Guava leaf benefits: পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।

Guava-leaf-benefits

Guava leaf benefits: পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা। আমরা পিয়ারা ফলের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক শুনেছি অনেক জানিও। কিন্তু আপনারা কি জানেন পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। হ্যাঁ, পেয়ারা পাতারও অনেক স্বাস্থ্যকারী উপকারিতা আছে। তাই পিয়ারা পাতাকে কোনভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। পেয়ারা পাতা ব্যবহার করার ফলে নিমেষে দূর করা যায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক সমস্যা। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব পিয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা জেনে নেব।

পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ:

  • কার্বোহাইড্রেট
  • প্রোটিন 
  • অ্যামিনো অ্যাসিড
  • ভিটামিন বি
  • ভিটামিন সি 
  • ক্যালসিয়াম 
  • ম্যাগনেসিয়াম 
  • আয়রন 
  • ফসফরাস 
  • পটাশিয়াম 

প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ:

  • কার্বোহাইড্রেট – ৭ মিলিগ্রাম
  • প্রোটিন – ১৬.৮ মিলিগ্রাম
  • অ্যামিনো অ্যাসিড – ৮ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি – ১৪.৮০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি – ১০৩ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ১৬৬০ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম – ৪৪০ মিলিগ্রাম
  • আয়রন – ১৩.৫০ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস – ৩৬০ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম – ৪১৭ মিলিগ্রাম
এবার আমরা জেনে নেব পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।

পেয়ারা পাতার উপকারিতা:

১. পেয়ারা পাতা ডায়াবেটিসের উপকারী:

পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে ফেনোলিক যৌগ, যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতা খাওয়ার সাথে লিপিডের ও মাত্রা হ্রাস হয়। এছাড়াও পেয়ারা পাতা ব্যবহারের ফলে প্রোটিন গ্লাইকেশনও কমে যায় অর্থাৎ শরীরের মধ্যে উপস্থিতি চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পেয়ারা পাতার এসব গুনাগুন শরীরে ডায়াবেটিসে মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

২. পেয়ারা পাতা ওজন কমাতে সহায়ক:

 পিয়ারা পাতার মধ্যে আছে বেশ কিছু বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ। যেটা আপনার শরীরের কার্বোহাইড্রেট শোষণে বাঁধা সৃষ্টি করে দিতে পারে। আর তারা শরীরের চিনি এবং ক্যালোরি পরিমাণ কমা করে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।

 ৩. ডায়রিয়া কমাতে সহায়ক পেয়ারা পাতা:

 পেয়ারা পাতা ডায়রিয়া কমাতে সহায়ক। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে পিয়ারা পাতার রস ডায়রিয়ায় উপকারী। E.Coli ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি ডায়রিয়া সমস্যা দূর করার সাথে সাথে এটা থেকে সৃষ্টি অন্যান্য সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পেয়ারা পাতা। কারণ পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি-হেলমিন্থিক প্রপাটিজ। যেটা পেট সংক্রান্ত সমস্ত রকম সমস্যা দূর করে এবং শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

 ৪. পেয়ারা পাতার ডেঙ্গু জ্বরে উপকারী:

 পেয়ারা পাতাকে ডেঙ্গু জ্বরের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। পেয়ারা পাতা প্লেটলেট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ও রক্তপাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়া পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে কোয়ারসেটিন। যেটা ভাইরাসের সময় এনজাইম এমআরএনএ গঠনে বাঁধা সৃষ্টি করে দেয়। এই রকম অবস্থাতে পেয়ারা পাতা খাওয়ার ফলে ডেঙ্গু জ্বরের উপকারী বলে বিবেচিত হতে পারে।

 ৫. পেয়ারা পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:

 পেয়ারা পাতা আমাদের শরীরে পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। কারণ পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবায়ন কার্যকলাপ যা আপনাকে জীবাণু ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। পেয়ারা পাতা গ্যাস্ট্রিক এনজাইম তৈরি করে, যা হজম করতে সাহায্য করে এবং শরীরে পুষ্টি শোষণ ক্ষমতার উন্নত করে। পেয়াডা পাতার মধ্যে আছে ফ্ল্যাভোনয়েড, যা গ্যাসট্রিক PH বাড়িয়ে পেটের আলসার থেকে রক্ষা করতে পারে।

 ৬. পেয়ারা পাতা শুক্রাণু বৃদ্ধি করে:

