Walnut benifits and side effects – আখরোট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।.আখরোট একটি পুষ্টিকর খাবার । এটি একটি শুকনো ফল জাতীয় খাবার। আখরোট খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি তার উপকারিতা। আখরোটের অনেক উপকারিতা আছে। যেমন- আখরোট ওজন কমাতে সহায়ক, আখরোট হার্টের জন্য উপকারী, মস্তিষ্কের জন্য ভালো, ক্যান্সার প্রতিরোধক আখরোট, হাড়ের জন্য উপকারী ইত্যাদি। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নেব আখরোট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন রকম তথ্য।
আখরোট কি?
আখরোট হলো এক ধরনের বাদাম। আখরোট অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি বাদাম। একটি আখরোটের ফল একটি একক বীজ নিয়ে গঠিত হয়। যেটা খেতে সুস্বাদু এবং কুঁচকে যায়। আখোঁট বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে কেক, কুকিজ এবং এনার্জি বার সহ। আখরোটের মধ্যে অনেক ধরনের পুষ্টি উৎপাদন আছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে আপলোড কোনো ওষুধ নয় যে ব্যবহার করলে যে কোন রোগ সেরে যাবে। তাই যখন শরীর অসুস্থ হবে তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
আখরোটের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি?
আখরোট এর বিজ্ঞান সম্মত নাম হল Juglans Nigra।
আখরোট এর ইংরেজি নামটি কি?
আখরোটের ইংরেজি নামটি হল Walnut।
এবার আমরা জেনে নেব আখরোটের পুষ্টি গুন সম্পর্কে।
আখরোটের পুষ্টিগুণ:
- খাদ্য শক্তি
- কার্বোহাইড্রেট
- প্রোটিন
- শর্করা
- ফাইবার
- মাড়
- ভিটামিন এ
- বিটা কেরোটিন
- লুইটেন জেক্সানথিন
- থায়ামিন
- নিয়াসিন
- রিবোফ্লাভিন
- ভিটামিন বি ৫
- ভিটামিন বি ৬
- ফোলেট
- ভিটামিন বি ১২
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন কে
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ফসফরাস
- সোডিয়াম
- জিংক
- জল
- ফ্যাট
- সম্পৃক্ত
- মনোস্যাচুরেটেড
- পলিআনস্যাচুরেটেড
- ওমেগা-৬
- ওমেগা-৩
প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটের পুষ্টিগুণ:
- খাদ্য শক্তি – ৬৫৪ ক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেট – ১৩.৭১ গ্রাম
- প্রোটিন – ১৫.২৩ গ্রাম
- শর্করা – ২.৬১ গ্রাম
- ফাইবার – ৬.৭ গ্রাম
- মাড় -০.০৬ গ্রাম
- ভিটামিন এ – ১ মাইক্রোগ্রাম
- বিটা কেরোটিন – ১২ মাইক্রোগ্রাম
- লুইটেন জেক্সানথিন – ৯ মাইক্রোগ্রাম
- থায়ামিন – ০.৩৪১ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন – ১.১২৫ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লাভিন – ০.১৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৫ – ০.৫৭০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ৬ – ০.৫৩৭ মিলিগ্রাম
- ফোলেট – ৯৮ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন ই – ০.৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি – ১.৩ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে – ২.৭ মাইক্রোগ্রাম
- আয়রন – ২.৯১ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম – ১৫৮ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৯৮ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম – ৪৪১ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ – ৩.৪১৪ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস – ৩৪৬ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম – ২ মিলিগ্রাম
- জিংক – ৩.০৯ মিলিগ্রাম
- জল – ৪.৭ গ্রাম
- ফ্যাট – ৬৫.২১ গ্রাম
- সম্পৃক্ত – ৬.১২৬ গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড – ৮.৯৩৩ গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড – ৪৭.১৭৪ গ্রাম
- ওমেগা-৬ – ৩৮ গ্রাম
- ওমেগা-৩ – ৯ গ্রাম
এবার আমরা জেনে নেব আখরোট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
আখরোটের উপকারিতা:
১. আখরোট মস্তিষ্কের জন্য উপকারী:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আখরোট মস্তিষ্কের জন্য উপকারী উপাদান। কারণ আখরোটের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কের কার্যকরী ক্ষমতা উন্নত করে। এছাড়াও এর মধ্যে আছে পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
২. আখরোট হাড়ের জন্য উপকারী:
আখরোট হার মজবুত ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। আখরোটের মধ্যে আছে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড, যা হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আখরোটের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস। যেটা হাড়ের অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করার সাথে সাথে কপার ও হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. আখরোট উচ্চ রক্তচাপের জন্য উপকারী:
আখরোট উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূরে রাখা যায়।
৪. আখরোট হার্টের জন্য উপকারী:
আখরোট হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ আখরোটের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ধমনীতে ফ্যাট জমতে বাঁধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও এর মধ্যে আছে পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য উপকারী উপাদান। এছাড়াও এই ফ্যাটি এসিড গুলোই শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্র বৃদ্ধি করে। ফলে হার্টের বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য হয়।
৫. আখরোট ক্যান্সারের জন্য উপকারী:
আখরোটের মধ্যে পলিফেনাল পাওয়া যায় যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আখরোটের মধ্যে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক প্রভাব আছে। তাই এটি ক্যান্সারের টিউমার কোষের বৃদ্ধিতে বাঁধা সৃষ্টি করে।
৬. আখরোট ওজন কমাতে সাহায্য করে:
আখরোট ক্যালোরি ও ফ্যাট যুক্ত খাবার হওয়ার সত্বেও ওজন কমাতে সাহায্য করে। আখরোট খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় আখরোট ফ্যাট কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৭. আখরোট অনিদ্রা দূর করে:
আখরোট অনিদ্রা এবং মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। কারণ আখরোটের মধ্যে আছে ভিটামিন বি ৬, প্রোটিন, ফলিক অ্যাসিড মতো পুষ্টি উপাদান। যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৮. আখরোট মৃগী রোগ প্রতিরোধ করে:
আখরোট মৃগী রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কারণ আখরোটের মধ্যে আছে অ্যান্টি-কনভালসেন্ট প্রভাব। যা রোগ প্রতিরোধ করে।
৯. আখরোট হজম শক্তি উন্নত করে:
আখরোট হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ আখরোটের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
১০. আখরোট ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে:
আখরোট ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ আখরোটের মধ্যে উপস্থিত প্রোটিন গুলি ইমিউনোমোডুলেটরি প্রভাব আছে। যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
১১. আখরোট ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী:
আফরোট খাওয়া ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আখরোট রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
১২. আখরোট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে:
আখরোট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কারণ আখরোটের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন বি ২ যা সহজেই খাবার হজম করে এবং মল নরম করতে সাহায্য করে।
১৩. আখরোট চুলের জন্য উপকারী:
আখরোট চুলের জন্য উপকারী। কারণ আখরোটের মধ্যে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। যা চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আখরোট এর ব্যবহার:
- ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে দুই থেকে তিন টুকরো আখরোট খাওয়া যায়।
- আবার এক্স চা-চামচ আখরোটের গুঁড়ো ও এক চা চামচ মধু দুধের সঙ্গে ভালো ভাবে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
- সন্ধ্যাবেলায় খাবারে আখরোট এর রোস্ট খেতে পারেন।
- আবার সরাসরি ও আখরোট খাওয়া যেতে পারে।
এবার আমরা জেনে নেব আখরোট খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।
আখরোট খাওয়ার অপকারিতা:
- অতিরিক্ত মাত্রায় আখরোট খাওয়ার ফলে শরীরে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। কারণ আখরোটের মধ্যে চর্বি ও ক্যালরি বেশি থাকে।
- আখরোটে আবার অনেকের অ্যালার্জি থাকতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণ হল শ্বাসকষ্ট, ত্বকে ফুসুরি বের হওয়া, চুলকানি, ত্বকের লাল ভাব, ফোলা ভাব।
- আখরোটের খোসা খেয়ে ফেললে ত্বকে বিভিন্ন রকম ফুসুরি বের হবে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় আখরোট খাওয়ার ফলে ডায়রিয়াও হতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় আখরোট খাওয়ার ফলে গ্যাস, অম্বল সৃষ্টি হতে পারে।
আখরোট সম্পর্কে অন্যান্য কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর:
আখরোট খাওয়ার উপকারিতা কি?
- আখরোট ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- আখরোট প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহায়ক আখরোট।
- ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে সহায়ক আখরোট।
আমার কি প্রতিদিন আখরোট খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন একমুঠো আখরোট খাওয়া আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে।
আমরা কি রাতে আখরোট খেতে পারি?
রাতে আখরোট খাওয়ার ফলে ভালো ঘুম হয়।
প্রতিদিন কত আখরোট?
প্রতিদিন নিয়মিত দুই থেকে তিন আউন্স আখরোট খাওয়া যেতে পারে।
আখরোট কি ত্বকের জন্য ভালো?
আখরোট ত্বকের জন্য উপকারী। কারণ আখরোটের মধ্যে আছে ভিটামিন ই, ভিটামিন বি ৫ যার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
আখরোট কি ভিজিয়ে রাখা উচিত?
আখরোট খাওয়ার সব থেকে ভালো উপায় হল সারা রাত ভিজিয়ে রাখা।
আখরোট খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি?
আখরোট খাওয়ার সঠিক সময় হল সকালবেলা। রাতের বেলায় আখরোট ভিজিয়ে রাখার পর সকালবেলা খালি পেটে খাওয়া উচিত।
কতগুলো আখরোট নিরাপদ?
প্রতিদিন নিয়মিত চারটি আখরোট খাওয়া নিরাপদ।
কার আখরোট খাওয়া উচিত নয়?
যেসব ব্যক্তিদের বাদামে অ্যালার্জি আছে তাদের আখরোট খাওয়া উচিত নয়।
আখরোটের মধ্যে কি ওমেগা-৩ থাকে?
আখরোটের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
আখরোট কি পেটের চর্বি কমায়?
প্রতিদিন নিয়মিত তিন থেকে চারটি আখরোট যদি খাওয়া হয় তবে এটি শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
আখরোট কি পুরুষদের জন্য ভালো?
পুরুষদের যৌন ফাংশনের ইতি বাচক প্রভাব ফেলে আখরোট।
আখরোট শরীরের জন্য গরম না ঠান্ডা?
আখরোট শরীরের তাপ বৃদ্ধি হয়।
আখরোট গ্যাস হতে পারে?
আখরোট অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে গ্যাস এবং পেট ফাঁপা হতে পারে।
আখরোট কি মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়?
আখরোট মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আখরোটে কি প্রোটিন বেশি থাকে?
আখরোট প্রোটিন এবং অন্যান্য সৃষ্টির একটি ভালো উৎস।
আখরোট কি কোলেস্টেরলের জন্য ভালো?
আখরোট আমাদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা হ্রাস করে।
কেন ভেজানো আখরোট ভালো?
কাঁচা আখরোট খাওয়ার থেকে ভালো শরীরে পক্ষে ভেজানো আখরোট। কারণ ভেজানো আখরোট হজম হয় সহজে।
উপসংহার:
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিলাম আখরোট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনে নিলাম আখরোট কি, আখরোটের বিজ্ঞান সম্মত নাম কি, আখরোট এর ইংরেজি কি, আখরোটের পুষ্টিগুণ ইত্যাদি সমস্ত রকম বিষয়ে। যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে তো শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন। শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য, ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন।