Malay Apple – মালয় আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। – মালয় আপেল এই নামটা হয়তো অনেকেই শোনেননি আবার খুব কম ব্যক্তি শুনেছেন। মালয় আপেল হলো এক ধরনের ফল। যার বাইরেরটা গোলাপি বা লাল রঙের হয় এবং ভেতরটা সাদা রঙের হয়। মালায় আপেল স্বাদে মিষ্টি ও টক। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব মালয় আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
মালয় আপেলের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
মালয় আপেলের বিজ্ঞান সম্মত নামটি হল Syzygium Malaccense।
মালয় আপেল এর ইংরেজি কি?
মালয় আপেলের ইংরেজি হল Malay Apple, Rose Apple।
মালয় আপেলের বর্ণনা:
মালয় আপেল হলো একটি চিরহরিৎ জাতীয়। মালয় আপেল গাছটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া জাভা শুধুমাত্র নিম্নভূমির রেইনফরেস্ট থেকে উৎপত্তি মনে করা হয়। মালয় আপেল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল গুলিতে এখন বিভিন্ন জায়গায় চাষ করা হয়। তবে মালয় আপেল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে অস্ট্রেলিয়ার মানুষরা চাষ করে আসছে।
মালয় আপেল গাছের বর্ণনা:
মালয় আপেল হল একটি মাঝারি আকারের উদ্ভিদ এবং চিরহরিৎ জাতীয় উদ্ভিদ। গাছটি লম্বা হয় প্রায় পাঁচ থেকে কুড়ি মিটার পর্যন্ত। গাছের ছাল ফ্যাকাসে বাদামী রঙের, ফাটল যুক্ত হয়। মালয় আপেল গাছের পাতাগুলোর সবুজ রঙের এবং চকচকে হয়। মালয় আপেল ফুলটি ফানেল আকৃতির হালকা বেগুনি- লাল রঙের হয়। মালয় আপেল ফলটি দেখতে অনেকটা নাশপাতির মত। ফলটি চকচকে মোম যুক্ত লাল, গোলাপি, বেগুনি-লাল রঙের হয়ে থাকে। ফলটি রসালো, মোটা শাঁস বিশিষ্ট, সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে।
এবার আমরা জেনে নেব মালয় আপেলের পুষ্টিগুন সম্পর্কে।
মলয় আপেলের পুষ্টিগুণ:
- আর্দ্রতা
- ফ্যাট
- প্রোটিন
- ফাইবার
- আঁশ
- ফসফরাস
- ক্যালসিয়াম
- সোডিয়াম
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- ক্যারোটিন
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- থায়ামিন
- নিয়াসিন
- রিবোফ্লাভিন
- অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
প্রতি ১০০ গ্রাম মালয় আপেলের পুষ্টিগুন:
- আর্দ্রতা – ৯০.৩ থেকে ৯১.৬ গ্রাম
- ফরম্যাট – ০.১ থেকে ০.২ গ্রাম
- প্রোটিন – ০.৫ থেকে ০.৭ গ্রাম
- ফাইবার – ০.৬ থেকে ০.৮ গ্রাম
- আঁশ – ০.২৬ থেকে ০.৩৯ গ্রাম
- ফসফরাস – ১১.৬ থেকে ১৭.৯ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৫.৬ থেকে ৫.৯ গ্রাম
- আয়রন – ০.২ থেকে ০.৮২ গ্রাম
- ক্যারোটিন – ০.০০৩ থেকে ০.০০৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ – ৩ থেকে ১০ আইইউ
- থায়ামিন – ১৫ থেকে ৩৯ মাইক্রোগ্রাম
- নিয়াসিন – ০.২১ থেকে ০.৪১ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাভিন – ২০ থেকে ৩৯ গ্রাম
- অ্যাসকরবিক অ্যাসিড – ৬.৫ থেকে ১৭.০ মিলিগ্রাম
এবার আমরা জেনে নেব মালয় আপেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
মালয় আপেল খাওয়ার উপকারিতা:
১. মালয় আপেল ওজন কমাতে সহায়ক:
যদি কোন ব্যক্তি স্থূলতায় ভুগছেন তাহলে প্রত্যেকদিন একটি করে মালয় আপেল খান তাহলে উপকার মিলবে। কারণ মালয় আপেলের মধ্যে আছে আয়রন যা আমাদের শরীরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে ক্যালরি, যার উপস্থিতিতে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। এর ফলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খিদে লাগে না এবং ওজন কমার সম্ভাবনা আছে।
২. মালয় আপেল ক্যান্সার প্রতিরোধক:
মালয় আপেল হল একটি ক্যান্সার প্রতিরোধক। কারণ মালয় আপেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি হওয়া কিছুটা হলেও আটকাতে সাহায্য করে।
৩. মালয় আপেল হজম শক্তি উন্নত করে:
মালাই আপেল আমাদের শরীরে হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে কারণ এর মধ্যে আছে আলসার, গ্যাসস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি প্রতিরোধের উপাদান। নিয়মিত মালয় আপেল খাওয়ার ফলে হজম শক্তি উন্নত হয়।
৪. মালয় আপেল ডায়াবেটিসে উপকারী:
মালয় আপেল রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই যেসব ব্যক্তিরা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের নিয়মিত প্রত্যেক দিন একটি করে মালয় আপেল খেলে উপকার মিলবে।
৫. মালয় আপেল মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে:
মালয় আপেল মানুষের চাপ, বিষন্নতা, বিরক্ত কমাতে সাহায্য করে। কারণ মলয় আপেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। যা আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৬. মালয় আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে:
মালয় আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কারণ মালের আপেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। আর ফাইবার আমাদের হজম শক্তি উন্নত করে এবং মল নরম করতে সাহায্য করে। তাই যেসব ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন সে সব ব্যক্তিরা একটি মালয় আপেল খেলে উপকার মিলবে।
৭. মালয় আপেল ত্বকের জন্য উপকারী:
মলয় আপেল ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। যেমন- ফোড়া, মুখের ব্রণ ইত্যাদি চর্ম রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। মালয় আপেলের পেস্ট ব্যবহার করলে উপকার মিলবে।
৮. মালয় আপেল দাঁতের জন্য উপকারী:
মালয় আপেল খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁত মজবুত এবং শক্তিশালী হয়। কারণ মালয় আপেলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিভাইরাস বৈশিষ্ট্য। যা আমাদের দাঁত কে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস মুক্ত করতে সাহায্য করে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যার নিরাময় করতে সাহায্য করে মলয় আপেল।
৯. মালয় আপেল হার্টের জন্য উপকারী:
মালয় আপেল হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ মালয় আপেলের মধ্যে আছে নিয়াসিন এবং ফাইবার যা, আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কম হয়।
১০. মালয় আপেল হাঁপানির জন্য উপকারী:
মালয় আপেলের মধ্যে আছে ফুসফুস এবং ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ রাখার ক্ষমতা। যা হাপানিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী।
১১. মালয় আপেল বাতের ব্যথা উপশমকারী:
মারলে আপেলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। যা জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
এবার আমরা জেনে নেব মালয় আপেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।
মালয় আপেল খাওয়ার অপকারিতা:
- মালয় আপেলের বীজ একজন মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যদি কোন ব্যক্তি বেশি পরিমাণে মালয় আপেলের বীজ খেয়ে ফেলেন তবে তার মৃত্যুও ঘটতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় মালয় আপেল খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। দাঁত ক্ষয়ের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, দাঁত হলুদ হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত মাত্রু মালয় আপেল খাওয়া উচিত নয়।
- মালয় আপেলের জুস কখনোই পান করা উচিত নয়। কারণ মালয় আপেলে জুস আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মালয় আপেলের জুসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। যেটা অনেক ব্যক্তির পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- আবার অতিরিক্ত মাত্রায় মালয় আপেল খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, গ্যাস, অম্বলের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- মালয় আপেল ফ্রিজের মধ্যে রেখে কখনোই খাওয়া উচিত নয়। যদি মালয় আপেল ফ্রিজে রেখে খাওয়া হয় তাহলে ওর পুষ্টিগুণ সব নষ্ট হয়ে যায় এবং মালয় আপেলটি আর খাওয়ার যোগ্য থাকে না। এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন রকম রোগের সৃষ্টি হতে পারে ফ্রিজে রাখা মালয় আপেল খাওয়ার ফলে। তাই কখনো ফ্রিজে রাখা মালয় আপেল খাবেন না।
মালই আপেল সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
মালয় আপেল কিসের জন্য ভালো?
মালয় আপেল প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি করতে সাহায্য করে, হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
গোলাপ আপেল কি মালয় আপেলের মত?
গোলাপ আপেল হলো মালয় আপেলের অন্য একটি নাম।
ভারতে মালয় আপেলের দাম কত?
ভারতে মালাই আপেলের দাম প্রতি কেজি প্রায় এক হাজার টাকা।
মালয় আপেলকে ভারতে কি বলে?
মালয় আপেলকে ভারতে জামান বলে।
মালয় আপেল কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো?
মালয় আপেল ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আমরা কি মালয় আপেল খেতে পারি?
হ্যাঁ, মালয় আপেলের প্রায় ৮০% বা তার বেশি খাওয়াই দিতে পারে।
মালয় আপেল কি মিষ্টি?
হ্যাঁ, মালয় আপেল স্বাদে মিষ্টি।
একটি মালয় আপেলে কি ভিটামিন আছে?
একটি মালয় আপেলের ভিটামিন সি আছে।
মালয় আপেল কোথা থেকে আসে?
মালয় আপেল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোথাও স্থানীয়, সম্ভবত মূলত নিম্নভূমি রেইন ফরেস্টে থেকে আসে।
মালয় আপেলের নাম কি?
মাউন্টেন আপেল, ওটাহাইট আপেল, তোমার ক এবং কাজু বা ফ্রেন্ডস কাজু বা ওটাহেইট কাজু ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত মালয় আপেল।
মালয় আপেলের সাধারণ নাম কি?
মালয় আপেলের সাধারণ নাম হলো মালোয়া আপেল, পোমেরাক, পেয়ারা মেরাহ।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম মালয় আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম মালয় আপেলের বিজ্ঞান সম্মত নাম, মালয় আপেলের ইংরেজি নাম, মালয় আপেলের বর্ণন, মালয় আপেলের গাছের বর্ণনা ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে জেনে নিলাম। আশা করি, আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলটি বুঝতে পেরেছেন যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন। যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের, ধন্যবাদ জানাই। সুস্থ থাকুন।
This is a very fantastic post. From this post, I gather a lot of information. I have a website that provides information on the benefits of fruits
Visit our website:https://tasneamow.com/
thankyou sir