 পেয়ারা পাতার সাহায্যে শুক্রাণু বৃদ্ধি করা যায়। পেয়ারা পাতা উর্বরতা বাড়াতে সক্ষম বলে বিবেচিত হয়েছে। একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। যা শুক্রাণুর বিষাক্ততার ওপর উপকারী প্রভাব ফেলে। ফলে পুরুষের উর্বরতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

 ৭. পেয়ারা পাতা ব্রংকাইটিসে উপকারী:

 পেয়ারা পাতা ব্রঙ্কাইটিসের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রংকাইটিসের সময় শ্বাসনালীতে জ্বালা এবং ফোলা ভাব লক্ষ্য করা যায়। এই রকম পরিস্থিতিতে পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য, যেটা আপনাকে হাঁপানি কাশি ও ছত্রাক জনিত রোগের পাশাপাশি ব্রংকাইটিস থেকে রক্ষা করে। পেয়ারা পাতা দিয়ে চা তৈরি করুন এবং সেই চা বার বার খান ফলে কাশি হবে না। যেটা ব্রঙ্কাইটিস কিছুটা হলেও উপশম দিতে পারে।

 ৮. পেয়ারা পাতা ক্ষত এবং সংক্রমণে উপকারী:

 পেয়ারা পাতা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়ান বৈশিষ্ট্য গুলি ক্ষত এবং ত্বকের সংক্রমণ সম্পর্কিত ব্যাকটেরিয়া গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

 ৯. পেয়ারা পাতা কোলেস্টরলে উপকারী:

 পেয়ারা পাতা খাওয়ার ফলে প্লাজমা কোলেস্টরলের মাত্রা হ্রাস পায়। কারণ পেয়ারা পাতার মধ্যে থাকা উপাদান গুলি হাইপারগ্লাইসেমিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে হাইপোলিপিডেমিক বৈশিষ্ট্য, যা শরীরে লিপিডের পরিমাণ অর্থাৎ এক ধরনের চর্বির মাত্রা কমাতে পারে।

 ১০. পেয়ারা পাতা ক্যান্সারের উপকারী:

 পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি কার্ড চিনোজেনিক বৈশিষ্ট্য। যা পাকস্থলী, ফুসফুসের ক্যান্সার এড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেয়ারা পাতা ক্যান্সারের রোগীদের DNA ও অন্যান্য কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

 ১১. পেয়ারা পাতা অ্যালার্জিতে উপকারী:

 পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যান্টি-অ্যালাজেটিক বৈশিষ্ট্য। যা শরীরের অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে।

 ১২. পেয়ারা পাতা দাঁতে ব্যথা কমাতে সহায়ক:

 পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে অ্যানালজেসিক, অ্যান্টি-ইমফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-মাইক্রবায়ন বৈশিষ্ট্য। যা দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও গলা ব্যথা, মাড়িতে ফোলা ভাব এইগুলি কমাতেও সাহায্য করে।

১৩. পেয়ারা পাতার রক্তচাপ কমাতে সহায়ক:

পেয়ারা পাতার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যেসব ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য পেয়ারা পাতা খুবই উপকারী। কারণ পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

 পেয়ারা পাতার ব্যবহার:

  •  পেয়ারা পাতার চা তৈরি করে পান করতে পারেন।
  •  পেয়ারা পাতার পেস্ট তেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন (পেয়ারা পাতার তেল বানানোর নিয়ম)।
  •  পেয়ারা পাতার পেস্ট ত্বকের ব্যবহার করতে পারেন।
  •  পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করে ওর জলটা খেতে পারেন।
 
 এবার আমরা জেনে নেব চুলের জন্য ও ত্বকের জন্য পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।

 চুলের জন্য পেয়ারা পাতার উপকারিতা:

 ১. পেয়ারা পাতায় চুল পড়া প্রতিরোধ করে:

 পেয়ারা পাতার চুল পড়ার সমস্যার জন্য কার্যকারী প্রমাণিত হতে পারে। চুল গজাতে অনেকেই এই তথ্যটি ব্যবহার করে থাকেন। 
 চুলের জন্য পেয়ারা পাতার ব্যবহার:
  1.  প্রথমে পেয়ারা পাতাগুলি জলের সিদ্ধ করে নিতে হবে।
  2.  তারপরে ওই জলটা ফিল্টার করতে হবে।
  3.  তারপরে আপনার চুলে মাসাজ করতে হবে জলটা দিয়ে।

 ত্বকের জন্য পেয়ারা পাতার উপকারিতা:

১. পেয়ারা পাতা ত্বকের চুলকানি দূর করে:

ত্বকে যখন সংক্রমণ হয় তখন ত্বকে চুলকানি শুরু হয়। পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে আন্টি ইনফেক্টিভ প্রভাব। যা তোকে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতা পেস্ট ব্যবহার করলে চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
চুলকানিতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার:
  1. পেয়ারা পাতা প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার জলে ধুতে হবে।
  2. তারপর পেয়ারা পাতাগুলি প্রয়োজনমতো জল দিয়ে ভালো ভাবে মিক্সিতে পিছিয়ে নিতে হবে।
  3. তারপর তৈরি হয়ে যাবে পেয়ারা পাতার এই পেস্টটি। এবং চুলকানি জায়গায় এই পেস্টটি লাগান।
  4. চুলকানি নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে পুনরাবৃত্তি করতে থাকুন।

২. পেয়ারা পাতা ব্রণ এবং কালো দাগের চিকিৎসা:

আপনারা প্রায়ই মুখে ব্রণ এবং কালো দাগের সমস্যায় ভোগেন। কালো দাগ এবং ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে ভিটামিন সি যা আপনার মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
ব্রণ এবং কালো দাগের চিকিৎসায় পেয়ারা পাতার ব্যবহার:
  1. প্রথমে পেয়ারা পাতা গুলি ধুয়ে নিতে হবে।
  2. তারপরে ১০ থেকে ১২ টি পেয়ারা পাতা অল্প একটু জল দিয়ে ব্লেন্ডারে পিষে নিতে হবে।
  3. এই ভাবে এই পেস্টটি তৈরি করতে হবে তারপর মুখে লাগাতে হবে।
  4. মুখে লাগিয়ে যখন পেস্টটি শুকিয়ে যাবে তখন ধুয়ে ফেলতে হবে।
  5. এইভাবে প্রত্যেকদিন মাসখানে ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ এবং কালো দাগ ঠিক হয়ে যাবে।

৩. পেয়ারা পাতা ব্ল্যাক-হেডস দূর করে:

পেয়ারা পাতা আপনার মুখের ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে।
ব্ল্যাকহেডস দূর করতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার:
  1. কয়েকটি পেয়ারা পাতা মিক্সারে পিষে নিতে হবে অল্প একটু জল দিয়ে।
  2. মোটা করে পেয়ারা পাতার পেস্টটা বানাতে হবে।
  3. তারপর সকাল এবং সন্ধ্যাবেলায় এটি মুখে লাগাতে হবে।

৪. পেয়ারা পাতা বার্ধক্য দূর করে:

পেয়ারা পাতাকে ত্বকের টনিক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। কারণ পেয়ারা পাতা চকের বিভিন্ন রকম সমস্যা আর সমাধান করে দেয়। পেয়ারা পাতার মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। যা তোকে বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ত্বকে অকাল বলিলেখা দূর করে।
বার্ধক্য দূর করতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার:
  1. প্রথমে একমুঠা পেয়ারা পাতার জলে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  2. তারপর অল্প একটু জল দিয়ে পিষে নিতে হবে পাতা গুলি।
  3. এই ভাবে পেস্ট বানিয়ে প্রত্যেক দিন মুখে লাগাতে পারেন।
  4. পেয়ারা পাতা ফ্রেস টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
  5. কয়েকটি পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করেও একটি কথা তৈরি করতে পারেন।
  6. তারপর ওই কত ঠান্ডা হয়ে গেলে তুলো দিয়ে মুখে লাগাতে পারেন।
  7. তারপর কিছুক্ষণ পর মুখটা ধুয়ে ফেলুন।
এবার আমরা জেনে নেব পেয়ারা পাতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।

পেয়ারা পাতার অপকারিতা:

  1. পেয়ারা পাতার অত্যাধিক সেবন করার ফলে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে তখন আপনি দুর্বল বোধ করতে পারেন।
  2. গর্ভাবস্থায় মহিলারা পেয়ারা পাতার খেতে পারেন কিনা তা কোন স্পষ্ট নয় তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোঝার মতো হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুদের। সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *