Sabu : সাবুদানা উপকারিতা ও অপকারিতা।

Sabu : সাবুদানা উপকারিতা ও অপকারিতা।
Sabu : সাবুদানা উপকারিতা ও অপকারিতা।


Sabu : সাবুদানা উপকারিতা ও অপকারিতা

সাবু নামটা শুনলেই আমাদের মনের মধ্যে সাদা সাদা বীজ এর ছবি ভেসে ওঠে। প্রায়ই উপবাসের সময় স্বাভাবিক খাবার পরিত্যাগ করা হয় ও তার জায়গায় সাবু জাতীয় খাবার খাওয়া হয়ে থাকে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব সাবু দানা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

সাবুদানা কি?

সাবুদানা হল সাদা সাদা ছোট ছোট গোল গোল একটি ভোজ্য পদার্থ। সাবুদানা তৈরির জন্য কাভাস গাছের মূল থেকে নিষ্কাশিত স্টার্চ থেকে। প্রথমে সাবু তরল আকারে থাকে। তারপর মেশিনের সাহায্যে সাবুকে কঠিন ও মুক্তোর আকারের দেওয়া হয়। 

সাবুদানা বাজারে মুদিখানার দোকানে পাওয়া যায়। সাবুদানা দুই রকমের হয় একটা বড় দানা ও একটা ছোট দানা। সাবুদানা শুধু স্বাদের জন্য নয়, সাবুদানা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

এবার আমরা জেনে নেব সাবুদানার পুষ্টি গুন সম্পর্কে।

প্রতি ১০০ গ্রাম সাবুদানার পুষ্টিগুণ:

নাম, পরিমাণ 

জল, ১০.৯৯ গ্রাম

প্রোটিন, ০.১৯ গ্রাম

খাদ্যশক্তি, ৩৫৮ কিলোক্যালরি

ফ্যাট, ০.০২ গ্রাম

কার্বোহাইড্রেট, ৮৮.৬৯ গ্রাম

ফাইবার, ০.৯ গ্রাম

চিনি, ৩.৩৫ গ্রাম

ক্যালসিয়াম, ২০ মিলিগ্রাম

আয়রন , ১.৫৮ মিলিগ্রাম

পটাসিয়াম, ১১ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম , ১ মি.গ্রা

ম্যাগনেসিয়াম, ১ মিলিগ্রাম

ফসফরাস, ৭ মিলিগ্রাম

জিংক, ০.১২ মিলিগ্রাম

কপার, ০.০২ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম, ০.১১ মাইক্রোগ্রাম

সেলেনিয়াম, ০.৮ মাইক্রোগ্রাম

থায়ামিন, ০.০০৪ মিলিগ্রাম

ফোলেট, ৪ মাইক্রোগ্রাম

কোলিন , ১.২ মিলিগ্রাম

pantothenic অ্যাসিড, ০.১৩৫ মিলিগ্রাম

ভিটামিন-বি৬, ০.০০৮ মিলিগ্রাম

স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ০.০০৫ গ্রাম

পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ০.০০৩ গ্রাম

মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ০.০০৫ গ্রাম

এবার আমলার জেনে নেব সাবুদানার উপকারিতা সম্পর্কে।

সাবুদানার উপকারিতা:

১. গরম থেকে রক্ষা পেতে সাবুদানার ব্যবহার:

ব্যায়াম করার সময় আমাদের শরীর অতিরিক্ত শক্তি হিসেবে গ্লাইকোজেনকে ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে আমাদের শরীরের তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে সাবুদানা খাওয়া আমাদের জন্য উপকারী হতে পারে।

 এছাড়াও সাবুর মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের বিপাকীয় স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও গ্লুকোজ আকারে শক্তি সরবরাহ করে থাকে যার ফলে গ্লাইকোজেন কম খরচ হয়। আবার অনেক সময় এমনও হয় যে সাবুর তৈরি খাবার খাওয়ার ফলে খেলার সময় শরীরে বর্ধিত তাপ কমিয়ে খেলোয়াড়দের শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

২. শক্তির জন্য সাবুদানার উপকারিতা:

যদি কোন ব্যক্তি কাজ করার সময় দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে ও তার শরীরে শক্তির অভাব অনুভব করে। যদি এরকম পরিস্থিতি হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে সাবুদানা খেতে হবে। কেননা সাবুদানা শুধু আমাদের শরীরকে শক্তি যোগায় না এটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার শক্তিও যোগান দেয়। কেননা সাবুদানার মধ্যে আছে কার্বোহাইড্রেট। আর কার্বোহাইড্রেট শক্তির একটি খুব ভালো উৎস।

৩. মস্তিষ্কের জন্য সাবুদানার উপকারিতা:

সাবুদানা শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য নয় মস্তিষ্কের জন্যও খুবই উপকারী হতে পারে। সাবুদানার মধ্যে মস্তিষ্কের মধ্যে নানা রকম সমস্যা দূর করার বৈশিষ্ট্য আছে। কেননা সাবুদানার মধ্যে পাওয়া যায় ফোলেট। আর ফোলেট সব সময় সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য উপকারী হয়। ফোলেট আমাদের মস্তিষ্কের ব্যাধি সহ অন্যান্য নানা রোগ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও মস্তিষ্কে বিকাশেও অবদান রাখে ফোলেট।

৪. সাবুদানা রক্তাল্পতায় উপকারী:

রক্তাল্পতায় বা রক্তশূন্যতার জন্য সাবুদানা খুবই উপকারী হতে পারে। শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা ঘাটতি ঘটলে ও দুর্বলতার সাথে সাথে আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তাল্পতা হতে পারে। এরকম সমস্যায় সাবু খাওয়া উপকারী হতে পারে। কেননা সাবু দানার মধ্যে রয়েছে আয়রন।

 যা ফুসফুস থেকে পুরো শরীরে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু গভের শব্দের মতে সাবুদানার মধ্যে খুব কম পরিমাণে আয়রন আছে। তাই সাবুদানা খাওয়ার সাথে সাথে ও অন্যান্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করাই ভালো।

৫. সাবুদানা হজমের জন্য উপকারী:

অনেকের হজমের সমস্যা থাকে, তবে সাবুদানা খাওয়ার ফলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। কেননা সাবুদানার মধ্যে আছে প্রোটিন ও ফাইবার। যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

৬. সাবুদানা ওজন বৃদ্ধির জন্য উপকারী:

ওজন বৃদ্ধির জন্য সাবুদানা খাওয়া উপকারী। কেননা সাবুদানার মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি। আর কার্বোহাইড্রেট, ক্যালরি এগুলো খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। তাই শরীরে ওজন বাড়াতে গেলে সাবুদানা খেলে উপকার মিলবে।

৭. সাবুদানা উচ্চ রক্তচাপের জন্য উপকারী:

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দূর করতেও সাবুদানার উপকারিতা আছে। সাবুদানার মধ্যে পাওয়া যায় ফসফরাস, ফাইবার, পটাশিয়াম এর মত উপকারী উপাদান। ফাইবার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৮. সাবুদানা হাড়ের জন্য উপকারী:

সাবুদানা হাড় মজবুতের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ সাবুদানার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম একদিকে যেমন হাড়ের বিকাশ হতে ও হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ঠিক তেমন অন্যদিকে ম্যাগনেসিয়াম হাড় ভাঙ্গা রোধ করে ও অন্যান্য সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তি সরবরাহ করে থাকে। 

৯. সাবুদানা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর করতে সহায়ক:

সাবুদানা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কারণ সাবুদানার মধ্যে আছে ফাইবার। যা মল মসৃণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

১০. রক্ত সঞ্চালনের জন্য সাবুদানা ব্যবহার:

রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার জন্য সাবুদানা খাওয়া কার্যকর হতে পারে। কেননা সাবুদানার মধ্যে পাওয়া যায় ফোলেট। যা রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ফোলেট এর অর্থ হলো ফলিক অ্যাসিড, যার সাহায্যে রক্তনালী কে শিথিল করতে সাহায্য করে, তার সাথে ধমনীতে রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করে।

১১. সাবুদানা ত্বকের জন্য উপকারী:

সাবুদানার মধ্যে আছে জিংক, কপার, সেলেনিয়াম। যেগুলো আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। জ্বী সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি হাত থেকে ত্বকের রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও কপার এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে ফ্রি রের্ডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে পারে। 

এছাড়াও সেলিনিয়ামের থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বককে অক্সিডেটিভ ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে। অক্সিডেটিভ ট্রেসের কারণে ত্বক ক্যান্সারে সম্ভাবনা থাকে।

এবার আমরা সাবুর অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব।

সাবুদানার অপকারিতা:

  1. অতিরিক্ত মাত্রায় সাবুদানা খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এর সাথে সাথে স্থূলতর শিকার হতে পারেন।
  2. সাবুদানার মধ্যে থাকে উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট। আর অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার ফলে শরীরে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের সাবু খাওয়ার আগে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত।
  3. যেসব ব্যক্তিদের শরীরে প্রোটিনের অভাব আছে তাদের খাদ্য তালিকা অতিরিক্ত পরিমাণে সাবুর না রাখাই উচিত। কেননা সাবুদানার মধ্যে পোস্টটি ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ প্রোটিন বেশি পরিমাণে নেই।
  4. সাবুদানার মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে সাইনাইড পাওয়া যায়। তারপরেও যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয় তাহলে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় সাবুদানা খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক, হার্টের ক্ষতি হতে পারে, এর সাথে সাথে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  5. অতিরিক্ত মাত্রায় শাবু খাওয়ার ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা বুকের ব্যথা, রক্তের সমস্যা, মাথাব্যথা, বমি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

উপসংহার:

আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোঝার মত হয়েছে। যদি ভালো লাগে আর যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, কমেন্টে জানান। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *