Quince Fruit- কুইন্স ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।

 Quince Fruit- কুইন্স ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।-কুইন্স এই নামটি আমাদের কাছে অপরিচিত বলাই ভালো। কারণ এই নামটি আমরা খুব কম মানুষই আছি যে নামটি শুনেছেন। কুইন্স এর হলো একটি ফল। যা শব্দের টক এবং কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় না খুবই শক্ত থাকে। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। তো আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব কুইন্স ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

Quince Fruit- কুইন্স ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।

কুইন্স বর্ণনা:

কুইন্স গাছটি প্রায় ষোলো থেকে ছাব্বিশ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। তেরো থেকে কুড়ি ফুট চওড়া হয়। কুইন্স ফলটি অপরিণত অবস্থায় ফলটি ঘন ধূসর সাদা সূক্ষ্ম চুলের সঙ্গে সবুজ রঙের হয়। যেটা বেশি ভাগটাই পাকা হওয়ার আগেই শরতের শেষে দিকে ঘষে যায় যখন ফলটা শক্ত, শক্ত সুগন্ধি যুক্ত মাংসের সঙ্গে হলুদে রঙের হয়।  

কুইন্স ফল কেমন হয়?

কুইন্স ফল দেখতে অনেকটা আপেলের মতো, হলুদ রঙের, সুগন্ধ যুক্ত, উপরের অংশটা লোম যুক্ত। কুইন্স ফলের মধ্যে পাঁচটি ভাগ আছে। প্রতিটি ভাগে দুটি লম্বা সারিতে অনেক বীজ আছে। এই ফলটি বীজগুলো লম্বা, গোল, চ্যআপ্টআ, রক্তাক্ত বাদামি রঙের হয়। কুইন্স বীজগুলোকে বিহিদানা বলা হয়ে থাকে। বীজগুলো জলে ভিজিয়ে রাখলে বীজগুলো ফুলে-ফেপে যায় ও স্বাদেও সুস্বাদু হয়। কুইন্স ফল পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। কুইন্স ফল ও বীজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।        স্বাদ অনুযায়ী কুইন্স ফলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। কুইন্স ফল টক অথবা টক-মিষ্টি। 

কুইন্স ফলের ইংরেজি নাম কি?

কুইন্স ফলের ইংরেজি নাম হল Quince Fruit।

কুইন্স ফলের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?

 কুইন্স ফলের বিজ্ঞান সম্মত নাম হল Cydonia Oblonga।

এবার আমরা কুইন্স ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেব।

কুইন্স ফলের পুষ্টিগুণ:

  • খাদ্য শক্তি
  • প্রোটিন
  • ফ্যাট
  • কার্বোহাইড্রেট
  • ফাইবার
  • থায়ামিন
  • নিয়াসিন
  • রিবোফ্লাভিন
  • ভিটামিন বি ৫
  • ভিটামিন বি ৬
  • ফোলেট
  • ভিটামিন সি
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • পটাশিয়াম 
  • ফসফরাস
  • সোডিয়াম
  • জিংক
  • জল

প্রতি ১০০ গ্রাম কুইন্স এর পুষ্টিগুণ:

Sl.no Nutition Per100g
1.  খাদ্য শক্তি ৫৭ কিলো ক্যালরি
2.  প্রোটিন ০.১ গ্রাম
3.  ফ্যাট ০.১ গ্রাম
4.  কার্বোহাইড্রেট  ১৫.৩ গ্রাম
5. ফাইবার ১.৯ গ্রাম
6. থায়ামিন ০.০২ মিলিগ্রাম 
7. নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম 
8.  রিবোফ্লাভিন ০.০৩ মিলিগ্রাম 
9. ভিটামিন বি ৫ ০.০৮১ মিলিগ্রাম 
10. ভিটামিন বি ৬ ০.০৪ মিলিগ্রাম 
11. ফোলেট ৩ মাইক্রোগ্রাম 
12. ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম 
13. ক্যালসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম 
14. আয়রন  ০.৭ মিলিগ্রাম 
15.  ম্যাগনেসিয়াম ৮ মিলিগ্রাম 
16.  পটাশিয়াম ১৯৭ মিলিগ্রাম 
17. ফসফরাস T১৭ মিলিগ্রাম 
18. সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম 
19. জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম 
20. জল ৮৪ গ্রাম

এবার আমরা জেনে নেব কুইন্স ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। 

কুইন্স ফলের উপকারিতা:

১. কুইন্স অন্ত্রে ক্ষত সারাতে উপকারী:

কুইন্স অন্ত্রের ক্ষতসরাতে কার্যকরী উপাদান।

২. কুইন্স হাড় শক্ত করতে সহায়ক:

কুইন্স আমাদের শরীরে হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। কারণ কুইন্সের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৩. কুইন্স হজম শক্তি উন্নত করে:

কুইন্স হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ কুইন্স এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই যেসব ব্যক্তি বদ হজমের সমস্যা আছে তারা কোন খেতে পারেন তাতে উপকার মিলবে।

৪. কুইন্স কিডনি সুস্থ রাখে:

কুইন্স কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ কুইন্স এর মধ্যে আছে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৫. কুইন্স ওজন কমাতে সহায়ক:

আমাদের শরীরে মেধ জমা রোধ করতে সাহায্য করে কুইন্স। এছাড়াও শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ কইনসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার থাকার ফলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খিদে লাগে না

৬. কুইন্স কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:

যেসব ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কুইন্স ফল উপকারী হতে পারে। কুইন্স ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কারণ কুইন্স ফলের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। আর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৭. কুইন্স ত্বকের জন্য উপকারী:

কুইন্স ত্বকের জন্য উপকারী একটি উপাদান। কারণ কুইন্সের মধ্যে আছে ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ত্বকের জন্য উপকারী উপাদান। ত্বকের বলি রেখা, অকাল বার্ধক্য ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে ভিটামিন সি। 

৮. কুইন্স বাতের ব্যথায় উপকারী:

কুইন্স বাতের ব্যথায় খুবই উপকারী। ব্যথা স্থানে কুইন্স ব্যবহার করলে উপকার মিলে। কারণ কুইজের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম।

এবার আমরা জেনে নেব কুইন্স ফলের অপকারিতা সম্পর্কে। 

কুইন্সের অপকারিতা:

  • অতিরিক্ত মাত্রায় কুইন্স খাওয়ার ফলে হেঁচকি, কাঁপুনি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় কুইন্স খাওয়ার ফলে কাশি হতে পারে।
  • বেশি বেশি পরিমাণে কুইন্স খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, বদহজম, পেট ফুলে যাওয়া হতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় কুইন্সের বীজ খাওয়ার ফলে পাকস্থলীকে দুর্বল করে দিতে পারে।

এবার আমরা জেনে নেব কুইনস ফল সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর:

একটি কুইন্সের স্বাদ মত কি?

একটি কুইন্স এর স্বাদ অনেকটা তেঁতুলের মত।

 কুইন্স কি কাঁচা খাওয়া নিরাপদ?

কুইন্স খুবই শক্ত কাঠের মত এবং কষাকষি। তাই এটি কাঁচা খাওয়া যায় না।

কুইন্স কি নাশপাতি নাকি আপেল?

 কুইন্স হল আপেল এবং নাশপাতি থেকে আলাদা একটি ফল। আর কুইন্স কাঁচা খাওয়া যায় না।

কুইন্স ফল কি জন্য ব্যবহার হয়?

বেশিরভাগ সময়ই কুইন্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে জ্যাম, জেলি, মার্মালেড বা কমপোট হিসেবে পাওয়া যায়।

কুইন্স কি ফল বা সবজি?

কুইন স্লো এক ধরনের ফল যা দেখতে বড় নাশপাতির আকারের মত। সাধারণত কুইন্স হলুদ রঙের হয়ে থাকে।

কাশ্মীরি ভাষায় কইন্সকে কী বলা হয়?

কাশ্মীরি ভাষায় কুইন্সকে বলা হয় Bem Tchoont। এটি এক রকমের বন্যা আপেল। যা কাশ্মীরে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কুইন্স কাশ্মীরে মটন বা পনির দিয়ে রান্না করা হয়ে থাকে।

ভারতে কুইন্স বৃদ্ধি পায়?

কুইন্স শুধুমাত্র ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে জন্মায়। যেমন – জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশে।

ভারতে কুইন্স ফল দাম কত?

ভারতের উইন্স ফলের দাম প্রায় ৫০ টাকা প্রতি কেজি।

ডায়াবেটিস রোগীদের কি কুইন্স খেতে পারেন?

ডায়াবেটিসের রোগীদের কুইন্স খাওয়া যেতে পারে। হাইপারলিপিডেমিয়া পরিচালনায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

কুইন্স কি পেয়ারা মতো?

 ফলের চামড়ার মত টেক্সচার ও স্বাদ মেস্কিকান পেয়ারার পেস্ট এর মত অনেকটা।

কুইন্স কি সোনার আপেল?

প্রাচীন গ্রিসে কুইন্সকে গোল্ড আপেল বলা হয়।

কুইন্স কি একটি সুপার ফুড?

কুইন্স হলো নর্ডিক সুপার ফুড গুলির মধ্যে একটি।

কুইন্সের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি?

কুইন্সের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো কাশি, পেট ব্যথা, পেট ফুলে, তোকে আঘাতে যখন ব্যবহার করা হবে, যখন ত্বকে আঘাতে ব্যবহার করা হবে তখন বেদনা, ফোলা ইত্যাদি হতে পারে।

কুইন্সে কি চিনি বেশি থাকে?

প্রতি ১০০ গ্রাম কুইনসের মধ্যে চিনি থাকে ১৩ গ্রাম।

কুইন্স কি কিডনির জন্য ভালো?

কুইন্স কিডনি ডায়েটের জন্য একটি খুব ভালো ফল।

কুইন্স ফলের ভারতীয় নাম কি?

কুইন্স ফলের ভারতীয় নাম হল বেহি, কুইন্স, সফরজল।

কোন দেশে কুইন্স ফল হয়?

তুরস্ক, চীন, মরক্কো ইত্যাদি দেশে কুইন্স ফল হয়।

কুইন্স কি বিরল ফল?

হ্যাঁ, কুইন্স হলো একটি বিরল ফলের গাছ।

কুইন্স কেন স্বাস্থ্যকর?

কুইন্স স্বাস্থ্যকর কারণ এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এর সাথে সাথে ফাইবার, পেকটির ও ট্যানিন।

কুইন্সকে ইউরিক অ্যাসিডের জন্য ভালো?

হ্যাঁ, কুইন্স ইউরিক অ্যাসিডের জন্য ভালো। কারণ এটি ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সহায়ক।

কুইন্স এর গন্ধ কেমন?

কুইন্সের গন্ধ হলো অনেকটা সবুজ আপেলের মতো।

সৌন্দর্যের জন্য কুইন্স কি?

শুষ্ক ত্বকের জন্য কুইন্স খুবই উপকারী। 

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম কুইন্স ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম কুইন্স ফলের বর্ণনা, কুইন্স ফল কেমন হয়, কুইন্স ফলের বিজ্ঞান সম্মত নাম, কুইন্স ফলের ইংরেজি ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে। আশা করি, আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে। যদি ভালো লাগে তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন। যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *