাণ সম্পর্কে আপনি যদি একজন ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করেন তাহলে ভালো হবে।

এবার আমরা জানবো ছাগলের দুধ পান করার অপকারিতা সম্পর্কে।

ছাগলের দুধের অপকারিতা:

ছাগলের দুধের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও আছে।

  1. ছাগলের দুধে ফ্যাট থাকে, তাই আপনার ওজন কমানোর ডায়েটে ছাগলের দুধ অন্তর্ভুক্ত করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  2. যেসব ব্যক্তিদের সহজে অ্যালার্জি হয় অথবা যাদের দুগ্ধজাত দ্রব্যে অ্যালার্জি হয় তাদের ছাগলের দুধ খাওয়ার ফলে সমস্যায় পড়তে পারেন।এমন পরিস্থিতিতে ছাগলের দুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো হবে।
  3. ছাগলের দুধ বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই বাচ্চাদের কি খাওয়ানোর আগে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে এক বছর অথবা তার কম বয়সী শিশুকে দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম ছাগলের দুধ পানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোঝার মত হয়েছে। যদি ভালো লাগে আর যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *